ইনসাইড পলিটিক্স

‘জীবনের শেষ প্রান্তে এসে সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত দায়িত্বটি পেয়েছি’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৪:০০ পিএম, ০৫ নভেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

প্রধানমন্ত্রীর সাবেক স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলীকে চেয়ারম্যান করে গত অক্টোবরেই কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টের অনুমোদন দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রোববার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করা হয়েছে। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইনের বিধান মোতাবেক আগামী ৩ বছরের জন্য গঠিত ট্রাস্টি বোর্ডের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোদাচ্ছের আলী বাংলা ইনসাইডারের মুখোমুখি হয়েছেন। কথা বলেছেন কমিউনিটি ক্লিনিক সংক্রান্ত তাঁর স্বপ্ন ও পরিকল্পনা বিষয়ে।

বাংলা ইনসাইডার: এই দায়িত্বটা পেয়ে আপনার অনুভূতি কী?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমার সবচেয়ে আকাঙ্ক্ষিত দায়িত্বটি আমি পেয়েছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একটি আমানত আমাদের ওপর দিয়েছেন, যার প্রধান হচ্ছি আমি। বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি আমানত তিনি আমাকে বিশ্বাস করে দিয়েছেন এরপর আমার চেয়ে সৌভাগ্যবান আর কেউ হতে পারে না। এর সমমানের হয়তো আছে, কিন্তু বাংলাদেশে এর চেয়ে বড় কোনো দায়িত্ব, সম্মানিত দায়িত্ব আর নেই। 

বাংলা ইনসাইডার: কমিউনিটি ক্লিনিক ট্রাস্টি বোর্ডের নতুন সভাপতি হিসেবে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে আপনার পরিকল্পনা কী?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি ক্লিনিকের অ্যাডভাইজরি কমিটির সভাপতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আর ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি আমি। কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহায়তা ট্রাস্ট আইন, ২০১৮-এর ধারা ৯(১) এর বিধান মোতাবেক ১৫ সদস্যের সমন্বয়ে আমাকে চেয়ারম্যান করে ৩ বছরের জন্য ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ১৯৯৬ সাল থেকেই কমিউনিটি ক্লিনিক করার জন্যই একদমই ব্যক্তিগতভাবে উদ্যোগ নিয়ে কীভাবে বিল্ডিং হবে, কীভাবে কোথায় কী কাজ হবে সে বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন আর তখন থেকেই আমি তাঁর সঙ্গে কাজ করেছি। সে সময় সচিব ছিলেন মোহাম্মদ আলী। তখন থেকে শুরু করে আমি পরবর্তীতে আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ছিলাম তখনও কমিউনিটি ক্লিনিকে আমি কাজ করতাম। সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো, আমার সম্পূর্ণ জিনিসটি জানা আছে। আমার মূল দায়িত্ব হবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেভাবে চাইছেন সেভাবে প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বপূর্ণ অগ্রাধিকার প্রকল্প এই কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প বাস্তবায়িত করা।

আমি মনে করি, সভাপতি হিসেবে আমার দায়িত্ব পালনের জন্য দুটি বিষয় রয়েছে।

প্রথমত, সার্বজনীন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা প্রয়োগ করার জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করা হয়েছে এই মেসেজ সবার কাছে পৌঁছে দেওয়া। অনেকে মনে করেন উপজেলায় একটি বড় হাসপাতাল থাকবে আর কমিউনিটি ক্লিনিকে একটি ছোট হাসপাতাল। কিন্তু বিষয়টি এত সহজ না। এখানে একটি ছোট ক্লিনিক থাকবে যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজ হাতে ডিজাইন করেছেন। কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। আমাদের কর্মীরা প্রয়োজনে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা পৌঁছে দেবে। প্রসূতি স্বাস্থ্যসেবা, পোস্ট প্রেগন্যান্সি স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছা হচ্ছে যে এখানে যতদূর সম্ভব নারীদের প্রাধান্য দিতে হবে।

আমার দ্বিতীয় দায়িত্ব হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কমিউনিটি ক্লিনিককে ঠিকমতো উপস্থাপন করা। পৃথিবীর সবাইকে জানানো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এমনকি মাইক্রো লেভেলে ম্যানেজমেন্ট করে কীভাবে সবার জন্য সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করেছেন।  আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে কমিউনিটি ক্লিনিক দেখেই আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। আমার বিশ্বাস, যদি আমরা কমিউনিটি ক্লিনিকের বিষয়টি বিশ্ববাসীর কাছে ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি তাহলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী  বিশ্বে একজন অনন্য স্বাস্থ্য দানকারী হিসেবে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবেন। আমি মনে করি, এই মডেলকে গ্রহণ করে অন্যান্য দেশও উপকৃত হবে এবং এই মডেল দেখতে সবাই বাংলাদেশে আসবে। এক্ষেত্রে আমার রুটিন কাজ যেটা থাকবে সেগুলো আমি চেয়ারম্যান হিসেবে সকলে মিলে পালন করবো।

আমার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হবে টিম বিল্ডিং করা। কারণ আমি একক ব্যক্তি হিসেবে কিছু করতে পারবো না। আমার এই সম্পূর্ণ কমিউনিটি ক্লিনিক টিমকে যেন আমি এক রাখতে পারি আমি সেই চেষ্টা করবো এবং আমার খুব দৃঢ় বিশ্বাস সেটা আমি পারবো। এছাড়া আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবসময়ই যাওয়া যায়। তাঁর নির্দেশনা নিয়ে আমি কাজ করবো।

বাংলা ইনসাইডার: বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে এই বাংলাদেশের কমিউনিটি ক্লিনিক মডেলটি কীভাবে কার্যকরী হতে পারে?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: কমিউনিটি ক্লিনিকের ডিজাইন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুব সরলভাবে করেছেন। আমাদের যেহেতু ইতিমধ্যে ডিজাইন করা আছে, কেউ চাইলে সেই ডিজাইন আমরা সাপ্লাই দিতে পারবো। আমরা কমিউনিটি ক্লিনিক নিয়ে বাস্তবে কাজ করছি। গত ১০ বছর ধরে এ ব্যাপারে আমরা ধারাবাহিকভাবে সফল। সুতরাং যে কোনো দেশ এসে দেখে বুঝতে পারবে কীভাবে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করা যায়। তাদের যা যা প্রয়োজন হবে,  ট্রেনিংয়ের প্রয়োজনও যদি হয় সেটি আমরা সরবরাহ করবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহাখালীতে তিন বিঘা জমি কমিউনিটি ক্লিনিকের হেড অফিসের জন্য বরাদ্দ করেছেন। সেখানে ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হলে ট্রেনিংয়ের বন্দোবস্ত রাখবো যাতে দেশ ও বিদেশের সবাই এসে ট্রেনিং করতে পারে।

বাংলা ইনসাইডার: এর মধ্যে কোনো দেশ কি কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: যারাই কমিউনিটি ক্লিনিক ভিজিট করেছে তারা সকলেই আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা বেসিক্যালি অ্যাপ্রোচ শুরু করতে পারিনি। আমাদের ভবন করতে কিছু সময় লাগবে। তবে এর আগ পর্যন্ত সবার সঙ্গে আলোচনা করে ঠিক করছি, কার্যক্রম চালিয়ে নিতে কী বিকল্প ব্যবস্থা করা সম্ভব। আমার বিশ্বাস, যেভাবে উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তাতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আবার ক্ষমতায় আসবেন। তখন আমরা আবার কাজ শুরু করতে পারবো। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি-মার্চের মধ্য দেশে-বিদেশে  পুরোদমে কাজ শুরু করতে পারবো বলে আশা করি। টিমের সকলের মতামত নিয়ে আমরা কাজ করবো। এটা শুধু প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রজেক্টই না, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন। যেমন একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প উনি করে দিয়েছেন কিন্তু কমিউনিটি ক্লিনিকের সঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরাসরি সম্পৃক্ত। আমরা যারা টিমে আছি এটা আমার বা আমাদের জন্য বড় এডভান্টেজ। যিনি ভাইস চেয়ারম্যান হয়েছেন প্রফেসর ডা. মাখদুমা নার্গিস, তিনি আমার বড় বোনের মতো। আমাদের খুব ভালো টিম। এছাড়া যারা যারা আসছেন প্রত্যেকের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে।

বাংলা ইনসাইডার: কমিউনিটি ক্লিনিক প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের জায়গা। এই স্বপ্ন সফল করতে কী বাধা আসতে পারে এবং এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১০ বেডের হাসপাতালের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে ৩ বছরের মধ্যে তাঁকে হত্যা করা হয়। বঙ্গবন্ধুর কন্যা মনে করলেন, পিতার পরিকল্পনার হাসপাতাল থাকবেই, তবে একই সঙ্গে তিনি ছয় হাজার বা এর কাছাকাছি লোকের জন্য কমিউনিটি ক্লিনিক করার স্বপ্ন দেখলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীই এই স্বপ্ন দেখেছেন, স্বপ্ন বাস্তবায়িত করেছেন এবং  সেই স্বপ্নকে স্পর্শ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি আমাদেরকেও তাঁর স্বপ্ন স্পর্শ করানোর সুযোগ দিয়েছেন। এই স্বপ্ন সফল করার পথে আমাদের বাধা হচ্ছে আমাদের অদক্ষতা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাঁর একটি আমানত আমাদের কাছে দিলেন, আমাদের কর্মীরা অদক্ষতা দেখালেই কেবল এটি ব্যর্থ হবে। আমরা যদি প্রধানমন্ত্রী এ আমানত রক্ষা করতে ব্যর্থ হই তা হবে আমাদের সামগ্রিক ব্যর্থতা। তবে আমি এবং আমাদের টিমে যারা আছেন তাঁদের জীবনে ব্যর্থতার চেয়ে সফলতা বেশি। তাই আমরা বিশ্বাস করি আমাদের কাজে কোনো বাধা বড় হয়ে দাঁড়াবে না। এক্ষেত্রে আমাদের বড় সুবিধা হচ্ছে আমরা একে অন্যকে চিনি।

বাংলা ইনসাইডার: কমিউনিটি ক্লিনিকের লোকবল, গঠন পদ্ধতি, পরিচালনা পদ্ধতি নিয়ে যদি সংক্ষেপে কিছু বলেন।

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: এখন যে নিয়ম আছে, আমি মনে করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করে পড়ে কিছুটা পরিবর্তন আনতে পারবো। এখন কমিউনিটি ক্লিনিকের সব সেন্ট্রালি পরিচালিত হয়। আমরা চেষ্টা করবো এটা ডিসেন্ট্রালাইজ করতে পারি কি না। আসল কথা হলো লোকবল নিয়োগে, জিনিসপত্র কেনাকাটায় ট্রান্সপারেন্সি কীভাবে আনা যায় সে ব্যাপারে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।

বাংলা ইনসাইডার: ১৯৯৮ সাল থেকে ২০১৮- কমিউনিটি ক্লিনিকের সূচনা পর্ব থেকেই আপনি এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। এই সময়ের মধ্যে কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্পের কী অগ্রগতি দেখেছেন?

ডা. সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী: প্রথম যখন আমরা শুরু করেছিলাম, ক্লিনিকের শুধু মাত্র দুটো রুম ছিল। এখন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নতুন ভবনের ডিজাইন একে দিয়েছেন যেখানে রুম থাকবে ৩টি। তাছাড়া বিল্ডিংগুলো এমনভাবে ডিজাইন করা হচ্ছে যা উপরের দিকে সম্প্রসারণ করা যাবে। আর ক্লিনিকের সার্ভিসও আগের থেকে ইম্প্রুভ করেছে কিন্তু আরও অনেক ইম্প্রুভমেন্টের সুযোগ আছে। এছাড়া দিনে দিনে আমরা কাজের মাধ্যমে ট্রেইন্ড হওয়া হচ্ছি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, স্থানীয় জনগণ যারা এই কমিউনিটি ক্লিনিক কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়তা করেন তারা খুব এক্সাইটেড এই বিষয়টি নিয়ে। জনগণের এই সম্পৃক্ততা আমাদের জন্য একটি বিরাট রকমের সাফল্যের চাবিকাঠি। আমরা যদি এই জনগণকে নিজেদের সঙ্গে ধরে রাখতে পারি তাহলে আমাদের সফলতা আসবেই। তবে এই সফলতা দিন দিন বাড়ছে কারণ জনগণ বুঝতে পারছে কমিউনিটি ক্লিনিক তাদের নিজেদেরই সম্পত্তি।

বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের ভাই, ভাতিজা, মামা, শ্যালকদের কী হবে?

প্রকাশ: ১১:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। 

উল্লেখ্য, এবার উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি তাদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগ্নে এবং অন্য আত্মীয়স্বজনকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড় করিয়েছেন। যারা এরকম পরিবারতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টায় ব্যস্ত ছিলেন তার মধ্যে রয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রাজ্জাক। তিনি তার খালাতো ভাইকে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। শাজাহান খান তার ছেলেকে মাদারীপুরের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান তার ছেলেকে, বগুড়ার সাহাদারা মান্নানের ছেলে এবং ভাই দুইজনই বগুড়ার দুটি উপজেলায় প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন। 

এ রকম দীর্ঘ তালিকা তালিকায় দেখা যাচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক মন্ত্রী-এমপি তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী করেছে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। আওয়ামী লীগ দলগতভাবে অবস্থান গ্রহণ করেছিল যে, উপজেলা নির্বাচনে কেউ দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না এবং দলগতভাবে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না মর্মেও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু বিভিন্ন উপজেলায় আওয়ামী লীগের নেতারা তার নিজস্ব পছন্দের ব্যক্তি বা মাইম্যানদেরকে জয়ী করাতে মাঠে নেমে পড়ে এবং এর ফলে তৈরি হয় নতুন সংকট। 

একদিকে আওয়ামী লীগের প্রতিটি উপজেলাতেই তিন বা ততোধিক প্রার্থী রয়েছে, তারা নিজেরা নিজেদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে- এটিকে আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছে পরোক্ষভাবে। কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে, যেহেতু বিএনপি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না, কাজেই আওয়ামী লীগ, আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী হলে ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের মতো এই নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে, একটা নির্বাচনী আমেজ সৃষ্টি হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগ সভাপতির কঠোর নির্দেশনা ছিল যে, মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করতে পারবে না। কিন্তু মন্ত্রী-এমপিদের পক্ষ থেকে এই বাণীকে কর্ণপাত করা হয়নি। বরং তারা তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনকে নির্বাচনের মাঠে নামিয়েছে তাদের এলাকায় পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য। আর এর ফলে আওয়ামী লীগ সভাপতি একটি সাহসী পদক্ষেপ নিয়েছেন বলেই বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

প্রশ্ন হল, শেষ পর্যন্ত যদি দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে মন্ত্রী-এমপি এবং প্রভাবশালী নেতাদের আত্মীয় স্বজনরা প্রার্থী হন, সে ক্ষেত্রে কী হবে? আওয়ামী লীগ কী কঠোর হতে পারবে?

অতীতে দেখা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগের কঠোর অবস্থান গ্রহণের কথা ছিল। কিন্তু সেই কঠোর অবস্থান শেষ পর্যন্ত কার্যকর হয়নি। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন করে এবং পরবর্তীতে তাদেরকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়। এবার জাতীয় নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্য প্রবেশ দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। ফলে ৫৮ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ প্রার্থীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন।

এবার উপজেলায় আওয়ামী লীগের এই আত্মীয় স্বজনকে প্রার্থী করা যাবে না- এই নির্দেশনা কয়জন মানবেন এটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হিসেবে সামনে এসেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ ব্যাপারে যদি আওয়ামী লীগ কঠোর অবস্থানে না যায় তাহলে আওয়ামী লীগের ভেতর এক ধরনের গুমোট পরিবেশ তৈরি হবে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় জমিদারি প্রথা চালু হবে এবং মাইম্যানদের দাপটে সাধারণ জনগণ এবং অন্যান্য কর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বেন। এটা আওয়ামী লীগের জন্য একটা বড় ধরনের সমস্যা তৈরি করবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।


আওয়ামী লীগ   উপজেলা নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

ব্রিটিশ হাইকমিশনারের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক

প্রকাশ: ১০:১৫ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

ঢাকায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুকের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে সোয়া ১২টায় বারিধারায় ব্রিটিশ হাইকমিশনে বিএনপি মহাসচিবের গাাড়ি প্রবেশ করে। এক ঘণ্টা ৭ মিনিটে হা্ইকমিশন থেকে মহাসচিবের গাড়ি বেরিয়ে আসে।

বৈঠকে মির্জা ফখরুলের সাথে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ উপস্থিত ছিলেন। 

ব্রিটিশ হাইকমিশন বাংলাদেশের এক্স হ্যান্ডেলে বিএনপির তিন নেতার সাথে হাইকমিশনারের ছবি দিয়ে একটি পোস্ট করেছে। ওই পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়, বিএনপির রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে করেছেন সারাহ কুক। 

তবে বৈঠক শেষে বিএনপির নেতারা বৈঠক নিয়ে গণমাধ্যমের সাথে কোনো কথা বলেননি।

ব্রিটিশ হাইকমিশনার   বিএনপি   আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী   শামা ওবায়েদ   সারাহ কুক  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলায় কেন 'মাইম্যান' চান মন্ত্রী-এমপিরা?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

কেউ মন্ত্রী হয়েছেন, কেউ সংসদ সদস্য। কেউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা, এমনকি প্রেসিডিয়াম সদস্য। তারপরেও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এই প্রভাবশালী নেতাদের এত আগ্রহ কেন? এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেক মুখরোচক আলোচনা চলছে। অনেকেই এ নিয়ে কৌতুকও করেছেন। 

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে এটি একটি নতুন উপসর্গ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী, এমপি এবং নেতা-পাতি নেতারা এলাকায় নিজস্ব ব্যক্তিদেরকে শুধু প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছেন না, তাদেরকে নির্বাচিত করতে চাচ্ছেন। কেন মাইম্যানদেরকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করতে আগ্রহী মন্ত্রী-এমপিরা?

এই প্রশ্নের উত্তরে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন যে, একাধিক কারণে উপজেলায় মাইম্যানদেরকে চাচ্ছেন মন্ত্রী-এমপিরা। প্রথমত, এবারের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের মধ্যে সুস্পষ্ট বিভক্তি হয়েছে। যেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়ী হয়েছেন সেখানে ওই প্রার্থীর বিরোধীপক্ষ নতুন করে শক্তি সঞ্চয় করছেন। সেই কারণে এলাকায় তাদের অবস্থা নাজুক হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগ এবং আওয়ামী লীগের বিরোধ এমপি-মন্ত্রীদেরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলছে। এ কারণে কর্তৃত্ব রক্ষার জন্য তারা নিজস্ব লোকজনকে উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করার জন্য মাঠে নেমেছেন। 

দ্বিতীয়ত, প্রতিপক্ষকে দমন। এই জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর এখনও কোন্দলে বিভক্ত আওয়ামী লীগের যারা জিতেছেন বা হেরেছেন তাদের প্রতিপক্ষরা শক্তিশালী। প্রতিপক্ষকে দমনের জন্য উপজেলা চেয়ারম্যানের নিয়ন্ত্রণটা অত্যন্ত জরুরী। আর এই কারণেই প্রতিপক্ষকে দমনের লক্ষ্যে উপজেলায় চোখ গেছে মন্ত্রী-এমপিদের।

তৃতীয়ত, দুর্নীতি এবং অনিয়ম। উপজেলা চেয়ারম্যানদের অনেক বরাদ্দ থাকে। উপজেলা চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে টেন্ডার এবং অন্যান্য কার্যক্রমগুলো উপজেলায় সংঘটিত হয়। আর একারণেই নিজের ব্যক্তি উপজেলার চেয়ারম্যান হলে এমপিদের পক্ষে অনিয়ম এবং দুর্নীতি করাটা সহজ হয়। আর এ জন্যই তারা অন্য কারও ওপর ভরসা করতে পারছেন না। নিজের আত্মীয়স্বজনকে উপজেলায় বসিয়ে অনিয়ম এবং দুর্নীতি করার ক্ষেত্র উন্মুক্ত করতে চাচ্ছেন।

চতুর্থত, ভবিষ্যতের রাজনীতি। যারা তাদের পুত্র এবং অন্যান্য আত্মীয়স্বজনদেরকে প্রার্থী করেছেন, তাদের ক্ষেত্রে রয়েছে সুনির্দিষ্ট রাজনৈতিক লক্ষ্য। এবার উপজেলা চেয়ারম্যান পরের বার এমপি। বিশেষ করে যাদের বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে এবং রাজনীতিতে আগামীতে নাও থাকতে পারেন এমন আশঙ্কা রয়েছে, তারাই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য সন্তান এবং নিকট আত্মীয়দেরকে রাজনীতির মাঠে নিচ্ছেন। যেমন- সাহাদারা মান্নান তার পুত্রকে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত করার মাধ্যমে রাজনীতির মাঠে নিয়ে আসতে চাচ্ছেন। ভবিষ্যতে যেন তিনি এমপি হতে পারেন। একই অবস্থা সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী আব্দুল মান্নানের ক্ষেত্রেও। শাজাহান খানের ক্ষেত্রেও সে রকম একটি কৌশলই দৃশ্যমান হচ্ছে।

সবকিছু মিলিয়ে এলাকায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা, প্রভাব বিস্তার এবং পুরো এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ রাখার জন্যই আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা এবার উপজেলার দিকে ঝুঁকেছে। উপজেলাগুলোর মাধ্যমে তাদের নিজেদের ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার অভিযান শুরু করেছেন মন্ত্রী-এমপিরা। এখন দেখার বিষয়, উপজেলায় মাইম্যান বসিয়ে মন্ত্রী-এমপিরা কি অর্জন করতে পারেন।

উপজেলা নির্বাচন   মন্ত্রী-এমপি   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

পরিবারতন্ত্রের কবলে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ

প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চলছে। বিভিন্ন এলাকায় মন্ত্রী এমপিরা তাদের নিকট আত্মীয় স্বজনকে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী করে ক্ষমতার শিকড় আরও গভীর করতে চাইছেন। ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে চাইছেন। 

প্রায় অর্ধশত এমপি তাদের নিকট আত্মীয়কে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন এবং তাদের জন্য নির্বাচনী প্রচারণাও শুরু করেছেন। এর ফলে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পরিবারতন্ত্রের কবলে পড়তে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

উপজেলা নির্বাচনে এমপিদের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামা, ভাগ্নেসহ আত্মীয় স্বজনও চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হয়েছেন এবং এ সমস্ত আত্মীয় স্বজনকে জয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এমপি ও নেতারা তাদের অনুগতদের মাঠে নামিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত যদি তাদের আত্মীয় স্বজনরা বিজয়ী হন তাহলে ওই সমস্ত উপজেলা গুলোতে আওয়ামী লীগ থাকবে না, সেখানে পরিবার লীগ প্রতিষ্ঠিত হবে। 

তবে ইতোমধ্যে পরিবারতন্ত্রের ব্যাপারে কঠোব সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। উপজেলা নির্বাচনে দলের মন্ত্রী–এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের উপজেলা ভোটে অংশ না নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে দলটি। ইতোমধ্যে তাদেরকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে এখন দেখার বিষয় যে, যে সমস্ত মন্ত্রী–এমপিদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়রা নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন তারা এবার দলীয় সিদ্ধান্ত মানেন কিনা কিংবা নির্বাচন থেকে সরে যান কিনা। 

বগুড়ার সারিয়াকান্দি এবং সোনাতলা উপজেলায় এমপি সাহাদারা মান্নান তার ছেলে সাখাওয়াত সজল হোসেন এবং ছোট ভাই মিনহাজ জাহানকে প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা দিয়েছেন। সোনাতলার প্রার্থী হচ্ছেন ছোট ভাই আর সারিয়াকান্দিতে প্রার্থী হয়েছেন তার ছেলে। এটি নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে তীব্র কোন্দল এবং অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। সাহাদারা মান্নান বগুড়া-১ আসনে আওয়ামী লীগের এমপি এবং এই দুই উপজেলায় যদি তার ভাই এবং ছেলে চেয়ারম্যান হন তাহলে বগুড়া-১ আসনে পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। 

টাঙ্গাইলে-১ আসনের সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় দুইজন চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী মনোনীত করছেন। এই প্রার্থীরা তার ঘনিষ্ঠ এবং মাইম্যান হিসাবে পরিচিত। ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. রাজ্জাকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সভাপতির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন ধনবাড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এই লিখিত অভিযোগে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্য তার নির্বাচনী এলাকার আপন খালাতো ভাই এবং নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে চেয়ারম্যান হিসেবে প্রার্থী করেছেন। 

নাটোরের সিংড়া উপজেলায় লুৎফুল কবির হাবিবকে একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদের শ্যালক। 

মাদারীপুর সদর উপজেলায় নিজের ছেলে আসিবুর রহমান খানকে প্রার্থী ঘোষণা করেছেন আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। 

এই সমস্ত এলাকাগুলোতে যখন শ্যালক এবং সন্তানরা বিজয়ী হবে তখন তাদের একক রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। 

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় সাবেক পরিকল্পনা মন্ত্রী এবং বর্তমান সংসদ সদস্য এম এ মান্নানের ছেলে সাদাত মান্নানকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হচ্ছে। এম এ মান্নান নিজেও বিভিন্ন আয়োজনে ছেলের পক্ষে প্রচারণা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে সুনামগঞ্জে মান্নান তন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হতে পারে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। 

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা এবারও প্রার্থী। তার বড় ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। একই উপজেলার সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার বেগমের ছেলে যুবলীগের নেতা ফজলে রাব্বি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে যাচ্ছেন। 

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার প্রার্থী হচ্ছেন বর্তমান চেয়ারম্যান এবং সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইসমাঈল হোসেন। তিনি মানিকগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের ফুপাতো ভাই।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মাহবুব উল আলম হানিফ এর চাচাতো ভাই আতাউর রহমান বর্তমান চেয়ারম্যান। তিনি আবারও নির্বাচন করছেন।

নোয়াখালীর হাতিয়ায় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ আলীর ছেলে আশিক আলীকে, সুবর্ণচর উপজেলায় নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে একরামুল করিম চৌধুরী তার ছেলের হয়ে প্রচারণা অংশগ্রহণ করছেন। 

নোয়াখালী আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকা। তার নির্বাচনী এলাকায় এমপিরা পরিবারতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে লিপ্ত হয়েছেন।

মৌলভিবাজার বড়লেখা উপজেলায় নির্বাচনে ভাগ্নে সোয়েব আহম্মেদকে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন মৌলভিবাজার-১ আসনের এমপি সাহাবুদ্দিন। 

চুয়াডাঙ্গা-২ আসনের এমপি আলী আজগার টগর তার নির্বাচনী এলাকা দামুরহুদা উপজেলায় আপন ভাই আলী মনসুর বাবুকে চেয়ারম্যান প্রার্থী করেছেন। 

নরসিংদী-৩ আসনে এমপি সিরাজুল ইসলাম মোল্লা ঘোষণা দিয়েছেন যে, তার নির্বাচনী এলাকা শিবপুর উপজেলায় চেয়ারম্যান হবেন তার স্ত্রী ফেরদৌসি ইসলাম। তিনি তাকে সমর্থন জানাবেন। 

এভাবে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে পল্লবিত হচ্ছে পরিবারতন্ত্র। আগে ‘মাইম্যান’ কে বসানো হত, এবার সেই লজ্জা শরমের মুখোশ খুলে ফেলে আওয়ামী লীগের এমপি এবং মন্ত্রীরা তাদের নিজের আত্নীয় স্বজনকেই উপজেলা চেয়ারম্যান করতে চাচ্ছেন এলাকায় নিরঙ্কুশ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এটি কীভাবে প্রতিহত করেন সেটিই এখন দেখার বিষয়।

পরিবারতন্ত্র   আওয়ামী লীগ  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

এমপি-মন্ত্রী পরিবারের সদস্যরা নির্বাচন করতে পারবেন না: ওবায়দুল কাদের

প্রকাশ: ০৫:২৪ পিএম, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪


Thumbnail

আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের কোন এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য বা স্বজনদের কেউ প্রার্থী হতে পারবেন বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সন্মেলনে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান তিনি। 

ওবায়দুল কাদের বলেন, আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী–সংসদ সদস্যদের সন্তান, পরিবারের সদস্য ও নিকটাত্মীয়দের ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এ নির্দেশ অমান্য করে উপজেলা নির্বাচন করবেন, তাদের বিরুদ্ধে দল বহিষ্কারাদেশসহ কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জানা যায়, শুধু সন্তান, পরিবার বা নিকটাত্মীয় ছাড়াও মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে কোনোভাবে সম্পৃক্ত না হওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কারণ, স্থানীয় পর্যায়ে নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্য মন্ত্রী–সংসদ সদস্যরা আত্মীয়–পরিজন ছাড়াও ‘মাই ম্যান’ তৈরি করার লক্ষ্যে পছন্দের প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামছেন। এতে দলের তৃণমূলের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে বলে দলের নীতিনির্ধারকেরা মনে করছেন। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশকেও ব্যবহারের চেষ্টা করছেন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরা। এ জন্যই কড়া অবস্থান।

প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে দেশের ১৫২টি উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। প্রতীক বরাদ্দ দেওয়া হবে ২৩ এপ্রিল।

আর দ্বিতীয় ধাপে ১৬১টি উপজেলায় আগামী ২১ মে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তফসিল অনুযায়ী, এ ধাপে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ২১ এপ্রিল, বাছাই ২৩ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ৩০ এপ্রিল এবং প্রতীক বরাদ্দ ২ মে। এই নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে ভোট হবে।

নির্বাচন কমিশন জানায়, দেশের ৪৮১টি উপজেলায় চার ধাপের নির্বাচন শুরু হবে ৮ মে, শেষ হবে জুনের প্রথম পক্ষে। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দুই ধাপের তফসিলও ঘোষণা করা হয়েছে।


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন