ইনসাইড পলিটিক্স

মির্জা ফখরুল কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৬ নভেম্বর, ২০১৮


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম প্রধান একটি রাজনৈতিক দল বিএনপি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করছে তিনবারের ক্ষমতাসীন দলটি। বিএনপির শীর্ষ নেতা বেগম খালেদা জিয়া দুর্নীতির দায়ে এবছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারান্তরীন। বিএনপির দ্বিতীয় প্রধান নেতা তারেক রহমান দশ বছরের বেশি সময় ধরে পলাতক অবস্থায় লন্ডনে অবস্থান করছেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর থেকেই বিএনপির নেতৃত্বের কেন্দ্রে চলে এসেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বর্তমানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অতিতে বিএনপির তেমন কোনও আলোচিত নেতা ছিলেন না। এমনকি প্রধান নেতাও ছিলেন না। ২০০১ সালে যখন বিএনপি ক্ষমতায় আসে, তখন তিনি একজন প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। ২০০৭ সালে ওয়ান ইলেভেনের সময় বিএনপির যখন থেকে সংকটের সূচনা হয়, সেই সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর প্রথম পাদপ্রদীপে চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি দিনে দিনে বিএনপির দীর্ঘদিনের পরিক্ষিত সিনিয়র নেতাদের টপকে দলের নেতৃত্বের কেন্দ্র বিন্দুতে চলে আসেন। বেগম খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর মির্জা ফখরুল হয়ে ওঠেন বিএনপির অন্যতম মূল ব্যাক্তি। যদিও দলের মধ্যে তাঁর অবস্থান খুব বেশি শক্ত নয়। দলের মধ্যে তিনি ততটা জনপ্রিয়ও নন। তিনি খালেদা জিয়া এবং তারেক জিয়ার বলয়ের মধ্যে থেকে বিএনপিতে শুধুমাত্র একজন ম্যানেজারের মর্যাদাই পান। তারপরেও বিএনপির সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ও নীতি নির্ধারণের কেন্দ্রে তিনি চলে এসেছেন বর্তমান সময়ে।

বিএনপির মধ্যেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে নিয়ে নানা ধরণের কানাঘুষা চালু আছে। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী মনে করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সরকারের একজন এজেন্ট। বিএনপিকে দুর্বল করতে, বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে গিয়ে সরকারের বৈধতা দেওয়ায় তাঁর যে এজেন্ডা, সেই এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যে তিনি সরকারের পক্ষে কাজ করছেন বলেও বিএনপির অনেক সিনিয়র নেতারা তাকে সন্দেহ করেন। তারপরেও ড. খন্দকার মোশারফ হোসেন, ব্যরিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, মওদুদ আহমদের মত বিএনপির হেভি ওয়েট এবং প্রভাবশালী নেতাদের পিছনে ফেলে, তিনি বর্তমানে বিএনপির প্রকাশ্য নেতা। বিএনপির অনেক নেতাই চেয়েছিলেন, এবারের সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে, নির্বাচন বর্জন করে সরকারকে বিপদে ফেলতে। তবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আগ্রহ এবং উদ্যোগেই প্রথমে যুক্তফ্রন্ট, তারপর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যোগ দেয় বিএনপি এবং শেষ পর্যন্ত বিএনপি জোটগতভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। তবে বিএনপির মধ্যে প্রশ্ন আছে, কার এজেণ্ডা বাস্তবায়নের জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে যাচ্ছে? তিনি কি সরকারকে সুবিধা দেওয়ার জন্য, সরকারকে বৈধ্যতা দেওয়ার জন্য নির্বাচনে যাচ্ছেন, নাকি মির্জা ফখরুলের হাত ধরেই বিএনপির পুনর্জন্ম হবে? যদিও বিএনপির মধ্যে তাকে কেউ বিশ্বাস করে না। তারপরেও বিএনপি নেতারা স্বীকার করেন যে, বিএনপির ঐক্যের প্রতীক হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

বিএনপির অনেক নেতাই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সন্দেহ করেন। তাকে সন্দেহ করার একাধিক কারণও রয়েছে, যেমন এক সময় সরকার মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে বহু মামলা দিয়েছিল এবং তাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দীর্ঘদিন তিনি কারাগারেও ছিলেন। পরবর্তীতে মির্জা ফখরুলের প্রতি সরকারের বদান্যতা চোখে পড়ার মতো। এরপর বিএনপির অনেক নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হলেও, তাঁর বিরুদ্ধে আর কোনও মামলা দেওয়া হয় নাই এবং তাঁর আগের মামলাগুলোর বিষয়েও ধীর নীতি গ্রহণ করা হয়। সরকারের অনেক মন্ত্রী এবং প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের খবরও পাওয়া যায়। বর্তমানে সরকার তাঁর বিরুদ্ধে দমন নীতির পরিবর্তে তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া এবং তাঁর সঙ্গে সরকারের সখ্য গড়ে ওঠার এই বিষয়টা বিএনপির অনেক নেতাই সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখেন।

অন্যদিকে সরকারের মধ্যেও বিএনপিকে নিয়ে নানা ধরণের সন্দেহ দানা বেধেছে। সরকারের অনেক প্রভাবশালী নেতাই মনে করেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর যদি মহাসচিব না থাকতেন, ৮ ফেব্রুয়ারি বেগম জিয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি যদি বিএনপির মূল দায়িত্ব গ্রহণ না করতেন, তাহলে বিএনপি সহজেই এতদিনে ভেঙ্গে কয়েক ভাগে বিভক্ত হয়ে পরতো। কারণ খালেদা জিয়া বিহীন বিএনপিতে নানা মত এবং পথের অনুসারী ছিলেন। বিএনপির অনেকে নেতারই নানা রকম অভিপ্রায় ছিল। বিএনপির এমন অবস্থায় মির্জা ফখরুল সকলের সঙ্গে মধ্যস্তকারির ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে এখন পর্যন্ত বিএনপিকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর এই উদ্যোগ ও প্রয়াসের ফলেই বিএনপি এখন পর্যন্ত ভাঙ্গেনি।

দ্বিতীয়ত সরকারের অনেকেই মনে করেছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে বিএনপিতে ভাঙ্গন অনিবার্য হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে বিএনপি এখনও ভাঙ্গেনই। বিএনপি না ভাঙ্গার ক্ষেত্রে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বলে সরকারের অনেকে মনে করছে।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে সরকারের অনেকেই পছন্দ না করলেও, তাঁর সঙ্গে কথা বলা এবং দরকষাকষি করা সহজ বলে মনে করেন এবং  রাজনৈতিক বিষয়গুলোকে সহজ সমীকরণের মাধ্যমে সমাধান করতে চান এমন মন্তব্য সরকারের অনেক আওয়ামী লীগ নেতার। সেই কারণে আওয়ামী লীগ বিভিন্ন বিষয়ে দরকষাকষির জন্য তাঁর সঙ্গে কথা বলতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সম্প্রতি সময়ে সংলাপের সময়েও দেখা যায় যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকটাই নমনীয় থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপিকে নির্বাচনের মহাসড়কে নিয়ে যান। একারণে আওয়ামী লীগের মধ্যেও মির্জা ফখরুলকে নিয়া নানা সংশয় ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব আছে। আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করেন মির্জা ফখরুল সরকারকে সহায়তা করছেন, এই জন্যেই তাঁর বিরুদ্ধে মামলাগুলোকে স্তিমিত করে রাখা হয়েছে। আবার আওয়ামী লীগের কেউ কেউ মনে করছেন, সরকারের কাছ থেকে সুবিধা নিয়ে, সরকারের সঙ্গে একধরনের সখ্যতার ভাব করে বিএনপিকেই শক্তিশালী করছেন তিনি এবং বিএনপিকে শক্তিশালী করে আগামী নির্বাচনে একটা চমক দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এগুচ্ছেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের প্রকৃত ভূমিকা কি তা ভবিষ্যতই বলে দিবে। তবে বিএনপির ইতিহাস বলে, জিয়া পরিবারের বাইরে থেকে বিএনপিতে যারাই মুখ্য চরিত্রের ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার চেষ্টা করেছে, তাদেরই অত্যন্ত শোচনীয়ভাবে পতন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে বিএনপির সাবেক মহাসচিব কে. এম. ওবায়দুর রহমান এবং আব্দুল মান্নান ভুঁইয়ার কথা অনেকেই স্মরণ করেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বিএনপির লোকজন সরকারের এজেন্ট মনে করেন, অন্যদিকে আবার সরকারের লোকজন মনে করেন, বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে তাঁর ভূমিকাই প্রধান। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আসলে কার লোক? তা এখন পর্যন্ত রাজনীতির অঙ্গনে একটি অমীমাংসিত প্রশ্ন। তবে এই অমীমাংসিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি কি ভূমিকায় অবতীর্ণ হন তাঁর উপর। 

বাংলা ইনসাইডার/আরকে  



মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

বিদেশ যাওয়ার জন্য রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার মুচলেকা দেবেন বেগম জিয়া?

প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার জন্য নতুন করে আবেদন করা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তার ভাই শামীম ইস্কান্দারের করা এই আবেদন এখন আইন মন্ত্রণালয়ে রয়েছে। আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন যে, সচিব তাকে ফাইলটি পাঠিয়েছেন। এটি তিনি দেখছেন। আগামীকাল তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন। আইনমন্ত্রী এও বলেছেন যে, এ ব্যাপারে পূর্বের সিদ্ধান্ত থেকে তিনি খুব একটা সরে আসবেন না। 

স্থায়ী স্থায়ী জামিন বলতে কি বোঝানো হয়েছে—এই প্রশ্ন করলে আইনমন্ত্রী বলেছেন যে, তার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে আগের যে অবস্থান সেই অবস্থানের কোন পরিবর্তন হবে না। অর্থাৎ শামীম ইস্কান্দার যে আবেদন করেছেন, সেই আবেদনের মাধ্যমে বেগম জিয়ার বিদেশ যাওয়া সম্ভব নয়। এটা সুস্পষ্ট ভাবে বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে এখন তার পরিবার অন্য কৌশল গ্রহণ করেছে। বেগম খালেদা জিয়া ভবিষ্যতে আর কখনও রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকবেন না, বিএনপির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই—এরকম একটি পৃথক আবেদন দেওয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে। যদিও এ নিয়ে বিএনপি নেতাদের প্রবল বাধা রয়েছে। কিন্তু তার পরিবারের সদস্যরা মনে করছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে এটি একমাত্র উপায়। তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন এই কারণে সরকার তাকে বিদেশ যাওয়ার ব্যাপারে অনুমতি দিচ্ছে না। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়া যেন বিদেশ যেতে পারেন এ জন্য আবার শামীম ইস্কান্দার এবং তার বোন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে আগ্রহী। তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এখন পর্যন্ত তিনি সাক্ষাতের সময় পাননি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদনের আগেই শামীম ইস্কান্দার বিএনপির সঙ্গে বেগম খালেদা জিয়ার সম্পর্কচ্ছেদের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে পারেন। এই ঘোষণার মাধ্যমে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায়ের অবসান ঘটতে পারে। এ বিষয়টি নিয়ে শামীম ইস্কান্দার বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন। 

তবে বিএনপির সকল নেতাই এ ব্যাপারে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন। বেগম খালেদা জিয়ার আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনকে এ ব্যাপারে একটি খসড়া তৈরি করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন শামীম ইস্কান্দার। এই তথ্যটি একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু মাহবুব উদ্দিন খোকন বেগম খালেদা জিয়ার এই ধরনের মুচলেকা দেওয়া বা দল থেকে পদত্যাগের ঘোর বিরোধিতা করেছেন। 

খোকন বলেছেন, এটি ফলে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটবে এবং সারা জীবনের অর্জন বিসর্জন হবে। কিন্তু তারপরও শামীম ইস্কান্দার এই বিষয়টি নিয়ে গোঁ ধরে আছেন। তিনি আরও কয়েকজন নেতার সঙ্গেও এ বিষয়ে পরামর্শ করছেন। 

বেগম জিয়ার পরিবারের সদস্যরা মনে করেন যে, বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশে যেতে দেওয়া হচ্ছে না কারণ তিনি বিএনপির চেয়ারপার্সন। বিদেশে গেলে বিএনপি নতুন করে ষড়যন্ত্র শুরু করবে। কিন্তু বাস্তবে বেগম খালেদা জিয়া এখন অসুস্থ এবং রাজনীতি, ক্ষমতা ইত্যাদি বিষয়ে তার মোটেও মনোযোগ নাই। এমনটি বলছেন তার ভাই শামীম ইস্কান্দার। তাছাড়া শামীম ইস্কান্দারের মতো বিদেশে যেতে না দেওয়ার পিছনে একটি যৌক্তিক কারণ ছিল। আর সেই কারণ হল তখন নির্বাচন ছিল। এখন সেরকম নির্বাচনের প্রসঙ্গ নেই। সরকার নতুন নির্বাচন করেছে এবং এই নির্বাচনের বিএনপিও কোন আন্দোলন সংগ্রাম করছে না। খালেদা জিয়া তার শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে ব্যস্ত। এ রকম সময়ে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ পাঠালে সরকারের ক্ষতি হবে না। আর এজন্যই তারা আরেকবার প্রধানমন্ত্রীর করুণা প্রার্থী। তারা গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতেরও চেষ্টা করছেন বলে একাধিক সূত্র নিম্চিত করেছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার রাজনীতি ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা বিএনপিতে কি প্রতিক্রিয়া তৈরি করবে এবং বিএনপির কি পরিণতি বয়ে আনবে সেটি নিয়ে অনেকে চিহ্নিত।


খালেদা জিয়া   বিএনপি   আইনমন্ত্রী আনিসুল হক   শামীম ইস্কান্দার  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

যুক্তরাষ্ট্র কি বিএনপিকে ধোঁকা দিয়েছে?

প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে কি ধোঁকা দিয়েছে—এরকম একটি প্রশ্ন এখন বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। বিএনপি নেতারা নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনায় এই প্রসঙ্গটি বারবার আনছেন। বিএনপির একাধিক নেতা মনে করে, বিএনপি যে আগ্রাসী অবস্থান গ্রহণ করেছিল, সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে বিএনপি কর্মীদের মধ্যে যে তেজি ভাব এসেছিল, তার প্রধান কারণ ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মনোভাব এবং আগ্রহ। তাছাড়া বিভিন্ন সময় মার্কিন রাষ্ট্রদূত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা কূটনীতিকরা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যে ভাষায় যে ভাবে কথা বলেছেন তাতে বিএনপির নেতাদের মধ্যে স্থির বিশ্বাস জন্মগ্রহণ করেছিল যে, তারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় না। আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়া এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম এজেন্ডা। আর এ কারণেই বিএনপি নেতারা এই বক্তব্যটিকে তাদের কর্মীদের কাছে সঞ্চারিত করেছিল এবং কর্মীরা উৎসাহিত হয়েছিল। 

তাছাড়া প্রকাশ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বক্তব্য, বিবৃতি এবং অবস্থান বিএনপিকে আরও চাঙ্গা করা ছিল। কিন্তু এ সবই কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তরিক অবস্থান ছিল নাকি বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পক্ষ হয়ে বিএনপিকে ধোঁকা দিয়েছিল এই প্রশ্নটি এখন প্রধান হয়ে উঠেছে। 

কোন কোন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মনে করেন যে, এবার নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করত তাহলে এই নির্বাচনটি অন্যরকম নির্বাচন হত। প্রথমত, এ বারের নির্বাচনে কারচুপি, ভোট ডাকাতি বা অন্য কোন কিছু করার বিষয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি কঠোর নেতিবাচক অবস্থান ছিল। তিনি সবাইকে বারবার একটি কথা স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছিলেন যে, নির্বাচনে কোনরকম কারচুপি করা যাবে না। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ছিল তার কমিটমেন্ট। এ কারণে এই নির্বাচনে যদি বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি পূরণ ছাড়াও অংশগ্রহণ করত তাহলে নির্বাচনে নাটকীয় ভালো ফলাফল করতো। সবচেয়ে খারাপ ফলাফল হলেও বিএনপি ৫০ থেকে ৭০টি আসন পেত। 

জাতীয় সংসদে যদি বিএনপির ৫০ থেকে ৭০টি আসন থাকে তাহলে বিএনপি একটি অত্যন্ত শক্তিশালী বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করত এবং সরকারকে চাপের ওপর রাখতে সক্ষম হত। এর ফলে আগামী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ একটি শক্তিশালী বিরোধী দলকে মোকাবেলা করে কোণঠাসা অবস্থায় দেশ পরিচালনা করত এবং বিএনপি সারাদেশে তার সংগঠন গুছিয়ে আরও চাঙ্গা হতে পারত। কিন্তু বিএনপি সেটি করেনি। বিএনপিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মুলা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল এবং মুলা দেখে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যায়নি। 

বিএনপি নির্বাচনে না যাওয়াটা কি রাজনৈতিক আন্দোলন না ধোঁকা—এই প্রশ্নই এখন বড় হয়ে এসেছে। অনেকেই মনে করছেন যে, যারা আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখতে চায় এবং আগামী পাঁচ বছর নিরবচ্ছিন্নভাবে আওয়ামী লীগ চাপহীনভাবে দেশ পরিচালনা করুক এটা চায়। তারা চাইনি বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক। সেই মাস্টার প্ল্যানের অংশ হিসেবেই বিএনপিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবির পক্ষে তাতিয়ে তোলা হয়েছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন দু বছর আগে থেকে বাংলাদেশে নির্বাচন অর্থবহ অংশগ্রহণমূলক হতে হবে ইত্যাদি বক্তব্যগুলো দিয়েছে তখন বিএনপির কাছে এরকম বার্তা গেছে যে, বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেই নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দিবেনা, স্বীকৃতি দেবে না। ফলে সরকারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে। ভিসা নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষণার পর এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই বিএনপি ছাড়া নির্বাচন মেনে নেবে না। এতে আত্মহারা হয়ে বিএনপি নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিল। 

তারা মনে করেছিল যে, সরকারের পতন হবেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অতিমাত্রা নির্ভরশীল হয়ে তারা সরকার পতনের খোয়াব দেখেছিল। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই কৌশলটা কি ছিল বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা কৌশল? বিএনপিকে ধোঁকা দেওয়ার কৌশল? সেটি এখন বিভিন্ন মহলে চর্চা হচ্ছে। এই ধোঁকা যদি সত্যি হয় তাহলে বিএনপির নির্বাচন বর্জন এবং নির্বাচন করার ধোঁকার হ্যাটট্রিক পূর্ণ হল। ২০১৪ সালে বিএনপিকে বলা হয়েছিল যে, তোমরা নির্বাচনে যেও না, তাহলে পরে সরকারের পতন ঘটবে। বিএনপি সে আশায় নির্বাচন বর্জন করেছিল। ওই নির্বাচনে যদি বিএনপি অংশগ্রহণ করতো তাহলেও বিএনপির পরিণতি আজকের মতো হত না। কিন্তু সে সময় বিএনপি পাঁচটি সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পরও ওই নির্বাচন বর্জন করে। ২০১৮ সালে বিএনপি কোন দাবি দাওয়া ছাড়াই ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে গিয়ে নির্বাচন করে দ্বিতীয় ধোঁকা খায়। আর এবার আমেরিকা সরকারকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেবে—এমন একটি সাজানো ফাঁদে পা দিয়ে বিএনপি ধোঁকার হ্যাটট্রিক পূর্ণ করল। এখন প্রশ্ন হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কেন বিএনপিকে ধোঁকা দিল?


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র   বিএনপি   বাংলাদেশের নির্বাচন  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

‘মেজর হাফিজ-সাকিবের কিংস পার্টিতে যোগ’ প্রসঙ্গে যা বললেন মঈন খান

প্রকাশ: ০৭:২০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজ উদ্দিন আহমেদের বাসায় গিয়ে কিংস পার্টিতে যোগ দেওয়ার ফরম পূরণ করেছিলেন ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান-এমন একটি সংবাদ ও ছবি তোলপাড় সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। এ নিয়ে এবার মুখ খুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান।

তিনি বলেন, সরকার এই নির্বাচনের আগে একটি প্রকল্প নিয়েছিল, তারপর সে প্রকল্পে ব্যর্থ হয়ে আরও প্রকল্প নিয়েছিল। হাফিজ সাহেবকে (মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন আহমেদ) নিয়ে গণমাধ্যমে যেটি এসেছে সেটি সরকারে ব্যর্থ প্রকল্পের বহিঃপ্রকাশ।

সোমবার (১৮ মার্চ) সদ্য কারামুক্ত বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ রবিউল আলম রবির বাসায় গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের কাছে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে তিনি সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের বাসায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের শুভেচ্ছা পৌঁছে দেন। সেই সাথে তার পরিবারের খোঁজখবর নেন।

মঈন খান বলেন, সরকার একটা প্রহসনের করে, একটা নির্বাচনের নাটক মঞ্চায়িত করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে আত্মস্বীকৃত নির্বাচন বলে প্রমাণ হয়ে গেলো।

আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা তো আমরাও চাই- এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ যদি আমাদের বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা চায় একটি এক দলীয় শাসনের জন্য, আমরা কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্রের সহায়তা চাই একটি ভিন্ন কারণে, সেটি হলো বাংলাদেশে একটি গণতান্ত্রিক সরকার গঠনের জন্য। আমরা তো কারো সাথে কোনো শত্রুতা চাই না।

বাংলাদেশের মানুষের একটি আকাঙ্ক্ষা হলো গণতন্ত্র, এছাড়া দ্বিতীয় কোনো আকাঙ্ক্ষা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, সে কথা সরকার স্বীকার করুক আর নাই করুক।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর অব: হাফিজ উদ্দিন আহমেদ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার যে অপচেষ্টা করেছিল সেটি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। সেটি প্রমাণিত হয়েছে। সরকার এই নির্বাচনের আগে একটি প্রকল্প নিয়েছিল, তারপর সে প্রকল্পে ফেল করলে আরো একটি প্রকল্প নিয়েছিল। হাফিজ সাহেবকে নিয়ে গণমাধ্যমে যেটি এসেছে সেটি সরকারের ব্যর্থ প্রকল্পের বহিঃপ্রকাশ।

সদ্য কারামুক্ত ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ারের বাসায় মঈন খান বলেন, সরকার যদি মনে করে থাকে এভাবে চিরদিন বন্দুক, টিয়ারগ্যাস, গ্রেনেড দিয়ে ক্ষমতায় থাকবে। এটা একটা দুরাশা মাত্র। মরীচিকার স্বপ্ন নিয়ে সরকার বাংলাদেশে টিকে থাকতে পারবে না। এ দেশের গণতন্ত্রকামি মানুষ গণতন্ত্র ফিরে আনবে, ইনশা আল্লাহ।

কারাগারে চিত্র তুলে ধরে বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য রবিউল ইসলাম রবি বলেন, আমি এই সরকারের আমলে নয়বার কারাগারে গিয়েছি। তবে এবারের বিষয়টা ব্যতিক্রম। কারাগারে আইসলোশন ছিল ২৪ ঘণ্টা। লকাপে রাখা হয়েছে, সেলের বাহিরে কাউকে যেতে দেয়া হয়নি। এবারের মতো কারাবাস আমি কখনো করিনি আর পৃথিবীর এমন কোথাও আছে কি না, আমার জানা নেই।

মেজর হাফিজ   সাকিব আল হাসান   কিংস পার্টি   ড. মঈন খান   বিএনপি  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

মন্ত্রী নন-এমপি নন, তবু তারা ক্ষমতাবান

প্রকাশ: ০৬:০০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

টানা ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। ১৬ বছরে পা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগ। টানা ক্ষমতায় থাকলেও আওয়ামী লীগের মধ্যে ক্ষমতার কেন্দ্রে একটা ভারসাম্য লক্ষ্য করা যায়। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রীদেরকে বিভিন্ন সময় পরিবর্তন করে একেক মেয়াদে একেক জনকে মন্ত্রী করেন এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন করে নেতাদের যেমন যোগ্যতা পরিমাপ করেন, ঠিক তেমনি তাদেরকে ক্ষমতাবান করেন। 

তবে টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে এখন দলের নেতা হওয়ার চেয়ে মন্ত্রী হওয়া অনেক লাভজনক বলেই মনে করেন নেতাকর্মীরা। দলের নেতা হয়ে তেমন লাভ নেই। ক্ষমতা হল শুধুমাত্র মন্ত্রী-এমপি হলেই। এই জন্য মন্ত্রী-এমপি হওয়ার ক্ষেত্রে একধরনের হিড়িক পড়ে যায়। কেন্দ্রীয় কমিটির অধিকাংশ নেতাই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন লাভের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেন। কয়েকজন মনোনয়ন পান, কয়েকজন পান না। আর মনোনয়ন না পেলে তারা আওয়ামী লীগের যত বড় নেতাই হোন না কেন ক্ষমতা থেকে অনেকটা দূরে বলে নিজেরাই হতাশা প্রকাশ করেন। কিন্তু এর মধ্যে ব্যতিক্রম আছেন কয়েকজন, যারা মন্ত্রী নন, এমপি নন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং নিজ যোগ্যতায় তারা ক্ষমতাবানও।

আওয়ামী লীগের যারা এই ধরনের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ রয়েছেন তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন;

সুজিত রায় নন্দী: সুজিত রায় নন্দী আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। আওয়ামী লীগের গত কাউন্সিলের যে মুষ্টি হাতে গোনা  দু একজনের পদোন্নতি হয়েছিল তার মধ্যে সুজিত নন্দী অন্যতম। পদোন্নতি পেয়ে তিনি সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি তার নির্বাচনী এলাকা চাঁদপুরে ব্যাপক জনপ্রিয় হওয়ার পরও গত নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি। আওয়ামী লীগ সভাপতির নির্দেশনা তিনি মেনে নিয়েছেন। স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেননি। কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং ক্ষমতাবান সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। আওয়ামী লীগে যারা সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হয়েছেন, তারা কেউ মন্ত্রী হতে পারেনি। তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা। অন্যদিকে সুজিত নন্দী যেহেতু নির্বাচন করেননি, সার্বক্ষণিকভাবে দলের দলের জন্য এবং সংগঠনের জন্য সময় দিয়েছেন, তার মধ্যে সেই হতাশা নেই। ফলে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয় এবং ক্ষমতাবান। 

মো. সিদ্দিকুর রহমান: মো. সিদ্দিকুর রহমান আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক। বিজিএমইএ অন্যতম নেতা। তিনি প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। মন্ত্রী বা এমপি না হয়েও তিনি সরকারের অন্যতম নীতিনির্ধারক। বিশেষ করে বিজিএমইএ এর নির্বাচন, বাংলাদেশের শ্রম আইন এবং শ্রমিক বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যুগুলোকে দেখভাল করার ক্ষেত্রে মো. সিদ্দিকুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পরিচিত।

বিপ্লব বড়ুয়া: বিপ্লব বড়ুয়া দপ্তর সম্পাদক হলেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী হিসেবে অধিক পরিচিত। মিষ্টভাষী এবং বিনয় এই তরুণ আওয়ামী লীগ মহলেও জনপ্রিয়। বিপ্লব বড়ুয়া প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী এবং দপ্তর সম্পাদক হওয়ার কারণে অত্যন্ত ক্ষমতাবান। বিপ্লব বড়ুয়াও আওয়ামী লীগের সেই সমস্ত নেতৃবৃন্দের একজন যারা নির্বাচন করেননি এবং নির্বাচনের জন্য মনোনয়নও চাননি। নির্বাচন না করার কারণে দলে তার অবস্থান আরও শক্ত হয়েছে। বিশেষ করে সাংগঠনিক বিষয়ে তার ওপর নির্ভরতা বেড়েছে দলের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের। এ কারণে তিনি দলে একজন বিশ্বস্ত দপ্তর সম্পাদক হিসেবে ক্রমশ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।

আমিনুল ইসলাম: আমিনুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক। তিনি গত কাউন্সিলে পদোন্নতি পেয়ে পূর্ণ সম্পাদক হয়েছেন। তবে বিভিন্ন টকশো-তে অংশগ্রহণ করার কারণে তিনি জনপ্রিয় এবং আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক মহলের আস্থাভাজন হয়েছেন। কাজেই আওয়ামী লীগে ক্ষমতাবান হতে গেলে শুধু মন্ত্রী বা এমপি হতে হয় এমন ধারণা ভুল প্রমাণ করে এরকম আরও কিছু নেতা এগিয়ে আসছেন সামনের সারিতে।

মো. সিদ্দিকুর রহমান   আওয়ামী লীগ   বিপ্লব বড়ুয়া   সুজিত রায় নন্দী  


মন্তব্য করুন


ইনসাইড পলিটিক্স

মিন্টুর আওয়ামী কানেকশন: স্তম্ভিত তারেক

প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ১৮ মার্চ, ২০২৪


Thumbnail

নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে একশ কোটি টাকার বেশি উৎকোচ গ্রহণ করেছেন। সরকারের সঙ্গে দেন দরবার করছেন। কাকে কাকে আটক করতে হবে এবং কারা কারা বিএনপিতে বড় ধরনের আন্দোলন করতে চায়, সরকারের জন্য বিপজ্জনক সেই নামের তালিকা সরবরাহ করেছেন। কাদেরকে বাইরে রাখলে কোন সমস্যা নেই সে নামও জানিয়েছেন সরকারি দলের লোকজনকে। নির্বাচনের ক্ষেত্রে যেন বিএনপি কোনো বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করতে পারে সেজন্য আশ্বাসও দিয়েছেন। তার এই আশ্বাসের কারণেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনেকটা নির্ভর অবস্থায় নির্বাচন করেছে এবং বিএনপি যথারীতি নির্বাচন প্রতিরোধে কোন বড় ধরনের সহিংসতা বা নাশকতা করতে পারেনি। শেষ পর্যন্ত এই নির্বাচন আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। 

সম্প্রতি বিএনপির নেতৃবৃন্দের কাছে আবদুল আউয়াল মিন্টুর একাধিক কর্মকাণ্ডের গোপন তথ্যাদি হাজির হয়েছে। বিএনপির এই নেতা ২৮ অক্টোবরের ঘটনার আগেই সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। ২৮ অক্টোবরেই কিছু করতে হবে, করে বিএনপিকে আটকানোর জন্য শাসক দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে পরামর্শ দিয়েছিলেন। 

উল্লেখ্য যে, এই সংক্রান্ত বেশ কিছু খুদে বার্তা, টেলি আলাপ এখন তারেকের হাতে রয়েছে। ওই সমস্ত ক্ষুদে বার্তায় দেখা যায় যে, ২৮ অক্টোবরে বিএনপি কিছু একটা করবে, ঢাকা শহর দখল করবে। এ ব্যাপারে আগাম সতর্কবার্তা তিনি ক্ষমতাসীন দলের কাউকে কাউকে জানিয়েছিলেন। এই সময়ে যদি সরকার সক্রিয় না থাকে, সরকার যদি আগে থেকেই তৎপর না থাকে তাহলে ঢাকার রাজপথ বিএনপি দখল করে ফেলবে। যতক্ষণ পর্যন্ত সরকারের পতন ঘটবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের এই অবস্থান অব্যাহত থাকবে বলে আবদুল আউয়াল মিন্টু ক্ষমতাসীন দলের কাছে একাধিক ব্যক্তির কাছে ক্ষুদে বার্তা দিয়েছিলেন। 

আবদুল আউয়াল মিন্টুর এই ক্ষুদে বার্তা পেয়েই আওয়ামী লীগ ২৮ অক্টোবরের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে এবং সতর্ক প্রহরা তৈরি করে। আওয়ামী লীগের অনেকের মনে করেছিলেন যে, ২৮ অক্টোবর বিএনপি আর কয়েকটি সমাবেশের মতো সমাবেশ করবে। বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তেমন বার্তাই দিয়েছিলেন। কিন্তু আবদুল আউয়াল মিন্টুর কাছে খবর ছিল যে, বিএনপি এদিন ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করবে এবং শেষ পর্যন্ত তারা সেই অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই সরকারের পতন দাবি করবে। আর এই সব ২৮ অক্টবরের গোপন পরিকল্পনার কথা বিএনপির অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই জানতেন না। এমনকি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানতেন না। আবদুল আউয়াল মিন্টু এই তথ্য সরকারের কাছে বিক্রি করেছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা দাবি করছেন। 

শুধু তাই নয়, ২৮ অক্টোবরের পরে আবদুল আউয়াল মিন্টুর সাথে সরকারের একাধিক ব্যক্তির গোপন যোগাযোগ হয় এবং প্রায় সার্বক্ষণিক এই যোগাযোগে আবদুল আউয়াল মিন্টু কারা কারা বিএনপির সংগঠন চালায়, সংগঠনের জন্য কারা কারা গুরুত্বপূর্ণ, কারা বাইরে থাকলে সংগঠনের বড় ধরনের আন্দোলন গড়ে তুলতে পারবে, নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে তাদের নাম প্রকাশ করেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। 

আবদুল আউয়াল মিন্টু পরামর্শ অনুযায়ী মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে আমীর খসরু মাহমুদ সরকারের তালিকায় ছিল না। কিন্তু আবদুল আউয়াল মিন্টু, আমীর খসরু মাহমুদের নামটি উল্লেখ করেন। 

ধারণা করা হয় যে, আর্থিক লেনদেন এবং টাকার ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আবদুল আউয়াল মিন্টুর সঙ্গে আমীর খসরুর মাহমুদের গোলযোগ থাকার কারণে আমীর খসরু মাহমুদের নাম দিয়েছিলেন মিন্টু এবং মিন্টুর কথায় শেষ পর্যন্ত আমীর খসরু মাহমুদ গ্রেপ্তার হন। আবার নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের এদের ব্যাপারে মিন্টু উদার নীতি গ্রহণ করেন। কারণ তারা রাজনীতিতে আন্দোলনের বড় মাথাব্যাথার কারণ হবে বলেই মিন্টু অত্যন্ত দুটি ক্ষুদে বার্তায় সরকারের বিভিন্ন ব্যক্তিকে জানিয়েছিলেন। 

এছাড়াও আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকা শহরের বিভিন্ন মারকুটে নেতাদের তালিকা তৈরি করে এবং এদের অবস্থান কোথায় তা জানিয়ে দিয়েছিলেন সরকারের বিভিন্ন মহলকে। 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, আবদুল আউয়াল মিন্টু বিএপির ঢাকা মহানগরের নেতা আমিনুলকে টেলিফোন করে তার গোপন অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। আমিনুল তাকে গোপন অবস্থানের কথা জানান। এর পরপরই আমিনুল গ্রেপ্তার হন। আবদুল আউয়াল মিন্টু এরকম ভাবে সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেছে বলে বিএপির নেতারা এখন দাবি করছেন। এ সংক্রন্ত বিভিন্ন তথ্য প্রমাণ এখন তারেক জিয়ার কাছে। তারেক জিয়া এ সমস্ত তথ্য পেয়ে অনেকটা হতবাক হয়ে গেছেন। এখন দেখা যাক মিন্টুর বিরুদ্ধে বিএনপি কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু   তারেক জিয়া   বিএনপি   ২৮ অক্টোবর   আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী  


মন্তব্য করুন


বিজ্ঞাপন