নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৬:০২ পিএম, ২৫ নভেম্বর, ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য আজ রোববার সকালে ২৩০ প্রার্থীকে চূড়ান্ত মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, অধিকাংশ আসনেই পুরনো প্রার্থীদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যে ২৩০ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে নতুন মুখ মাত্র ১৯টি। আওয়ামী লীগের এই মনোনয়ন নিয়ে দলে এবং শরিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের তৃণমূল, যারা মনে করেছিল দলের যে সকল সাংসদদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, সন্ত্রাস, হাইব্রিডদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া, বহিরাগতদের লালন করা এবং আওয়ামী লীগের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির অভিযোগ ছিল তাঁদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে না তাঁরা প্রার্থী তালিকা দেখে হতাশ হয়েছে। জানা গেছে, পাহাড়সমান অভিযোগ আছে এমন প্রাক্তন এমপিরাও এবার মনোনয়ন পেয়েছেন। বরগুনা-১ আসনের বর্তমান এমপি ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান এমপি পঙ্কজ দেবনাথসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এলাকায় পক্ষপাতিত্ব, গ্রুপিং প্রভৃতি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিজেদের নির্বাচনী এলাকাতেই তাঁদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল। এই এমপিদেরই আবার মনোনয়ন তালিকায় দেখা যাচ্ছে বলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলে হতাশা দেখা দিয়েছে।
অনেক আসনে আবার দেখা যাচ্ছে যাঁরা আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত কর্মী কিংবা দলের প্রভাবশালী নেতৃত্ব তাঁদেরকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ঢাকা- ১৩ আসনের বর্তমান এমপি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকের আসনে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খানকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ফরিদপুর ১ আসনের বর্তমান এমপি আব্দুর রহমান বাদ দিয়ে সাবেক সচিব মঞ্জুর আহমেদকে মনোনয়ন দেওয়া নিয়েও নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
এই মনোনয়ন নিয়ে সবচেয়ে বড় যে সমস্যা দেখা দিয়েছে তা হলো আসন ভাগাভাগিকে কেন্দ্র করে শরিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নতুন করে মেরুকরণের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কারণ মহাজোটের হয়ে জাতীয় পার্টি যে আসনগুলো নিশ্চিতভাবে চেয়েছিল তার অনেকগুলোতেই দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এই যেমন ঢাকা- ১ আসনে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য সালমা ইসলামকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের নীতিগত অবস্থান ছিল বলে অনেকেই জানেন। কিন্তু এই আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন বিশিষ্ট শিল্পপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাত উন্নয়ন বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। এছাড়া জাপা মহাসচিব জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আওয়ামী লীগের কাছে চট্টগ্রাম- ৯ আসনটি চেয়েছিলেন। কিন্তু তাঁকেও বাদ দিয়ে চট্টগ্রামের প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর ছেলে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে ত্রিমুখী সংকটের মুখে পড়েছে আওয়ামী লীগ।
প্রথমত, এই মনোনয়নের ফলে দলের মধ্যে আওয়ামী লীগের যে অন্তঃকলহ এবং দ্বন্দ্ব ছিল তা আরও বেড়ে যাবে। এই অন্তদ্বন্দ্ব কীভাবে মীমাংসা করবে আওয়ামী লীগ তা দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, তৃণমূল ও পরীক্ষিত লোকজনের মধ্যে যে হতাশা তৈরি হয়েছে তা কীভাবে মীমাংসা করবে আওয়ামী লীগ সেটাও এখন দেখার বিষয়।
তৃতীয়ত, মনোনয়ন নিয়ে জোটের মধ্যে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে সেটিও নিরসণ করতে হবে আওয়ামী লীগকে
তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী সভাপতি শেখ হাসিনা বুঝেশুনেই মনোনয়ন দিয়েছেন। এই মনোনয়ন নিয়ে তিনি দলের নেতাকর্মীদের কঠোর বার্তা দেবেন। সেই বার্তা যদি কেউ গ্রহণ না করেন তাহলে তাঁকে এর পরিণতি ভোগ করতে হবে। তাই আওয়ামী লীগ এখনো আশা করছে, এই মনোনয়ন নিয়ে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
বাংলা ইনসাইডার/এসএইচটি/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।