নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের রাজনীতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক অস্থির পরিস্থিতি। বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের বাইরে অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সরকারবিরোধী ঐক্য প্রক্রিয়ার একটি দৃশ্যমান পটভূমি তৈরি হয়েছে। ইতিমধ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণের সুযোগ রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনের প্রস্তাব অনুমোদিত হওয়ায় বিক্ষোভ সমাবেশের উদ্যোগ নেয় বাম দলগুলো। অথচ এই বাম দলগুলোর সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সম্পর্ক সবসময়ই ভালো ছিল। এছাড়া বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন আন্দোলন-কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। এমনকি যুক্তফ্রন্ট সভাপতি ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী গতকাল শনিবার সরকারকে হুমকির সুরে বলেছেন, নির্দলীয় সরকার ছাড়া নির্বাচন হবে না। এসব ঘটনায় রাজনীতিতে একটা অশনি সংকেত দেখা যাচ্ছে।
এত কিছুর পরও আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা উদাসীন ভাব বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলগুলোর আন্দোলন-হুঙ্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নির্বাচনসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বিরোধীদের উত্তরে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের মধ্যে একমাত্র ওবায়দুল কাদের ও তোফায়েল আহমেদই কথা বলছেন। অন্য নেতাদের তেমন কোনো তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।
প্রকৃতপক্ষে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বেশ আত্মবিশ্বাসী যে নির্বাচন সঠিক সময়েই হবে এবং নির্বাচনে আওয়ামী লীগই জয়লাভ করবে। এই কারণেই আওয়ামী লীগের মধ্যে একটা অতি আত্মবিশ্বাসী ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কিন্তু ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা যায়, যতবার আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাসী হয়েছে ততবারই দলটি বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছে।
সর্বপ্রথম পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে অতি আত্মবিশ্বাসের মূল্য দেয় আওয়ামী লীগ। ১৫ আগস্টের আগে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাসহ বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা বঙ্গবন্ধুকে সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভ্যুত্থান বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু নিজের প্রতি বাঙালির ভালোবাসার বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। বাংলাদেশের মানুষ তাঁর কোনো ক্ষতি করতে পারে একথা বিশ্বাসই করতেন না তিনি। এই আত্মবিশ্বাসই কাল হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর জন্য।
পরবর্তী ১৯৯১ সালের নির্বাচনেও অতি আত্মবিশ্বাসের জন্য ভরাডুবি ঘটে আওয়ামী লীগের। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকারের পতনের পর অনুষ্ঠিত প্রথম নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আওয়ামী লীগ এতটাই আত্মবিশ্বাসী ছিল যে, তারা মন্ত্রিপরিষদও ঠিক করে ফেলেছিল। সে সময় এরশাদ সরকারের আমলে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করা এম. কে. আনোয়ার ও কেরামত আলী আওয়ামী লীগে যোগ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁদেরকে দলে নেয়নি অতি আত্মবিশ্বাসী আওয়ামী লীগ। এরপর তাঁরা বিএনপিতে যোগ দেন আর নির্বাচনে জয়লাভ করে বিএনপি।
২০০১ সালের নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ অতি আত্মবিশ্বাস দেখায়। সে বছর বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দেয় আওয়ামী লীগ। আসলে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নিজেদের মেয়াদে অভূতপূর্ব উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের কারণে আওয়ামী লীগ ওই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারেও অতি আত্মবিশ্বাসী ছিল। কিন্তু তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার লতিফুর রহমান সহ নির্বাচন কমিশনের অনেকেই আওয়ামী লীগ বিরোধী ছিলেন। তাঁরা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কাজ করবে বলে সতর্কও করে দিয়েছিল দলটির শুভাকাঙ্ক্ষীরা। কিন্তু অতীতের মতো এবারও আওয়ামী লীগ বিষয়টিকে আমলে নেয়নি। ফলস্বরূপ নজিরবিহীন কারচুপির নির্বাচনে পরাজয় ঘটলো আওয়ামী লীগের। নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ৪১ শতাংশ ভোট পেল ঠিকই কিন্তু জাতীয় সংসদে সিট পেল মাত্র ৬২টি।
আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের মধ্যে অতীতের সেই পুরনো অহমিকা, পুরনো আত্মতুষ্টি আর অতি আত্মবিশ্বাস আবারও দেখা যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের নেতারা যেন নিশ্চিত যে তাঁরা আবার ক্ষমতায় আসবেন। কিন্তু আত্মবিশ্বাস ভালো হলেও যেকোনো বিষয়ে অতি আত্মবিশ্বাস খুবই ভয়াবহ প্রবণতা। ২০০১ এর ১৩ জুলাই ক্ষমতা ছাড়ার সময় আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী নিজেদের দপ্তরে কোটটাও রেখে এসেছিল কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতো কিছুদিনের মধ্যেই দপ্তরে ফেরত আসতে যাচ্ছেন তাঁরা। কিন্তু নির্বাচনে হেরে গিয়ে দপ্তরে আর ফেরত আসা হয়নি সেই অতি আত্মবিশ্বাসী মন্ত্রীদের।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের দল, দেশের বিপুল জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে। কিন্তু তারপরও দলটি মাঝে মধ্যে বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। তবে দলটি কিন্তু কখনো প্রতিপক্ষ বা দ্বিতীয়, তৃতীয় শক্তির কারণে বিপর্যয়ে পড়ে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয়, অতি আত্মবিশ্বাস আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলই বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিপর্যয়ের কারণ। অতি আত্মবিশ্বাস থেকে আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের উদাসীনতা সৃষ্টি হয়, একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে যা আবার দেখা যাচ্ছে।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও মধ্যে কাজ করার কোনো আগ্রহ নেই, নেই কোনো উদ্দীপনা। সাম্প্রতিক কোটা আন্দোলন, শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনগুলোতেও একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও তেমন কোনো তৎপরতা কিংবা উদ্যোগ দৃশ্যমান হয়নি। অথচ দরজায় কড়া নাড়ছে নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সামনের সময়টাতে দেশের রাজনীতি আরও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে আওয়ামী লীগ কি আরেকটি সংকটের মধ্যে পড়তে যাচ্ছে?
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত
থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে
না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ
নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে
অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে
১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
তবে দলীয় প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে
প্রার্থী দিতে চায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১১টি নিবন্ধিত দল। আর দলীয়ভাবে
প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—তপশিল ঘোষণার পরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাঁচটি রাজনৈতিক
দল। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর
সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের
মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।
দেশে মোট উপজেলা ৪৯৫টি। আগামী ৮ মে
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম
ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে
১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল।
এরপর আগামী ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে প্রার্থী
নির্ধারিত হবে, তা বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক
দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের
জন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র দুই ধরনের সুযোগই রাখা হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি
বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে
অধিকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে
২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ
ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিবন্ধিত
৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপিসহ ১০টি দল। দলীয় প্রতীকে
অংশ নেবে ১১টি দল। প্রতীক ছাড়া অংশ নেওয়ার পক্ষে দুটি। এখনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বিষয়ে
সিদ্ধান্তহীনতায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই নিবন্ধিত
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে
অংশ নিতে প্রার্থীও ঠিক করতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ
আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা
উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে আটটি নিবন্ধিত
দল। একটি ছাড়া সবগুলোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ ছাড়া সংসদের প্রধান
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাপার দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন,
দলীয় প্রতীকে তারা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটিতেও
তারা প্রার্থী দিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান
তিনি।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ নেওয়া নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায়
রয়েছে কোনো কোনো দল।
এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ না নিলেও বিএনপি পরে উপজেলার ভোটে অংশ নিয়েছিল। যদিও তখন পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার বিধান চালু হয়নি। পরে ২০১৯ সালে উপজেলায় দলীয় প্রতীকে
নির্বাচন হলেও বিএনপি সেখানে প্রার্থী দেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন তারা।
তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক
তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘দল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে
অংশ নেওয়ার একটা মনোভাব আছে। যারা অংশ নিতে চায় তাদের আমরা উৎসাহিত করছি। তবে দলীয়ভাবে
এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর দেশে ফিরলে তখন চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো
সিদ্ধান্ত নেয়নি আরেক নতুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
এ তথ্য জানিয়ে দলটির মহাসচিব ড. মো.
শাহজাহান বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হলে, সেখানে
অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তবে আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির এ ব্যাপারে
দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দলীয় প্রতীকে, নাকি প্রতীক ছাড়া যাব, তখন সে
সিদ্ধান্তও হবে।’
কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে
ইতিবাচক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। শিগগির উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
গেলে দলীয় হাতঘড়ি প্রতীকে ভোট করবেন তাদের প্রার্থীরা।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক)
মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘তারা দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
তবে চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ টাকা জামানত
নির্ধারণ সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আগে জামানত ছিল ১০ হাজার
টাকা। তাই জামানতের টাকা আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য শিগগির রিট করা হবে।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাবেন না। তবে দলের
কোনো প্রার্থী চাইলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, কোনো বাধা থাকবে না।’
দলীয় ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচনের
বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের
ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ কংগ্রেস। ডাব প্রতীকের দলটির চেয়ারম্যান কাজী
রেজাউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
জানাব।’
তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ
সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশ নেবে গণতন্ত্রী
পার্টি। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন
দলীয় প্রতীক ছাড়াই হওয়া উচিত।’
ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা নির্বাচন
করবে দলীয় হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। একই অবস্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবিসহ পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক
জোট। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পরিবেশ না থাকায় আমরা উপজেলা
নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা
নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে চায় কৃষক
শ্রমিক জনতা লীগ। একই পথে হাঁটছে তরীকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর
মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমাদের কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে সুযোগ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর
এমন অবস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি
সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলগুলোর অবস্থান ছিল উপজেলা নির্বাচনেও সে রকমই আছে। অর্থাৎ
যারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা এবারের নির্বাচনেও শরিক হচ্ছে। তবে নির্দলীয়
নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে হয়তো প্রার্থী কিছুটা বাড়তে পারে।
বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন ইসি বিএনপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
বিএনপি মেজর হাফিজ উদ্দিন কর্নেল অলি আহমেদ মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
বিএনপি এখন দলে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে এমন অনেক নেতাকেই বিশ্বাস করে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে এ রকম তথ্য উপাত্ত আছে যে, তারা আসলে সরকারের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনকে দুর্বল করেছে বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির দলের আবার কেউ কেউ দলের বাইরে।