নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০২ অক্টোবর, ২০১৮
সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা সম্প্রতি তাঁর বই ‘এ ব্রোকেন ড্রিম: রুল অব ল’, হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ডেমোক্রেসি’ এর মোড়ক উন্মোচন করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির জাতীয় প্রেসক্লাবে স্থানীয় সময় শনিবার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের বক্তৃতায় যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি। কিন্তু নিজের বইয়ের কারণেই বিপাকে পড়েছেন সিনহা। এমনকি তাঁর যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়াও প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক আশ্রয়ের নিয়ম অনুযায়ী, রাজনৈতিক কারণে ঝুঁকির মধ্যে থাকলে, দেশত্যাগে বাধ্য হওয়া বা পালিয়ে গেলে, জীবন আশঙ্কার মধ্যে থাকলে, ক্ষতির আশঙ্কা থাকলেই কেবল সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া যায়। সবচেয়ে বড় বিষয়টি হলো রাজনৈতিক ভাবে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার পক্ষে থাকলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় পান। কিন্তু রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়া নিয়ে সিনহার বিষয়ে তথ্য নিতে গিয়েই অসঙ্গতি পায় যুক্তরাষ্ট্র।
নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি রাজনৈতিক আশ্রয় চাইলে ওই ব্যক্তির দেশের মার্কিন দূতাবাসে চিঠি পাঠায় যুক্তরাষ্ট্র। রিকল নোটিশে জানতে চাওয়া নির্দিষ্ট ব্যক্তিটির দেশে অবস্থা কী, রাজনৈতিক অবস্থা কী ইত্যাদি তথ্য। জানা গেছে, রিকল নোটিশের উত্তরে মার্কিন প্রশাসন জানতে পেরেছে বিচারপতি সিনহা কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন না। তাই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য তাঁকে বিবেচনা করা কঠিন। এছাড়া বিচারপতি সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগও জানতে পেরেছে মার্কিন প্রশাসন।
সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে মামলা করেছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিজে শাহবাগ থানায় গিয়ে মামলাটি করলেও তা গতকাল সোমবার প্রকাশ পায়। মামলাটি নাজমুল হুদা করায় বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। মার্কিন ঘনিষ্ঠ রাজনীতিবিদ আইনজীবীদের মধ্যে অন্যতম একজন নাজমুল হুদা। বাংলাদেশস্থ মার্কিন দূতাবাসের প্যানেল আইনজীবীদের একজন তিনি। বাংলাদেশে মার্কিন স্বার্থ সংশ্লিষ্ট আইনগত বিষয়গুলোর জন্য প্রায়ই ডাক পড়ে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার। সিনহার বিরুদ্ধে তাঁর মামলার মধ্যে দিয়েই সাবেক প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে মার্কিন মনোভাব অনেকটাই প্রকাশ পেয়েছে বলে মত বিশ্লেষকদের।
এছাড়া, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষ প্রচণ্ড আগ্রহী বলেই কূটনৈতিক মহলে প্রচারণা চালানো হয়। তবে একাধিক সূত্র বলছে, সিনহার ব্যাপারে বাংলাদেশের মানুষ অতোটা আগ্রহী নয় বলেই মনে করে মার্কিন প্রশাসন। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিনহার বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মাত্র ১২ জন নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
অভিবাসীদের ব্যাপারে বর্তমান মার্কিন সরকারের নীতি অত্যন্ত কঠোর। বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি হলো যেকোনো ভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন প্রত্যাশীদের নিরুৎসাহিত করা। সম্প্রতি গ্রিন কার্ড ধারীদের মার্কিনীদের সুবিধা কমানোর একটি বিলও যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে উত্থাপিত হয়েছে।
এমন অবস্থায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তির আশা ধীরে ধীরে নিরাশায় পরিণত হতে বসেছে। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় না পাওয়ার জন্য সিনহার বই বড় ভূমিকা রাখছে বলেই মানছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা। বইয়ের কিছু অংশের লেখায় সিনহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত বিভিন্ন অভিযোগের যোগসূত্র পাওয়া যাচ্ছে বলেই মত তাঁদের। বইয়ের একটি স্থানে সুরেন্দ্র কুমার সিনহা লিখেছেন, তাঁর ব্রাদাররা ( অপর বিচারপতিরা) একই বেঞ্চে বসতে অস্বীকৃতি জানায়। এর মধ্যে দিয়ে সিনহার বিষয়ে সরকারের চেয়ে বিচার বিভাগের সংশ্লিষ্টতাই বেশি বলে প্রতীয়মান হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। এছাড়া বইয়ের তথ্যের ভিত্তিতে খোঁজ খবরও নিচ্ছে মার্কিন প্রশাসন। মার্কিন তদন্তে দেখা যাচ্ছে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার প্রধান বিচারপতি হওয়ার আগের ইতিহাসও কলুষমুক্ত নয়। বিচারক জীবনে সিনহার বিরুদ্ধে বহুবার বহু অভিযোগ উঠেছে। বিচারকদের জীবনে কোনো কেলেঙ্কারি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ কঠোর দৃষ্টিতেই দেখা হয়। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান হিসেবে মনোনয়ন পাওয়া ব্রেট কাভানা’র স্কুল জীবনের একটি কেলেঙ্কারির কারণেই নিয়োগ আটকে গেছে।
এর আগে বাংলাদেশ থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রাপ্তদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ওয়ান-ইলেভেনের সময়কালের সেনাবাহিনী প্রধান মঈন ইউ. আহমেদ। কিন্তু তাঁর সঙ্গে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতার বড় কোনো প্রমাণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে নেই। এমনকি তিনি একটি বইও তৎকালীন প্রেক্ষাপটে লিখেছিলেন তাঁর প্রকাশ করেনি। এজন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে তাঁর রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েও কোনো উচ্চবাচ্য হয়নি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে তাঁর বই লেখার প্ররোচকদেরও পাশে দেখা যাচ্ছে না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বই লেখার প্ররোচক হিসেবে দেখা হয় ড. কামাল হোসেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং দেশের বাংলা ও ইংরেজি দুটি সংবাদপত্রের সম্পাদককে। কিন্তু এখনো প্রকাশ্যে তাঁদের কাউকেই সিনহার জন্য বক্তব্য দিতে দেখা যায়নি। সিনহা ও তাঁর বইয়ের সমর্থনে এখনো দৃশ্যমান কিছুই করেননি তাঁরা।
সবকিছু মিলে, একটি বিষয় স্পষ্ট যে সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়াটা সহজ হচ্ছে না। প্রশ্নবিদ্ধ অতীত ও বর্তমানের সুরেন্দ্র কুমার সিনহার মার্কিন রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আগে অনেক বিষয়ের সদুত্তর পেতে হবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।