নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:০০ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগে যে প্রার্থী হওয়ার প্রতিযোগিতা এবং মনোনয়ন ফরম কেনার উৎসব, এতে আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা অসন্তুষ্ট হয়েছে।
অনেক সিনিয়র নেতারাই মনে করছেন যে, এভাবে একই নির্বাচনী এলাকায় বিশেষ করে সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় একাধিক ফরম কেনাটা সিনিয়র নেতাদের জন্য অপমানজনক। দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। সিনিয়র নেতাদের প্রতি যে শ্রদ্ধা এবং সম্মান তার ঘাটতি স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের মাত্র ৭ টি নির্বাচনী এলাকায় একক ফরম কেনা হয়েছে। এর মধ্যে ২ টি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী এলাকা, ১ টি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকায়, ১ টি আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের নির্বাচনী এলাকায়। এমন শীর্ষ নেতাদের এলাকায় একাধিক ফরম কেনা হয়নি। বাকী প্রায় সব সিনিয়র নেতাদের এলাকায় একাধিক ফরম কিনেছে একই দলের নেতারা।
এর আগে আওয়ামী লীগের অন্তত ২০ টি সিটে সর্বসম্মতক্রমে প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র কিনতেন। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম দেখা গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তোফায়েল আহমেদের আসনে সাতজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আমির হোসেনের আমুর নির্বাচনী এলাকায় ১১ জন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, অরেক আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরির এলাকাতেও সাতজন মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিমের এলাকায় একাধিক মনোনয়ন ফরম কেনা হয়েছে।
সাধারণত দেখা যায়, যে সমস্ত নির্বাচনী এলকায় প্রার্থী মোটামুটি নিশ্চিত থাকে। সেই সমস্ত নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের অন্য নেতা কর্মীরা মনোনয়ন ফরম কেনেন না। কারণ তাঁরা তখন মনোনিত ওই নেতার প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করেন। এটাই দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছিল। এমনকি ২০০৮ এর নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ এই রীতি অনুসরন করে আসছিল। কিন্তু এবার দেখা গেছে যে সিনিয়র নেতাদের নির্বাচনী এলাকায় যুবলীগ, প্রাক্তন ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনই শুধু নয়, এমনকি আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতারাও মনোনয়ন ফরম কিনে কেন্দ্রীয় নেতাদের চ্যালেঞ্জ করেছেন।
আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেছেন, এটা স্পষ্টতই ওই এলাকার এমপির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের একটি উদাহরণ, নেতৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করার সামিল। তবে আওয়ামী লীগের তরুন নেতারা বলছেন, এটা চ্যালেঞ্জ নয়। মনোনয়ন প্রত্যাশিরা একটি উৎসব মুখর পরিবেশে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন। তারা জানেন যে, ওই এলাকায় সিনিয়র নেতা নির্বাচিত হবেন। তারপরও তাঁরা নির্বাচনকে উৎসব মুখর করে তুলেছে ফরম কেনার মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগের অন্য আরেকটি সূত্র বলছে যে, আওয়ামী লীগের মধ্যে ধারণা ছিল, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহন করবে না। তখন যেন ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো একতরফা নির্বাচন না হয়। সে জন্য আওয়ামী লীগের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের ব্যাপারে উৎসাহী ছিলেন। তবে যে কারণেই হোক না কেন। একাধিক মনোনয়ন ফরম যেসব এলাকায় তোলা হয়েছে। তাতে দলের সিনিয়র নেতারা হতাশ এবং অসন্তুষ্ট। তাঁরা মনে করেন, দলের নেতৃত্বের মধ্যে তরুণ বিশেষ করে উঠতি নেতারা আগের মতো শ্রদ্ধাশীল নয়। এটা আওয়ামী লীগের জন্য বিবেচনার বিষয়। আবার দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের কিছু কিছু নির্বাচনী এলাকায় ৩০ থেকে ৫৫ টা পর্যন্ত মনোনয়ন ফরম বিক্রী হয়েছে। যেমন বরগুনার মতো আরও বেশ কয়েকটি নির্বাচনী এলাকায় এত ফরম কেনা হয়েছে! যা রীতিমতো আশ্চর্য্যজনক! এখানে আওয়ামী লীগ স্পষ্টতই বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আর যাই হোক, এই স্বল্প সময়ের মধ্যে বিভক্ত হওয়া উচিত না। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, গত কয়েকবছরে যৌথ নেতৃত্বের বদলে আওয়ামী লীগের একক নেতৃত্বের ধারা স্পষ্ট হয়েছে। দলের নেতা কর্মীরা, দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া কারও প্রতি অত অাস্থাশীল এবং অনুগত নয়। এবারের মনোনয়র ফরম বিক্রীতে তাদের সেই মনোভাবই স্পষ্ট হয়েছে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।