নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৩:০২ পিএম, ২৮ নভেম্বর, ২০১৮
২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাস। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি, র্যাবের ডিজি সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত। বৈঠক কেবল শুরু হয়েছে। এমন সময় বেজে উঠল বাবরের ফোন। একটু বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালেন। ফোন নাম্বার দেখে ভরা মিটিংয়ে লাফিয়ে উঠে ফোনটা ধরলেন। বললেন জ্বী, ভাইয়া’ তারপর শুধু জ্বী জ্বী। আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি। ব্যস। আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং শেষ না করেই প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে বেরুলেন। বাইরে দাঁড়ানো আট-দশজন মিডিয়া কর্মীকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই লিফটের কাছে চলে গেলেন। তার পিএস এপিএস সহ ব্যক্তিগত স্টাফরা পড়িমড়ি করে ছুটছেন তাঁর পেছনে। গাড়িতে উঠেই বললেন এয়ারপোর্টে যাও। গাড়িতে উঠেই এয়ারপোর্টে মেসেজ পাঠাতে শুরু করলেন। ভিআইপি আসবে এমিরেটসে... ইত্যাদি ইত্যাদি। এয়ারপোর্ট পৌঁছে শীতের মধ্যেই ঘাম মুছলেন বাবর। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে যখন ঢুকছেন, তখনই এমিরেটসের প্লেন ল্যান্ড করল। বাবর প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে বোডিং ব্রিজের কাছে দাঁড়ালেন। ততক্ষণে বোডিং ব্রিজ মোটামুটি ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা রক্ষীরা। হঠাৎ বাবরের মনে হলো ফুল লাগবে। একজনকে বললেন, একটা ফুলের তোড়া জোগাড় কর। বোডিং ব্রিজ খুলল। প্রথম যাত্রী যিনি বেরিয়ে এলেন তিনি হলেন শিল্পা শেঠী। ভারতের গ্লামারাস নায়িকা। উচ্চতায় বাবরের চেয়ে ভালোই লম্বা। বাবর তাঁর সঙ্গে হাত মেলালেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে নিয়ে ছুটলেন ভিআইপি লাউঞ্জের দিকে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলো নিমিষেই। বাবর তাঁকে নিয়ে তাঁর গাড়িতে ওঠালেন। গাড়ি ছুটল টঙ্গীর দিকে, গাজীপুরে গিয়ে গাড়ি ঢুকল এক বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে। বাড়িটির নাম খোয়াব। বাড়ির ভেতরের গেটে গাড়ি থেকে নামলেন শিল্পা, তাঁকে রিসিভ করলেন তারেক জিয়া, তাঁর সঙ্গী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। শিল্পা শেঠী দুই দিন বাংলাদেশ ছিলেন, তিনি কোনো শো করেন নি, শপিংয়েও না। আসলে ওই দুই দিন ‘খোয়াব’ বাড়ি থেকে তিনিই বেরই হননি। শিল্পা শেঠী যেমন খোয়াবেই ছিলেন, তেমনি ওই দুইদিন খোয়াবেই ছিলেন তারেক এবং মামুন। দুই দিন পর আবার বাবর এসে শিল্পাকে নিয়ে প্লেনে উঠিয়ে দেন।
গাজীপুরের খোয়াব ভবন ছিল এক রহস্যঘেরা বাড়ি। কারো ভেতরে ঢোকা তো দূরের কথা। ওই বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরাও যেন ছিল অপরাধ। এটা ছিল তারেক-মামুনের বিনোদন বাড়ি, জলসা মহল। এখানে মাঝে মধ্যে এসে তাঁরা হারিয়ে যেতেন। কেউ জানতো না কি হচ্ছে। শুধু শিল্পা শেঠী নয়, অনুসন্ধানে দেখা যায় ভারতীয় নায়িকা মমতা কুলকার্নিও রাতের অতিথি হয়ে এসেছিলেন ‘খোয়াব’ ভবনে। ‘হাওয়া ভবন’ আলোচনায় থাকলেও খোয়াব ছিল গোপনে। তারেক-মামুনে এই জলসা বাড়িতে ছিল অত্যাধুনিক বার, আধুনিক জিম, ড্রান্স ফ্লোর সহ ৫ তারকা হোটেলের সব সুযোগ সুবিধা। শুধু ভারতীয় নায়িকা নয়, বাংলাদেশেরও অনেক খ্যাতিমান নায়িকা খোয়াব ভবনে গিয়ে ধন্য হতেন। কেউ আসতে না চাইলে তাকে হয়রানি করা হতো। শুধু দেশি তারকা নয়, বিদেশি তারকারাও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ খ্যাত আলিশা। ২০০৫ সালে আলিশা ঢাকায় এসেছিলেন কনসার্ট করতে। ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে পৌছানোর পরই আয়োজককে জানানো হয় আলিশাকে খোয়াবে যেতে হবে। ভাইয়া মিট করবেন। আয়োজক বেচারা বুঝতে পারেনি ‘ভাইয়া’ টা কে? পাত্তা দেননি। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আয়োজককে। অভিযোগ অনুমতি ছাড়া কনসার্টের আয়োজন। এরপর আলিশাকে বলা হয় গাজীপুরে যেতে। এরকম প্রস্তাবে তো আলিশা হতবাক। তিনি শরণাপন্ন হন ভারতীয় দূতাবাসের। ভারতীয় দূতাবাস, খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনা বুঝতে পারে। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর কে কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। পরদিন সকালে আলিশা এবং কনসার্টের অন্য অংশগ্রহনকারীরা ভারতে চলে যান।
তারেক রহমানের বালাখানা খোয়াব ভবন এখন ভুতুড়ে বাড়ির মতো পরে আছে। আর সবার পরিণতি তো সবাই জানে।
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক
পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের
মধ্যে যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি তাদের বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয়
নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো অবশ্যই
এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
আজ বুধবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে ধানমন্ডিতে
আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ওবায়দুল কাদের বলেন, পার্টির যারা মন্ত্রী-এমপি
এমন পর্যায়ে আছেন তাদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে, তাদের সন্তান ও স্বজনরা যেন উপজেলা নির্বাচনে
না আসে। প্রথম পর্যায়ের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় চলে গেছে। কেউ কেউ বলেছেন আমরা
বিষয়টি আরও আগে অবহিত হলে সিদ্ধান্ত নিতে আমাদের সুবিধা হতো। তারপরেও কেউ কেউ প্রত্যাহার
করেছেন, কেউ কেউ করেননি। আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের যে সময়সীমা তারপরেও ইচ্ছা
করলে করতে পারবেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন,
‘দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলীয় সিদ্ধান্ত যারা অমান্য করেছে তাদের বিষয়ে ব্যবস্থা
নেওয়া হয়েছে। উপজেলা নির্বাচনেও কিন্তু দলের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় আছে। দল যার যার
কর্মকাণ্ড বিচার করবে। চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত যারা প্রত্যাহার করবে না সময়মতো দল ব্যবস্থা
নেবে’।
তিনি আরও বলেন, বিএনপি একতরফা কোনো
সমাবেশ করতে গেলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিষয়টি এসে যায়। আওয়ামী লীগও একই সময়ে সমাবেশের
ডাক দেয়। তবে এটা পাল্টাপাল্টি নয়।
ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক
কার্যালয়ে হওয়া উক্ত সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি
এম মোজাম্মেল হক, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, সুজিত
রায় নন্দী, সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক
আমিনুল ইসলাম আমিন প্রমুখ।
মন্ত্রী-এমপি প্রার্থিতা প্রত্যাহার ওবায়দুল কাদের
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায়
অভিযোগ গঠন শুনানির তারিখ পিছিয়ে আগামী ২৫ জুন ধার্য করেছেন আদালত।
বুধবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক আলী হোসাইনের
আদালতে খালেদা জিয়ার অব্যাহতির বিষয়ে শুনানির দিন ধার্য ছিল। কিন্তু খালেদা জিয়ার প্রধান
আইনজীবী মাসুদ আহমেদ তালুকদার দেশের বাইরে থাকায় অভিযোগ শুনানি পেছাতে সময়ের আবেদন
করা হয়। আদালত সময় আবেদন মঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন শুনানির জন্য নতুন করে এ তারিখ ধার্য
করেন। খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুল হান্নান ভূঁইয়া সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা যায়, মামলাটিতে ১৫ জন আসামির মধ্যে ১৪ জনের অব্যাহতির বিষয়ে
শুনানি শেষ হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার অব্যাহতি চেয়ে শুনানি শুরু হয়।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর দুদকের উপপরিচালক মো. গোলাম শাহরিয়ার ১৩
জনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় মামলাটি দায়ের করেন। ২০০৮ সালের ১৩ মে মামলাটি
তদন্ত করে জোট সরকারের প্রভাবশালী ৯ জন সাবেক মন্ত্রী ও উপমন্ত্রীসহ মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে
দুদকের উপপরিচালক মো. জহিরুল হুদা অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
২৪ আসামির মধ্যে সাবেক মন্ত্রী এম সাইফুর রহমান, আব্দুল মান্নান
ভুইয়া, সাবেক মন্ত্রী ও জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, খালেদা
জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো, এম কে আনোয়ার, সাবেক মন্ত্রী এম শামছুল ইসলাম, বন্দরের
প্রধান অর্থ ও হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা আহমেদ আবুল কাশেমের মৃত্যুর পর মামলায় বর্তমানে
আসামির সংখ্যা ১৫ জন।
অন্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক
বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান
কমোডর জুলফিকার আলী, সাবেক মন্ত্রী কর্নেল আকবর হোসেনের (প্রয়াত) স্ত্রী জাহানারা আকবর,
দুই ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মন এবং এ কে এম মুসা কাজল, এহসান ইউসুফ, সাবেক নৌ সচিব জুলফিকার
হায়দার চৌধুরী, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সাবেক সদস্য এ কে রশিদ উদ্দিন আহমেদ এবং
গ্লোবাল এগ্রোট্রেড প্রাইভেট লিমিটেডের (গ্যাটকো) পরিচালক শাহজাহান এম হাসিব, সাবেক
মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এবং সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী এ কে এম মোশাররফ
হোসেন।
মন্তব্য করুন
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিদের স্বজনদের মধ্যে যারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেনি তাদের বিষয়ে সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করলে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশনের ব্যাপারে চিন্তা করা হবে। সময়মতো অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।