নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০৬ এএম, ০২ নভেম্বর, ২০১৮
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় ছিল, তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বিতর্কিত ও স্বৈরাচার হিসেবে পরিচিত ছিলেন হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ। তিনিই ছিলেন একমাত্র রাষ্ট্রপ্রধান, যাঁকে গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা থেকে বিদায় করা হয়। দীর্ঘ ৯ বছর ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার পর ৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে এরশাদের পতন ঘটে।
বাংলাদেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপ্রধানদের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন অবিসংবাদিত জনপ্রিয়। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তাঁর নেতৃত্বে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দেশে সংসদীয় গণতন্ত্র ছিল। ৭৫ এর ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে হত্যার পর দেশে শুরু হয় স্বৈরতন্ত্র। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সাল থেকে দেশের সরকার ব্যবস্থায় আবার পরিবর্তন আসে। ফিরে আসে গণতন্ত্র।
রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে দুর্নীতির দিক থেকে, কুশাসনের দিক থেকে, জোর করে ক্ষমতা অধিকারের দিক থেকে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের অবস্থানই সবারই ওপরে। ক্ষমতা থেকে পতনের পর এরশাদের বিরুদ্ধে কমবেশি ২৬টি মামলা হয়েছিল। কিন্তু এত সব মামলা থাকা সত্ত্বেও, এরশাদ কারাগারে ছিলেন মাত্র ৫ বছর। একমাত্র জনতা টাওয়ার মামলা ছাড়া কোনো মামলায়ই এরশাদ দণ্ডিত হয়নি।
ঐ সময় এরশাদের বিরুদ্ধে ফেয়ার ফ্যাক্টস হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ এনেছিল। বিচারপতি আহসান উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি কমিশন গঠিত হয়েছিল। কমিশন এরশাদের বিরুদ্ধে ২৩৮টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনেছিল।
এরশাদের বিরুদ্ধে অবৈধ ক্ষমতা দখলের মামলা করেছিলেন বর্তমান তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। সেই মামলাও আর এগিয়ে নেওয়া হয়নি। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান হত্যার ২ দিন পর তৎকালীন চট্টগ্রামের জিওসি মঞ্জুর রহমানকে হত্যা করা হয়। সেই মঞ্জুর হত্যা মামলাও এগুচ্ছে না, থমকে আছে।
এদিকে রাজনীতিতে এরশাদ একটা কেনাবেচার বস্তুতে পরিণত হয়েছে। রাজনীতিতে দু’টি প্রধান দলের কাছে একটা আরাধ্য বিষয় হয়ে গেছেন এরশাদ। নির্বাচনে তাঁকে সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল যেন একটা সাধারণ ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
৯০ এর গণঅভ্যুত্থানের পর বেগম খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগের চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম দল নিয়েও সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছিলেন। তিনি ৯১ থেকে ৯৬ পর্যন্ত দেশ পরিচালনা করেন। ৯৬ সালে তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর ২০০১ সালে জামাতকে সঙ্গে নিয়ে আবার ক্ষমতায় আসে বিএনপি।
যাঁরা বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে চর্চা করেন, যাঁরা বাংলাদেশের রাজনীতির গতি-প্রকৃতি বিশ্লেষণ করে তাঁরা সবাই জানে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ খুবই কম। ক্ষমতায় আসার পর দ্বিতীয় দফায় খালেদা জিয়া বেশি বিতর্কিত হয়েছিলেন তাঁর বড় ছেলে তারেক জিয়ার জন্য। অনেকেই মনে করেন আজকে বেগম খালেদা জিয়ার যে দণ্ড বা কারাভোগ করছেন, সেটি তাঁর পুত্র তারেক জিয়ার জন্যই। পুত্রের স্খলনের সাজাই বেগম জিয়া ভোগ করছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে যারা সরকারপ্রধান ছিল, তাদের মধ্যে খালেদা জিয়াই সবচেয়ে দীর্ঘ মেয়াদে কারাদণ্ড পেয়েছেন। দুই মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ১৭ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
দুর্নীতির প্রবক্তা মনে করা হয় হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে। তাঁর চারিত্রিক গুণাবলীও প্রশ্নবিদ্ধ। অথচ স্বীকৃত দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত এরশাদের সব মামলাই আটকে রয়েছে।
আগামী প্রজন্ম যখন ইতিহাস চর্চা করবে, তখন তাঁরা দেখবে খালেদা জিয়া ১৭ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেছেন। অথচ বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ যে লোকটি, যিনি অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করেছেন, যার বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ রয়েছে, সেই লোকটি মাত্র ৫ বছর সাজা ভোগ করেছে। তাহলে জনমনে প্রশ্ন আসতেই পারে, খালেদা জিয়া কি এরশাদের চেয়েও বেশি দুর্নীতিবাজ?
সাবেক এই রাষ্ট্রপ্রধান এখনও রাজনীতির মাঠে নানা ধরনের ভাঁড়ামির কথা বলে আসছেন। সেক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন উঠতেই পারে এরশাদ কি কম দুর্নীতিবাজ?
সাধারণ মানুষ মনে করে, রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি একটি গর্হিত কাজ। অবশ্যই তাঁর বিচার হওয়া উচিত। যেমন বিচার হচ্ছে খালেদা জিয়ার। কিন্তু এরশাদ যদি রাজনৈতিক ডামাডোলে পার পেয়ে যায়, সেটি হবে রাজনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত।
সংবিধানে বলা হয়েছে, ‘আইন সবার জন্য সমান।’ আইনের অধিকার সবার আছে। আইনে ন্যায়বিচারের যে ধারা রয়েছে, সেটি এরশাদসহ অন্যান্য রাজনৈতিক নেতাদের ওপরও প্রয়োগ হলে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হবে দেশের গণতন্ত্র এবং আইনের শাসন।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।