নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২:৫৯ পিএম, ৩০ নভেম্বর, ২০১৮
২০০৪ সালের ৫ আগস্ট। রাতে র্যাব-পুলিশ ঘেরাও করল খিলগাঁওয়ে এক সংবাদকর্মীর বাসা। সাংবাদিক হিসেবে তাঁর তেমন নাম যশ নেই। মূলত: বিনোদন সাংবাদিক। পুলিশ-র্যাবের উপস্থিতি দেখে তো সাংবাদিক ভীষণ ভড়কে গেলো। কী তাঁর অপরাধ? বলতেই তাঁর ওপর চড়াও হলো আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন। বাড়িঘর তছনছ করে একটি পত্রিকা দেখে তাঁরা চিৎকার করে উঠল, ‘ইউরেকা...ইউরেকা’। একটি পত্রিকার জন্য এত হৈ চৈ? সাংবাদিক তো অবাক। আজকেই কলকাতা থেকে তিনি এসেছেন। যে পত্রিকাটি নিয়ে পুলিশ লাফাচ্ছে, তাতে ভারতীয় এক নায়িকার খোলা মেলা সাক্ষাৎকার ছাপা হয়েছে। এটা দেখেই সাংবাদিক ব্যাগে তুলে নিয়েছিল। একটা ভালো আর্টিকেল করা যাবে এই আশায়। পত্রিকাটা ভালোমতো দেখেও নি সে। পুলিশ পত্রিকাটি এমন ভাবে ধরল যেন বিধ্বংসী কোনো বোমা। এখনই এটাকে নিস্ক্রিয় করতে হবে। পত্রিকা আর সাংবাদিককে নিয়ে যাওয়া হলো থানায়। ওয়ারলেসে মেসেজ গেলো পত্রিকা পাওয়া গেছে। দীর্ঘ জেরার পর বিএনপিপন্থী এক সাংবাদিক নেতার হস্তক্ষেপে বেচারা সাংবাদিক মুক্ত হলেন।
ওই দিনই বিকেলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপন জারি করে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘ইন্ডিয়া টুডের ৪ আগস্ট সংখ্যার প্রকাশনা বাংলাদেশে বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর কোনো পুন:মুদ্রণ, অনুবাদ, বিলি বন্টন শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’ কি ছিল ইন্ডিয়া টুডের ওই সংখ্যায়? এক কলামে ছোট্ট একটা বক্স নিউজ ‘বাংলাদেশি সেকেন্ড ম্যান মিট উইথ দাউদ ইব্রাহিম।’ (বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যক্তির দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ।) খবরে বলা হয়েছে, ‘১১ জুলাই দুবাইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দাউদ ইব্রাহিমের বৈঠক হয়। দাউদ ইব্রাহিম ভারতের মোস্ট ওয়ান্টেড ক্রিমিনাল। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা, নাশকতা এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মদদ দেওয়ার সুস্পষ্ট প্রমাণ আছে। ইন্টারপোল তাঁর বিরুদ্ধে রেড ওয়ারেন্ট জারি করেছে। বৈঠকের স্থায়িত্ব ছিল ৪৫ মিনিট। বৈঠকে দাউদ ইব্রাহিমের দুজন সহযোগী ছিলেন, তারেকের সঙ্গে ছিলেন তাঁর ব্যবসায়িক পার্টনার।’
বাংলাদেশ ইন্ডিয়া টুডের ওই সংখ্যা নিষিদ্ধ করলেও ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ খবরটি গুরুত্বের সঙ্গে নেয়। দুবাই থেকে ইন্ডিয়া টুডের করেসপন্ডেন্ট অজিত পান্ডের পাঠানো খবরের অনুসন্ধান শুরু হয়। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট বাংলাদেশে ঘটে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা। ওই নারকীয় ঘটনায় তৎকালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনা কোনমতে প্রাণে বেঁচে গেলেও মারা যান ২৩ জন। গ্রেনেড হামলার ঘটনার সমসাময়িক সময়েই ভারতের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সশস্ত্র তৎপরতা।
ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা নিশ্চিত হয়, বিচ্ছিন্নতাবাদীরা বিশেষত উলফারা বাংলাদেশকে তাঁদের নিরাপদ ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। ওই বছরই ১ এপ্রিল ১০ ট্রাক অস্ত্রের এক চালান ধরা পড়েছিল। বাংলাদেশ সরকার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। গ্রেনেড হামলার ঘটনার পর ২০০৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বর ভারতের ‘হিন্দু’ এক প্রতিবেদনে, গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ এর বরাত দিয়ে বলা হয়। ১০ ট্রাক অস্ত্র, একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনা এবং উলফার তৎপরতা এক সূত্রে গাঁথা। এই ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বড় ছেলে তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে। ‘হিন্দু’র ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে তারেকের বৈঠকের পরপরই একের পর এক নাশকতার ঘটনা ঘটছে।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশ সরকার ‘হিন্দু’রও সব সংখ্যা নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ২০০৫ সালে, ভারতীয় গোয়েন্দ সংস্থা ‘র’ বাংলাদেশে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে এক গোপন বার্তা পাঠায়। ওই বার্তায় বলা হয় ‘প্রধানমন্ত্রীর বড় ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের গোপন যোগাযোগ এবং আর্থিক লেনদেন সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া গেছে। তারেক রহমান বিচ্ছিন্নতাবাদী উলফাদের মদদ দিতে প্রশাসনকে ব্যবহার করছেন। এজন্য তাঁকে আর্থিক সাহায্য দিচ্ছে দাউদ ইব্রাহিম।’ বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত আনুষ্ঠানিক ভাবে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারকে কঠোর অবস্থান গ্রহণের অনুরোধ করেন। কিন্তু পররাষ্ট্র সচিব বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করেননি।
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।