ইনসাইড পলিটিক্স

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক দশক

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ২৪ অক্টোবর, ২০১৮


Thumbnail

দশম জাতীয় সংসদের সর্বশেষ অধিবেশন শুরু হয়েছে গত রোববার। এই সংসদ অধিবেশন শেষ হওয়ার মধ্য দিয়ে দশম সংসদের পাঁচ বছর পূর্তি হবে এবং সমাপ্তি হবে আওয়ামী লীগ সরকারের ১০ বছরের শাসনকালের। আর এই সংসদ অধিবেশনের সমাপ্তির মধ্য দিয়েই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে টানা ১০ বছর পূর্ণ করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

এর আগেও শেখ হাসিনা ১৯৯৬–২০০১ সাল মেয়াদে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। অর্থ্যাৎ সব মিলিয়ে মোট ১৫ বছর রাষ্ট্র প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বাধিক সময়ের জন্য শেখ হাসিনাই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনার শাসনামলের ১০ বছর পূর্তিতে তাঁর ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া ও রাষ্ট্র পরিচালনার সময়টা ফিরে দেখা যাক।

আজ থেকে ১০ বছর আগের কথা। বিএনপি-জামাত জোট সরকারের অপশাসন আর ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের অনির্বাচিত সরকারের শাসনের অধীনে জীবনযাপন করে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশের জনগণ। এমন সময় ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের পক্ষে এক ঐতিহাসিক গণরায় প্রদাণ করে জনতা। জনগণের ভোট নিয়ে বিপুল ব্যবধানে নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিকে পরাজিত করে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ আর দ্বিতীয় বারের মতো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসেই দেশের উন্নয়ন ও জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনে নিরলসভাবে পরিশ্রম করতে শুরু করেন। ১০ বছরের শাসনকালে নিজের দূরদৃষ্টি, রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দক্ষ রাষ্ট্র চালনায় ইতিমধ্যেই বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে দিয়েছেন তিনি। । শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্জনের সংখ্যা এতটাই বেশি যে তার সব কটি উল্লেখ করা গণমাধ্যমের সীমিত পরিসরে মোটামুটি অসম্ভব। গত ১০ বছরে বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে, দেশে বেকারত্বের হার কমেছে, নাম লিখিয়েছে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায়। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপনের মধ্য দিয়ে মহাকাশে পৌঁছে যাওয়া, নৌবাহিনীর সাবমেরিন যুগে প্রবেশ কিংবা সমুদ্রসীমা বিজয়ের মতো ঘটনাগুলো ঘটেছে রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কিংবা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারও সম্পন্ন হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। দেশকে দক্ষ হাতে পরিচালনা করে দেশী-বিদেশী অজস্র স্বীকৃতিও পেয়েছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০০৯ সালের ৩ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সংসদনেতা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। শেখ হাসিনার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই ২১ জানুয়ারি দীর্ঘ ১৯ বছর পর দেশে উপজেলা নির্বাচন হয়। এর মাত্র এক সপ্তাহ পরই প্রতিশ্রুতি মোতাবেক ২৯ জানুয়ারি কণ্ঠভোটে প্রস্তাব পাসের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় সংসদে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটির পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সবচেয়ে বড় সাফল্যের একটি এই একাত্তরের মানবতাবিরোধী কার্যক্রম ও গণহত্যা সংগঠনকারী যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনা এবং প্রধান অপরাধীদের শাস্তি কার্যকর করা। ইতিমধ্যে মানবতাবিরোধী অপরাধে জামাতের শীর্ষনেতা মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মতো যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

মানবতাবিরোধী অপরাধ ছাড়াও অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ মামলার রায় প্রদান ও দণ্ড কার্যকর হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে সে বছরের ১৯ নভেম্বর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি ঘোষণা করে আদালত। এরপর ২০১০ সালের জানুয়ারিতে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সাজা কার্যকর করা হয়।

২০০৪ সালে সংঘটিত বাংলাদেশের ইতিহাসের ভয়াবহতম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার রায়ও হয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর এই মামলার রায়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত হন, মৃত্যুদণ্ড হয় সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের। এছাড়া বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী ব্যক্তি সাবেক প্রধানমন্ত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দুর্নীতির দায়ে বিচারের সম্মুখীন করাকেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্য হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

বাংলাদেশের উন্নয়নের রূপকার শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক খাতে অভূতপুর্ব উন্নতি ঘটে বাংলাদেশের। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও দেশকে দারিদ্রমুক্ত করার কৃতিত্ব শেখ হাসিনারই। শেখ হাসিনার শাসনামলেই `স্বল্পোন্নত` দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয় বাংলাদেশ।

শেখ হাসিনার ১০ বছর মেয়াদে দেশের অর্থনীতির উল্লম্ফনের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। ২০০৭-০৮ অর্থবছরের জিডিপির (অর্থনীতির আকার) পরিমাণ ছিল চলতি মূল্যে ৬,২৮,৬৪২ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২২,৩৮,৪৯৮ কোটি টাকা। ২০০৭-০৮ অর্থবছর শেষে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৪৩,৭১৯ টাকা। গত ১০ বছরে বেড়ে প্রায় তিনগুণ হয়েছে। ২০০৭ সালে জাতীয় দারিদ্র্যের হার যেখানে ছিল ৪০ শতাংশ, সেখানে ২০১৭ সালে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪.৩ শতাংশে।  ২০০৭-০৮ অর্থবছরের তুলনায় এই সময়টাতে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে রেমিটেন্স। ওই সময়ে ৫৪২ বিলিয়ন টাকা থেকে বেড়ে ১০১১ বিলিয়ন টাকায় উন্নীত হয়েছে। গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে বাংলাদেশের আমদানির পরিমাণ ছিল ১,৩৩,৬৫০ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তা ৩৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৩,৪৯,১০০ কোটি টাকা। আর রপ্তানি ওই সময়ের মধ্যে বেড়েছে পঁয়ত্রিশ গুণ।

অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৃষ্টান্ত স্বরূপ ১০টি মেগা প্রকল্প যথা- পদ্মা বহুমুখী সেতু নির্মাণ প্রকল্প, পদ্মা রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প, রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, চট্টগ্রাম দোহাজারী থেকে রামু কক্সবাজার এবং রামু ঘুমধুম রেলপথ নির্মাণ, ঢাকা মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) ডেভেলপমেন্ট প্রকল্প, পায়রা সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ প্রকল্প, মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল পাওয়ার প্রকল্প এবং মহেশখালীতে ভাসমান এলএমজি টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এখন নির্মানাধীন রয়েছে। এর মধ্যে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের পরও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প নির্মানাধীন আছে কেবল শেখ হাসিনার সাহসিকতার ফলেই।

শুধু অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, শেখ হাসিনার দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালনায় কৃষি খাতেও অভূতপুর্ব উন্নয়ন হয়েছে গত ১০ বছরে। সরকারের কৃষি-বান্ধব কার্যক্রমের ফলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও কৃষি খাতের উন্নয়নে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ফলে গত দশ বছরে দেশে খাদ্যশস্য উৎপাদন বেড়েছে ৩০ শতাংশেরও বেশি। হেক্টরপ্রতি ধানের উৎপাদন তিন গুণের বেশি বৃদ্ধি পাওয়ায় এ সময়টাতেই বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো ধান রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। বিশ্বে ফল উৎপাদন বৃদ্ধির হারও এখন বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। সব মিলিয়ে, বাংলাদেশকে বিশ্বের দশম বৃহত্তম খাদ্য উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।

নারী অধিকার সুরক্ষায়ও শেখ হাসিনা স্থাপন করেছেন অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। ক্ষমতায় আসার পরপরই ২০১০ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৯৭ সালের নারী উন্নয়ন নীতি অনুমোদন করে। এছাড়া জেন্ডার ইক্যুটি ইনডেক্স অনুযায়ী নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে।

শেখ হাসিনার দক্ষ দেশ চালনায় বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতিও হ্রাস পেয়েছে । ২০০১ থেকে ২০০৫ সালে বাংলাদেশ যেখানে ছিল দুর্নীতিতে প্রথম, ২০১০ সালে দুনীতি ধারণাসূচকে বাংলাদেশ দুর্নীতির ক্ষেত্রে পিছিয়ে যায় দ্বাদশ স্থানে।

দরিদ্র ছিন্নমূল মানুষের ভাগ্যোন্নয়নেও কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। এই উদ্দেশ্যে ২০১২ সালে ৫০ হাজার ভূমিহীণ, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে পুনর্বাসন এবং সিডর ও আইলায় ক্ষতিগ্রস্থ এলাকার উন্নয়ন, উপজাতীয়দের কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ গৃহ নির্মাণের লক্ষ্যে ১ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা ব্যয়ে আশ্রয়ন-২ প্রকল্প গ্রহণ করেছেন তিনি। ৪৮ হাজার দরিদ্র-অসহায় মানুষকে আইনী সহায়তাও প্রদান করা হয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলে। এছাড়া “গুচ্ছগ্রাম” প্রকল্পের আওতায় ১৬৩টি গুচ্ছগ্রামে ৭ হাজার ১৭২টি ভূমিহীন পরিবারকে পুনর্বাসন ও রাজধানী ঢাকার বস্তিবাসী ও নিম্নবিত্তদের পুনর্বাসনে সরকারি জমিতে ১ হাজার ৬৩২টি ফ্ল্যাট নির্মাণের উদ্যোগও গ্রহণ করেছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার।

স্বাস্থ্য খাতেও শেখ হাসিনা সরকারের অবদান চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে। শিশু মৃত্যুর হারের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সফলতা দেখিয়েছে শেখ হাসিনার বাংলাদেশ। ২০০৭ সালে দেশে যেখানে শিশু মৃত্যুর হার ছিল প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৬৫ জন সেখানে এই হার ২০১৩ সালে ৩৬ জনে হ্রাস পায়। এছাড়া বাংলাদেশে সার্ক দেশসমূহের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশ স্যানিটেশন কভারেজ অর্জিত হয়েছে। দেশের প্রান্তিক-দরিদ্র রোগীদের সেবাদানের জন্য গৃহীত কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পও গত ১০ বছরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতের একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন।

গণমাধ্যম ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সহনশীলতা প্রদর্শন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর শাসনামলে ত্রিশের অধিক টেলিভিশন চ্যানেল সম্প্রচারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এছাড়া অবাধ তথ্য প্রবাহ এবং  জনগণের তথ্য প্রাপ্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে তথ্য ও সেবাকেন্দ্র চালুর মতো উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে শেখ হাসিনার শাসনামলেই।

এছাড়া মানবাধিকার সংক্রান্ত জাতিসংঘ স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানদণ্ড `প্যারিস পিন্সিপল` এর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন প্রতিষ্ঠা এবং জাতিসংঘে বিশ্বশান্তির মডেল উপস্থাপনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমাণ করে দিয়েছেন মানবাধিকারে বিশ্বাসী অত্যন্ত শান্তিপ্রিয় একজন রাজনীতিবিদ তিনি।

শিক্ষা ও গবেষণা খাতকেও অসম্ভব গুরুত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালে ৩৬ হাজার ১৬৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৫৫ হাজার ২৩ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেছিলেন। ৪০ বছর পর বঙ্গবন্ধু-কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং এসব বিদ্যালয়ে কর্মরত ১ লক্ষ ৩ হাজার ৮৪৫ জন শিক্ষকের চাকুরী জাতীয়করণ করেন। বিজ্ঞানী মাকসুদুল আলমের নেতৃত্বে একদল গবেষকের পাটের জীবন-রহস্য উন্মোচন করেন ২০১০ সালেও। এছাড়া দেশীয় ব্র্যান্ডের দোয়েল ল্যাপটপ বাজারজাতকরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই।

বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরকারের সাফল্য নিন্দুকও স্বীকার করবে। এরই মধ্যে স্থাপিত সব কেন্দ্রের উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে হয়েছে ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট। দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৯০ শতাংশই এখন বসবাস করে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায়। বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারের তাৎক্ষণিক, স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন কার্যক্রমের ফলে বিদ্যুৎ খাতে এ সাফল্য এসেছে।

ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের অমীমাংসীত সমস্যা ছিটমহল বিনিময় ও ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে সমুদ্র সীমার বিরোধের নিষ্পত্তি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক দক্ষতার আরেকটি উদাহরণ।

এছাড়া ২০১৮ সালের ১১ মে মহাকাশে উৎক্ষেপণ বহুল প্রতিক্ষীত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইন- ১ উৎক্ষেপনের মাধ্যমে বিশ্বের স্যাটেলাইটের মালিক দেশের এলিট ক্লাবে প্রবেশ করে বাংলাদেশ।  যুক্তরাষ্ট্রের  ফ্লোরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে বেসরকারি মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেস এক্সের ফ্যালকন রকেটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়।

কৃষি থেকে মহাকাশ, শিক্ষা থেকে সমুদ্রতল সবকিছুতেই এখন বাংলাদেশের জয়জয়কার। বাংলাদেশের এই ইতিবাচক রূপান্তরের পেছনে মূল কৃতিত্বটা বর্তায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার ওপরই। কিন্তু উন্নয়নের পথে এই অগ্রযাত্রা সহজ ছিল না। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে তুলে আনতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে জঙ্গিবাদ, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র, শরনার্থী সমস্যার মতো বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেল আকরতে হয়েছে।

এর মধ্যে মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নির্যাতন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া ছিল শেখ হাসিনার অন্যতম সাহসী সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ জনবহুল দেশ। তারপরও ২০১৭ সালেকয়েক মাসের ব্যবধানে ১০ লাখের বেশি  রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গ জনগোষ্ঠীকে আশ্রয়ের পাশাপাশি ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বে নজির সৃষ্টি করেন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠিকে আশ্রয় দিয়ে মানবতার পরিচয় দিয় শেখ হাসিনা ‘মাদার অব ইউম্যানিটি’ হিসেবেও স্বীকৃতি পান বিশ্বব্যাপী।

এছাড়া শেখ হাসিনার শাসনামলেই হলি আর্টিজানে ও শোলাকিয়া ঈদগাহে জঙ্গি হামলা সংঘটিত হয়। কিন্তু শেখ হাসিনা সকল জঙ্গি তৎপরতা কঠোর হস্তে দমন করেন। চলতি বছরেই আবার সরকারি চাকরির কোটা সংস্কার আন্দোলন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের ক্যামোফ্লেজে রাষ্ট্রবিরোধী ও সরকার বিরোধী চক্র মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু শেখ হাসিনার বুদ্ধিদীপ্ত নেতৃত্বের কারণে সফল হতে পারেনি দুর্বৃত্তরা।

আর ক্ষমতায় আসার পরপরই সংঘটিত বিডিআর বিদ্রোহ তিনি যেভাবে ঠান্ডা মাথায় দমন করেছিলেন তার প্রশংসা না করে পারা যায় না। দ্রুততম সময়ে বিদ্রোহীদের আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করেছিলেন শেখ হাসিনা। বর্তমানে এই মামলার রায়ও হয়ে গেছে।

এই অবদানগুলোর কারণে গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশী ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করেন এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, শিশু মৃত্যু হ্রাসসংক্রান্ত MDG-4  অর্জনের স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল অ্যাওয়ার্ড, বিশ্বখ্যাত ‘ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পদক ২০০৯’, তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে নারী ও শিশু মৃত্যুর হার কমানোর ক্ষেত্রে বিশেষ অবদানের জন্য সাউথ সাউথ অ্যাওয়ার্ড ২০১১: ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট হেলথ, বাংলা অ্যাকাডেমির সম্মাননা সূচক ফেলোশিপ প্রভৃতি।

প্রধানমন্ত্রীর পুরস্কারের তালিকা কিন্তু এখানেই শেষ নয়। ইউনেস্কোর কালচারাল ডাইভারসিটি পদক ও শান্তিবৃক্ষ পদক (Peace Tree Award), জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকি মোকাবিলায় সাফল্য প্রদর্শনের জন্য জাতিসংঘের চ্যাম্পিয়ন অব দ্য আর্থ, প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়ন’ ও ‘এজেন্ট অব চেঞ্জ অ্যাওয়ার্ড’, গ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ পুরস্কারের মতো পুরস্কারও আছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঝুলিতে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি সমৃদ্ধ ও আধুনিক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন কিন্তু অকালে ঘাতকের বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হওয়ায় সে স্বপ্ন আর পূরণ হয়নি। বর্তমানে পিতার সেই অপূর্ণ স্বপ্ন পূরণেই কাজ করে চলেছেন শেখ হাসিনা। গত ১০ বছরে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের সব সেক্টরে যে অভূতপুর্ব উন্নতি হয়েছে তাতে দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বজায় রাখতে শেখ হাসিনাকে আবার তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনার সুযোগ করে দিতে হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচনের সময় কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ: কাদের

প্রকাশ: ০২:০০ পিএম, ২০ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনের সময় আওয়ামী লীগের সব রকম কমিটি গঠন ও সম্মেলন বন্ধ থাকবে। 

শনিবার (২০ এপ্রিল) দুপুরে আওয়ামী লীগের সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক বিফ্রিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময়  ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচন হচ্ছে। সামনে প্রথম পর্যায়ের নির্বাচন হবে। এই নির্বাচন চলাকালে উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে কোনো সম্মেলন, মেয়াদোত্তীর্ণ সম্মেলন, কমিটি গঠন এই প্রক্রিয়া বন্ধ থাকবে’। 

মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয়দের উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে সেতুমন্ত্রী বলেন, নিকটজনদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হবে। যারা ভবিষ্যতে করতে চায় তাদেরও নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছে। যারা আছে তাদের তালিকা তৈরি করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সে অনুযায়ী তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। 

নির্দেশনা দেওয়া হলেও অনেকেই এখনো নির্বাচনে আছেন, এমন প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রত্যাহারের তারিখ শেষ হোক, তার আগে এ বিষয়ে কীভাবে বলা যাবে। 


ওবায়দুল কাদের   উপজেলা নির্বাচন   সেতুমন্ত্রী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

জামায়াতও ধোঁকা দিলো বিএনপিকে?

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে। 

বাংলা ইনসাইডারের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সামনে আরও যে দুটি তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে সেখানে স্বাধীনতাবিরোধী এই রাজনৈতিক দলটির আরও ৬৩ জন প্রার্থী হতে চলেছেন। দলের পক্ষ থেকে তাদেরকে সবুজ সঙ্কেতও দেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছে, বিএনপির সঙ্গে জামায়াতের এটি প্রতারণা। 

তবে কোন কোন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলছেন, বিএনপিকে কাছে পেতে এবং বিএনপির সঙ্গে থাকার জন্য জামায়াত ইচ্ছা করে এই ধরণের কৌশল নিয়েছে। যেহেতু জামায়াতের কোন রাজনৈতিক নিবন্ধন নেই এবং তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারে না, কাজেই কারা জামায়াতের, কারা হেফাজতে ইসলামের এটি বোঝা দুষ্কর। তা ছাড়া জামায়াতের নেতারা যেহেতু তেমনটা পরিচিত নয় তারা অনেকটা আন্ডারগ্রাউন্ডের মতো করে কাজ করেন, সে কারণে অনেকেই জামায়াতের নেতাদেরকে চেনে না। তারা বিভিন্ন ইসলামিক দাওয়াত, ইসলামী শিক্ষা ইত্যাদি আলোকে এখন জামায়াতের রাজনীতি অনেকটা গোপনেই প্রচার করছে। এ কারণে কারা জামায়াতের রকন, কারা সাথী বা কারা বড় নেতা এটা সাধারণভাবে বোঝার উপায় নেই। তবে স্থানীয় পর্যায়ে যারা রাজনীতি করেন তারা জামায়াতের নেতাদেরকে চেনেন এবং তাদের সাথে তাদের ওঠা বসা হয়েছে। 

বিএনপি যখন নির্বাচন বর্জনের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তখন জামায়াতও ঘোষণা করেছে যে, তারা এই নির্বাচনে দাঁড়াবে না এবং যারা নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তাদেরকে সরে আসার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত জামায়াতের প্রার্থীদের কেউই মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেননি। আগামী ২২ এপ্রিল প্রথম পর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনগুলোতে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। 

জামায়াতের বিভিন্ন সূত্র বলছে, এই সময়ে তারা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করবেন না। বিএনপির নেতারা এখন মনোনয়ন টিকিয়ে রাখার জন্য এবং নির্বাচন করার জন্য তাদের কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে দেন দরবার করছেন। এই সময় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা স্থানীয় নেতৃবৃন্দকে বোঝাচ্ছেন যে, জামায়াতও নির্বাচন বর্জন করেছে। কিন্তু বিএনপির স্থানীয় নেতারা বলছেন, জামায়াত নির্বাচন বর্জন করেনি। বরং জামায়াত নির্বাচনের মাঠে আছে। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, প্রকাশ্য জামায়াত নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে কৌশলগত কারণে। কিন্তু ভেতরে ভেতরে যে সমস্ত উপজেলাগুলো তারা শক্তিশালী সেখানে তারা প্রার্থিতা ঘোষণা করেছে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সাতক্ষীরা, ঝিনাইদহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী সহ অন্তত ১২টি জেলার বিভিন্ন উপজেলায় জামায়াত ইতোমধ্যে তাদের প্রার্থীদেরকে নিয়ে মাঠে আসছে। 

বিভিন্ন মহল মনে করেন যে, একাধিক কৌশলগত কারণে জামায়াত তাদের পরিচয় গোপন করে নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। প্রথমত, জামায়াত মনে করছে, যদি সরকারের দিক থেকে জানাজানি হয় যে, জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে তাহলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এবং সংশ্লিষ্টরা জামায়াতের প্রার্থীকে প্রতিহত করার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। তাদের বিরুদ্ধে আবার হয়রানি গ্রেপ্তারের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতে পারে। এ কারণে জামায়াত নির্বাচনের প্রার্থিতার কথা প্রকাশ করছে না।

দ্বিতীয়ত, বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখার জন্য জামায়াত বাইরে থেকে বলছে যে, তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না।

তৃতীয়ত, জামায়াত তার সাংগঠনিক শক্তি কতটুকু, তাদের কর্মী সমর্থকদের অবস্থান কী তা যাচাইয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিয়েছে উপজেলা নির্বাচন। এটি তাদের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কর্ম তৎপরতা হিসেবে বিবেচনা করছে। আর এ কারণে জামায়াত তাদের নির্বাচনে যাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করছে না। 

তবে বিএনপির মাঠের নেতারা বলছেন, এটি জামায়াতের আরেকটি প্রতারণা এবং বিশ্বাসঘাতকতা। জামায়াত যে বিভিন্ন সময় প্রতারণা করে এটি তার প্রমাণ। বিএনপির নেতারা আরও বলছেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরও জামায়াত বিএনপির সঙ্গে একই ধরনের প্রতারণা করেছিল। বিএনপিকে সরকার গঠনের সমর্থন দেওয়ার পর জামায়াত আওয়ামী লীগের সঙ্গে ঐক্য করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন করেছিল। এখন জামায়াত সেই প্রতারণার আরেক রূপ প্রকাশ করছে। এই উপজেলা নির্বাচনের মধ্য দিয়ে তারা একদিকে যেমন সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ট হওয়ার চেষ্টা করছে অন্যদিকে নিজেদের সংগঠনকে গুছিয়ে নিচ্ছে।

জামায়াত   বিএনপি   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

কী হচ্ছে বিএনপিতে?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই বিএনপির মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা বিরাজ করছে। সেই অস্থিরতা এখন চূড়ান্ত রূপ ধারণ করেছে বলেই ভিতরের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছে। একজন নেতা অন্যজনকে বিশ্বাস করছেন না এবং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকেই আতঙ্কিত।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে যে সব বিষয় নিয়ে তোলপাড় চলছে তার মধ্যে রয়েছে- এক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কতটুকু সঠিক ছিল? বিএনপি নেতারা ধরেই নিয়েছিলেন যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো এই নির্বাচনকে স্বীকৃতি দেবে না। আর এই নির্বাচনের স্বীকৃতি না পেলে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হবে। নির্বাচনের পর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসবে। পশ্চিমা দেশগুলো আওয়ামী লীগকে বর্জন করবে। ফলে সরকারের পতন সময়ের ব্যাপার হবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। বিএনপির মধ্যে এখন প্রশ্ন উঠেছে যে পশ্চিমা দেশের উপর অতিনির্ভরশীলতা সঠিক ছিল কিনা বা এই অতিনির্ভরশীলতা কারা সৃষ্টি করেছিল?

বিএনপির মধ্যে দ্বিতীয় যে প্রশ্ন এসেছে তা হল সংগঠন পুনর্গঠন করা। বিএনপির নেতারা, বিশেষ করে তৃণমূল থেকে বারবার বলা হচ্ছে যে আন্দোলনের আগে দরকার সংগঠন পুনর্গঠন। সংগঠনকে না গুছিয়ে, শূন্যপদ পূরণ না করে বিএনপিকে কখনই একটি আন্দোলনমুখী অবস্থায় নিয়ে যাওয়া যাবে না। এ নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। কিন্তু কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, সংগঠন পুনর্গঠন, নেতৃত্ব পরিবর্তন এবং দলের কাউন্সিল অধিবেশন এখন সময়ের দাবি। কিন্তু এ নিয়ে সবাই মুখ খুললেও আনুষ্ঠানিকভাবে কোন সিদ্ধান্ত হচ্ছে না। সবাই তাকিয়ে আছেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার দিকে। তারেক জিয়া কি সিদ্ধান্ত নেন সেটাই এখন দেখার বিষয়।

তৃতীয়ত, উপজেলা নির্বাচন বর্জন। উপজেলা নির্বাচন বিএনপি কেন বর্জন করল, উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি কী পেল? সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে বিএনপির নেতাকর্মীদের কাছে। তারা মনে করছেন, যেহেতু উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না, সে কারণে উপজেলা নির্বাচন বর্জন করা উচিত হয়নি।বরং এই নির্বাচনে স্বতন্ত্রভাবে প্রার্থীরা দাঁড়ালে তাদের শক্তি সামর্থ্য হতো। কিন্তু তারেক জিয়া কেন এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটি নিয়ে বিএনপির মধ্যে এখন চলছে তোলপাড়।

চতুর্থত, দল চলছে কীভাবে? বিএনপি কীভাবে চলছে সেটি এখন কোটি টাকার প্রশ্ন। এমনকি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও এই প্রশ্নটি উত্থাপন করেছেন। দলের সিনিয়র নেতারা ঘুমিয়ে আছেন এমন সময়ে সিদ্ধান্ত জারি হচ্ছে। যেমন বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলছিলেন, উপজেলা নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্তটি তিনি টেলিভিশনের স্ক্রলে দেখেছেন, এর আগে তিনি ঘুণাক্ষরও জানতেন না। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া এককভাবে সব ধরনের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। আর এই সমস্ত সিদ্ধান্তের জন্য কোন জবাবদিহিতাও নেই।

এমন পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে যে, বিএনপিতে তাহলে স্থায়ী কমিটি আছে কেন? সব কিছু মিলিয়ে বিএনপির মধ্যে এক ধরনের গুমোট পরিবেশ তৈরি হয়েছে। নেতাদের মধ্যে একটা থমথমে ভাব, কেউ কারও সাথে মন খুলে কথা বলছেন না। বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, দলটি এখন বিস্ফোরন্মুখ। বিস্ফোরণের অপেক্ষায় আছে বিএনপি।

বিএনপি   তারেক জিয়া   উপজেলা নির্বাচন   রাজনীতির খবর  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

স্বজনদের বিরুদ্ধে কেন কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।

শিক্ষা মন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রী দীপু মনি, সবাই পিতার পথ ধরেই রাজনীতিতে আসা। প্রতিমন্ত্রীদের মধ্যেও প্রাথমিক গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও অর্থ প্রতিমন্ত্রী এসেছেন উত্তরাধিকার রাজনীতি ধরেই।

আওয়ামী লীগের এবার নির্বাচনেও দেখা গেছে চট্টগ্রামে ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন নিজে নির্বাচন না করে তার পুত্রকে প্রার্থী করতে চেয়েছিলেন এবং তার পুত্র আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিল। রংপুর থেকে আশিকুর রহমান চৌধুরী নিজে প্রার্থী না হয়ে তার ছেলে রাশেদ চৌধুরীকে প্রার্থী করেছিলেন। যদিও তিনি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের একটি বড় অংশ জুড়ে আছে পারিবারিক সংস্কৃতি এবং প্রভাব। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় দেখা যায় যে, পিতার মৃত্যুর পর তার সন্তান বা আত্মীয়রা নির্বাচন করেন। আওয়ামী লীগের এক সময়ের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষিবিদ আব্দুল মান্নানের মৃত্যুর পর তার স্ত্রী সেখানে এমপির মনোনয়ন পেয়েছেন। এমপির মনোনয়ন পেয়েছিলেন সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত। যদিও গতবার নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। 

এই ধারা চলছে আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে। নেতার ছেলে নেতা হবে এটাই যেন রাজনীতিতে একটা সংস্কৃতি হয়ে আছে। কিন্তু সেই অবস্থান থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি কেন ঘুরে দাঁড়ালেন, কেন কঠোর অবস্থান নিলেন, এ নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে নানামুখী আলাপ আলোচনা চলছে। 

একাধিক সূত্র বলছে, যারা পিতার হাত ধরে বা মায়ের হাত ধরে বা নিকটাত্মীয়দের হাত ধরে রাজনীতি করে বড় হয়েছেন তাদের জন্য এই ধরনের বিধিনিষেধ ছিল না। বরং আওয়ামী লীগ সব সময় বিশ্বাস করে যে আওয়ামী লীগ একটি আবেগ এবং সম্পর্কের নাম। যারা আওয়ামী লীগ করেছেন তারা বংশপরম্পরায় আওয়ামী লীগ করবেন এবং এভাবে আওয়ামী লীগের ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতিকে ধরে রাখবে বলেই তারা মনে করেন। কিন্তু এবার নির্বাচনে যেভাবে প্রার্থী করা হয়েছে তা স্রেফ পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠা বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারা। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, স্বাভাবিকভাবে পিতার পর পুত্রের রাজনীতিতে আসা একটি ইতিবাচক দিক। কিন্তু এলাকা দখল করার জন্য বা অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধনের জন্য পুত্রকে রাজনীতিতে নামিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান করা এবং এলাকায় রাজত্ব কায়েম করাটি সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি স্বজনদের রাজনীতির বিরুদ্ধে নন। আওয়ামী লীগ একটি পরিবার এবং সেই পরিবারের বংশ পরম্পরায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ চর্চা হবে। এটি নিয়ে কোনো সমস্যা নেই বলে মনে করেন আওয়ামী লীগের ওই নেতা। 

কিন্তু সমস্যা হলো, লোভ এবং আদর্শহীনতার ক্ষেত্রে। যখন দেখা যায় যে, আওয়ামী লীগের নেতারা লোভে পড়ে এলাকা দখলের জন্য তার নিজস্ব আত্মীয়স্বজনকে নির্বাচনের প্রার্থী করেন তখন প্রশ্ন ওঠে এবং বিতর্ক তৈরি হয়। এর ফলে সাধারণ ত্যাগী নেতারা বঞ্চিত হয়। এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় এক ধরনের পারিবারতন্ত্র। এটি বিকৃতি। স্বাভাবিকভাবে যখন কেউ আওয়ামী লীগের উত্তরাধিকারের রাজনীতিতে আসে সেটি হলো একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। এটি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ। কিন্তু যখন কোন আত্মীস্বজনকে রাজনীতির মাঠে নামিয়ে রাতারাতি নেতা বানিয়ে দেওয়া হয় বা উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী করা হয় তখন সেটি রাজনীতিতে বিকৃতি এবং পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রচেষ্টা। যার বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতি অবস্থান নিয়েছেন বলেই মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উপজেলা নির্বাচন   আওয়ামী লীগ   আওয়ামী লীগ সভাপতি   শেখ হাসিনা  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বহিষ্কার হতে যাচ্ছেন দুই শতাধিক স্থানীয় বিএনপির নেতা

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নাটকীয় এবং কঠোর অবস্থান নিয়ে বিস্মিত সকল মহল। বিএনপি নেতারাও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেই বিভিন্ন উপজেলায় বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা তাদের প্রার্থীতা ঘোষণা করছেন এবং জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

ইতোমধ্যে প্রথম দফার উপজেলা নির্বাচনে প্রায় ৪৭ জন বিএনপির নেতা মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আগামী ২২ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। কিন্তু এই দিনে মনোনয়নপত্র তারা আদৌ প্রত্যাহার করবেন কি না তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

বিএনপির একাধিক নেতা বলছেন, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের ব্যাপারে তাদের কোনও আগ্রহ নেই এবং এরকম কোন চিন্তা ভাবনাও তারা করছেন না। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, দলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, যদি মনোনয়নপত্র তারা প্রত্যাহার না করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আজীবন বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ব্যাপারে একইরকম কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছিল বিএনপি। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য তৈমুল আলম খন্দকার, মনিরুল হক সাক্কুসহ একাধিক জনপ্রিয় নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি আরও অন্যান্যবারের চেয়ে ভিন্ন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিএনপির নেতারা এবারের হাইকমান্ডের সিদ্ধান্ত কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তারা বলছেন যে, এই সিদ্ধান্তটি অযৌক্তিক, অগ্রহণযোগ্য। 

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য বলেছেন যে, তারেক জিয়া এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হবেন তাদেরকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। আর এরকম বাস্তবতার সারা দেশে বিএনপির অন্তত দুইশ জন উপজেলা নির্বাচনের প্রার্থী বহিষ্কারের ঝুঁকিতে পড়েছেন বলে জানা গেছে।

প্রথম পর্যায়ে ৪৭ জন ছাড়াও দ্বিতীয় এবং তৃতীয় দফার নির্বাচনে বিএনপির আরও অন্তত দেড় শতাধিক প্রার্থী আগ্রহ দেখিয়েছেন এবং তারা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করেছেন। বিএনপির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন যে, বিএনপির যতই তাদেরকে বহিষ্কারের ভয় দেখাক না কেন তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের পক্ষে তারা তিনটি যুক্তি দেখাচ্ছেন।

প্রথমত, এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরকে সহজে হারাতে পারবেন। কারণ আওয়ামী লীগ বিভক্তভাবে নির্বাচন করেছে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করছে না। দ্বিতীয়ত, তারা মনে করছেন যে, জনগণের কাছে তাদের দায়বদ্ধতা আছে। ভোটারদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করে দেখেছেন, ভোটাররা চায় তারা অংশগ্রহণ করুক। কর্মী সমর্থকদের মধ্যে এক ধরণের চাঞ্চল্য এবং উদ্দীপনা সৃষ্টির জন্য নির্বাচন করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন।

তৃতীয়ত, সংগঠন গোছানোর জন্য এই নির্বাচনে কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন স্থানীয় বিএনপির নেতারা। তারা মনে করছেন যে, বিএনপিকে যদি তৃণমূল থেকে গড়ে তুলতে হয়, তাহলে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে উপজেলা পর্যায়ে সংগঠনগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

আর এ কারণেই বিএনপির নেতারা ধারণা করছেন যে, তাদেরকে যদি বহিষ্কারও করা হয় তাহলেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন এবং নির্বাচনে অংশগ্রহণের পর যদি তারা নির্বাচিত হন তাহলে দলের সাথে এ নিয়ে একটি দরকষাকষি করবেন। তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে বহিষ্কার নিয়ে দুই ধরনের মতামত পাওয়া গেছে।

অনেকেই বলছেন যে, যদি উপজেলা নির্বাচন করে কেউ জিততে পারে তাহলে হয়তো আস্তে আস্তে তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হবে। অতীতেও এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে। অনেকে মনে করছেন, যাদেরকে বহিষ্কার করা হবে তাদেরকে আর ফিরিয়ে আনার সম্ভাবনা নেই। আর এ কারণেই বিএনপির মাঠ পর্যায়ের প্রায় দুইশ নেতা এখন বহিষ্কারের ঝুঁকিতে।

উপজেলা নির্বাচন   বিএনপি   তারেক জিয়া   বহিষ্কার  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন