নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮
নির্বাচন আসলেই দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক শক্তি- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বাইরে একটি তৃতীয় শক্তি উত্থাপনের চেষ্টা করা হয়। বলা হয়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক ধারার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। দু’টো দলের মধ্যেই রয়েছে গণতন্ত্রের অভাব। দল দু’টোতে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন। দু’টি দলই মানুষকে পৃষ্ঠ করছে। এ কারণেই রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির নাম আলোচনায় আসে। ওয়ান ইলেভেনের সময়ও দেশে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাবের কথা বলা হয়েছিল।
নির্বাচনের আগে দেখা যায়, কিছু কিছু রাজনৈতিক দল মিলে একটি তৃতীয় শক্তি গড়ে তোলার চেষ্টা করে। দেশের সুশীল সমাজ একটি সেক্যুলার ও গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটাতে চান। এই উত্থানের জন্য তারা নানা রকম কসরতও করেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনো জাতীয় পার্টি বা জামাত তৃতীয় শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। কিন্তু এখন জাতীয় পার্টি ‘স্বৈরাচার’ ও জামাত ‘যুদ্ধাপরাধী’ হিসেবে পরিচিত। নির্দিষ্ট কিছু জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হলেও, সাধারণ জনগণের কাছে তাঁরা আস্থাভাজন হতে পারেনি।
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেও রাজনীতিতে একটি তৃতীয় শক্তির আওয়াজ উঠেছিল। তৃতীয় শক্তি হিসেবে প্রথম আওয়াজ তুলেছিল যুক্তফ্রন্ট। যুক্তফ্রন্টের মূল উদ্যোক্তা ছিলেন অধ্যাপক বি. চৌধুরী। তিনি জেএসডির নেতা আ. স. ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাকে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। পরে তাদের সঙ্গে যুক্ত হন ড. কামাল হোসেন। দল গঠনের শুরুতে রাজনীতিতে নিরপেক্ষ থাকার কথা বলেছিল তাঁরা। একটা স্বেচ্ছাচারী দল থেকে আরেকটি স্বেচ্ছাচারিতার দলে না যাওয়ারই মনোভাব ব্যক্ত করে আসছিলেন তাঁরা। প্রতিহিংসার রাজনীতি ত্যাগ করে দেশের জনগণের জন্য ক্ষমতার ভারসাম্য ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যেই নিরপেক্ষভাবে কাজ করার কথা বলে তাঁরা বলেছিলেন। কিন্তু এই যুক্তফ্রন্ট আর টেকেনি, আওয়ামী লীগের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে। মহাজোটে যুক্ত হওয়ার পর যুক্তফ্রন্ট এখন আর স্বেচ্ছাচারিতা বা ভারসাম্যের কথা বলছে না। নির্বাচনের আগেই আওয়ামী লীগের পকেটস্থ সংগঠনে পরিণত হয়েছে যুক্তফ্রন্ট।
যুক্তফ্রন্টের ধারায়ই পরবর্তীতে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করা হয়। মাহমুদুর রহমান মান্না, আ. স. ম আবদুর রব, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরসহ যুক্তফ্রন্টের অনেক নেতাই যুক্ত হন ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে। শুরুতে তারাও ভারসাম্য ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিল। রাজনীতিকে কালো টাকা মুক্ত ও দুর্নীতিমুক্ত করাসহ নানা ধরনের মুখরোচক কথাবার্তা বলে আসছিলেন তাঁরা। তবে ঐক্যফ্রন্ট যে বিএনপির বি-টিমে পরিণত হবে, সেটি দল গঠনের শুরু থেকেই বেশ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছিল। হয়েছেও তাই। কার্যত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট পরিণত হয়েছে বিএনপির অপরাধ-অপকর্ম থাকার বর্মে। ঐক্যফ্রন্টকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেই ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে বিএনপির যত অনৈতিক কর্মকাণ্ড রয়েছে, নির্বাচনের আগে সেগুলো আড়ালে রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও বেশ ভালোভাবেই এই কাজটি করছে। কাজেই, যুক্তফ্রন্ট যেমন আওয়ামী লীগের পকেটে, ঐক্যফ্রন্টও তেমনি বিএনপির পকেটে। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, এটি এখন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়ার পকেটস্থ সংগঠনে পরিণত হয়েছে।
দেশের রাজনীতিতে রয়েছে বাম দল। বামরা ২০১৪’র নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। ধারণা করা হয়েছিল, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে জাগরণসহ সবকিছু মিলিয়ে সেক্যুলার বা সাম্যের ধারার রাজনীতিতে বামদের জন্য পরিবেশ তৈরি হয়েছে, সেটিকে কাজে লাগিয়ে তাদের উত্থান হবে। কিন্তু বামরা এখনো রক্ষণশীল ও সেকেলে মনোভাবের। এখনো তারা জনগণের কাছ থেকে যোজন যোজন দূরে। কাজেই, এবারের নির্বাচনে বামদের অবস্থান কি হবে, সেটি আগাম বলার জন্য কোনো জ্যোতিষীর প্রয়োজন নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষণ থেকেই বলা যায়, রাজনীতিতে বামদের ভূমিকা মূল ধারার বাইরে। বিচ্ছিন্ন ধারা হিসেবেও তাদের অস্তিত্ব বিলীন হওয়ার পথে।
রাজনীতিতে দক্ষিণপন্থী ইসলামী দলগুলো এবারের নির্বাচনে নীরবে-নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছে। তবে এসব দলগুলো মূল ধারার রাজনীতিতে বিকল্প শক্তি হিসেবে দাঁড়ানোর জন্য সমর্থ নয়। নির্দিষ্ট নির্বাচনী এলাকা গুলোতে তারা ঠিকই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে, কিন্তু জাতীয় রাজনীতিতে একটি রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে তাদের আবির্ভাব অলীক কল্পনা ছাড়া আর কিছুই নয়।
বাংলাদেশের নির্বাচনে আমরা যতবারই তৃতীয় শক্তির কথা বলি ততবারই ‘নৌকা’ ও ‘ধানের শীষ’ শক্তিশালী হয়। কিছু রাজনৈতিক দল চলে যায় আওয়ামী লীগের ছায়াতলে, আর বাকিরা বিএনপির ছাতার নিচে। আগে দলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে অন্য প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলেও এখন সেই চক্ষুলজ্জাও আর নেই। সবাই বড় দলগুলোর প্রতীক নিয়েই নির্বাচন করছে।
তাহলে রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির যারা আওয়াজ তোলে তারা কি কেবল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যই? বর্তমান নির্বাচনের পরিস্থিতিই বলছে, রাজনীতির বৃহৎ দুই শক্তি- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নজর কাড়তেই এবার তৃতীয় শক্তিগুলো আওয়াজ তুলেছিল। তবে কি কখনোই বাংলাদেশের রাজনীতিতে তৃতীয় শক্তির আবির্ভাব ঘটবে না? সেটি নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন রয়েই যায়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডআই/জেডএ
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
তারেক জিয়া বিএনপি ব্রিটিশ দূতাবাস সারা কুক
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল ঢাকাস্থ ব্রিটিশ দূতাবাসে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন বিএনপির শীর্ষস্থানীয় তিন নেতা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদকে দাওয়াত দেয়া হয়েছিল ব্রিটিশ দূতাবাসে। সেখানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারা কুক এক ঘণ্টার বেশি সময় তাদের সাথে বৈঠক করেন। এসময় ব্রিটিশ দূতাবাসে অন্যান্য রাজনৈতিক কর্মকর্তারাও উপস্থিত ছিলেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।