নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১:০০ এএম, ২৯ নভেম্বর, ২০১৮
খুব ছোট থেকে কষ্ট করে ব্যবসা দাঁড় করিয়েছেন। ডায়গনস্টিক ব্যবসা থেকে ফার্মাসিউটিক্যালস ব্যবসায় সবে পসার জমিয়েছেন। টাকা পয়সার পসার হলেও নিজে থাকছেন বেশ লো প্রোফাইলে। কোনো রাজনীতির সাতেপাঁচে নেই। এক সকালে তাঁর কাছেই এলো ফোন। নাম্বারটা চেনেন না এজন্য ধরলেন না। এরপর একটা ক্ষুদে বার্তা এলো তাঁর ফোনে। ভয় পেয়ে গেলেন ব্যবসায়ী। কাঁপা হাতে ফোন ব্যাক করলেন। ওপাশ থেকে পরিচয় দিয়ে বলা হলো, আজই দেখা করতে হবে। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কী আর করবেন, গেলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে।
২০০২ সালের এপ্রিল মাস। কর্তার রুমে ঢুকতেই উঞ্চ অভ্যর্থনা। হাসতে হাসতে কর্তা জিজ্ঞেস করলেন, ‘বাংলাদেশে ব্যবসা করতে চান?’ ব্যবসায়ী কাচুমাচু। বললেন, ‘কালকের মধ্যে ১০ কোটি টাকার ব্যবস্থা করবেন। ব্যবসায়ী বললেন, ‘দেখেন ভাই, আমি তো ব্যাংকের লোনে ব্যবসা করি। এতো টাকা দেবো কীভাবে?’ কর্তা হাসলেন বললেন, ‘দেবেন, ঠিকই দেবেন।’ ব্যবসায়ী এবার ক্ষেপে গিয়ে বললেন, ‘সম্ভব না।’ বিদায়টা হৃদত্যপূর্ণ হলো না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে বেরুলেন। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। অফিসে বসে পানি পান করলেন দু গ্লাস। এর মধ্যেই একাউন্টস ম্যানেজার এলো প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে। বললেন, ‘ট্যাক্স অফিস থেকে এখনই লোক আসছে’। ‘ট্যাক্সের লোকের কাজ কী?’ ব্যবসায়ী বিরক্ত হয়ে জানতে চাইলেন। কর্মচারী জানালেন, ‘আমাকে ফোন করে তাঁরা জানাল, আমরা নাকি ট্যাক্স ফাঁকি দিচ্ছি।’ ট্যাক্সের লোক এলো, খামোখা এটা ওটা দেখে বলল, ‘আপনাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে। তদন্ত শেষ না হওয় পর্যন্ত ডায়গনস্টিক সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।’
ব্যবসায়ী বুদ্ধিমান। বুঝলেন কেন এসব হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা তুলে নিলেন ফোন করলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্তাকে। অপর প্রান্তে ফোন ধরতেই ব্যবসায়ী বললেন, ‘হারিছ ভাই, কখন দেখা করব?’ অপরপ্রান্তে হাসি। ওই ব্যবসায়ীর ট্যাক্সের ঝামেলা মিটেছিল। হারিছ চৌধুরীও তার দাবি আদায় করেছিল।
এরকম ঘটনা ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে প্রতিদিনই ঘটেছে। হারিছ চৌধুরী, প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব ছিলেন। তার চেয়েও বড় কথা তিনি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আর হাওয়া ভবনের যোগসূত্র। ২০০১ সালে একেবারে আনকোরা, অজানা হারিছ চৌধুরীকে যখন রাজনৈতিক সচিব-১ করা হলো,তখন অনেকেই চোখ কপালে তুলেছিলেন। কিন্তু ক্রমশ: পরিস্কার হলো তিনি ছিলেন তারেক জিয়ার লোক। একমাত্র ব্যক্তি যাঁর সঙ্গে তারেক এবং বেগম জিয়ার উভয়ের সুসম্পর্ক ছিল। গিয়াসউদ্দিন আল মামুন দেখতেন বড় ব্যবসা, টেন্ডার। আর হারিছ তুলতেন টাকা। প্রশাসনের পদোন্নতি, লাভজনক পোস্টিং ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করতেন হারিছ চৌধুরী। ব্যবসায়ীদের নিয়মিত টাকা দিতে হতো হারিছ চৌধুরীকে। না হলেই ব্যাংকের ঝামেলা, এনবিআরের চাপ, পুলিশি হয়রানি শুরু হতো।
ব্যবসায়ীর গল্পে ফিরে আসা যাক। ওই দিন সন্ধ্যায় ১০ কোটি টাকার চেক নিয়ে ব্যবসায়ী রওনা দিলেন গুলশানের একটি বাসার দিকে। গাড়ি কিছু দূর যেতেই ফোন এলো, গুলশান নয়, তাকে যেতে হবে বনানী। বনানীতে ঠিকানা অনুযায়ী পৌছার পর ১০ কোটি টাকার একটা চেক দিলেন হারিছ চৌধুরীর হাতে। ক্যাশ চেক। হারিছ চৌধুরী জানালেন, ‘পরদিন সকালে আপনাকে যেয়েই টাকা তুলতে হবে। আর টাকা তোলার আগে আপনি আমার মেহমান। এক রকম আটক করেই রাখা হলো সারারাত ওই ব্যবসায়ীকে। পরদিন সকালে ব্যবসায়ী প্রথমে ব্যাংকে ফোন করলেন। টাকা রেডি হবার পর নিজে গেলেন, ব্যাংকের হেড অফিসে সঙ্গে হারিছের লোকজন। টাকা তোলার সঙ্গে সঙ্গেই তিন ভাগ হলো টাকা। তিন ভাগই জমা হলো তিন একাউন্টে। একজন ফোনে হারিছ চৌধুরীকে জানালো, কাজ শেষ। তখন ব্যবসায়ী মুক্তি পেলেন। ওই দিনই ব্যবসায়ী সিঙ্গাপুর চলে গেলেন।
সব টাকাই এরকম তিন ভাগ হতো, এক ভাগ যেত হাওয়া ভবনে, এক ভাগ যেত বেগম জিয়ার কাছে, আর তৃতীয় ভাগ পেতেন হারিছ চৌধুরী নিজে। এসময় প্রতিদিন একজন করে ব্যবসায়ীকে টার্গেট করা হতো।
হারিছ চৌধুরীর সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল প্রধান বন সংরক্ষক নিয়োগ। প্রধানমন্ত্রী একটা নাম দিয়ে হারিছ চৌধুরীকে বললেন, একে প্রধান বন সংরক্ষক করতে। আরেকটা নাম দিলেন তারেক জিয়া। বনমন্ত্রী নিজে একটা নাম দিলেন। আরেক নাম দিলেন বিএনপির মহাসচিব এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রী আবদুল মান্নান ভূঁইয়া। হারিছ চৌধুরী ৫ জনকে ডাকলেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। নিলাম ডাকলেন প্রধান বন সংরক্ষক পদের জন্য কে কত দেবে। নিলামে পঞ্চম ব্যক্তি সর্বোচ্চ দর হাকলেন ১৫০ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী, তারেকের সুপারিশ বাদ দিয়ে সুপারিশহীন ওসমান গনিকে প্রধান বনরক্ষক করলেন। বেগম জিয়া, তারেক বনমন্ত্রী সবাই তাতেই সায় দিলেন। ওয়ান ইলেভেনে এই ওসমান গনির বেডরুমের বালিশে, বিছানায় কয়েক কোটি নগদ টাকা পাওয়া যায়।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
জামায়াত বিএনপি উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
বিএনপি তারেক জিয়া উপজেলা নির্বাচন রাজনীতির খবর
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন বিএনপি তারেক জিয়া বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
জামায়াতে ইসলামও কী বিএনপিকে ধোঁকা দিল? বিএনপির সঙ্গে সুর মিলিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী ফ্যাসিস্ট এই রাজনৈতিক দলটি ঘোষণা করেছে যে, তারা উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। নিবন্ধনহীন রাজনৈতিক দলটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার ঘোষণা না দিলেও প্রথম পর্বে যে সমস্ত উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষ হয়েছে সেখানে জামায়াতের ২৩ জন সদস্যের নামের তালিকা পাওয়া যাচ্ছে।
বিএনপিতে তোলপাড় চলছে। বাইরে থেকে কেউ বুঝতে পারছেন না বিএনপিতে কী ঘটছে। কিন্তু দলের ভিতর যারা রয়েছেন তারা বলছেন, দলের ভিতরে এক প্রকার দম বন্ধ এবং শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করছে। একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বিএনপিতে প্রশ্ন উঠেছে, সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। দলের ভিতর বিভক্তি, অনৈক্য হতাশা এখন প্রকাশ্য।
আওয়ামী লীগে উত্তরাধিকারের রাজনীতি নতুন নয়। আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা এবং মন্ত্রীরা উত্তরাধিকার সূত্রেই রাজনীতিতে এসেছেন। বর্তমান মন্ত্রিসভায় একাধিক সদস্য রয়েছেন যারা রাজনীতিতে এসেছেন পারিবারিক ঐতিহ্য থেকে, পিতার হাত ধরে, অথবা তাদের নিকট আত্মীয়দের উৎসাহ উদ্দীপনায়। বর্তমান মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য আছেন, যাদের বাবারা আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন সেই সূত্রে তারা রাজনীতিবিদ।
আওয়ামী লীগ দলগতভাবে উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট এবং কঠোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন উপজেলায় মন্ত্রী, এমপি বা দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ভাই ব্রাদার বা স্বজনদেরকে প্রার্থী করা যাবে না। যারা ইতিমধ্যে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।