নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮
ওয়ান ইলেভেনের ঝড়ে বিএনপি তছনছ হয়ে গিয়েছিল। সেই ওয়ান ইলেভেনের কারণেই দলটি এখনো অস্তিত্বের সঙ্কটে হাবুডুবু খাচ্ছে। অথচ বিএনপির মনোনয়নে এখন সেই ওয়ান ইলেভেনের সংস্কারপন্থীদেরই জয়জয়কার। আজ দ্বিতীয় দিনের মতো দলটির মনোনয়নের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়েছে। আরও দুদিন এই সাক্ষাৎকার চলবে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এই সাক্ষাৎকারে দেখা যাচ্ছে, যারা গত এক দশক ধরে বিএনপিতে অত্যাচার সয়েছে, কষ্ট স্বীকার করেছে, নানারকম মামলা ও নির্যাতনের স্বীকার হয়েছে, তাঁদের চেয়ে লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া সংস্কারপন্থীদের বিষয়েই বেশি আগ্রহী। গত এক মাসে প্রায় ৭২ জন বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন, যারা ওয়ান ইলেভেনের সময় সংস্কারপন্থী ছিলেন এবং শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে দলটি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। তারাই এখন মনোনয়ন দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে যে, অন্তত ৫০ থেকে ৫৫ জন সংস্কারপন্থী যারা ওয়ান ইলেভেনের সময় বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়ার অপসারণ চেয়েছিলেন তাঁরা এবার নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন।
২০০১ সালের নির্বাচনের পরপরই বিএনপিতে একটি প্যারালাল সরকার গঠিত হয় এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বাইরে হাওয়া ভবন গড়ে ওঠে। এই হাওয়া ভবনই ছিল ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু। হাওয়া ভবনের লাগামহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই শেষ পর্যন্ত ওয়ান ইলেভেনের উদ্ভব হয়। যার ফলে ড. ফখরুদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে সেনা সমর্থিত সরকার ক্ষমতা দখল করে। ওই অনির্বাচিত সরকার দায়িত্বগ্রহণ করার পরই রাজনৈতিক সংস্কার এবং শুদ্ধি অভিযানের নামে দু’টি দলের মধ্যে ভাঙন ধরানোর কৌশল নেয়। আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে ওই কৌশল সফল না হলেও বিএনপির মধ্যে মোটামুটি একটি ভাঙন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে ফেলে। সেই প্রক্রিয়ায় বিএনপির অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নেতারাও যুক্ত হয়েছিলেন। বেগম খালেদা জিয়া কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এবং পরে এরকম শতাধিক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করেন। এর মধ্যে দলটির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুঁইয়াও ছিলেন। পরবর্তীতে বহিষ্কৃতরা আস্তে আস্তে বিএনপির সঙ্গে আবার যুক্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে, বেগম খালেদা জিয়া যতদিন কারাগারের বাইরে ছিলেন এসব নেতাদের বিষয়ে তিনি নেতিবাচক মনোভাবই পোষণ করে আসছিলেন। কিন্তু, নির্বাচনের আগে আগে লন্ডন থেকে তারেক জিয়ার নির্দেশে সংস্কারপন্থীদেরকে দলে ভেড়ানোর নীতি গ্রহণ করে বিএনপি। তিন দফায় এই সমস্ত নেতারা বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন। এখন সাক্ষাৎকারের সময় দেখা যাচ্ছে যে, এই সব সংস্কারপন্থীদের ব্যাপারেই অতি মাত্রায় আগ্রহ দেখানো হচ্ছে।
দেখা যাচ্ছে যে, যে সব সংস্কারপন্থীরা এবারের মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে আছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন বরিশাল অঞ্চলের জহির উদ্দিন স্বপন। তিনি ২০০১ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন। ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো আরেকজন সংস্কারপন্থী যিনি ঝালকাঠি-২ থেকে বিএনপির টিকেটে নির্বাচন করেছিলেন। আরেকজন সংস্কারপন্থী নেতা হলেন সৈয়দ শহিদুল হক জামাল। তিনি বরিশালের পিরোজপুর থেকে নির্বাচন করেছিলেন। সংস্কারপন্থী এই নেতা আবার বিএনপির সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছেন। মনোনয়ন দৌড়ে তিনি এগিয়ে আছেন বলে বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্রগুলো নিশ্চিত করেছে।
সংস্কারপন্থী হিসেবে পরিচিত আরেক নেতা হলেন গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ সরকার। তিনি বগুড়া-৫ আসন থেকে ২০০১ সালে নির্বাচন করেছিলেন। পরে তিনি সংস্কারপন্থী হয়ে গিয়েছিলেন। বিএনপিতে ফিরে আসা এই নেতা এবার মনোনয়ন পাবেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচন করেছিলেন মোহাম্মদ আবু হেনা। সংস্কারপন্থী এই নেতা বেগম জিয়ার অপসারণ প্রত্যাশী ছিলেন। এখন তিনি আবার বিএনপিতে ফিরে এসেছেন। তিনি মনোনয়ন পাবেন বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে। এরকম সংস্কারপন্থীদের তালিকা অনেক দীর্ঘ।
বিএনপি এবারের নির্বাচনকে অস্তিত্বের লড়াই হিসেবে দেখছে। তাঁরা মনে করছে, এই নির্বাচনে তাঁদের জয়ের বিকল্প নেই। একারণেই তাঁরা সংস্কারপন্থীদের দলে ভেড়াচ্ছে বলে বিএনপির একাধিক নেতা জানিয়েছে। কিন্তু যারা ওয়ান ইলেভেনের সময় নির্যাতন ভোগ করেছিল, ২০০৮ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত নানারকম মামলা হামলার স্বীকার হয়েছিল এবং ২০১৪-১৫ সালের বিএনপির আগুন সন্ত্রাসের কারণে যারা নানা রকম মামলা নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে তাঁরা এই ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে তরুণ যেসব বিএনপি নেতা আছেন তাঁরা মনে করছেন, সংস্কারপন্থীদের দলে ভেড়ানোর ফলে বিএনপির অস্তিত্ব নতুন করে সংকটের মুখে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টে যাওয়ার ফলে বিএনপি যেমন এখন বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার করে নিচ্ছে, তেমনি সংস্কারপন্থীদের দলে ভেড়ানোর মাধ্যমে ওয়ান ইলেভেনের ষড়যন্ত্রকারীদেরও মাফ করে দিচ্ছে। শুধু ক্ষমতার জন্য এটা করা হলে কোনো কথা নেই। কিন্তু এটা করে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতায় যেতে না পারলে বিএনপির অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাবে।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।