নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:৫৮ পিএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই নির্বাচনের কিছু বিষয় নিয়ে উদ্বেগ ও সংশয় দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগে। ঘর পোঁড়া গরু যেমন সিঁদুরে মেঘ দেখলে ভয় পায় ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগ সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় বিগত ’৯১ ও ’৯৬ এর মতো পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে। এমন পরিস্থিতির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য এখন থেকেই সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে দলটি। আওয়ামী লীগ মনে করছে নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে সার্বিক পরিস্থিতিসহ অনেক প্রতিষ্ঠান উল্টে যেতে পারে। কিন্তু এমন পরিস্থিতি যেন সৃষ্টি না হয় সে লক্ষ্যে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা দফায় দফায় বৈঠক করছেন।
নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামী লীগের উদ্বেগের বিষয় পাঁচটি। এগুলো হলো:
১. নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা: নির্বাচন কমিশন এখন আওয়ামী লীগের জন্য অন্যতম উদ্বেগের বিষয়। সার্চ কমিটি ও সবার মতামতের ভিত্তিতে এই নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়েছিল। কিন্তু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ ভাবে কতটা আওয়ামী লীগকে সমর্থন করবে তা নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে সংশয় রয়েছে। কেননা ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের কাছে কয়েকবার ধাক্কা খেয়েছে। গত বছর প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন সংলাপ শুরু করেছিলেন সেই সময় জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবক্তা হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। এ নিয়ে আওয়ামী লীগ তাদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিল। এই নির্বাচন কমিশনার সেনাবাহিনী নিয়োগের বিষয়টিও সামনে এনেছিল। এছাড়াও, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই নির্বাচন কমিশনার একের পর এক যৌক্তিক বিষয় উপেক্ষা করছে। যেমন: নির্বচন কমিশনের কাছে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে যে টিম গিয়েছিল, তারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা ও অন্যান্য নথিপত্র দিয়ে বলেছিলেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকারে ভিডিও কনফারেন্সে তারেক জিয়ার অংশগ্রহণ নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন। কিন্তু, পরের দিনই ইসি জানায় যে, এ ব্যাপারে তাদের কিছুই করার নেই। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, নির্বাচন কমিশন যে আচরণ করেছে তা দুর্ভাগ্যজনক। শুধু ফারুক খানই নন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও দু’বার নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন, কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা উপেক্ষা করে। একই ভাবে নির্বাচন কমিশনের আরও কিছু আচরণ নিয়ে আওয়ামী লীগ প্রশ্ন তুলেছে।
২. গণমাধ্যমের ভূমিকা: আওয়ামী লীগের পরবর্তী ভাবনার বিষয় হচ্ছে গণমাধ্যমের ভূমিকা। আওয়ামী লীগের পৃষ্ঠপোষকতায় ও অনুগ্রহেই যেসব গণমাধ্যম বেড়ে উঠেছে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে তারাই এখন তথাকথিত নিরপেক্ষ হওয়ার নামেই বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টকে নানারকম সুবিধা দিচ্ছে। বিশেষ করে টকশোগুলো এখন সরকার বিরোধী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। এ নিয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক নীতি নির্ধারক বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলেছেন, কিন্তু সবগুলো চ্যানেলই ব্যবসায়িক কারণে তথাকথিত নিরপেক্ষ নীতি গ্রহণ করেছে। এ কারণেই গণমাধ্যম আওয়ামী লীগের জন্য আরেকটি মাথাব্যথার কারণ।
৩. প্রশাসনের ভূমিকা: আওয়ামী লীগের আমলেই প্রশাসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পদোন্নতি ও সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু তারপরও নির্বাচনের আগে আগেই প্রশাসনের একটি বড় অংশ তথাকথিত নিরপেক্ষ হয়ে গেছে। তারা সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কার্যক্রম ও গৃহীত পদক্ষেপগুলো এখন বন্ধ রেখেছে। এমনকি ইতিমধ্যে সরকার যেসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম করছে তার তথ্য, উপাত্ত ও প্রচার প্রশাসন থেকে করা হচ্ছে না। নির্বাচনের সময় এদের একটি বড় অংশ বিএনপির পক্ষে কাজ করবে বলে আওয়ামী লীগ আশঙ্কা করছে।
৪. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকা: নির্বাচনের আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। বিশেষ করে রাজধানীর বাইরে যেসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত আছেন তাদের ভূমিকা নিয়ে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকদের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। উদাহরণস্বরূপ চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন এলাকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বিরোধী দলের বিভিন্ন মামলার তালিকাভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে ধীরে চলার নীতি গ্রহণ করছে। সাম্প্রতিককালে নয়াপল্টনের ঘটনায় পুলিশের নীরব ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা। এজন্য, নির্বাচনের সময় এসব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কতটা নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করে তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয়ে আছেন তাঁরা।
৫. বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা: বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়েও উদ্বেগে রয়েছে আওয়ামী লীগ। দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের রাজনীতির আভ্যন্তরীণ ব্যাপারে গত দুই বছর ধরেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন পশ্চিমা দেশগুলো নানারকম চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করেছিল। নির্বাচনের আগে পরপর দু’বার এমন ঘটনা ঘটেছিল। একবার, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বাংলাদেশের নির্বাচন, সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। যা ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত, কেননা এটি কোনো দেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ। আরেকবার, মার্কিন মানবাধিকার সংস্থাতে বাংলাদেশের সুশাসন ও গণতন্ত্র নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও বিদেশি কূটনীতিকরা ঘন ঘন বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করছে। যা কূটনৈতিক নীতির পরিপন্থী। বিদেশি কূটনীতিকদের এমন ভূমিকাও আওয়ামী লীগের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই পাঁচ বিষয়কে আওয়ামী লীগ নির্বাচনের ক্ষেত্রে বড় উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিগত ‘৯১ ও ২০০১’র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিপর্যয় ঘটেছিল এই পাঁচ কারণেই। এবার যেন আর এসব পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য এখন থেকেই কাজ করছে আওয়ামী লীগ।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।