নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা অচলের পরিকল্পনা করছে বিএনপি। বিএনপির নেতারা বেশ খোলামেলা ভাবেই বলছেন, আসন্ন নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢাকা দখলের সংকল্প তাদের। বিএনপির এমন পরিকল্পনার মুখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও নড়েচড়ে বসেছে।
ঢাকায় আওয়ামী লীগের কিছু সাংগঠনিক দুর্বলতা রয়েছে। ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পরপরই সংগঠনকে গতিশীল করতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। এই মুহূর্তে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগে সভাপতি হিসেবে এ কে এম রহমত উল্লাহ এমপি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাদেক খান দায়িত্ব পালন করছেন। দক্ষিণের কমিটিতে সভাপতি পদে আছেন হাজী আবুল হাসনাত, আর সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন শাহে আলম মুরাদ। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এই দুই কমিটি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করার জন্য নির্ভরযোগ্য নয়। কর্মীদের সঙ্গে এদের যোগাযোগ খুবই সামান্য। কর্মীদেরকে উদ্বেলিত করা তাই এই নেতাদের পক্ষে খুব কঠিন একটি কাজ।
অথচ আওয়ামী লীগের কাছে খবর আছে, এবার বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক আন্দোলন পরিচালিত হবে ঢাকাকে টার্গেট করে। ঢাকা অচল করে দেওয়ার কথা কোনো রাখঢাক না করেই বলছেন বিএনপির নেতারা। বিএনপি মনে করে, ২০১৪’র নির্বাচনের সময় তারা সারা দেশকেই অচল করতে পেরেছিল। কিন্তু ঢাকাকে কব্জা করা সম্ভব হয়নি বলেই সফলতা পায়নি সেবারের নির্বাচনী আন্দোলন। এই ব্যর্থতার জন্য ঢাকার নেতাদের দায়ী করেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাই এবার প্রকাশ্যেই ঢাকা অচল করে দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করছে দলটি। ঢাকা দখলের লড়াইয়ে বিএনপির বাইরে বিরোধী দলগুলোর অন্যান্য নেতারাও সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যায় মোস্তফা মহসিন মন্টুর কথা। এক সময়কার এই যুবলীগ চেয়ারম্যান এখন ড. কামালের নেতৃত্বাধীন গণফোরামের নেতা। অনেকদিন ধরেই ঢাকায় একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক ছিল সাবেক এমপি মন্টুর। নির্বাচনের আগে এখন তিনি আবার সক্রিয় হয়ে উঠেছেন।
এমন পরিস্থিতিতে ঢাকার নিয়ন্ত্রণ হাতে রাখতে রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের হাতেই নির্বাচনের আগের সময়টাতে ঢাকার সাংগঠনিক কার্যক্রম গোছানোর দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড। এ কাজের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে, ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও বস্ত্র ও পাট প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমকে।
১৯৯২, ১৯৯৭ ও ২০০৩ সালে তিন মেয়াদে অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান প্রয়াত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এবং সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব লাভ করেন মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া। এই দুজনের নেতৃত্বে কমিটি ছিল অত্যন্ত গতিশীল। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি থাকাকালীনই ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রথম মেয়র নির্বাচিত হয়ে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহাম্মদ হানিফ, যেখানে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের কমিটি শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছিল। যদিও সেই শক্তিশালী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মায়া বর্তমানে বিভিন্ন কারণে ঢাকার কমিটিতে নেই। চাঁদপুর থেকে নির্বাচন করেছেন তিনি। তবুও দুর্দিনে দলের জন্য তাঁর অবদানের কথা স্মরণ করে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে মায়াকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ঢাকার সংগঠন গোছানো ও কর্মীদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য।
এছাড়া হাই কমান্ড থেকে ঢাকার দায়িত্ব পেয়েছেন জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম। ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে ছিল, সেই নির্যাতন-নিপীড়নের দিনগুলোতে ঢাকায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল যুবলীগ। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপি-জামাত জোট সরকার যেদিন ক্ষমতা ছাড়ে সেদিন আওয়ামী লীগ অফিসে আক্রমণ করা হয়। সেই হামলার হাত থেকে পার্টি অফিসকে রক্ষা করেছেন তৎকালীন যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর কবির নানক ও সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম। আওয়ামী লীগের দুঃসময়ের কাণ্ডারি এই দুই নেতার ঢাকার কর্মীদের সঙ্গেও যোগাযোগ অনেক শক্তিশালী। এই কারণে নানক ও মির্জা আজমকে ঢাকা গোছানো, আন্দোলন-সংগ্রাম মোকাবেলা করা এবং কর্মীদের সংঘবদ্ধ করা অর্থ্যাৎ জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড।
এছাড়া যুবলীগ উত্তরের বর্তমান সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, দক্ষিণের সভাপতি মাইনুল হোসেন খান নিখিল ও সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল হোসেনের শক্তিশালী লোকবল রয়েছে। তাঁরাও নানক-আজমের কর্মী হিসেবেই পরিচিত। যুবলীগের এই নেতাদেরও তৎপর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড বুঝতে পেরেছে ঢাকায় আওয়ামী লীগের কিছু দুর্বলতা আছে। তাই ঢাকাকে রক্ষা করার জন্য এবং সকল আন্দোলন রাজনৈতিক ভাবে মোকাবেলা করার জন্য মায়া-নানক-আজমের মতো দলের জন্য নিবেদিত প্রাণ কর্মীদের দায়িত্ব দিয়েছে দলটি। এই নেতারা ইতিমধ্যেই কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করাও শুরু করেছেন।
মেয়র হানিফ এবং মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ারা ছিলেন ঢাকা সিটির অবিসংবাদিত নেতা। কর্মীদের মধ্যে ওই নেতাদের যে জনপ্রিয়তা ছিল সেটি এখনকার অনেক নেতারই নেই। এমন সময়ে বিএনপি যদি রাজপথ দখল করে আন্দোলন শুরু করে তাহলে তাকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করতে হবে। আর বিএনপির পক্ষ থেকে যেহেতু বারবার ঢাকা দখলের ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে তাই বোঝা যাচ্ছে নির্বাচনের আগে ঢাকা দখলই হবে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য মূল পরীক্ষা। এই পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার রাজনীতিতে আবার রাজপথের পরীক্ষিত সৈনিকদের সক্রিয় করছে আওয়ামী লীগ।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।