নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০১ ডিসেম্বর, ২০১৮
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত হয়েছে, পাশাপাশি চলছে এর খুঁটিনাটি কাজ। আগামী ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবে দলটি। আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, গত দশ বছরে সারাদেশে যে উন্নয়নের ধারা সূচিত হয়েছে, সেই উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখা এবং সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কিছু উন্নয়ন পরিকল্পনাসহ স্বল্প উন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা। সেই সঙ্গে এই নির্বাচনী ইশতেহারে ২১০০ সালের বাংলাদেশের একটি রূপপরিকল্পনাও উপস্থাপনা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারের মূল বক্তব্যগুলো হচ্ছে:
১. দারিদ্র, হতাশাগ্রস্ত ও ব্যর্থ রাষ্ট্র থেকে গত এক দশকে আধুনিক, উন্নত ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে গত ১০ বছরে সারা দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে দলটির যে অর্জন তা তুলে ধরা হবে।
২. পদ্মা সেতু প্রকল্প, পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প, মেট্রোরেলসহ প্রধান প্রধান মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের অগ্রগতি তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সেই সঙ্গে এই প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশে কি ধরনের পরিবর্তন আসবে, দেশের মানুষ কি কি সুবিধা পাবে তার উপর আলোকপাত করা হবে। যথা সময়ের মধ্যেই যেন এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়, দেশের প্রতিটা মানুষ যেন সহজেই এসব প্রকল্পের সুবিধাগুলো পায় সেজন্য আরেকবার আওয়ামী লীগকে ভোটের আহ্বান জানানো হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে।
৩. গত দশ বছরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারসহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পূর্ণ করাসহ জঙ্গি-মুক্ত বাংলাদেশ করার প্রত্যয়ও ব্যক্ত করা হবে।
৪. নির্বাচনী ইশতেহারে মাদককে সামাজিক অভিশাপ হিসেবে চিহ্নিত করা হবে, সেই সঙ্গে মাদকমুক্ত আগামী বাংলাদেশ গড়তে রূপপরিকল্পনারও উল্লেখ করা হবে। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের সকল পদক্ষেপগুলো উল্লেখ করে আগামীতে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে তবে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার করা হবে।
৫. দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলারেন্সের কথা উল্লেখ করা হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। হাওয়া ভবন, সিএনজি দুর্নীতিসহ বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সময়কালে দুর্নীতির সকল খাতগুলো উল্লেখ করা হবে। গত দশ বছরে সকল ক্ষেত্রেই দুর্নীতিকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসার উল্লেখপূর্বক আগামীতে ক্ষমতায় আসলে দুর্নীতি রোধে আরও উন্নয়নের কথা উল্লেখ করা হবে।
৬. তারুণ্যের জয়গান গাওয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে। তরুণদের জন্য যেসকল সুযোগ-সুবিধা গত ১০ বছরে সরকার ইতিমধ্যেই দিয়েছে তা উল্লেখ করা হবে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় আসলে তরুণদের জন্য নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি, আত্মকর্মসংস্থানের উদ্যোগ গ্রহণ, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহারে তরুণদের প্রশিক্ষণের কথাও উল্লেখ করা হবে।
৭. বর্তমান সরকারের আমলেই নারীর ক্ষমতায়নের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। নারীর ক্ষমতায়নে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের রোল মডেল রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত এক দশকে সরকার নারী জাগরণে যেসকল কর্মসূচী গ্রহণ করেছে তা উল্লেখপূর্বক, আগামীতে ক্ষমতায় আসলে নারী অধিকার প্রতিষ্ঠায় সরকারের পক্ষ থেকে কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হবে তার বিবরণীর উল্লেখ থাকবে নির্বাচনী ইশতেহারে।
৮. প্রতিটা গ্রামকে শহরে রূপান্তর করে গ্রামের মানুষগুলোকে আধুনিক শহুরে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার নীতি-কৌশল এবার আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অন্যতম প্রতিপাদ্য বিষয়।
৯. গত এক দশকে আওয়ামী লীগ দেশের দারিদ্র হ্রাসে এক বিপ্লব ঘটিয়েছে। সরকারের গৃহীত নানা পদক্ষেপ, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির মাধ্যমে দারিদ্রের হার উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে এসেছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে এই ধারা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ গড়া ও উন্নত দেশ গড়ার অঙ্গীকার করছে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে।
১০. বিগত দশ বছরে সমাজ থেকে বৈষম্য হ্রাসে আওয়ামী লীগ কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলোর কথা উল্লেখ করা হবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। তৃতীয় বারের মতো আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় আসে তবে সমাজ থেকে বৈষম্য হ্রাস করতে দলটি কি কি পদক্ষেপ নিবে তারও উল্লেখ করা হবে।
১১. ক্ষমতায় থাকাকালীন আওয়ামী লীগ এদেশের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীসহ সুবিধাবঞ্চিতদের মানুষদের জন্য যেসকল কর্মসূচি গ্রহণ করেছে তার বর্ণনা থাকবে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে। পাশাপাশি সমাজে তাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নত করতে আগামীতে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার বর্ণনাও থাকবে।
১২. ‘কারও সঙ্গেই বৈরিতা নয়, সকলের সঙ্গেই বন্ধুত্ব’ আওয়ামী লীগ তার পররাষ্ট্র নীতিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নীতি অনুসরণ করছে। বিগত এক দশকে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সাফল্য অর্জন করেছে তার বিশদ বিবরণ থাকবে দলটির নির্বাচনী ইশতেহারে। সেই সঙ্গে, সমুদ্রজয়, সিট মহলের সীমানা বণ্টন সহ দ্বিপাক্ষিক ও বৈষয়িক দিকগুলোতে সরকারের সাফল্য তুলে ধরা হবে। এছাড়াও নির্বাচনী ইশতেহারে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপরিকল্পনা উপস্থাপনও করা হবে।
১৩. বাংলাদেশ বর্তমানে সাম্প্রদায়িকটার দেশ। সকল ধর্মের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের যে নীতি বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে, সেই নীতিতেই এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রকাশ করছে।
এছাড়াও নির্বাচনী ইশতেহারে আরও কিছু কর্মসূচি ও অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ থাকবে বলে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এইচ টি ইমাম বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচনী ইশতেহার চূড়ান্ত করে ফেলেছি। এখন শুধুমাত্র খুঁটিনাটি কিছু কাজ চলছে। নির্বাচনের মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের পরের সপ্তাহের সুবিধাজনক যে কোন দিনেই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করবো বলে আশা করছি আমরা।’
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত
থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে
না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ
নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে
অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে
১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
তবে দলীয় প্রতীকেই উপজেলা নির্বাচনে
প্রার্থী দিতে চায় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ ১১টি নিবন্ধিত দল। আর দলীয়ভাবে
প্রার্থী দেওয়া হবে কি না—তপশিল ঘোষণার পরও এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি পাঁচটি রাজনৈতিক
দল। অবশ্য আওয়ামী লীগ প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় এবারের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থীর
সংখ্যা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা বাড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাদের মতে, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের
মতো এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে লড়াই হবে মূলত স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে।
দেশে মোট উপজেলা ৪৯৫টি। আগামী ৮ মে
প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইসি ঘোষিত তপশিল অনুযায়ী, প্রথম
ধাপের উপজেলা নির্বাচনের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে
১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল ও প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল।
এরপর আগামী ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় ও ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট অনুষ্ঠিত হবে।
উপজেলা নির্বাচনে কার স্বাক্ষরে প্রার্থী
নির্ধারিত হবে, তা বৃহস্পতিবার (২৫ মার্চ) মধ্যে লিখিতভাবে জানাতে ইতোমধ্যে রাজনৈতিক
দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
ইসি সূত্র জানায়, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন
সামনে রেখে নির্বাচন ও আচরণ বিধিমালায় ব্যাপক সংশোধন আনা হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণের
জন্য দলীয় ও স্বতন্ত্র দুই ধরনের সুযোগই রাখা হয়েছে। তবে এ নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি
বাড়াতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। নির্বাচনে যাতে
অধিকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী অংশ নিতে পারেন, সেজন্য প্রার্থীর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে
২৫০ ভোটারের সমর্থন সূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা সংযুক্তির বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে। এ
ছাড়া নির্বাচনী পোস্টার, নির্বাচনী প্রচারণা এবং প্রার্থীদের জামানতসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ
বিষয়ে বড় ধরনের সংশোধন আনা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণে নিবন্ধিত
৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে নির্বাচনে না যাওয়ার পক্ষে বিএনপিসহ ১০টি দল। দলীয় প্রতীকে
অংশ নেবে ১১টি দল। প্রতীক ছাড়া অংশ নেওয়ার পক্ষে দুটি। এখনো নির্বাচনে অংশ গ্রহণ বিষয়ে
সিদ্ধান্তহীনতায় পাঁচটি রাজনৈতিক দল। সব মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার পথেই নিবন্ধিত
বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল। তারা ইতোমধ্যে উপজেলাসহ স্থানীয় সরকারের সব পর্যায়ের নির্বাচনে
অংশ নিতে প্রার্থীও ঠিক করতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, বিএনপির নেতৃত্বাধীন যুগপৎ
আন্দোলনে থাকা দলগুলোর মধ্যে ছয়টি নিবন্ধিত। এসব দলের শীর্ষ নেতারা জানিয়েছেন, তারা
উপজেলা নির্বাচনও বর্জন করবেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলে আটটি নিবন্ধিত
দল। একটি ছাড়া সবগুলোই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। এ ছাড়া সংসদের প্রধান
বিরোধী দল জাতীয় পার্টি দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
জাপার দপ্তর সম্পাদক রাজ্জাক খান জানিয়েছেন,
দলীয় প্রতীকে তারা স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ইতোমধ্যে দুই সিটিতেও
তারা প্রার্থী দিয়েছেন। রংপুর সদর উপজেলা পরিষদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে বলেও জানান
তিনি।
জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ নেওয়া নিবন্ধিত দলগুলোর বেশিরভাগই উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। আবার সিদ্ধান্তহীনতায়
রয়েছে কোনো কোনো দল।
এর আগে ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
অংশ না নিলেও বিএনপি পরে উপজেলার ভোটে অংশ নিয়েছিল। যদিও তখন পর্যন্ত স্থানীয় সংসদ
নির্বাচনে দলীয় প্রতীক দেওয়ার বিধান চালু হয়নি। পরে ২০১৯ সালে উপজেলায় দলীয় প্রতীকে
নির্বাচন হলেও বিএনপি সেখানে প্রার্থী দেয়নি। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বর্জন করার পর এবার
স্থানীয় সরকার নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রেখেছেন তারা।
তবে নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক
তৃণমূল বিএনপি। দলটির চেয়ারপারসন শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, ‘দল হিসেবে উপজেলা নির্বাচনে
অংশ নেওয়ার একটা মনোভাব আছে। যারা অংশ নিতে চায় তাদের আমরা উৎসাহিত করছি। তবে দলীয়ভাবে
এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মহাসচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। ঈদের পর দেশে ফিরলে তখন চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে এখনো কোনো
সিদ্ধান্ত নেয়নি আরেক নতুন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)।
এ তথ্য জানিয়ে দলটির মহাসচিব ড. মো.
শাহজাহান বলেন, ‘আসন্ন উপজেলা নির্বাচনও বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মতো হলে, সেখানে
অংশ নেওয়ার কোনো অর্থ হয় না। তবে আমরা এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। শিগগির এ ব্যাপারে
দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে দলীয় প্রতীকে, নাকি প্রতীক ছাড়া যাব, তখন সে
সিদ্ধান্তও হবে।’
কল্যাণ পার্টিও নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে
ইতিবাচক বলে জানা গেছে। জানতে চাইলে দলটির চেয়ারম্যান সংসদ সদস্য সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম
বলেন, ‘কল্যাণ পার্টি নির্বাচনমুখী দল। শিগগির উপজেলা নির্বাচনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
নেওয়া হবে।’
প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে
গেলে দলীয় হাতঘড়ি প্রতীকে ভোট করবেন তাদের প্রার্থীরা।’
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (কাঁঠাল প্রতীক)
মহাসচিব জাফর আহমেদ জয় বলেন, ‘তারা দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’
তবে চেয়ারম্যান পদে ১ লাখ টাকা জামানত
নির্ধারণ সঠিক হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচনে আগে জামানত ছিল ১০ হাজার
টাকা। তাই জামানতের টাকা আগের অবস্থায় নেওয়ার জন্য শিগগির রিট করা হবে।’
ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান
শেখ ছালাউদ্দিন ছালু বলেন, তারা আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলা নির্বাচনে যাবেন না। তবে দলের
কোনো প্রার্থী চাইলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন, কোনো বাধা থাকবে না।’
দলীয় ‘একতারা’ প্রতীকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ
করবে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ মুসলিম লীগ (বিএমএল) নির্বাচনের
বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।
এদিকে উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের
ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বাংলাদেশ কংগ্রেস। ডাব প্রতীকের দলটির চেয়ারম্যান কাজী
রেজাউল হোসেন কালবেলাকে বলেন, ‘আমরা আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত
জানাব।’
তবে ১৪ দলের শরিক সাম্যবাদী দলের সাধারণ
সম্পাদক দীলিপ বড়ুয়া জানিয়েছেন, তিনি এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেননি।
দলীয় প্রতীক ছাড়া অংশ নেবে গণতন্ত্রী
পার্টি। দলটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ডা. শহীদুল্লাহ সিকদার বলেন, ‘স্থানীয় সরকার নির্বাচন
দলীয় প্রতীক ছাড়াই হওয়া উচিত।’
ওয়ার্কার্স পার্টি উপজেলা নির্বাচন
করবে দলীয় হাতুড়ি প্রতীক নিয়ে। একই অবস্থানে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলও (জাসদ)।
নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি সিপিবিসহ পাঁচ দলের সমন্বয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক
জোট। জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, ‘পরিবেশ না থাকায় আমরা উপজেলা
নির্বাচনেও অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত
নিয়েছে ড. কামাল হোসেনের দল গণফোরাম। দলটির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা
নির্বাচনে যাচ্ছি না।’
দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে যেতে চায় কৃষক
শ্রমিক জনতা লীগ। একই পথে হাঁটছে তরীকত ফেডারেশন। দলটির চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর
মাইজভান্ডারী বলেন, ‘আমাদের কেউ নির্বাচনে আগ্রহী হলে সুযোগ দেওয়া হবে।’
উপজেলা নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর
এমন অবস্থানের বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানী নূরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি
সংসদ নির্বাচনে যেভাবে দলগুলোর অবস্থান ছিল উপজেলা নির্বাচনেও সে রকমই আছে। অর্থাৎ
যারা সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল তারা এবারের নির্বাচনেও শরিক হচ্ছে। তবে নির্দলীয়
নির্বাচন করতে আওয়ামী লীগ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এতে হয়তো প্রার্থী কিছুটা বাড়তে পারে।
বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে অনেকেই স্বতন্ত্র হয়ে অংশ নিতে পারেন।’
নির্বাচন কমিশন ইসি বিএনপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
বিএনপি মেজর হাফিজ উদ্দিন কর্নেল অলি আহমেদ মাহমুদুর রহমান মান্না
মন্তব্য করুন
১৪ দল আওয়ামী লীগ ভারতীয় পণ্য বর্জন
মন্তব্য করুন
সরকার বিরোধী জিএম কাদের জাতীয় পার্টি
মন্তব্য করুন
বিএনপি ভারত বিরোধী ভারতীয় পণ্য বর্জন
মন্তব্য করুন
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে বিরত থাকা বিএনপি, ইসলামী আন্দোলন, সিপিবিসহ ১৪টি নিবন্ধিত দল উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নিচ্ছে না। দেশের নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থানে তেমন কোনো পরিবর্তন হচ্ছে না। আর সংসদ নির্বাচনে ভোটের মাঠে থাকা বেশিরভাগ দলই থাকছে উপজেলায়। এই নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ তা ব্যবহার করছে না। তাদের পথেই হাঁটছে ১৪ দলীয় জোটের শরিক গণতন্ত্রী পার্টি।
বিএনপি এখন দলে এবং তাদের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন করছে এমন অনেক নেতাকেই বিশ্বাস করে না। বিএনপির নীতিনির্ধারকদের কাছে এ রকম তথ্য উপাত্ত আছে যে, তারা আসলে সরকারের সঙ্গে গোপনে আঁতাত করেছে এবং বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলনকে দুর্বল করেছে বা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সমস্ত নেতাদের কেউ কেউ বিএনপির দলের আবার কেউ কেউ দলের বাইরে।
বিএনপির ভারত বিরোধী কর্মসূচির পাল্টা হিসেবে আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৪ দলকে আবার নতুন করে সাজানো এবং সক্রিয় করার জন্য দলটির সমন্বয়ক আমির হোসেন আমুকে নির্দেশ দিয়েছেন বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। আগামী ঈদের পরপরই ১৪ দলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাবে এবং দলটির ভিতর যে মান অভিমান, ক্ষোভ, হতাশা ইত্যাদি দূর করে দলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে কাজ শুরু করা হবে বলে একাধিক সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে নিশ্চিত করেছে।
জিএম কাদের এখন ঘরে বাইরে প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তার দলের ভরাডুবি হয়েছে। গত নির্বাচনের চেয়ে তিনি উল্লেখযোগ্য কম আসন পেয়েছেন। দলের ভিতরে তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জাতীয় পার্টি একটা বড় ধরণের ভাঙনের মুখে পড়েছে। রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির একটি বড় অংশ আলাদা জাতীয় পার্টি গঠন করছে। এত কিছুর পর দলের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা জিএম কাদের এখন একটা বড় সমস্যা। কিন্তু তারপরও জিএম কাদের তাদের সরকার বিরোধিতাকে আঁকড়ে ধরে থাকতে চাইছেন।
মুখে ভারত বন্দনা আর ভিতরে ভিতরে ভারত বিরোধিতাকে উস্কে দেওয়া- বিএনপির এই পুরনো কৌশল আবার নতুন করে চালু করতে যাচ্ছে। ভারতকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করেছে দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। বিএনপি গতকাল তাদের দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক করেছে। এই বৈঠকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে এবং এই আলোচনা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে, তা হল বিএনপি এখন ভারতকে চাপে রাখতে চায়।