নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২২ অক্টোবর, ২০১৮
নবগঠিত রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিষয়ে আগামীকাল মঙ্গলবার সংসদে আলোচনা হতে পারে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, নিজেদের পরিচিত করে তুলতে ঐক্যফ্রন্ট নিজেরা না যতটা কাজ করছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এই ফ্রন্ট সম্পর্কে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জোটটিকে মানুষের কাছে পরিচিত করে তুলতে আরও বেশি কাজ করে চলেছেন। ফলে রাজনীতি সচেতন জনগণের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণার দায়িত্ব কি নিজের কাঁধে তুলে নিল আওয়ামী লীগ সরকার?
আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছে গত ১৪ অক্টোবর। কিন্তু এরই মধ্যে সরকার ঐক্যফ্রন্টকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা। অথচ রাজনৈতিক গুরুত্বের বিবেচনায় বিচার করলে এই জোট কিন্তু ২০ দলের চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে কয়েকজন ব্যক্তি রাজনীতিবিদ আছেন যারা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ কিন্তু জোটটিতে বিএনপি ছাড়া সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী কোনো দল নেই।
দুর্বল দলগুলো নিয়ে গঠিত এই ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হওয়ার পর নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী এই ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানালেন । প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন বিভিন্ন মন্ত্রী-এমপিরাও। ফলে নিজেদের কর্মকাণ্ডে যতটা না পরিচিতি পাচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, তারচেয়েও বেশি পরিচিতি পাচ্ছে সরকারি দলের কর্মকাণ্ডে।
এই কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবেই যেন সপ্তাহে তিনবার ডায়ালাইসিস নেওয়া রোগী বিএনপিপন্থী বুদ্ধিজীবী ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে মামলা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এমন অসুস্থ ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না বিধায় তিনি সাহসী হয়ে উঠেছেন। এছাড়া বিএনপির নেতাকর্মীদের গায়েবি মামলা দেওয়া হচ্ছে। গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিএনপি নেতা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে।
আবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন সিলেটে জনসভার অনুমতি চাইলো প্রথমে তা নাকচ করে দেওয়া হলো, অথচ পরে অনুমতি দেওয়া হলো ঠিকই। সরকারের এমন সব সিদ্ধান্তের ফলেই ঐক্যফ্রন্ট পরিচিতি পাচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টকে তাঁদের স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে বাধা দেওয়ার কারণেই তারা শিরোনাম হচ্ছে, তাদের নিয়ে আগ্রহ বাড়ছে মানুষের। গঠিত হওয়ার পর থেকে যে ঐক্যফ্রন্টটি কিছুই করতে পারেনি, তাদের নিয়ে সরকার কেন অসহিষ্ণু মনোভাব দেখাচ্ছে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের শুভাকাঙ্ক্ষীদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে।
সাধারণত সরকার কোনো ব্যক্তি বা দলকে গুরুত্ব দিলে তাদের নিয়ে জনগণের আগ্রহ বাড়ে। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেনের কথা। লাইভ টকশোতে নারী সাংবাদিক মাসুদা ভাট্টিকে অশালীন মন্তব্য করার তাঁর বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই মামলা হয়েছে। সে মামলায় মইনুল জামিন পেয়ে গেছেন। ব্যারিস্টার মইনুলের বিরুদ্ধে মামলার ফলে জনগণের ধারণা হয়েছে সরকার মইনুলকে ভয় পায়। আমরা সবাই জানি, ওয়ান-ইলেভেনের পর ড. ফখরুদ্দীনের তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের সবচেয়ে স্বেচ্ছাচারী, অসংযত উপদেষ্টা ছিলেন ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। ২০০৯ সালে নির্বাচিত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ধারণা করা হয়েছিল এমন অসংযত, ঔদ্ধত্যপূর্ণ লোকের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু কিছুই করা হয়নি। এমন ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে জনগণ ধারণা করতে পছন্দ করে, আলোচিত ব্যক্তি কি ধরাছোঁয়ার বাইরে নাকি? কোথায় তাঁর শক্তির উৎস? বর্তমানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি করে তাঁদের সম্পর্কে জনমনে এমনই ধারণার সৃষ্টি করছে সরকার।
বিশ্লেষকরা বলছেন, নির্বাচনের আগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও আওয়ামী লীগ সরকারের ভীত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নিজারাই সুসংগঠিত নয়। এখনো জামাত ইস্যুর সমাধান করতে পারেনি তারা। এখন সরকার যদি নিজেই এমন দুর্বল ঐক্যফ্রন্টকে প্রতিষ্ঠিত করার দায়িত্ব নেয় তাহলে তা নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক অদূরদর্শিতার বহিঃপ্রকাশ।
প্রত্যেকটি সরকারই নিজেদের মেয়াদের শেষ দিকে এসে স্নায়ুচাপে ভোগে। এই স্নায়ুচাপের কারণে সরকার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রচারণার দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে কি না সেটাই প্রশ্ন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।