নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:৩৬ পিএম, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সড়ক পথে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের উদ্দেশে এক সাংগঠনিক সফরে যাত্রা শুরু করেছেন গতকাল শনিবার। এ সফরে ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গী হয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল সহ আরও অনেকে। কিন্তু লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, আওয়ামী লীগের এই সাংগঠনিক সফর জনগণের মধ্যে কোনো সাড়া ফেলেনি।
এর আগে ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বেই সেপ্টেম্বরের গোড়ার দিকে নীলফামারীগামী ‘নীলসাগর এক্সপ্রেস’ করে উত্তরাঞ্চলে সাংগঠনিক সফরে যায় আওয়ামী লীগের একটি দল। কিন্তু জনগণের মধ্যে সে সফরও উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। বরং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী বহনকারী ট্রেনটি সময়মতো গন্তব্যে না পৌঁছানোয় বিরক্তি সৃষ্টি হয় জনমনে। তবে একটি বিষয় এই দুটি সফর থেকে স্পষ্ট হয়ে গেছে। একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের অন্য কোনো নেতার উপস্থিতিতেই কোনো সমাবেশ বা কর্মসূচি জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারছে না।
শুধু সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরই নয়, মোহাম্মদ নাসিম, তোফায়েল আহমেদের মতো আওয়ামী লীগের অন্যান্য সিনিয়র নেতারাও নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন সভা-সমাবেশে অংশ নিচ্ছেন, জনসংযোগ করছেন। কিন্তু কোনো কিছুই জনগণের মধ্যে কোনো সাড়া ফেলতে পারছে না। একমাত্র দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা কোথাও বক্তব্য রাখলেই জনগণকে আগ্রহী দেখা যাচ্ছে, জনগণের মধ্যে সাড়া পড়ে যাচ্ছে। অথচ বিগত দিনগুলোতে পরিস্থিতি কিন্তু এমন ছিল না। একসময় শেখ হাসিনা ছাড়াও অন্যান্য নেতাদেরও জনগণের মধ্যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, সাজেদা চৌধুরীদের বক্তৃতা শোনার জন্য এক সময় অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে থাকতো মানুষ। এছাড়া সৈয়দ আশরাফদের মতো নেতাদের মানুষের ওপর একটি প্রভাব ছিল, জনপ্রিয়তা ছিল। কিন্তু বর্তমানে আওয়ামী লীগের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে, শেখ হাসিনা না থাকলেই কোনো কর্মসূচি আর জনগণের মধ্যে আলোড়ন সৃষ্টি করে না। শেখ হাসিনা ছাড়া জনগণকে আকর্ষণ করার মতো কারিশমা যেন আওয়ামী লীগের আর কোনো নেতার নেই। এই নেতৃত্ব শূন্যতা অদূর ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগকে ভোগাবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা।
ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে হয়ে যাওয়া সর্বশেষ সফর দুটিতে দলীয় কর্মী ছাড়া সাধারণ জনগণের মধ্যে তেমন কোনো উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু কর্মীরা তো দলের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেই। এই কর্মীদের কারণে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ৩৩-৩৪ শতাংশ ভোট নিশ্চিত হয়ে আছে সত্যি কিন্তু নেতারা যদি সাধারণ মানুষকে তাদের কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে না পারেন তাহলে আওয়ামী লীগের জন্য আসন্ন ভোট যুদ্ধে জেতা কঠিন হয়ে যাবে।
এছাড়া নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগের আরেকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে। এর আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা দানের উদ্দেশ্যে সড়ক পথে কক্সবাজার গেলে ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, রাজনীতিবিদদের সড়ক পথে ভ্রমণে মানুষের ভোগান্তি হয়, কষ্ট বাড়ে। কিন্তু এবার নিজেই সড়ক পথে ভ্রমণে গেলেন তিনি। এছাড়া এর আগে যখন উত্তরাঞ্চল সফরে ট্রেনে গেছেন ওবায়দুল কাদের ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা, তখনও ওই ট্রেন বিলম্বে গন্তব্যে পৌঁছানোয় জনমনে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন দল। কোনো দল ক্ষমতায় থাকলে তাকে অনেকগুলো সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় যা বিরোধী দলে থাকার সময় না করলেও চলে। নিজেদের কোনো কর্মকাণ্ডে জনগণের ভোগান্তি হচ্ছে কী না সে বিষয়ে অবশ্যই সতর্ক থাকতে হয় ক্ষমতাসীন দলকে। কিন্তু আওয়ামী লীগের সড়ক পথ, রেলপথে সাংগঠনিক সফরের মতো বিষয়গুলো জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি করে তাদের বিরক্ত ও বিব্রত করছে। এ ধরনের কর্মসূচি আওয়ামী লীগকে জনসম্পৃক্ত করছে না বরং দলটিকে ঘিরে জনবিচ্ছিন্নতা তৈরি করছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটি জনবিচ্ছিন্নতা তৈরি করে এমন কর্মসূচি পালন অব্যাহত রাখবে কী না তা আওয়ামী লীগকে ভেবে দেখতে হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।