নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২০ নভেম্বর, ২০১৮
নানা জল্পনা-কল্পনা এবং অভিযোগের পর বিএনপি আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে। যদিও ২০১৪ সালের নির্বাচনে পর থেকেই বিএনপি বলে আসছিল, নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া, নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন ছাড়া তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নির্বাচনের আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে বলা হয়, ৭ দফা অর্জিত না হলে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে ৭ দফার কোনো দফা অর্জিত না হওয়ার পরেও তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে।
মূলত বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর চাপ এবং নির্বাচনের বিভিন্ন জরিপ, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা ইত্যাদি নানা বিষয় বিবেচনা করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও বিএনপি ৫ টি বিষয়কে তাদের ভয়ের কারণ হিসেবে দেখছেন। বিএনপির নেতাদের মতে, ৫ টি কারণে এই নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি হতে পারে।
বিএনপির ভাষ্যমতে, আওয়ামী লীগ যে নির্বাচনের পরিকল্পনা সাজিয়েছেন, সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্বাচন হতে পারে। সেই নির্বাচনটা হবে শুধুমাত্র সরকারকে বৈধতা দেওয়ার নির্বাচন। নির্বাচন কেন্দ্রিক বিএনপি যে পাঁচটি বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছে সেগুলো হচ্ছেঃ
১. ভারতের ভূমিকা: বিএনপি নেতাদের ভাষ্য অনুযায়ী আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন নির্বাচন করেও ক্ষমতায় টিকে থাকার অন্যতম প্রধান কারণ ভারতের সহযোগিতা এবং সমর্থন। ভারত যদি সমর্থন না করতো তাহলে প্রশ্নবিদ্ধ ঐ নির্বাচনের পরেও ৫ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারতো না আওয়ামী লীগ। বর্তমানে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের একটি নতুন মাত্রা তৈরি হয়েছে। ভারতের সঙ্গে শীতল সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে বিএনপি সর্বোচ্চ কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছিল। কিন্তু ভারত বিএনপিকে অনেকগুলো শর্ত দিয়েছিল। যার মধ্যে ছিল তারেক জিয়াকে বিএনপির নেতৃত্ব থেকে সরানো, খালেদা জিয়ার মামলার বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করাসহ আরও নানা বিষয় ভারতের দেওয়া শর্তগুলোর অন্তর্ভুক্ত ছিল। কিন্তু শর্তগুলো পূরণ হয়নি। যার ফলে বিএনপি এখনো ভারতের আস্থাভাজন রাজনৈতিক দলে পরিণত হতে পারেনি। তাই আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে ভারতের ভূমিকা নিয়ে বিএনপি উদ্বিগ্ন। ভারত যেহেতু বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্যতম নিয়ামক শক্তি, তাই নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত ভারতের ভূমিকা কি হবে, তা বিএনপির নীতিনির্ধারকের কাছে ভয়ের অন্যতম প্রধান একটি কারণ।
২. নির্বাচন কমিশন: বিএনপি মনে করছে বর্তমান নির্বাচন কমিশন শেষ পর্যন্ত এই সরকারের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান হিসেবেই কাজ করবে। সকলের বিরোধিতা সত্ত্বেও তারা ইভিএম ব্যবহারের দিকে যেভাবে এগুচ্ছে, যেভাবে রিটার্নিং অফিসার এবং নির্বাচনী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তার সবকিছুই আওয়ামী লীগের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী করা হচ্ছে বলে বিএনপি নেতারা দাবি করছেন। এই ধারা যদি অব্যাহত থাকে তাহলে শেষ পর্যন্ত নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগকেই সহযোগিতা করবে বলেই ভাবছে বিএনপি।
৩. বিএনপি নেতৃত্বাধীন দুই জোট: এবারের নির্বাচনে বিএনপি দুটি জোটের অন্তর্ভুক্ত হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, ২০ দলীয় জোট এবং জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। বিএনপি নেতৃত্বাধীন এই দুই জোটের মধ্যে কারা সরকারের সঙ্গে মিলে কি ধরনের আঁতাত করছে, সরকারের সঙ্গে কারা কোন ধরনের মেরুকরণ বা সম্পর্ক তৈরি করছে এটা নিয়ে বিএনপির মধ্যে শরিকদের বিষয়ে নানা সন্দেহ এবং অবিশ্বাস কাজ করছে। বিএনপি মনে করছে সরকার এই দুই জোটে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ফাটল ধরাতে পারে। যেমন: কোনো আসন দিয়ে বা অন্য কোনো কিছু দিয়ে যদি শরিকদের বিভ্রান্ত করা যায় বা জোটে ফাটল ধরানো যায়, জোটের শরিকরা যদি সরকারের কোনো প্রলোভনের শিকার হয়ে ভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে, তাহলে বিএনপির জন্যে এই নির্বাচন কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে পড়বে। কারণ বিএনপি এই অভিজ্ঞতার শিকার হয়েছে ইতিমধ্যেই। শেষ মুহূর্তে যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের জোটে যোগ দেওয়ায় তারা বড় হোঁচট খেয়েছে। এই ঘটনা আবার ঘটতে পারে বলে বিএনপি মনে করছে। নির্বাচনে এই বিষয়টা বিএনপির জন্য একটা বড় উদ্বেগ, আতঙ্ক এবং ভয়ের কারণ।
৪. বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা: বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার, আটক এবং দণ্ডের কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত ৩০০ আসনে প্রার্থী দিতে পারবে কি না সেই বিষয়ে তাদের সংশয় আছে। এছাড়াও যারা প্রার্থী হবেন তাঁরা পোলিং এজেন্টসহ মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনে যে দলীয় কর্মী লাগে, সেই কর্মী বাহিনী যোগাড় করতেই বিএনপি হিমশিম খাচ্ছে। বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় সম্ভাব্য প্রার্থীরা ইতিমধ্যে বিএনপির শীর্ষ মহলকে এ বিষয়ে অভিযোগ করে বলেছেন, ‘তাঁরা নির্বাচনে এজেন্ট নিয়োগের কর্মীও পাচ্ছে না। ২০১৪/১৫ সালে বিএনপি যে আগুন সন্ত্রাস করেছিল, সেই আগুন সন্ত্রাসের কারণে প্রায় প্রত্যেকের বিরুদ্ধে মামলা আছে। সেই মামলাগুলো এখনো সচল রয়েছে এবং অনেকের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে। এতদিন তাঁরা আত্মগোপনে ছিল এখন যদি তাঁরা নির্বাচনের জন্যে মাঠে নামে তাহলে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকার কারণে পুলিশ যদি তাদের গ্রেপ্তার করে, তাহলে নির্বাচন করতে মাঠ পর্যায়ে যে দলীয় লোকবল প্রয়োজন হয়, সেই লোকবল তাঁরা পাবে না। বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা আসন্ন নির্বাচনে বিএনপির জন্য উদ্বেগের বিষয় মনে করছে বিএনপির শীর্ষ মহল।
৫. শেখ হাসিনার ভাবমূর্তি: বাংলাদেশে গত এক দশকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা তুঙ্গে অবস্থান করছে। সব দলের জরিপেই দেখা যাচ্ছে শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তা ৬৭ থেকে ৭০ ভাগের মাঝামাঝি অবস্থান করছে। শুধু দেশেই নয় সারা বিশ্বেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটা ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। আওয়ামী লীগের অনেক সমালোচনা আছে, নেতাদের বিরুদ্ধেও আছে নানা অভিযোগ। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি জনগণের আস্থা এবং জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। শেখ হাসিনার এই জনপ্রিয়তাকে পুঁজি করে আওয়ামী লীগ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার চেষ্টা করছে। নির্বাচনে শেখ হাসিনাকে ঘায়েল করার মত কোনো শক্তি এবং যুক্তি বিএনপি বা কারও কাছে নেই। শেখ হাসিনার একক জনপ্রিয়তার কাছে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কতটা সফল হবে সেটা নিয়েও দলটির নেতারা যথেষ্ট উদ্বিগ্ন।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে
মন্তব্য করুন
ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক
আনসার আলীসহ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট
জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। এক যুগ পার হলেও ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত সে খবর
কেউ দিতে পারেনি দীর্ঘ এই সময়ে।
তবে সিলেটের বিএনপি নেতারা মনে করেন,
ইলিয়াস সরকারের হেফাজতে অক্ষতই আছেন। তাকে ফিরে পেতে কেবল সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
নিখোঁজের ১২ বছর পূর্তিতে তাকে ফিরে পেতে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট বিএনপি
ও অঙ্গ সংগঠন। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র পর সিলেটে গঠন করা হয় ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম
পরিষদ’। এ বছর ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’র কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সমাবেশ, স্মারকলিপি
প্রদান এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। এক যুগেও ইলিয়াসের সন্ধান
না মিললেও হাল ছাড়েননি বিএনপি নেতারা।
তাদের ধারণা, ইলিয়াস আলী এখনো জীবিত
আছেন। ইলিয়াসের অবস্থান সম্পর্কে সরকার জ্ঞাত আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ইলিয়াস
আলীর সন্ধান মিলছে না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের এক যুগপূর্তির দিন গতকাল জেলা প্রশাসকের
মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট বিএনপি। এ ছাড়া বাদ আসর জেলা
বিএনপির উদ্যোগে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় দোয়া
ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ইলিয়াসকে ফিরে পেতে বাদ জোহর একই মসজিদে দোয়া ও
মিলাদের আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। স্মারকলিপি প্রদানের আগে গতকাল দুপুরে জেলা
প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর
ধরে ইলিয়াস আলী ফেরার অপেক্ষায় আছেন সিলেটবাসী। ইলিয়াসের জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়ে সরকার
তাকে গুম করেছে।
ইলিয়াস নিখোঁজ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির
সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধান পেতে তার সহধর্মিণী
হাই কোর্টে রিট করেছিলেন। কিন্তু সরকারের অদৃশ্য হস্তক্ষেপে এক যুগেও সেই রিটের শুনানি
হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় ইলিয়াস নিখোঁজের পেছনে সরকার জড়িত।
মন্তব্য করুন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জন বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু
হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই
মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয়
নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের
এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র
জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
তবে এ বিষয়ে জামায়াত কোনো আনুষ্ঠানিক
ঘোষণা দেয়নি। দলীয় সিদ্ধান্ত না থাকলেও দেশের বিভিন্ন এলাকায় জামায়াতের অনেক নেতা স্বতন্ত্র
প্রার্থী হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভাব্য
প্রার্থীরা স্থানীয়ভাবে নানারকম প্রচার ও গণসংযোগও করছিলেন। বিশেষ করে রোজার মধ্যে
এবং ঈদুল ফিতরে তারা ব্যাপক গণসংযোগ করেছেন।
দলটির নেতারা বলছেন, মূলত বেশকিছু কারণে
বর্তমান পরিস্থিতিতে নির্বাচনে যাচ্ছে না জামায়াত। তার মধ্যে মোটাদাগে চারটি কারণের
কথা বলছেন নেতারা।
কারণগুলো হচ্ছে…
১। মানুষের ভোটাধিকার প্রয়োগে ক্ষমতাসীনদের
‘হস্তক্ষেপ’
২। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থা ও পরিবেশের
প্রতি জনগণের ‘আস্থার সংকট’
৩। গণতন্ত্র না থাকা এবং
৪। উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ
সরকার’কে বৈধতা না দেওয়া
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনের প্রথম ধাপের
মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখের (সোমবার) আগেই সিদ্ধান্ত বদল করায় জামায়াতের তৃণমূলে
অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। মাঠপর্যায়ে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, যশোর, সাতক্ষীরা,
চুয়াডাঙ্গাসহ বেশকিছু উপজেলায় জামায়াতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা সম্ভাব্য প্রার্থী
হিসেবে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকটি উপজেলার
সম্ভাব্য প্রার্থীরা বলেন, নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত এমন সময় এলো, যখন তারা ব্যাপকভাবে
গণসংযোগ করছিলেন। এতে তৃণমূল নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষের মাঝে নেতিবাচক বার্তা যায়।
নির্বাচনে গেলে কী লাভ আর কী ক্ষতি—এটা ভেবে অনেক আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন দলের
নীতিনির্ধারকরা। তবে সার্বিক পরিস্থিতিতে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতারা যে সিদ্ধান্ত
নিয়েছেন, সেটাকেও সম্মান জানাতে চান তারা।
গতকাল মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) জামায়াতে
ইসলামীর কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম বলেন, সার্বিক পরিস্থিতি
বিবেচনায় উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত। এরই মধ্যে সারা দেশে দলীয়
সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ মনোনয়ন জমা দিলে তা প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।
দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে, বিএনপি-জামায়াতসহ
প্রায় ৬৩টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন গত ৭ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচন
বর্জন করেছে। বিএনপিও এ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। ইসলামী দলগুলোর অন্যতম চরমোনাই
পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও সংসদ নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে না যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সবমিলিয়ে জামায়াতকেও শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত
নিতে হলো।
এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের
বিষয়ে শুরুর দিকে কিছুটা নমনীয় ছিল জামায়াত। জয়ের সম্ভাবনা আছে এবং স্থানীয়ভাবে প্রভাব
আছে—এমন উপজেলাগুলোতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত
নিয়েছিল দলটি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য এবং প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট
উপজেলা ও জেলা কমিটির দায়িত্বশীল নেতাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সে মোতাবেক সম্ভাব্য
প্রার্থীরা প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশের চলামান রাজনৈতিক
ও সার্বিক পরিস্থিতিতে ঈদের আগে দলের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের
বৈঠক ডাকে জামায়াতে ইসলামী। সেখানে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা
হয়। একপর্যায়ে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ঈদুল ফিতরের পরপরই গত
শনিবার উপজেলা নির্বাচন না করার বিষয়ে জেলা ও উপজেলার দায়িত্বশীল নেতাদের মাধ্যমে তৃণমূলে
মৌখিকভাবে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে।
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের ব্যাপারে জামায়াতের
নেতারা বলছেন, তারা পর্যালোচনা করে দেখেছেন যে, দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো
পরিবেশ নেই। জনগণ ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারছে না। নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে ভূমিকা
রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। যার সর্বশেষ প্রমাণ গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন।
দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অসংখ্য
রাজনৈতিক দল এ সরকারের অধীনে নির্বাচন বর্জন করেছে। এ অবস্থায় জামায়াতে ইসলামী উপজেলা
নির্বাচনে অংশ নিয়ে ‘অবৈধ সরকার’কে বৈধতা দেওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। তা ছাড়া নির্বাচনের
আগেই বিভিন্ন স্থানে জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীদের হুমকি দিয়ে ভয় দেখানো হচ্ছে। এসব
বিষয়কে বিবেচনা করে উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামায়াত।
গতকাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি
জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী শুধু নয়, বাংলাদেশের কোনো গণতান্ত্রিক
দল উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। কারণ, গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দেশের
জনগণ ভোট দিতে যায়নি। তারা একতরফা নির্বাচন বর্জন করেছে। সেই জনরোষ এখনো আছে। সুতরাং
যেসব কারণে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করেছি, সেসব কারণেই উপজেলা নির্বাচনে যাচ্ছি
না। তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলামী জনগণের জন্য রাজনীতি করে। জনগণের প্রতি জামায়াতের দায়বদ্ধতা
আছে। দায়িত্বশীল দল হিসেবে জামায়াত জনমতকে উপেক্ষা করে নির্বাচনে যেতে পারে না’।
প্রসঙ্গত, সর্বশেষ ২০১৪ সালের জাতীয়
সংসদ নির্বাচনের পরপর অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের শতাধিক প্রার্থী
উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) হন। ২০০৯ সালের নির্বাচনে ২৪টি উপজেলায়
চেয়ারম্যানসহ ৩৯ জন ভাইস চেয়ারম্যান (মহিলাসহ) নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০১৯ সালে দলীয়
প্রতীকে অনুষ্ঠিত উপজেলা নির্বাচন বর্জন করে জামায়াত। দলের নিবন্ধন না থাকলেও স্বতন্ত্র
প্রার্থী হওয়ার সুযোগ ছিল জামায়াত নেতাদের। কিন্তু দলীয় সিদ্ধান্তে সেবার কেউ নির্বাচনে
অংশ নেননি।
উপজেলা নির্বাচন জামায়াত বিএনপি
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়েছে যে, মন্ত্রী এবং এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে কোন প্রার্থীকে সমর্থন করতে পারবে না। তাদেরকে নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই রকম বার্তা দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে লিখিত নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত নির্দেশনা উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিরা উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের পছন্দের প্রার্থীকে বিজয়ী করাতে মাঠে নেমেছেন। এমনকি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্বাচনী এলাকাতেই এমপিরা প্রার্থীর নাম ঘোষণা করছেন।
উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেওয়া থেকে পিছু হটল বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির যেসব নেতা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে ছিলেন, এরই মধ্যে তাদের প্রার্থী না হতে বারণ করা হয়েছে। জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে আলোচনার পর উপজেলা নির্বাচনে না যাওয়ার এ সিদ্ধান্ত হয়। কেন্দ্রের এ সিদ্ধান্ত স্থানীয় দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলে জানিয়ে দিয়েছেন। সেইসঙ্গে যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের প্রত্যাহার করতে বলা হয়েছে।