নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০১:০০ পিএম, ১৫ নভেম্বর, ২০১৮
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সংসদের আসন ভাগাভাগি নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দলীয় জোটের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে জোট দুটির প্রধান দল বিএনপি। বহু চেষ্টার পরও আসন ভাগাভাগি বিষয়ে কোনো যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি তারা।
বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, নিজেদের দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতে ইসলামীর জন্য সর্বোচ্চ ১০-১৫টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক বরাদ্দ করতে পারবে তারা। কিন্তু গতকাল বুধবার ২০ দলীয় জোটের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক জামায়াতে ইসলামী জানিয়েছে তারা ৬৫ আসনে মনোনয়নপত্র কিনবে। ইতিমধ্যেই এ সংক্রান্ত একটি তালিকা ২০ দলের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানের কাছে হস্তান্তর করেছে তারা। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘একেক শরিক দলের একেক রকম দাবি থাকতেই পারে। আমরা একসঙ্গে বসে এসব বিষয় সমাধান করবো।’ কিন্তু জামাত সূত্রে জানা গেছে, তারা রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করার জন্য যোগাযোগ করছেন। যদিও নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাওয়ার কারণে জামাতের কোনো প্রার্থী দলীয় প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না তবে তাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াবেন বলে জানিয়েছেন।
এছাড়া ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শরিক লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমেদের আসন নিয়েও জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। অলি আহমেদ মাঝখানে ২০ দলীয় জোটের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিলেন। পরে তাঁকে বুঝিয়ে শুনিয়ে আবার রাজনীতিতে নিয়ে আসা হয়। কিন্তু ২০ দলীয় জোটের অন্যতম এই নেতার আসন আর বিএনপি নেতৃত্বাধীন আরেক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আরেকজন নেতারও একই আসন হওয়ায় উভয় সংকটে পড়েছে বিএনপি।
জামাতের আসন কিংবা ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের মধ্যে সমন্বয় রক্ষা করার বাইরেও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসন ভাগাভাগিকে ঘিরে বিএনপির সামনে আরেকটি বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে বগুড়া, নোয়াখালী, ফেনী এবং লক্ষ্মীপুর বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত। এই নির্বাচনী এলাকাগুলোতে বিএনপি কারও জন্যই আসন ছাড়তে রাজি নয়। কিন্তু জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতারা বিএনপির এসব ‘নিজস্ব আসন’ থেকে ভোটে দাঁড়াতে চাইছেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, মাহমুদুর রহমান মান্নার কথা। ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম এই নেতা বগুড়ার যে আসন থেকে নির্বাচন করতে চান সে আসনটি দীর্ঘদিন ধরে বিএনপির দুর্গ বলে পরিচিত হয়ে আসছে। আবার ঐক্যফ্রন্টের আরেক শীর্ষ নেতা আ. স. ম. আব্দুর রব লক্ষ্মীপুরের আসন থেকে নির্বাচন করতে চাইছেন। কিন্তু এই এলাকাও বিএনপির শক্তিশালী দুর্গ বলে পরিচিত। এছাড়া ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা মোস্তফা মহসীন মন্টু ঢাকার দুটি আসনে নির্বাচন করতে চাইছেন। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জের আসনটি বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের আসন আর গয়েশ্বর বিএনপির একজন হেভিওয়েট প্রার্থী। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের জন্য বিকল্প প্রস্তাব দিয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা মান্না, রব কিংবা জাফরুল্লাহ চৌধুরীদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে ঢাকার আসনগুলো থেকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য। কিন্তু এতেও সমস্যার সমাধান হয়নি।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, যখন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল তখন বিএনপি ধারণা করেছিল ঐক্যফ্রন্টের দলগুলো আসন নিয়ে যতটা না উৎসাহী, তার চেয়ে বেশি উৎসাহী আন্দোলনে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের চাহিদা ২০ দলের শরিকদের চেয়েও বেশি। শরিকদের এই চাহিদা বিএনপি কীভাবে মেটাবে সেটাই এখন প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে বিএনপির একজন বড় নেতা বলেছেন, ‘আমরা দ্বিমুখী চাপের মধ্যে আছি। একদিকে নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার জন্য সরকারের সঙ্গে আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। অন্যদিকে শরিকরা আমাদের দুর্বল মনে করে আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। তারা অবাস্তব দাবিদাওয়া ও অকল্পনীয় আসনের চাহিদা দিয়ে আমাদের বিপর্যস্ত অবস্থায় ফেলছে।’
এই উভয় সংকট থেকে মুক্তি পেতে সামনে কী পদক্ষেপ নেয় বিএনপি সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।