নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১২:২৭ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
১৯৭৫ সালের ২৯ জুলাই। স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়া পশ্চিম জার্মানিতে পিএইচডি করছেন, তাই স্বামীর কাছে যাওয়ার জন্য দেশ ছাড়লেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। সেই যাত্রায় বড় আপার সঙ্গী হলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা। আপার সঙ্গী হওয়ার কথা ছিল না তাঁর। কিন্তু শেখ হাসিনার ছেলেমেয়ে জয় এবং পুতুল তখন ছোট। তাদের দেখাশোনার একটা ব্যাপার আছে। এসব বিবেচনা করে যাত্রার মাত্র দুদিন আগে সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো বড় আপার সঙ্গে পশ্চিম জার্মানিতে যাবেন তিনি। ভাগ্যিস, সেদিন সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল। নয়তো বঙ্গবন্ধু পরিবারের আরেক সদস্যকেও ৭৫ এর ১৫ আগস্ট নারকীয় হত্যাকাণ্ডে মৃত্যুবরণ করতে হতো। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় সেদিন প্রাণে বেঁচে যান শেখ রেহানা। ভাগ্যের জোরে মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া আর কর্মের জোরে জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার আজ জন্মদিন। ১৯৫৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা জন্মগ্রহণ করেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা এবং প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ রেহানার তেমন সরব উপস্থিতি নেই। কিন্তু আওয়ামী লীগের দুর্দিনে এবং শেখ হাসিনার শেখ হাসিনা হয়ে ওঠার পেছনে অসামান্য অবদান রেখেছেন শেখ রেহানা। পাদপ্রদীপের আলোর বাইরে থেকেই তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে রেখে চলেছেন তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা।
সপরিবারে যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করা হয় তখন অল্প বয়স ছিল শেখ রেহানার। ওই বয়সেই বাবা-মাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান তিনি। মাথার ওপর বড় বোন শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারও ছায়া রইলো না। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর এই কনিষ্ঠ কন্যা দুর্দমনীয়। হার মানতে শেখেননি তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তিনি প্রথমে ভারতে চলে যান। এক পর্যায়ে শেখ হাসিনা দেশে ফেরত আসার সিদ্ধান্ত নেন, তবে শেখ রেহানা সিদ্ধান্ত নিলেন লন্ডনে যাবেন। লন্ডনের কিলবার্নে শেখ রেহানার বিয়ে হয় ড. শফিক সিদ্দিকের সঙ্গে। দুটি সন্তান নিয়ে টিকিট কেটে লন্ডনে যাওয়ার মতো টাকা না থাকায় সেই বিয়েতে অংশ নিতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে শেখ হাসিনা।
ওই দিনগুলোতে কঠোর সংগ্রাম করেছেন শেখ রেহানা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে খাবার পরিবেশনের কাজও করেছেন তিনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর নিরহঙ্কারী, নির্লোভ আদর্শে বেড়ে ওঠা শেখ রেহানা এসব কাজ করেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে। এই পরিশ্রম কিন্তু ফল দিয়েছে। রত্নগর্ভা শেখ রেহানাই সম্ভবত বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল মা। তাঁর বড় মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টে লেবার পার্টি একজন এমপি, ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ঢাকায় একটি ইউএনডিপিতে কনসালটেন্সি করছেন আর ছোট মেয়ে আজমিনা সিদ্দিক রূপন্তী অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। কিন্তু এতগুলো সফল ছেলেমেয়ের মা হয়ে, দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছোট বোন হয়ে এবং নিজের কর্মজীবনে সফল হয়েও নিরহঙ্কারী চরিত্রটি বদলায়নি শেখ রেহানার। এখনো লন্ডনে বাসে চড়ে অফিসে যান তিনি।
শেখ রেহানা একদমই নেপথ্যচারিনীর জীবনযাপন করেন। কিন্তু বাংলাদেশের সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার জীবনে তাঁর রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আমরা যখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কথা বলি তখন আমরা অবশ্যম্ভাবী ভাবে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নাম নেই। বঙ্গবন্ধুর জীবনে ও কর্মে বঙ্গমাতাই ছিলেন অনুপ্রেরণা। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বঙ্গবন্ধুকে পরামর্শ দিতেন বঙ্গমাতা, তাঁর জন্যই বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু হয়ে উঠতে পেরেছিলেন। কিন্তু এত অবদান রাখার পরও প্রচারের আলোয় থাকতে অনাগ্রহী ছিলেন বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা। বেগম ফজিলাতুন্নেসার ছোট মেয়ে শেখ রেহানাও তাঁর মায়ের মতোই হয়েছেন। পর্দার অন্তরালে থেকেই বড় বোন শেখ হাসিনাকে গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করেন তিনি। তাঁর জন্যই শেখ হাসিনা আজকের শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে পেরেছেন। পৃথিবীতে কারও পরামর্শ যদি শেখ হাসিনা শোনেন, তাহলে সেই ব্যক্তিটি শেখ রেহানা। শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সংকটে তিনিই মূল কাণ্ডারির ভূমিকা পালন করেন।
আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে যখন পাকিস্তানি শাসকরা হয়রানি করছিলো, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসাই তখন তাঁর পাশে থেকে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন। একই ভাবে এক-এগারোর সময় যখন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তার করা হয় তখন তাঁর পাশে ছিলেন শেখ রেহানা। ওই সময়টাতে দলকে সংগঠিত রাখা, দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে পাঠানো, আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার মতো কাজগুলো করে সংকটকালীন সময়ে আওয়ামী লীগকে একতাবদ্ধ রাখার কাজটি করেছিলেন তিনি। তবে নেপথ্যচারিনী শেখ রেহানার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেশ ও দলের দুঃসময়েই সীমাবদ্ধ। সুসময়ে তিনি রাজনীতি থেকে দূরে থাকতেই পছন্দ করেন। আওয়ামী লীগ এখন ক্ষমতায় আছে, তাই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে আর দেখা যায় না তাঁকে।
বড় বোন শেখ হাসিনার মতো পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ না হলেও জাতির পিতার আদর্শে অটল শেখ রেহানা। নেপথ্যচারিনী শেখ রেহানা আজীবন বাংলাদেশের উন্নয়নের কর্ণধার শেখ হাসিনার পাশে শক্তি হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যার জন্মদিনে এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।