নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৭ এএম, ০৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
প্রায় দুই দশক ক্ষমতার বাইরে। ১৯৯০ সালে ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল টানা ৯ বছর ক্ষমতায় থাকা এইচ এম এরশাদকে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর জেলে ছিলেন প্রায় টানা ৬ বছর। কিন্তু জেলে থেকে নির্বাচনে জিতেছিলেন ৫টি আসনেই। ক্ষমতাচ্যুত হলেও গত দুই দশকে হারেননি কোন নির্বাচনেই। শুধু তাই নয়, ক্ষমতায় আওয়ামীলীগ কিংবা বিএনপি গেলেও সব বারই সহায়তা নিতে হয়েছে জাতীয় পার্টির কিংবা এরশাদের। ক্ষমতায় যাবার জন্য ভোট এলেই দাম বাড়ে জাতীয় পার্টির। এবারো ভোটের দামামা বেজে উঠার আগেই মাঠে নেমে পড়েছেন এরশাদ। তাহলে কি এবারো ভোটের ফ্যাক্টর হয়ে উঠবেন এরশাদ? এ প্রশ্ন কিন্তু ইতিমধ্যে আলোচনায় এসেছে।
জাতীয় পার্টি মনে করছে, জনসমর্থন বিবেচনায় সরকার দুর্বল অবস্থানে আছে। বিএনপি যদি শক্তভাবে নির্বাচনে অংশ নেয়, তা সরকারি দল আওয়ামী লীগের জন্য আরও নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। এমন হিসাব কষে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন নিয়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গে দর-কষাকষির প্রস্তুতি নিচ্ছে জাপা। দৃশ্যত তেমনই দেখা যাচ্ছে।
দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক নেতার মতে, এবার জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চাইবে জাতীয় পার্টি। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই জোটের নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলবেন এরশাদ।
সরকার ও বিরোধী দলে বর্তমানে একই সঙ্গে থাকা জাপার নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টি না থাকলে এ সরকার বৈধতা পেত না এবং পুরো মেয়াদে টিকে থাকা কঠিন হতো। একাদশ সংসদ নির্বাচনেও জাপা নিজেদের ‘ক্ষমতার নির্ধারক’ এবং একই সঙ্গে আওয়ামী লীগের জন্য ‘রক্ষাকবচ’ মনে করে। বিএনপি নির্বাচনে এলেও যেমন জাপাকে আওয়ামী লীগের লাগবে, না এলেও লাগবে। জাপার নেতারা মনে করেন, বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নিলে জাতীয় পার্টিকে ছাড়া আওয়ামী লীগের একার পক্ষে ক্ষমতায় যাওয়া নিয়ে সংশয় আছে। আবার বিএনপি নির্বাচনে না এলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখানোর জন্য আবারও জাতীয় পার্টির প্রয়োজন পড়বে। সে জন্য গতবারের চেয়ে এবার আওয়ামী লীগের কাছে আরও বেশি আসন দাবি করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব। এ নিয়ে দলের শীর্ষ নেতারা একাধিক ঘরোয়া বৈঠক করেছেন।
জাপার নেতাদের মত বলেন, ‘জাতীয় পার্টিকে ১০০ আসন দিতে হবে। আওয়ামী লীগ বড় দল। তাদেরও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু জাতীয় পার্টি ও একটি জোট করেছে। সবাইকে নিয়েই তো নির্বাচনটা করতে হবে। জাতীয় পার্টির কথা হচ্ছে,এরশাদের সহযোগিতা ছাড়া যদি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় যাওয়া বা নির্বাচন না হয়, তাহলে পার্টি কেন বঞ্চিত হব?’
জাপার শীর্ষ নেতৃত্বের উপলব্ধি হচ্ছে, দর-কষাকষি করে দুই-তিনজন মন্ত্রীর চেয়ে সাংসদের সংখ্যা বেশি পাওয়া গেলে তাতে দলের লাভ হয়। সংশ্লিষ্ট এলাকার নেতা-কর্মীরা কিছুটা হলেও উপকৃত হন। বর্তমানে জাপা থেকে তিনজন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকলেও তাঁরা সেভাবে দলে নেতা-কর্মীদের উপকারে আসেননি এবং তাঁরা দলের শীর্ষ নেতৃত্বের নিয়ন্ত্রণে ছিলেন না বলেও অভিযোগ আছে। তাই মাঠপর্যায়ে জাপাকে শক্তিশালী করতে ভবিষ্যতে মন্ত্রীর চেয়ে সাংসদের সংখ্যা বেশি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করছেন নেতাদের অনেকে।
তবে দলের কেউ কেউ মনে করেন, কেবল সাংসদ নয়, মহাজোট ক্ষমতায় গেলে মন্ত্রিপরিষদে জাপার সংখ্যা বাড়াতেও দর-কষাকষি করতে হবে।
জাপা নেতাদের মতে, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির ৮০টি আসনে লিখিত সমঝোতা হয়েছিল। কিন্তু হঠাৎ এরশাদ নির্বাচন বর্জনের ডাক দেওয়ায় প্রার্থীদের অনেকে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে দলের একটি অংশ নির্বাচনে থাকে। শেষ পর্যন্ত মনোনয়ন পাওয়া ৩৪ জন সাংসদ হন। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। বিএনপির নির্বাচনে আসা বা না আসা, উভয় পরিস্থিতি নিয়ে সংকটে আছে ক্ষমতাসীনেরা। কারণ, সরকারকে একটি অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে হবে।
জাপার নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতি, গুম, খুন, নির্যাতনসহ নানা কারণে মেয়াদের শেষ সময়ে এসে সরকারের অবস্থান দুর্বল হয়ে পড়েছে, জনসমর্থনও অনেকটা নড়বড়ে অবস্থানে চলে গেছে। যা সম্প্রতি কোটা সংস্কার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনে স্পষ্ট হয়েছে। এ অবস্থায় জাপাকে আবারও আওয়ামী লীগের সহযোগী হওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক ঝুঁকি আছে। তাই এবার সংসদে, সরকারে, স্থানীয় সরকারে উপযুক্ত হিস্যা আদায়ে দলের নীতিনির্ধারকেরা শক্ত অবস্থান নেওয়ার চিন্তা করছেন।
বর্তমানে একই সঙ্গে মন্ত্রিসভা ও সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকাও পালন করছে জাপা। আগামী সংসদে আর ‘কৃত্রিম’ বিরোধী দল হতে আগ্রহী নন দলটির নীতিনির্ধারকেরা। জোটবদ্ধ নির্বাচন করে তাঁরা আওয়ামী লীগের সঙ্গে সরাসরি সরকারের অংশ হতে চান। দর-কষাকষিতে সুবিধা পেতে জাপা জোট ভারী করার চেষ্টাও করছে। ইতিমধ্যে জাপার চেয়ারম্যান এরশাদ দুটি নিবন্ধিত ইসলামি দলসহ ৫৯টি অনিবন্ধিত দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোটের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা করেছেন।
বিএনপির নির্বাচনে আসা, না আসা-উভয় সম্ভাবনা বিবেচনায় রেখে জাপা নির্বাচনী প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরই মধ্যে এরশাদ রংপুর সদর ও ঢাকার-১৭ আসনে আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচনী গণসংযোগ শুরু করেছেন। শনিবার রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে দলের যৌথ সভা হয়েছে।
দুটি প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় পার্টি। বিএনপি না এলে জাপা ৩০০ আসনে প্রার্থী দিয়ে সরকারের পরিবর্তনের পক্ষে যে জনসমর্থন, তাদের প্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচন করবে। অথবা বিএনপি নির্বাচনে এলে জাপা একটি জোটের পক্ষ নিয়ে নির্বাচন করবে।
এসব পরিকল্পনা এখন জাতীয় পার্টির। আর এটাকেই হিসেবে নিয়ে ভোট পরিকল্পনা করছে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি। ফলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারো ফ্যাক্টর হতে পারেন এরশাদ।
লেখক: সাংবাদিক
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।