লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার ও দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ রোববার সকাল থেকেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সেখানে দলের সিনিয়র নেতারা থাকলেও, মূলত পুরো প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করেছেন তারেক জিয়া স্বয়ং। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অধিকাংশ প্রশ্ন তিনিই করেছেন। 

হঠাৎ করেই নির্বাচনের মনোনয়নে তারেক জিয়ার উপস্থিতিতে শুধু আওয়ামী লীগই ক্ষুব্ধ হয়নি, অসন্তোষ প্রকাশ করেছে বিএনপির একটি বড় অংশও। শুধুমাত্র তারেক বিরোধী বিএনপির নেতা কর্মীরা নয় এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে দলটির উদারপন্থী নেতারাও। কেউ মুখ ফুটে কিছু না বললেও তাদের চোখে-মুখে অসন্তোষের ছাপ ছিল স্পষ্ট।

বিএনপি কয়েকটি ব্যক্তি নির্ভর দলের সঙ্গে ঐক্য করেছে। এই ঐক্যের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে, নিজেদের খারাপ ইমেজ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া। কেননা, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার খারাপ ইমেজ শুধু বাংলাদেশেই না বিশ্বব্যাপী। এছাড়াও ২০০২ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন বিএনপির বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজিসহ নানারকম অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। কাজেই বিএনপি তার অতীতের অপকীর্তি আড়াল করার জন্যই বর্ম হিসেবে ড. কামাল হোসেন, আ. স. ম. আবদুর রব, মাহমুদুর রাহমান মান্নাদেরকে দলে ভিড়িয়েছেন। মূলত এইসব প্রচেষ্টাই নায়ক ছিলেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং  স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। তারেকের অপকীর্তি আড়াল করতেই তারা যোগ দিয়েছিলেন ঐক্যফ্রন্ট ও যুক্তফ্রন্টের সঙ্গে। বিএনপির ইমেজ ক্লিন করার জন্য গত ছয় মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা। কিন্তু হঠাৎ করেই প্রার্থী নির্বাচনে তারেকের এমন একতরফা প্রভাব বিস্তারে হতভম্ব হয়ে গেছেন খোদ মির্জা ফখরুল ও ড. মঈন খানও।

আজকের বৈঠকের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে মনোনয়ন বোর্ডে তারেকের ঘনিষ্ঠ মানুষদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো। এদের মধ্যে অন্যতম হচ্ছেন আবদুল আউয়াল মিন্টু। তিনি আজ মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন, অথচ তিনি দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নন। স্থায়ী কমিটির সদস্য ছাড়া মনোনয়ন বোর্ডে থাকা যায় না। কিন্তু তারেকের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় আবদুল আউয়াল মিন্টুও মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত ছিলেন।

সেনা সমর্থিত মইনউদ্দিন-ফখরুদ্দিনের সরকারের আমলে লন্ডন যান তারেক রহমান। এরপর থেকে সেখানেই অবস্থান করছেন তিনি। দেশে দুর্নীতি ও রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযোগে তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। প্রায় ১২ বছর ধরে তিনি দেশছাড়া। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই অজানা তার। দলের হাতে গোনা কয়েকজন নেতাকে চেনেন তিনি, যারাই তার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেন তাদেরকেই। গত ১০ বছর ধরে দলের জন্য যারা ত্যাগী, কাজ করেছেন তাদেরকে চিনেনই না তারেক। যেহেতু, তারেক নিজেই প্রার্থী যাচাই-বাছাই এর সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, তাই মনোনয়নের প্রার্থী হওয়ার দৌড়ে পিছিয়ে আছেন দলের পরিশ্রমী ও ত্যাগী নেতারা। মনোনয়ন লাভের দৌড়ে এগিয়ে আছেন সেই সব ব্যবসায়ীরা যাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সময়ে মোটা অঙ্কের টাকা উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছেন তারেক। এতদিন দলের জন্য এত ত্যাগ স্বীকার করার পরও দল থেকে কিছু না মেলাতে ত্যাগীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করবে, এটাই স্বাভাবিক। তারেকের এমন হস্তক্ষেপে বৈষম্য বিরাজ করছে এখন বিএনপির মধ্যে। এমন বৈষম্য দূর করা বিএনপির জন্য কঠিন হয়ে যাবে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, বিএনপির নির্বাচনী কৌশলই ছিল সরকার বিরোধী প্রচারণা করা, কিন্তু তারেক সামনে আসার ফলে অস্বস্তিতে পড়েছে বিএনপি। কেননা তারেকের কুকীর্তি তো আর কারও অজানা নয়। ইতিমধ্যেই তারেক বিরোধী ও দলের পরিশ্রমী ত্যাগী নেতারা দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কথাই ভাবছে। 

বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ