নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৮ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের মনোনয়নের জোয়ার এসেছে। চার হাজারের বেশি মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড পর্যায়ের চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন চেয়ারম্যানসহ শীর্ষ নেতারাও বাদ যায়নি মনোনয়নপত্র কেনা থেকে। আওয়ামী লীগের কিছু নীতি নির্ধারণী নেতা এবং কিছু শীর্ষ স্থানীয় নেতা আছেন, যারা এই মনোনয়নের জোয়ার থেকে দূরে আছেন। তাঁরা মনোনয়ন চান নাই এবং তাঁরা নির্বাচন করবেন না বলেও জানা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের এইসব নেতাদের মনোনয়ন না চাওয়ায় তাঁদের যে আওয়ামী লীগে গুরুত্ব কমে গেছে বিষয়টা তেমন নয়। বরং তাঁরা মনোনয়ন না চাওয়ায় নির্বাচনে কাজ করার ক্ষেত্রে তাঁদের গুরুত্ব বেড়ে গেছে বহুগুণ। একাধিক আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছেন, এবারের নির্বাচনে প্রচারণা, কৌশল, মনোনয়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সহযোগিতায় ক্ষেত্রে এরাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এইচ. টি. ইমাম: যারা এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা হয়েও মনোনয়ন চান নাই, তাঁদের তালিকায় শীর্ষে আছেন এইচ. টি. ইমাম। তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির কো-চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এইচ. টি. ইমাম গত দশ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। প্রথম দফায় তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন উপদেষ্টা এবং দ্বিতীয় দফায় রাজনৈতিক উপদেষ্টা। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পিছনে তাঁর অবদান ছিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল বলে অনেকেই মনে করেন। নির্বাচনের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো তিনি দেখভাল করেন তিনি। তিনি এবার মনোনয়নপত্র কেনেননি এবং তিনি নির্বাচন করবেন না বলেই জানা যায়। অবশ্য তিনি মনোনয়ন না কিনলেও তাঁর ছেলে তানভীর ইমাম এবার সিরাজগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচন করবেন বলে জানা গেছে।
নূহ-উল-আলম লেনিন: আওয়ামী লীগের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা এবং আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন। তিনিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ এবং আস্থাভাজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনেক গবেষণামূলক কাজ এবং আওয়ামী লীগের নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়ন সংক্রান্ত কাজসহ নানা কাজে তিনি যুক্ত থাকেন। নূহ-উল-আলম লেনিন আওয়ামী লীগের অন্যতম একজন নীতি নির্ধারক। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। তিনিও এবারের নির্বাচন করছেন না বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।
ড. মশিউর রহমান: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মশিউর রহমান। তিনিও দীর্ঘ ১০ বছর ধরে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রীর অত্যন্ত আস্থাভাজন ও বিশ্বস্ত ড. মশিউর রহমান। প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক নীতি কৌশল প্রণয়নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনিও এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। যদিও একাধিক সূত্রে জানা যায় তিনি বাগেরহাটের একটি আসন থেকে নির্বাচন করার বিষয়ে আগ্রহী ছিলেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত অনুরোধে তিনি তাঁর উৎসাহকে দমন করেন।
মোস্তফা জব্বার: প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয় নিয়ে কাজ করেন মোস্তফা জব্বার। এবারের নির্বাচনী প্রচারণার সামাজিক মাধ্যমে যে প্রচার প্রচারণা এবং ক্যাম্পেইন করা হবে, সেই ক্যাম্পেইনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে। তিনিও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না। বরং তিনি সামাজিক মাধ্যমের প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন বলে জানা গেছে।
ইয়াফেস ওসমান: দীর্ঘ ১০ বছর ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন ইয়াফেস ওসমান। প্রথমে তিনি প্রতিমন্ত্রী ছিলেন এরপর তিনি পূর্ণ মন্ত্রী হন। এবারের নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বিভিন্ন গবেষণা ও প্রচারণার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও, নির্বাচনের প্রচারণায় তিনি থাকবেন না।
ওমর ফারুক চৌধুরী: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অন্যতম একটি অঙ্গসংগঠন হলো, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। যুবলীগের শতাধিক নেতা এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং তাঁরা মনোনয়নপত্র কিনেছেন। কিন্তু যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী তিনি মনোনয়নের জন্য আবেদন করেন নাই। তিনি যুবলীগকে একটা মেধা ও মননশীল সংঘঠন হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ করছেন। গবেষণামূলক কাজে তিনি বেশি মনোযোগী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রচিন্তার দর্শন এবং জনগণের ক্ষমতায়ন নিয়ে যুবলীগ দীর্ঘদিন থেকে কাজ করছে। এছাড়াও যুবলীগ বাংলাদেশের মানুষের ক্ষমতায়নের দিক বাস্তবায়নের নানা দিক নিয়ে গবেষণা করছে। যুবলীগ চেয়ারম্যান এবারের নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে।
সাধারণত আমরা বহির্বিশ্বের উন্নত গণতান্ত্রিক দেশে দেখি, যারা নির্বাচন করেন না, তারাই সরকারের নীতি নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। বাংলাদেশেও ধীরে ধীরে এই সংস্কৃতি চালু হচ্ছে। আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অনেক হেভিওয়েট মনোনয়ন চাননি, এটাই তার একটি দৃষ্টান্তমূলক উদাহরণ।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।