নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০২ পিএম, ১৭ নভেম্বর, ২০১৮
১৯৯১ সাল থেকে বাংলাদেশে যতগুলো জাতীয় নির্বাচন হয়েছে, তার প্রতিটি নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এমনকি ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করলেও, খালেদা জিয়াই ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রধান প্রতিপক্ষ। কারণ বিএনপি তখন প্রধান প্রতিপক্ষ হয়েই সেই নির্বাচন বাতিলের অবস্থান গ্রহণ করেছিলেন। দীর্ঘ ২৭ বছর পর এবারই প্রথম শেখ হাসিনা বেগম খালেদা জিয়ার পরিবর্তে অন্য প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়বেন। একাধিক দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হওয়ায় এবারে বেগম খালেদা জিয়ার নির্বাচন করার সম্ভাবনা খুবই কম। তিনি যদি শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করতেও পারেনও, তাঁকে জেলে থেকেই নির্বাচন করতে হবে। তিনি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দল বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা হিসেবে নির্বাচন করবেন না। কারণ ড. কামাল হোসেন ইতিমধ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক এবং প্রধান নেতা হিসেবে কাজ করা শুরু করে দিয়েছেন। দেখা যাচ্ছে যে, এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আর সেটাই যদি হয়, তাহলে এবার প্রথম শেখ হাসিনা অন্যরকম এক প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়বেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল যদিও বিএনপি, কিন্তু কোন দল কত বড় বা কোন দলের রাজনৈতিক শক্তি কত বেশি, তা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিবেচ্য বিষয় নয়। বরং কিছু ব্যক্তিই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল আকর্ষণ। এই নেতাদের কারণেই ঐক্যফ্রন্টের একটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে। দল হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তেমন কোনো মর্যাদা, গ্রহণযোগ্যতা এবং আলাদা কোনো গুরুত্বও নেই। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়া যে কয়জন ব্যক্তি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বেশি আলোচিত এবং প্রথম সারির নেতা, তাঁদের প্রায় সবাই প্রাক্তন আওয়ামী লীগার। ড. কামাল হোসেন যিনি আহ্বায়ক জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের তিনি একজন আওয়ামী লীগের প্রাক্তন নেতা, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকি সাবেক আওয়ামী লীগার, মাহমুদুর রহমান মান্না প্রাক্তন আওয়ামী লীগার, ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন তিনিও আওয়ামী লীগার। ব্যারিস্টার মইনুল ১৯৭৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন করেছিলেন। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সবাই প্রাক্তন আওয়ামী লীগের নেতা। এমনকি বিএনপি থেকে যারা সামনে আছে তারাও কেউ কেউ আওয়ামী লীগ থেকেই এসেছে।
অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে এবারই প্রথম একটা নির্বাচন হবে, যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ভোটের মাঠে লড়বেন প্রাক্তন আওয়ামী লীগারদের সঙ্গে। এই নির্বাচনে ফলাফল যাই হোক না কেন অথবা যে পক্ষই বিজয়ী হোক না কেন, এবারের নির্বাচনের একটা ইতিবাচক দিক দেখা যাচ্ছে। প্রতিবার নির্বাচনেই দেখা যায় জাতির পিতাসহ অন্যান্য প্রয়াত জাতীয় নেতাদের নিয়ে কুৎসিত সব বক্তব্যে প্রদান করা হয়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়েও অনেক নোংরা ভাষায় বক্তব্য দেওয়া হয়। ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনেও আমরা জাতীয় নেতাদের বিষয়ে নানা ধরণের অশালীন, অপ্রীতিকর, অনাকাঙ্ক্ষিত, অরুচিকর সব বক্তব্য দিতে দেখেছি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়েও নোংরা নোংরা কথা বলা হতো। তবে এবারের নির্বাচনে এই বিষয়গুলো এখনো অনুপস্থিত।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মূল বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেছেন যে তাঁরা জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবেন। আবার আওয়ামী লীগতো সবসময় জাতির পিতার স্বপ্ন বাস্তবায়নের কথা বলেন। এবারের নির্বাচন অনেক প্রতিযোগিতামূলক হবে তাতে কোনো সন্দেহ নাই। তবে নির্বাচনের সময় অনাকাঙ্ক্ষিত যে বিষয়গুলো হয়। যেমন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চরিত্র হনন করা, রাজনীতিতে কাদা ছোড়াছুড়ির যে নোংরা খেলা তা এবারের নির্বাচনে হবে না। এর অন্যতম কারণ হলো এবারের নির্বাচন আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপির নির্বাচন হচ্ছে না। নৌকা বনাম ধানের শীষের প্রতীকে নির্বাচন হলেও এবারের নির্বাচন হচ্ছে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত যে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হোক না কেন? এই নির্বাচনে আমরা সবাই আশা করি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু , ১৫ আগস্ট, মুক্তিযুদ্ধ এই বিষয়গুলো মীমাংসিত হয়ে যাবে। এই বিষয়গুলো নিয়ে নতুন করে আর কোনো বিতর্ক হবে না।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।