নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৮
অনেক দিন পর গতকাল শুক্রবার রাতে বিএনপির নীতিনির্ধারক সংস্থা স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের কৌশল নিয়ে এই বৈঠক বিএনপির মধ্যে স্পষ্ট মতবিরোধ এবং দ্বিধাবিভক্তি দেখা গেছে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, আন্দোলনের কৌশল নিয়ে একাধিক নেতা মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও এই মুহূর্তে ঐক্যফ্রন্ট বা ২০ দলীয় জোট থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বিপক্ষে বিএনপির সবাই ঐক্যমতে পৌঁছেছে। এমনকি যারা ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে সম্পৃক্ততা পছন্দ করছে না তারাও বলছে, এখন যদি বিএনপি ঐক্যফ্রন্ট থেকে বেরিয়ে যায় তাহলে সকলের কাছে ভুল বার্তা যাবে। বিএনপির এমন পদক্ষেপে কর্মীরা হতোদ্যম হয়ে পড়বে এবং সরকার অন্যান্য দলগুলোকে নিয়ে নির্বাচনের সুযোগ নেবে বলে মনে করছেন দলটির নেতারা।
আন্দোলনের দুটি কৌশল নিয়ে বিএনপির গতকালের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। প্রথম কৌশল অনুযায়ী নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে অসহযোগ, হরতাল, অবরোধের মতো কর্মসূচি দিয়ে নির্বাচন বানচাল করে দেওয়ার চেষ্টা করবে বিএনপি। এই কৌশলটি কার্যকরী বলে মনে করছেন মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মতো দলের একাধিক সিনিয়র নেতা। বিএনপির এই অংশটি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াকে ছাড়া নির্বাচনে অংশ নিতে অনিচ্ছুক।
আর দ্বিতীয় কৌশল মোতাবেক বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে দলের একটি অংশটি তফসিল ঘোষণার পর সরকারের সঙ্গে সংলাপের ধারা অব্যাহত রাখার পক্ষপাতী। বিএনপির এই অংশটি নির্বাচন কতটুকু নিরপেক্ষ হচ্ছে তা সবাইকে দেখানোর জন্য শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করবে। মির্জা ফখরুলের অনুসারী বিএনপির এই নেতারা নির্বাচনের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দেবে। তবে এই অংশটি দাবি করছে, জমা দেওয়ার পরও যদি তাঁরা দেখেন সরকার অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করছে না তখন তারা জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র তুলে নিয়ে আন্দোলনে যাবেন। নির্বাচনী আন্দোলন যৌক্তিক এবং অংশগ্রহণমূলক করার চেষ্টা করবে বলে জানিয়েছে বিএনপির দ্বিতীয় কৌশলে বিশ্বাসী অংশটি। এছাড়া তাঁদের দাবি, যখন তারা প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করবেন তখন তাঁদের পরিচালিত আন্দোলনটি হবে নির্বাচনে জয়ের আন্দোলন।
কিন্তু মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়দের অংশটি মনে করছে, দ্বিতীয় কৌশলটি একটি অকার্যকর কৌশল হতে যাচ্ছে। তাঁরা একে গত বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত সংলাপের সঙ্গে তুলনা করে বলছেন, অনেক প্রত্যাশা নিয়ে সংলাপে যাওয়া হয়েছিল কিন্তু সংলাপে যাওয়ার পর কিছুই অর্জিত হয়নি। বিএনপির এই অংশটির ধারণা, মনোনয়ন দেওয়ার পরে একটি বড় অংশ হয়তো মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে চাইবে না। তখন ধানের শীষ বিএনপির হাতছাড়া হয়ে যাবে এবং এমন একটি নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে জিতে সরকার নিজেকে আরেকবার বৈধতা দেওয়ার সুযোগ পাবে।
দলের শীর্ষনেতাদের এই মতবিরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি বিএনপির স্থায়ী কমিটি। তবে কমিটির অন্যতম সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, ‘আন্দোলন আমরা করবোই। যেহেতু বিএনপি একটি বড় দল তাই আন্দোলনের কৌশল এবং আন্দোলনের ধরন নিয়ে দলে মতভিন্নতা থাকতেই পারে। এ ব্যাপারে আমরা আলোচনা করবো। তবে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার তাই আমরা করবো এবং বাংলাদেশে আরেকটি একতরফা নির্বাচন আমরা হতে দেবো না।’
শেষ পর্যন্ত বিএনপি হয়তো অন্যান্য দলগুলোর সঙ্গে খালেদা জিয়ার মুক্তি ও গণতন্ত্রের স্বার্থে নির্বাচনে অংশ নেবে। কিন্তু গতকালের বৈঠকের পর একথা নিশ্চিত যে, আন্দোলনের অংশ হিসেবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে বিএনপির একটি চিন্তাভাবনা আছে। তবে আন্দোলন সংক্রান্ত সকল সিদ্ধান্ত তফসিল ঘোষণার পরই চূড়ান্ত করা হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া বিএনপি আইনমন্ত্রী আনিসুল হক শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি বাংলাদেশের নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মেজর হাফিজ সাকিব আল হাসান কিংস পার্টি ড. মঈন খান বিএনপি
মন্তব্য করুন
মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগ বিপ্লব বড়ুয়া সুজিত রায় নন্দী
মন্তব্য করুন
আবদুল আউয়াল মিন্টু তারেক জিয়া বিএনপি ২৮ অক্টোবর আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল।
টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন।
নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।