নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২৭ নভেম্বর, ২০১৮
কথা ছিল, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ঐক্যফ্রন্ট ও ২০ দল একসঙ্গে প্রার্থিতা দেবে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ, ১৪ দল, জাতীয় পার্টি ও যুক্তফ্রন্ট মিলে একত্রে প্রার্থিতা দেবে। নির্বাচনের মাঠ যেন এ সিদ্ধান্তের উপরেই দু’টি শিবিরে বিভক্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু নাটকীয় ভাবে নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিলের ঠিক আগের দিন থেকেই নানারকম মেরুকরণ দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, গতকাল সোমবার থেকে ২০০ আসনের মনোনয়ন প্রাপ্তদের চিঠি দেওয়া শুরু করেছে জাতীয় পার্টি। এদিকে, আজ মঙ্গলবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট তাদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে পৃথক পৃথকভাবে মনোনয়ন জমা দেবে তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর এমন সিদ্ধান্ত আপাতদৃষ্টিতে কাকতালীয় মনে হলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করছেন, সবগুলো ঘটনাগুলো একই সূত্রে গাঁথা। কেননা যেদিনই এমন ঘটনা ঘটেছে সেদিনই বিএনপির ৫ নেতা-আমানউল্লাহ আমান, ওয়াদুদ ভুঁইয়া, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহাব, মশিউর রহমান, ড. জাহিদ হোসেনের মনোনয়ন অযোগ্য করা হয়েছে। এরচেয়েও বিএনপির জন্য বড় ধাক্কা হচ্ছে, দলীয় চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না এ বিষয়ে মোটামুটি নিশ্চিত দলটি। এ প্রেক্ষাপটেই রাজনীতির নতুন মেরুকরণ হয়েছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলরা মনে করছেন, এটা আওয়ামী লীগের একটি রাজনৈতিক কৌশল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো কোনো নির্বাচন যেন না হয় সে লক্ষ্যেই ভোটের মাঠ ফাঁকা রাখতে চায়না দলটি। এজন্য জাতীয় পার্টি আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, ঐক্যফ্রন্টের দ্বিতীয় প্রধান দল গণফোরাম আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে, সেইসঙ্গে যুক্তফ্রন্টও আলাদা প্রার্থিতা দিচ্ছে।
এদিকে, আওয়ামী লীগের একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র বলছে, তাদের কাছে এমন তথ্য আছে, বিএনপির অনেক শীর্ষস্থানীয় নেতা নির্বাচনের মাঠ থেকে ছিটকে পড়ার কারণে, পাশাপাশি দলীয় চেয়ারপারসন বেগম জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে পারায় এবারের নির্বাচন থেকেও সরে আসতে বিএনপির তৃণমূলের থেকে একটি বড় চাপ রয়েছে। বিএনপির শারীরিক ভাষাতেও নির্বাচনে তাদের আগ্রহ প্রকাশ পাচ্ছে না। শেষ মুহূর্ততেও নির্বাচনের তেমন কোন প্রস্তুতিই নেয়নি দলটি। এখনো বিএনপি থেকে নির্বাচনের মনোনীত প্রার্থীরা নিজ নিজ এলাকাতে ফিরে যাননি। এমনকি দলের মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের সংগঠিত করা, নির্বাচনী ইশতেহার তৈরিসহ নির্বাচনের যাবতীয় সকল খুঁটিনাটি প্রস্তুতিতে তেমন কোনো আগ্রহই নেই যেন দলটির মনোনীত প্রার্থীদের। সেইসঙ্গে, বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাও এমন প্রতিবেদন দিয়েছে যে, বিএনপি হয়তো এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন বর্জন করবে যার ফলে আবারও ২০১৪-এর মতো পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি ঘটবে। কিন্তু একথা সকলেই জানে ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন হয়েছিল, তা শুধুমাত্র একবারই করা সম্ভব। এবার আর ঐ ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না, কেননা এতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে চাপ আসবে। আওয়ামী লীগ এই বিষয়টা মাথায় রেখেই ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির একটা সমঝোতা করেছে বলে একাধিক রাজনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই সমঝোতার অংশ হিসেবে শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি নির্বাচন থেকে সরে যায় তাহলে জাতীয় পার্টি, যুক্তফ্রন্ট এবং ঐক্যফ্রন্টের বাকি দলগুলো (মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ অন্যান্যরা) নির্বাচনের মাঠে থাকবে। নিজেদের মতো করে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে তারা। এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে নির্বাচন যে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে, সেই সঙ্গে ৫ জানুয়ারির আর পুনরাবৃত্তি হবে না তা স্পষ্টই।
গত কয়েকদিন ধরে কূটনৈতিক মহলেও যে তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার একটি বড় কারণই হচ্ছে এই মেরুকরণ। গতকাল সোমবার অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীর বাসায় একাধিক কূটনৈতিকরা বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে ঐসব কূটনীতিকরা তাদের আশঙ্কার কথা জানান যে, শেষ মুহূর্তে বিএনপি নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে যেতে পারে। তাহলে যুক্তফ্রন্ট, জাতীয় পার্টি ও ঐক্যফ্রন্টের বাকি দলগুলো ভোটের মাঠে উত্তাপ ছড়াবে, এরফলে নির্বাচন হবে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক। আন্তর্জাতিক মহল থেকে বারবারই সব দলের অংশগ্রহণমূলক ও একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে প্রতিবেশী দেশ ভারত স্পষ্ট করেই বলেছে, কে অংশগ্রহণ করল, কে করল না তা বড় কথা না, নির্বাচনটা যেন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হয়।
তাহলে একথা বলাই যায়, শেষ মুহূর্তে বিএনপি যদি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ায়, কিন্তু বাকি দলগুলো যদি নির্বাচনের মাঠে থাকে শেষ পর্যন্ত তবে নির্বাচন আর যাই হোক, অন্তত নিষ্প্রাণ হবে না। দেশের বর্তমান রাজনীতির পরিস্থিতি সেই পথেই হাঁটছে কিনা, তা নিশ্চিত হতে আমাদেরকে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।