নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচন আসলেই দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক শক্তি- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তি উত্থাপনের চেষ্টা করা হয়। বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ধারার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। দু’টো দলের মধ্যেই রয়েছে গণতন্ত্রের অভাব। দল দু’টোতে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দু’টি দলই মানুষকে পৃষ্ঠ করছে। এ কারণেই রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির নাম আলোচনায় আসে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও দেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছিল।
নির্বাচনের আগে দেখা যায়, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মিলে একটি তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে। দেশের সুশীল সমাজ একটি সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে চান। এই উত্থানের জন্য তারা নানা রকম কসরতও করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনো জাতীয় পার্টি বা জামাত তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টি ‘স্বৈরাচার’ ও জামাত ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত। নির্দিষ্ট কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হলেও, সাধারণ জনগণের কাছে তাঁরা আস্থাভাজন হতে পারেনি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তির আওয়াজ উঠেছিল। তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রথম আওয়াজ তুলেছিল যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। তিনি জেএসডির নেতা আ. স. ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ড. কামাল হোসেন। দল গঠনের শুরুতে রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেছিল তাঁরা। একটা স্বেচ্ছাচারী দল থেকে আরেকটি স্বেচ্ছাচারিতার দলে না যাওয়ারই মনোভাব ব্যক্ত করে আসছিলেন তাঁরা। প্রতিহিংসার রাজনীতি ত্যাগ করে দেশের জনগণের জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কথা বলে তাঁরা বলেছিলেন। কিন্তু এই যুক্তফ্রন্ট আর টেকেনি, আওয়ামী লীগের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে। মহাজোটে যুক্ত হওয়ার পর যুক্তফ্রন্ট এখন আর স্বেচ্ছাচারিতা বা ভারসাম্যের কথা বলছে না। নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের পকেটস্থ সংগঠনে পরিণত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট।
যুক্তফ্রন্টের ধারায়ই পরবর্তীতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। মাহমুদুর রহমান মান্না, আ. স. ম আবদুর রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরসহ যুক্তফ্রন্টের অনেক নেতাই যুক্ত হন ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। শুরুতে তারাও ভারসাম্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। রাজনীতিকে কালো টাকা মুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত করাসহ নানা ধরনের মুখরোচক কথাবার্তা বলে আসছিলেন তাঁরা। তবে ঐক্যফ্রন্ট যে বিএনপির বি-টিমে পরিণত হবে, সেটি দল গঠনের শুরু থেকেই বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। হয়েছেও তাই। কার্যত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিণত হয়েছে বিএনপির অপরাধ-অপকর্ম থাকার বর্মে। ঐক্যফ্রন্টকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিএনপির যত অনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে, নির্বাচনের আগে সেগুলো আড়ালে রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও বেশ ভালোভাবেই এই কাজটি করছে। কাজেই, যুক্তফ্রন্ট যেমন আওয়ামী লীগের পকেটে, ঐক্যফ্রন্টও তেমনি বিএনপির পকেটে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এটি এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার পকেটস্থ সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে রয়েছে বাম দল। বামরা ২০১৪’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ধারণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাগরণসহ সবকিছু মিলিয়ে সেক্যুলার বা সাম্যের ধারার রাজনীতিতে বামদের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে তাদের উত্থান হবে। কিন্তু বামরা এখনো রক্ষণশীল ও সেকেলে মনোভাবের। এখনো তারা জনগণের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে। কাজেই, এবারের নির্বাচনে বামদের অবস্থান কি হবে, সেটি আগাম বলার জন্য কোনো জ্যোতিষীর প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকেই বলা যায়, রাজনীতিতে বামদের ভূমিকা মূল ধারার বাইরে। বিচ্ছিন্ন ধারা হিসেবেও তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থী ইসলামী দলগুলো এবারের নির্বাচনে নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এসব দলগুলো মূল ধারার রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সমর্থ নয়। নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা গুলোতে তারা ঠিকই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাব অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশের নির্বাচনে আমরা যতবারই তৃতীয় শক্তির কথা বলি ততবারই ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’ শক্তিশালী হয়। কিছু রাজনৈতিক দল চলে যায় আওয়ামী লীগের ছায়াতলে, আর বাকিরা বিএনপির ছাতার নিচে। আগে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও এখন সেই চক্ষুলজ্জাও আর নেই। সবাই বড় দলগুলোর প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছে।
তাহলে রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির যারা আওয়াজ তোলে তারা কি কেবল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই? বর্তমান নির্বাচনের পরিস্থিতিই বলছে, রাজনীতির বৃহৎ দুই শক্তি- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নজর কাড়তেই এবার তৃতীয় শক্তিগুলো আওয়াজ তুলেছিল। তবে কি কখনোই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটবে না? সেটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েই যায়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।