নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৩ নভেম্বর, ২০১৮
শত ব্যস্ততার জীবন। ফোনের পর ফোন। এই কাজ সেই কাজে, দিনরাত ব্যস্ততা। বেসরকারি চাকরিজীবীর জীবনটা যেন এমনই। কিন্তু হঠাৎ চাকরি নেই। কোনো ব্যস্ততাও নেই। যথারীতি ঘুম ভাঙ্গে সকালে কিন্তু কী করবেন ভেবে পান না। শত-ব্যস্ততার জীবনে ছন্দপতন। একই অবস্থা দেখা যায় সরকারি চাকরিতেও। সরকারি চাকরির শত-ব্যস্ততার কর্মকাণ্ডে ছন্দপতন ঘটে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) হলে। টাইটেল বিশেষ ভারপ্রাপ্ত হলেও এটি এক অর্থে চাকরি থেকে সাময়িক অব্যাহতি। কোনো কাজ নেই, চেয়ার নেই, টেবিল নেই। ঘরের মধ্যে থাকা এক দু:সহ জীবন ওএসডি কর্মকর্তাদের। সরকারি বেসরকারি যে চাকরিই হোক না কেন, ব্যস্ততার জীবনে হঠাৎ ছন্দপতন মানুষের জীবনকে বিষিয়ে তোলে। শুধু চাকরিই নয় যেকোনো সময়ই কর্মহীনতা এক অবর্ণনীয় যন্ত্রণার জীবন। কিন্তু এমনই যন্ত্রণারই জীবন কাটাতে হচ্ছে বর্তমান সময়ের কিছু রাজনীতিবিদকেও।
সমানে জাতীয় নির্বাচন, তাই এখন রাজনীতির ভরা মৌসুম। আন্দোলন, সংলাপসহ নানা কর্মসূচিতে রাজনীতিবিদদের ঘুমানোর সময় পর্যন্ত নেই। সম্প্রতি এমনও দেখা যাচ্ছে, রাত ১১টার সময় সংলাপ শেষ করে মধ্যরাতে আবার টকশোতে যান কিছু রাজনীতিবিদ। গভীর রাতে টকশো করে বাসায় ফিরতে না ফিরতেই ভোরবেলায় আবার কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতে হাজিরা। আবার সংলাপ, কর্মসূচিসহ নানা খবর মিডিয়া হুমড়ি খেয়ে পড়ছে রাজনীতিবিদদের কাছে। রাজনীতির এমন ভরা মৌসুমেও কিছু নেতার কোনো কাজ নেই। হেজিপেজি কোনো নেতা নন তাঁরা জাতীয় রাজনীতিতে রীতিমতো ডাকসাইটে, পরিচিত মুখ, কিন্তু এমন ব্যস্ততার সময়ে পুরোই কর্মহীন। তাঁদের কোনো খবর নেই সংবাদমাধ্যমে। তাঁদের বেকার রাজনীতিবিদ বলাই যেন সবচেয়ে উপযুক্ত। এরা কাঁরা? আর কেনইবা তাঁরা রাজনীতিতে বেকার?
বেশিদিন আগের কথা নয়। বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দল ছিল তাদের একমাত্র রাজনৈতিক জোট। বিএনপি একা কর্মসূচি দিত খুবই কম, তাদের কর্মসূচি সবই হতো ২০ দল ঘিরে। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরেই ২০ দল কেন্দ্রিক কোনো কর্মসূচি দিচ্ছে না বিএনপি। ২০ দলের সতীন হয়ে দেখা দিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ড. কামালের নেতৃত্বাধীন ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার পরই ২০ দল থেকে একরকম মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিএনপি। এই ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্বেই সম্প্রতি গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে বিএনপির নেতারা থাকলেও ছিলেন না তাঁদের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জেটের কোনো নেতা। আবার বেগম জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন ডাকছে বিএনপি। এই আন্দোলনে আগ্রহী নয় ঐক্যফ্রন্টের অন্য শরিকরা, তাই আন্দোলনেও থাকছে না। একাই আন্দোলনের কর্মসূচি করছে বিএনপিকে। ২০ দলের নেতারা এমন আন্দোলনেও অপাংতেয়। মিডিয়ার দর্শন না পেতে পেতে ২০ দলের পরিচিত মুখের নেতারা ধীরে ধীরে বিস্মৃত হয়ে পড়ছেন।
হঠাৎ বেকারত্বের কবলে পড়া ২০ দলের নেতাদের মধ্যে অন্যতম একসময়ের অতি পরিচিত মুখ আন্দালিব রহমান পার্থ। কিছু দিন আগেও প্রায় প্রতিরাতেই টেলিভিশনের কোনো না টকশোতে থাকতেন ২০ দলের শরিক বিজেপির এই নেতা। ২০ দলের পক্ষে বক্তৃতা বিবৃতি দিয়ে গণমাধ্যমের আলোচনায় আসতেন প্রায়শই। বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যোগদানের পর ধীরে ধীরে আলোচনার কেন্দ্রের বাইরে চলে গেছেন এই তরুণ তুর্কি। ঐক্যফ্রন্টের অপরিচিত, প্রায় বিস্মৃত রাজনীতিবিদরা লাইম লাইটে চলে এলেও ২০ দলের তরুণ রাজনীতিবিদ পার্থ এখন কোনো রাজনৈতিক কর্মসূচিতেই নেই।
২০ দলের আরেক পরিচিত মুখ ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) চেয়ারম্যান কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ। বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক দৃশ্যপট থেকে পুরোপুরি উধাও এই রাজনীতিবিদ। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ও মিডিয়া দুইয়েই অনুপস্থিত কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইব্রাহিম হঠাৎ বেকার হয়ে পড়া রাজনীতিবিদদের আরেকজন। ২০ দলীয় জোটে শরিক কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান কিছুদিন আগেও প্রায়শই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নিয়ে মিডিয়ায় আসতেন। এখন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই তাঁর দেখা মেলে।
বিএনপির ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেওয়ার কারণে শুধু দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের শরিক রাজনীতিবিদরাই বেকার হয়নি, একই সঙ্গে বেকার হয়েছেন বিএনপির অনেক ডাকসাইটে নেতাও। খেয়াল করে দেখুন তো গত এক মাস বা তাঁর বেশি সময় ধরে বিএনপির কোনো কর্মকাণ্ড আসলেই সেখানে বিএনপির বর্তমান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং তাঁর আশেপাশের কয়েকজন নেতা ছাড়া অন্য কাউকে দেখেছেন? উত্তর না হওয়াই স্বাভাবিক। বিএনপির আর সব নেতৃবৃন্দ কোথায়? বিএনপির কর্মহীন হয়ে পড়া নেতাদের অন্যতম দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান। অনেকদিন ধরেই তিনি রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের বাইরে। বর্তমান রাজনীতির ভরা মৌসুমেও অনুপস্থিত লে. জে. (অব.) মাহবুব। দলীয় ফোরামের বৈঠকগুলোতেও তিনি নেই। একই অবস্থা বিএনপির স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার ক্ষেত্রেও। দণ্ডিত হয়ে বেগম জিয়া কারাগারে যাওয়ার পরও স্থায়ী কমিটির কয়েকটি বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম। কিন্তু সম্প্রতি রাজনৈতিক সব ধরনের কর্মকাণ্ডেই তিনি অনুপস্থিত।
২০ দল ও বিএনপির শুধু উল্লিখিত নেতারাই নন, আরও অনেকেই সাম্প্রতিক রাজনীতির উত্থাপন-পতনের এই টালমাটাল সময়ে সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ব্যক্তিগত ভাবে তাঁরা এমন অবস্থানের পেছনের কোনো কারণ সেভাবে না জানালেও পারিপার্শ্বিকতা বিবেচনায় বর্তমান বিএনপির নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডই এর নেপথ্যে বলে মত বিশ্লেষকদের।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।