নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০২ পিএম, ০২ অক্টোবর, ২০১৮
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাংলাদেশে নিযুক্ত প্রতিনিধি ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে গতকাল সোমবার বৈঠকে বসেছিল বিএনপি। বৈঠক শেষে এর বিষয়বস্তু নিয়ে বিএনপির কোনো নেতাই মন্তব্য করেননি। তবে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, ইইউয়ের সঙ্গে বিএনপির মূলত দুটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১০ অক্টোবরের রায়ের পর বিএনপির অবস্থান।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ইইউয়ের ম্যান্ডেট হলো কোনো সন্ত্রাসী দল, সন্ত্রাসের সঙ্গে কোনো ভাবে সম্পৃক্ত এমন দলের সঙ্গে তারা কোনো সম্পর্ক করে না। এমন দলগুলোকে ইইউ কোনো বিষয়েই কোনো সমর্থনও দেয় না। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পর বর্হিবিশ্ব থেকে সর্বপ্রথম নিন্দা জানিয়েছিল ইইউ। ইইউয়ের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, ‘এই ঘটনার দায় রাষ্ট্র এড়াতে পারে না।’ সর্বোচ্চ পর্যায়ের তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার বিচার দাবি করেছিল ইইউ। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য বিএনপি সরকারের সাজানো জজ মিয়া নাটকের পরিপ্রেক্ষিতে ইইউ থেকে মামলার সঠিক তদন্ত নিয়ে হতাশা প্রকাশ করা হয়। মামলার তদন্ত নিয়ে বহির্বিশ্বের মধ্যে সর্বপ্রথম প্রশ্ন তুলেছিল ইইউ।
সন্ত্রাসমূলক কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে বিদেশি রাষ্ট্রগুলো বেশি খবর রাখে বলেই মত বিশ্লেষকদের। তারা নিজস্ব সূত্রের মাধ্যমে সরকারের বাইরেও পৃথক ভাবে ঘটনার তথ্য জানার চেষ্টা করে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিষয়েও বিস্তারিত তথ্য এরই মধ্যে জেনে গেছে ইইউ। এর মামলার গতি প্রকৃতি এবং সম্ভাব্য রায় নিয়েও ধারণা আছে তাদের।
ইইউয়ের অপর একটি ম্যান্ডেট হলো তারা সবসময়ই মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। যেখানে যে কারণেই মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হোক না কেন সবসময়ই এর বিরুদ্ধে অবস্থান থাকে ইইউয়ের। ইইউয়ের এই ম্যান্ডেটের ওপর ভরসা করেই তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিল বিএনপি। কিন্তু বৈঠকে ইইউয়ের পক্ষ থেকে বিএনপিকে প্রশ্ন করা হয় রায়ের বিষয়ে। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে বিএনপি যদি সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষিত হয় অথবা সন্ত্রাসের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ হয়, তাহলে কী পদক্ষেপ নেবে তারা-এটাই জানতে চেয়েছিল ইইউ। এমন প্রশ্নের কোনো সরাসরি উত্তর দেননি বৈঠকে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা। বরং বিএনপি নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি তোলা হয়, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার বিচারকে রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে।
এ পর্যায়ে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইইউ রাষ্ট্রদূত রেনজি তিরিংক বলেন, তাদের কাছে গেনেড হামলার ঘটনা ও এর বিচার নিয়ে অনেক হালনাগাদ তথ্য আছে। আমরা অবশ্যই জানবো বিচারকে কোনো ভাবে প্রভাবিত করা হয়েছে কিনা।
এরপরই ইইউয়ের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের আলোচনা আর বেশিদূর আগায়নি বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো। পরে বিএনপি নেতারা ওই বৈঠকের বিষয়েও বিস্তারিত কিছু না জানিয়েছেন স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে সম্প্রতি রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্য নিয়ে বেশ তৎপর দেখা গিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে। সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খানের বাসায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট গিয়েছিলেন। সেখানে জাতীয় ঐক্যে বিএনপির যাওয়া নিয়েও কথাবার্তা হয় বলেই জানা গেছে। কিন্তু হঠাৎ করেই বিএনপির সঙ্গে ঐক্য নিয়েও মার্কিন তৎপরতা থেমে গেছে। জানা গেছে, ১০ অক্টোবর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার রায়ের জন্য অপেক্ষা করছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, শুধু ইইউ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই নয় যুক্তরাজ্য, কানাডাসহ প্রায় সব দেশের কূটনীতিক ও দাতা সংস্থার প্রতিনিধিরাই ১০ অক্টোবরের রায়ের জন্য অপেক্ষা করছেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার অন্যতম আসামি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। মামলার রায়ে তারেকের কী দণ্ড হয়, তাই জানতে চায় কূটনীতিকরা। রায়ে তারেক জিয়া দণ্ডের প্ররিপ্রেক্ষিতে তিনি সন্ত্রাসী বলে প্রমাণিত হলে বিএনপি সেক্ষেত্রে কী উদ্যোগ নেবে তাও দেখতে চায় বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা। একই সঙ্গে মামলার রায়ে গ্রেনেড হামলার সঙ্গে বিএনপির সংশ্লিষ্টতা কতটুকু তাও জানতে চান কূটনীতিকরা।
ইইউয়ের একজন প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জার্মানির কুখ্যাত নাৎসি পার্টিও অনেক জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু তাদেরও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই বিএনপিকে নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিনা? এ ব্যাপারে সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং চাপ প্রয়োগের আগে রায়ে তাঁদের অবস্থা দেখতে চায় ইইউ।
এছাড়া রায়ের পর তারেক জিয়া নিয়ে বিএনপির অবস্থান আরেকবার জানতে চায় ইইউসহ অন্যান্য দেশের কূটনীতিকরা। সন্ত্রাসী হিসেবে প্রমাণের পরও দলে তারেক তাঁর অবস্থানে থাকলে অবশ্যই বিএনপির বিষয়টি আরেকবার ভেবে দেখবেন কূটনীতিকরা।
গতকাল সোমবার ইইউয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা বাংলাদেশে সুষ্ঠু, অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। গতকাল একবারও তারা সেই নির্বাচনে বিএনপিকে থাকতেই হবে এমন কথা বলেনি।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার রায়ে বিএনপি যদি অস্তিত্বের সংকটে পড়ে, দল হিসেবেই যদি তারা সন্ত্রাসী বা সন্ত্রাস সংশ্লিষ্ট বলে প্রমাণ হয় তাহলে এখন যতটুকু আন্তর্জাতিক সমর্থন আছে তাও হারাবে বিএনপি।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।