নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৩ নভেম্বর, ২০১৮
বিশ্বের সব দেশেই নির্বাচনে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো একটি সুস্পষ্ট অবস্থান গ্রহণ করে। তারা যেকোনো একটি রাজনৈতিক দলের পক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে সমর্থন জানায় এবং তাদের সহযোগিতা করার আশ্বাস দেয়। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও আনুষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও শিল্পগ্রুপ নির্বাচনে একজন প্রার্থীর পক্ষে সমর্থন ঘোষণা করে। ভারতেও গত নির্বাচনে দেখা গেছে যে, বৃহৎ বৃহৎ শিল্প গ্রুপগুলো প্রকাশ্যে বিজেপিকে সমর্থন করেছিল। কেউ কেউ আবার কংগ্রেসের প্রতিও সমর্থন জানিয়েছিল।
বাংলাদেশে গত এক দশকে উন্নয়নের যে অগ্রযাত্রা হয়েছে তাতে বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলোরও অনেক বড় অবদান আছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গেও তাদের এক ধরনের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশে দেখা যায় যে, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো সবসময়ই নির্বাচনকে নিয়ে অনেক আগ্রহী থাকে। অনেক ব্যবসায়ী নিজেরাই নির্বাচনে জড়িয়ে পড়েন। আবার অনেকে বিভিন্ন প্রার্থীর প্রতি সমর্থন জানান। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর মতো প্রকাশ্য ঘোষণার চর্চা দেখা যায়নি। বাংলা ইনসাইডার বাংলাদেশের ১০টি শিল্প গ্রুপ নির্বাচনে কে কোন পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করবে যে ব্যাপারে অনুসন্ধান চালিয়েছে। এই অনুসন্ধানে বাংলা ইনসাইডার যা পেয়েছে তা এরকম:
স্কয়ার গ্রুপ
স্কয়ার গ্রুপ নিজেরা কখনোই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে না। যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে, তাঁর সঙ্গেই তারা সুসম্পর্ক রাখার চেষ্টা করে। তবে বৃহত্তর পাবনা অঞ্চলে যেহেতু স্কয়ার গ্রুপের প্রতিষ্ঠা। সে কারণে এই অঞ্চলে কারা প্রার্থী হচ্ছেন সে ব্যাপারে তারা প্রভাব রাখার চেষ্টা করে। এবারের নির্বাচনেও তারা পাবনার বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় আওয়ামী লীগের সমর্থকদের প্রতি সমর্থন ও সহানুভূতি জানাচ্ছে বলে অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে। তবে এই গ্রুপের কেউই নির্বাচনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকছেন না।
বেক্সিমকো গ্রুপ
বেক্সিমকো গ্রুপের প্রধান সালমান এফ. রহমান এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী, তিনি হয়তো মনোনয়ন পাচ্ছেন না। মহাজোটের আসন ভাগাভাগির কারণে হয়তো তাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে।
বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের এমডি নাজমুল হাসান পাপন। তিনি কিশোরগঞ্জের একটি আসন থেকে নির্বাচন করছেন। তিনি প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সন্তান। বেক্সিমকো গ্রুপ সবসময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে চলে।
বসুন্ধরা শিল্পগ্রুপ
বসুন্ধরা শিল্পগ্রুপ বাংলাদেশের বৃহত্তম শিল্পগ্রুপগুলোর একটি। তারা সরাসরি নির্বাচনে যুক্ত হয় না। তবে সরাসরি যুক্ত না হলেও নির্বাচনে বিভিন্ন প্রার্থীর মনোনয়নের ক্ষেত্রে তারা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন বলে জানা গেছে। এবারের নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জ-১ আসনে এই গ্রুপের সরাসরি আগ্রহেই হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ প্রার্থী হয়েছিলেন বলে জানা গেছে। এই গ্রুপটির আওয়ামী লীগের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে তারা বিএনপিকেও নির্বাচনে সহযোগিতা করে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।
যমুনা গ্রুপ
যমুনা গ্রুপ বাংলাদেশের আরেকটি বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধারের স্ত্রী সালমা ইসলাম এবার জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। যমুনা গ্রুপ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে আর্থিক সাহায্য দিলেও বিএনপি এবং আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেও সহযোগিতা করেন বলে জানা গেছে।
ট্রান্সকম গ্রুপ
ওষুধ উৎপাদন, মিডিয়া ব্যাবসা এবং অন্যান্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত ট্রান্সকম গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি এবার নির্বাচনে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে বিএনপিকেই সহযোগিতা করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
পারটেক্স গ্রুপ
পারটেক্স গ্রুপ বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির কর্নধার আবুল হাশেম। তিনি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে অংশগ্রহণ করেছিলেন। শিল্পগ্রুপটি বিএনপিকে বেশি সহযোগিতা করলেও আওয়ামী লীগের অনেক নেতাও তাদের সহায়তা পাবেন বলে জানা গেছে।
ওরিয়ন গ্রুপ
ওরিয়ন গ্রুপ বাংলাদেশের একটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান। তারা এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি দুই পক্ষকেই সহযোগিতা করবে বলে জানা গেছে।
এস আলম গ্রুপ
গত এক দশকে বাংলাদেশের ধনীক গোষ্ঠীর তালিকায় উত্থান ঘটেছে এস আলম গ্রুপের। প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এবারের নির্বাচনে তারা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে বলে জানা গেছে।
নাভানা গ্রুপ
বাংলাদেশের আরেকটি বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান নাভানা গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটি আওয়ামী লীগের প্রতি বেশি সহানুভুতিশীল থাকলেও বিএনপিরও বেশ কয়েকজন এমপিকে সহযোগিতা দেবে বলে জানা গেছে।
হা-মীম গ্রুপ
হামীম গ্রুপ বাংলাদেশের পোশাক খাতের একটি বড় প্রতিষ্ঠান। এই শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ণধারের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তবে গোপনে তারা বিএনপির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতাকে নির্বাচনে সহযোগিতা করবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানই সরাসরিভাবে বা আনুষ্ঠানিক ঘোষনার মাধ্যমে কোনো দলের প্রতি সমর্থন বা কোনো দলকে আর্থিক অনুদানের ঘোষণা দেয়নি। বরং এগুলো যা করা হয়, সব গোপনেই করা হয়।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।