নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৮
শত ব্যস্ততার জীবন। ফোনের পর ফোন। এই কাজ সেই কাজে, দিনরাত ব্যস্ততা। বেসরকারি চাকরিজীবীর জীবনটা যেন এমনই। কিন্তু হঠাৎ চাকরি নেই। কোনো ব্যস্ততাও নেই। যথারীতি ঘুম ভাঙ্গে সকালে কিন্তু কী করবেন ভেবে পান না। শত-ব্যস্ততার জীবনে ছন্দপতন। একই অবস্থা দেখা যায় সরকারি চাকরিতেও। সরকারি চাকরির শত-ব্যস্ততার কর্মকাণ্ডে ছন্দপতন ঘটে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হলে। টাইটেল বিশেষ ভারপ্রাপ্ত হলেও এটি এক অর্থে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি। কোনো কাজ নেই, চেয়ার নেই, টেবিল নেই। ঘরের মধ্যে থাকা এক দু:সহ জীবন ওএসডি কর্মকর্তাদের। সরকারি বেসরকারি যে চাকরিই হোক না কেন, ব্যস্ততার জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। শুধু চাকরিই নয় যেকোনো সময়ই কর্মহীনতা এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণার জীবন। কিন্তু এমনই যন্ত্রণারই জীবন কাটাতে হচ্ছে বর্তমান সময়ের কিছু রাজনীতিবিদকেও।
সমানে জাতীয় নির্বাচন, তাই এখন রাজনীতির ভরা মৌসুম। আন্দোলন, সংলাপসহ নানা কর্মসূচিতে রাজনীতিবিদদের ঘুমানোর সময় পর্যন্ত নেই। সম্প্রতি এমনও দেখা যাচ্ছে, রাত ১১টার সময় সংলাপ শেষ করে মধ্যরাতে আবার টকশোতে যান কিছু রাজনীতিবিদ। গভীর রাতে টকশো করে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই ভোরবেলায় আবার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হাজিরা। আবার সংলাপ, কর্মসূচিসহ নানা খবর মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রাজনীতিবিদদের কাছে। রাজনীতির এমন ভরা মৌসুমেও কিছু নেতার কোনো কাজ নেই। হেজিপেজি কোনো নেতা নন তাঁরা জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো ডাকসাইটে, পরিচিত মুখ, কিন্তু এমন ব্যস্ততার সময়ে পুরোই কর্মহীন। তাঁদের কোনো খবর নেই সংবাদমাধ্যমে। তাঁদের বেকার রাজনীতিবিদ বলাই যেন সবচেয়ে উপযুক্ত। এরা কাঁরা? আর কেনইবা তাঁরা রাজনীতিতে বেকার?
বেশিদিন আগের কথা নয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ছিল তাদের একমাত্র রাজনৈতিক জোট। বিএনপি একা কর্মসূচি দিত খুবই কম, তাদের কর্মসূচি সবই হতো ২০ দল ঘিরে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই ২০ দল কেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। ২০ দলের সতীন হয়ে দেখা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার পরই ২০ দল থেকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপি। এই ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বেই সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতারা থাকলেও ছিলেন না তাঁদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জেটের কোনো নেতা। আবার বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন ডাকছে বিএনপি। এই আন্দোলনে আগ্রহী নয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা, তাই আন্দোলনেও থাকছে না। একাই আন্দোলনের কর্মসূচি করছে বিএনপিকে। ২০ দলের নেতারা এমন আন্দোলনেও অপাংতেয়। মিডিয়ার দর্শন না পেতে পেতে ২০ দলের পরিচিত মুখের নেতারা ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে পড়ছেন।
হঠাৎ বেকারত্বের কবলে পড়া ২০ দলের নেতাদের মধ্যে অন্যতম একসময়ের অতি পরিচিত মুখ আন্দালিব রহমান পার্থ। কিছু দিন আগেও প্রায় প্রতিরাতেই টেলিভিশনের কোনো না টকশোতে থাকতেন ২০ দলের শরিক বিজেপির এই নেতা। ২০ দলের পক্ষে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের আলোচনায় আসতেন প্রায়শই। বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের পর ধীরে ধীরে আলোচনার কেন্দ্রের বাইরে চলে গেছেন এই তরুণ তুর্কি। ঐক্যফ্রন্টের অপরিচিত, প্রায় বিস্মৃত রাজনীতিবিদরা লাইম লাইটে চলে এলেও ২০ দলের তরুণ রাজনীতিবিদ পার্থ এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই নেই।
২০ দলের আরেক পরিচিত মুখ ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে পুরোপুরি উধাও এই রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মিডিয়া দুইয়েই অনুপস্থিত কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া রাজনীতিবিদদের আরেকজন। ২০ দলীয় জোটে শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান কিছুদিন আগেও প্রায়শই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মিডিয়ায় আসতেন। এখন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই তাঁর দেখা মেলে।
বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার কারণে শুধু দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক রাজনীতিবিদরাই বেকার হয়নি, একই সঙ্গে বেকার হয়েছেন বিএনপির অনেক ডাকসাইটে নেতাও। খেয়াল করে দেখুন তো গত এক মাস বা তাঁর বেশি সময় ধরে বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ড আসলেই সেখানে বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তাঁর আশেপাশের কয়েকজন নেতা ছাড়া অন্য কাউকে দেখেছেন? উত্তর না হওয়াই স্বাভাবিক। বিএনপির আর সব নেতৃবৃন্দ কোথায়? বিএনপির কর্মহীন হয়ে পড়া নেতাদের অন্যতম দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। অনেকদিন ধরেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে। বর্তমান রাজনীতির ভরা মৌসুমেও অনুপস্থিত লে. জে. (অব.) মাহবুব। দলীয় ফোরামের বৈঠকগুলোতেও তিনি নেই। একই অবস্থা বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ক্ষেত্রেও। দণ্ডিত হয়ে বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরও স্থায়ী কমিটির কয়েকটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মকাণ্ডেই তিনি অনুপস্থিত।
২০ দল ও বিএনপির শুধু উল্লিখিত নেতারাই নন, আরও অনেকেই সাম্প্রতিক রাজনীতির উত্থাপন-পতনের এই টালমাটাল সময়ে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা এমন অবস্থানের পেছনের কোনো কারণ সেভাবে না জানালেও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় বর্তমান বিএনপির নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডই এর নেপথ্যে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।