নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:৩৩ পিএম, ১৪ অক্টোবর, ২০১৮
বাংলাদেশের রাজনীতির ময়দান সরগরম করে রাখা জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতৃবৃন্দকে ইদানীং ঘনঘন বৈঠক করতে দেখা যাচ্ছে। তাদের অনেকগুলো বৈঠকই অনুষ্ঠিত হচ্ছে গভীর রাতে। এখন কথা হচ্ছে, রাত জেগে থাকে চোর-ডাকাত, উচ্ছন্নে যাওয়া কিশোর কিংবা ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকা। রাত জেগে তাদের কেউ অপরাধ করে, কেউ বা আবার জীবন নিয়ে হা-হুতাশ করতে করতে কবিতা লেখে। কিন্তু ড. কামাল হোসেন বা অধ্যাপক ড. বদরুদ্দোজা চৌধুরীরা সাধু ব্যক্তি, চুরি-ডাকাতি করেন না বলেই বিশ্বাস সবার। আবার তাঁরা কবিতা লেখেন এমন কথাও কেউ কখনো শোনেনি। তাই জাতীয় ঐক্যের বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদরা রাত জেগে থাকেন কেন আর কেনই বা রাতে বৈঠক করেন তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন ওঠা অস্বাভাবিক কিছু নয়।
ঘুরে আসা যাক বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠতম রাজনীতিবিদ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন নামক জাদুঘর থেকে। বঙ্গবন্ধুর দিনলিপি থেকে জানা যায়, তিনি সব কাজ দিনে করতেন। আজকালকার অনেক রাজনীতিবিদের মতো বঙ্গবন্ধুর কোনো ‘সাইড বিজনেস’ ছিল না, তিনি ছিলেন পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদ। এই পুরোদস্তুর রাজনীতিবিদের রাজনৈতিক কর্মসূচি শুরু হতো সকাল থেকে। তারপর সূর্যের বিদায়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দিনের কর্মসূচি সমাপ্ত করার চেষ্টা করতেন বঙ্গবন্ধু। সে জন্যই আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক হতো সকালে, দুপুর কিংবা বিকেলে। আজও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের কাউন্সিল অধিবেশনও বসে দিনের বেলায়, শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভার মিটিং হয় সকাল কিংবা দুপুরে।
এমনকি বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের উত্তাল সেই দিনগুলোতেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেছেন ভোরবেলায়। কিংবা ২৫ মার্চ কালরাতের কথাই ধরা যাক। সেদিনও সন্ধ্যার মধ্যেই কর্মসূচি শেষ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। সেদিন শেষ পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিলেন ব্যারিস্টার আমীরুল ইসলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে অন্য কোথাও চলে যাওয়ার পরামর্শ দিলেও বঙ্গবন্ধু বলেছেন, তাঁকে খুঁজে না পেলে পাক হানাদার বাহিনী বাঙালিদের ওপর আরও অত্যাচার করবে। স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বঙ্গবন্ধু বললেন, ‘আমি থাকি তোরা যা।’ অর্থ্যাৎ সেই ভয়ঙ্কর দিনেও রাতে গোপন বৈঠকে মিলিত হবার প্রয়োজনীয়তা বোধ করেননি বঙ্গবন্ধু।
তারপর এলো কলঙ্কিত সেই দিন পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট। সেদিন বঙ্গবন্ধুর পিএস ফরাসউদ্দীন সাহেবের ফেয়ারওয়েল ছিল। আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদকে বললেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে, তিনি বাসায় চলে যাবেন। কারণ আগামীকাল তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে যেতে হবে। মৃত্যুর দিনটিতেও নিয়ম বিচ্যুত হননি বঙ্গবন্ধু। মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ টেনে নিয়ে যাননি তিনি।
সন্ধ্যার পর থেকে বঙ্গবন্ধু বাসাতেই থাকতেন। সন্ধ্যার পর যারা তাঁর বাসায় আসতো, তাঁরা আসতো অনানুষ্ঠানিকভাবে। খুব ঘনিষ্ঠজনদের অনানুষ্ঠানিক সেই সাক্ষাতে খাওয়া-দাওয়া চলতো, চলতো আড্ডা। তাজউদ্দীনের আহমেদের মতো বঙ্গবন্ধুর খুব কাছের মানুষরাই ওই আড্ডায় অংশ নিত।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর দুর্বৃত্তায়ন হলো বাংলাদেশের রাজনীতির। বদলে যেতে লাগলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। বাংলাদেশের মাটিতে দেখা গেল এক অদ্ভুত রাজনীতিবিদকে। সেই রাজনীতিবিদের নাম জিয়াউর রহমান। সেনাশাসক থেকে রাজনীতিবিদে পরিণত হওয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দেখা গেল সানগ্লাস পরে রাতে ঘুরে বেড়াতে। আমরা রাতকানা রোগের কথা শুনেছি, কিন্তু জিয়াউর রহমান আমাদের দিনকানা অসুখের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আসলেই ভেবে দেখুন। দিনকানা না হলে একজন রাজনীতিবিদ সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড রাতে পরিচালনা করবেন কেন? একজন মানুষ রাজনীতিবিদ হলেও তো সে তো মানুষ। তাঁর সামাজিক-পারিবারিক জীবন আছে। গভীর রাতে যদি কেউ রাজনীতি করতে নামে তবে তাঁর সামাজিক পারিবারিক দায়িত্বগুলো সে পালন করে কখন?
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, রাত ১২টা-১টায় রাজনৈতিক কারণে জিয়ার বাড়িতে কাউকে ডেকে পাঠানো ছিল অতি স্বাভাবিক ঘটনা। পরবর্তীতে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর আদর্শ স্ত্রীর মতো খালেদা জিয়াও স্বামীর পদাঙ্ক অনুসরণ করেন। তাঁর মিটিংও শুরু হতো রাত ১০টায়। বর্তমানে জিয়া-খালেদা জিয়াকে অনুসরণ করছে ‘জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট’ জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার নেতারা। ড. কামাল হোসেন, আ স ম আব্দুর রবরাও এখন মিটিং করছেন রাতে। অথচ গুরুজনেরা বলেন, রাতে সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ে কাকডাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ভালো অভ্যাস। কিন্তু ঐক্য প্রক্রিয়ার বর্ষীয়ান নেতারা কাকডাকা ভোরের বদলে শেয়াল ডাকা রাতকেই বৈঠক করার আদর্শ সময় বলে মনে করছেন। নিজেরা গুরুজন হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা নিজেরাই অমান্য করছেন স্বাস্থ্যবিধি। এই বয়সে এভাবে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে জাতীয় ঐক্য টেকানো তো দূরের কথা, এই নেতারা নিজেদের শরীর টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হবেন কী না তাই নিয়ে দুশ্চিন্তায় শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
শুধু তাই নয়, রাতে বৈঠক হলে মিডিয়াও সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যায়। ভোটের রাজনীতিতে অপাংক্তেয় ড. কামাল হোসেনরা রাজনীতিতে টিকেই আছেন মিডিয়ার বদৌলতে। অথচ মিডিয়ার সঙ্গেই এমন বিমাতাসুলভ আচরণ? একদম উচিত হচ্ছে না বলে মত বিশ্লেষকদের।
রাজনীতির মূল উদ্দেশ্যই হলো দেশ ও মানুষের মঙ্গল। এটি কোনো গোপন বিষয় বা অপরাধমূলক কাজ নয় যে তা রাতের আধারে করতে হবে। ভুলে গেলে চলবে না, রাজনীতি দিনে হয় আর রাতে হয় ষড়যন্ত্র। তবুও কেন আমাদের মান্য গণ্য রাজনীতিবিদরা রাতে বৈঠক করেন তা নিয়ে বিশদ গবেষণা করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।