নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে গতকাল শনিবার। সভা শেষে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে কোনো যোগ্য প্রার্থীকে কৌশলগত কারণে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব না হলে কী করা হবে সে বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, অন্তত ২০০ আসনে আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী রয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ১৫০টির মতো আসনে একাধিক প্রার্থীই আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার যোগ্য। এই নেতারা দলের প্রতি বিশ্বস্ত, দলের দুর্দিনের কাণ্ডারি। কিন্তু এক আসনে দুজনকে মনোনয়ন দেওয়া তো অসম্ভব। তাই আওয়ামী লীগ একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে যে, যারা আসন্ন নির্বাচনে মনোনয়ন পাবেন না তাঁরা যদি দলের নির্দেশ মেনে নেন, তাহলে তাদের জন্য অনেকগুলো পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখা হবে।
মনোনয়ন বঞ্চিত কেউ দলের বিরোধিতা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে এই সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ অটল। কিন্তু যারা দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেবে, মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবে তাঁদের অনেকভাবে পুরস্কৃত করা হবে। এই পুরস্কারের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে তাঁকে পদ প্রদান। অথবা উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে বা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে তাঁকে নিয়োগ দেওয়া হবে। এছাড়া প্রায় সাড়ে ছয় হাজার সরকারি পদ আছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় যে পদগুলোতে নিয়োগ দেওয়া যায়। এই পদগুলোর মধ্যে আছে বিভিন্ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান বা পরিচালক, বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের পরিচালক বা চেয়ারম্যানের পদ কিংবা বিভিন্ন কমিটি বা কমিশনের প্রধান, চেয়ারম্যান প্রভৃতি পদ। অর্থ্যাৎ দলের প্রতি বিশ্বস্ততার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেই মনোয়নবঞ্চিতদের জন্য থাকছে পুরস্কারের ব্যবস্থা। রাজনৈতিক মনোনয়ন বঞ্চিতদের জন্য থাকবে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ জেলা কমিটিতে থাকার সুবর্ণ সুযোগ।
মূলত জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল রোধে গাজীপুর মডেল অনুসরণ করার চিন্তাভাবনা করছে আওয়ামী লীগ। কয়েক মাস আগে অনুষ্ঠিত হয়ে যাওয়া গাজীপুর সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে জাহাঙ্গীর আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আশঙ্কা করা হচ্ছিল মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আজমত উল্লাহ নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করবেন। আজমত উল্লাহকে বলা হলো, জাহাঙ্গীর আলমের পক্ষে কাজ করলে তাঁর যোগ্যতা ও আত্মত্যাগের অবশ্যই মূল্যায়ন হবে। ফলে আজমত উল্লাহ্ জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করেন আর বিপুল ভোটে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী। পরবর্তীতে দলের জন্য এই আত্মত্যাগের পুরস্কার হিসেবে আজমত উল্লাহ খানকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য মনোনীত করা হয় এবং জাহাঙ্গীর আলম ও আজমত উল্লাহ্র কারণে গাজীপুরে আওয়ামী লীগের মধ্যে যে দলীয় কোন্দল ছিল তা মিটে যায়।
এবার একই থিওরি প্রয়োগ করা হবে জাতীয় নির্বাচনেও। কৌশলগত কারণে যারা মনোনয়ন পাবে না কিন্তু এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে এবং ভালোই জনপ্রিয়, তাঁদের ঢাকায় তলব করা হবে এবং দলীয় সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে তাঁদের সঙ্গে কথা বলবেনে। প্রধানমন্ত্রী তাঁদের বলবেন, তাঁরা যদি নির্বাচনে সহযোগিতা করেন এবং আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য কাজ করেন তাহলে নির্বাচনে জিতে ক্ষমতায় আসতে পারলে তাঁর জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করা হবে।
আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগ আরেকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। নির্বাচনে জিতে আবার ক্ষমতায় আসলে দল এবং সরকার আলাদা করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে যারা দলের কেন্দ্রীয় কমিটি বা জেলা কমিটিতে থাকবেন তারা এমপি এবং মন্ত্রিত্বের মধ্যে থাকবেন না। ফলে সরকারের মধ্যে একটি ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। দল হিসেবে আওয়ামী লীগ মন্ত্রী এবং এমপিদেরকেও জবাবদিহিতার মধ্যে আনতে পারবে। এই পদ্ধতি প্রয়োগ হলে আওয়ামী লীগের সব পরীক্ষিত রাজনীতিবিদই দলে কোনো না কোনো পদ পাবেন বলে আশা করা যায়।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।