নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৮
বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত দেশ পরিচালনার পর বিএনপি-জামাত জোট ক্ষমতা থেকে বিদায় নেয়। কিন্তু ক্ষমতায় থাকাকালীন হওয়া ভবনের দুর্নীতি, জঙ্গিবাদসহ সন্ত্রাস, বিভিন্ন কেলেঙ্কারি ও অনিয়মের জন্য এখনো সমালোচিত দলটি। দীর্ঘ এক যুগ পর আবারও ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছে বিএনপি। এবার অবশ্য দলটির নীতিনির্ধারকরা বলছে, তারা ক্ষমতায় এলে পরিবর্তিত রূপে আবির্ভূত হবে। পরিবর্তনের লক্ষ্যেই তাঁরা ড. কামাল হোসেন, কাদের সিদ্দিকী, আ. স. ম. আবদুর রবেকে নিয়ে ঐক্যফ্রন্ট গঠন করেছে। কিন্তু দলটি যে একেবারেই পাল্টায়নি তা আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের মনোনয়নে অনেকটাই স্পষ্ট। কেননা এবারের মনোনয়নে বিগত সময়ের সেই বিতর্কিত মানুষগুলোর উপরেই আস্থা রেখেছে তারা। বিগত ২০০১ থেকে ২০০৬ সময়কালীন এদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ ছিল। এমনকি এমন প্রার্থীদেরও দলটি মনোনয়ন দিয়েছে, যাদের বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদসহ যুদ্ধাপরাধের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিএনপি যদি আবার ক্ষমতায় আসে, তা ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারেই হোক কিংবা ২০ দলের ব্যানারেই হোক তাদের যে কোনো বদল হবে না তা ইতিমধ্যেই স্পষ্ট করেই জানান দিয়েছে দলটি। কেননা, ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত নিজেদের অপকর্মগুলোর জন্য এখনো পর্যন্ত জাতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কিংবা দুঃখ প্রকাশ করেনি বিএনপি। এই প্রেক্ষাপটে আমরা ধারণা করতে পারি, বিএনপি যদি এবার ক্ষমতায় আসে তবে রাজনৈতিক দুষ্টচক্ররা যাদেরকে ম্যাকিয়াভেলির ভাষায় ডেভিল বলা হয়, সে সব ডেভিলরা দেশে ফিরে আসবে। বিগত ২০০৬ সাল থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেছিল এরা। এইসব ডেভিলরা যে বিএনপির ক্ষমতায় আসার জন্য অপেক্ষা করছে তা স্পষ্ট। দলটি ক্ষমতায় আসলে আবার দেশে ফিরে আসবে তারা, কেননা মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষেত্রে এসব বিতর্কিত মানুষদের উপর আস্থা রেখেছে বিএনপি।
১.তারেক জিয়া : যে সকল দুষ্টচক্র দেশের রাজনীতিকে দূষিত-কলুষিত করেছিল এমনকি খোদ বিএনপিকেই বিতর্কিত করেছিল তাদের মধ্যে শীর্ষ স্থানে রয়েছেন তারেক জিয়া। এখনো দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তিনি। যদিও ২০০৭ এর সেপ্টেম্বরে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি আর না করার জানান দেন তিনি। এরপর চিকিৎসার অজুহাতে যুক্তরাজ্যে যান তিনি। অতঃপর বাংলাদেশের পাসপোর্ট জমা দিয়ে সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন তারেক জিয়া। অনেকেই মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে বিভাজনের বলিরেখা তৈরি হয়েছে, সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের লালন হয়েছে, প্রতিহিংসার চর্চা হয়ে থাকে তার উত্থান হয়েছে স্বয়ং তারেক জিয়ার হাতেই। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, বাংলা ভাইয়ের উত্থান, ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের সাহায্য প্রদানসহ নানা ধরনের অপতৎপরতার সঙ্গে জড়িয়ে আছে তারেকের নাম। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ মানি লন্ডারিং মামলায় সাত বছরের সাজায় দণ্ডিত তিনি। ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেড আসামিদের মধ্যে তারেক একজন। বিশ্বের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তারেকের সঙ্গে জঙ্গিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। এমনকি বিশ্বব্যাপী কালো টাকার লেনদেনেও সম্পৃক্ততা রয়েছে তার। ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র`-এর মতে, ভারতের শীর্ষ সন্ত্রাসী দাউদ ইব্রাহিমের সঙ্গে সম্পর্ক রয়েছে তারেকের। বিএনপি যদি এবার ক্ষমতায় আসে তবে সর্বপ্রথম বীরদর্পে যে ব্যক্তিটি দেশে ফিরে আসবেন তিনি আর কেউই নন স্বয়ং তারেক জিয়াই। রাজনীতিতে তারেক মানেই হাওয়া ভবন, কমিশন বাণিজ্য, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা। এমন একজন দুষ্টগ্রহ যদি বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবার ফিরে আসে তাহলে দেশের আপামর জনগণের ভবিষ্যৎ নিয়ে আতঙ্কিত অনেকেই।
২. হারিছ চৌধুরী : বিগত ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির বিরুদ্ধে যত অভিযোগ রয়েছে, সেই অভিযোগে তারেক জিয়ার যতটুকু অংশীদারিত্ব, ঠিক ততটুকুই অংশীদারিত্ব রয়েছে হারিছ চৌধুরীর। ঐ সময়কার বেগম জিয়ার রাজনৈতিক সচিবের দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। তারেক জিয়া ও বেগম জিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধন ছিলেন এই হারিছ চৌধুরী। হাওয়া ভবনের প্রতিনিধি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থান করতেন তিনি। তৎকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নিয়োগ বাণিজ্য, কমিশন বাণিজ্যসহ সকল অপকর্মের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হারিছ চৌধুরীর নাম। ১/১১ এর সময়কালীন দেশ থেকে পালিয়ে যান তিনি। কিন্তু এখনো তারেকের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে তাঁর। লন্ডন, আমেরিকা, ভারতে খন্ডকালীন অস্থায়ীভাবে অবস্থান করেন তিনি। হাজার হাজার কোটি টাকা আত্নসাতের অভিযোগ রয়েছে এই হারিছ চৌধুরীর বিরুদ্ধে। বিএনপি যদি ক্ষমতায় আসে তবে এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তের আবার অনুপ্রবেশ হবে বাংলাদেশে, আবার কলুষিত হবে দেশের রাজনীতি।
৩. ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক : জামাত নেতা ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একজন যুদ্ধাপরাধী। যখন যুদ্ধাপরাধী বিচার শুরু হয়, তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের প্রস্তুতিকালেই পালিয়ে লন্ডনে যান ব্যারিস্টার রাজ্জাক। এখনো পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধী হিসেবে হাতে গোনা দু’একজন বিচারের আওতার বাইরে আছেন তাদের মধ্যে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক একজন। অনেকেই বলে গোলাম আজমের দ্বিতীয় সংস্করণ হচ্ছেন আব্দুর রাজ্জাক। জামাতের অনেক শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ায় জামাতের মূল নেতা এখন তিনিই। সারাবিশ্বে বাংলাদেশ বিরোধী যত ষড়যন্ত্র ও চক্রান্ত হচ্ছে, তার নেতৃত্বই দিচ্ছেন এই আব্দুর রাজ্জাক। যেহেতু এবার জাতীয় নির্বাচনে জামাত ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার জন্য ২৫ টি আসন পেয়েছেন, সেহেতু বিএনপি ক্ষমতায় আসলে অবিসংবাদিতভাবেই দেশে ফিরে আসবেন তিনি। সেইসঙ্গে দেশে ফিরে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী সংগঠনকে আবার সংগঠিত করার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দেবেন ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক।
৪. মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ: বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ছিলেন কুমিল্লার এমপি, পাশাপাশি সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলাসহ সারা দেশে জঙ্গি নেটওয়ার্ক প্রসারে সম্পৃক্ত আছেন তিনি। বর্তমানে সৌদি আরবে পলাতক আছেন কায়কোবাদ। বিএনপি-জামাত এবার ক্ষমতায় আসলে দেশে ফিরে আসবেন এই জঙ্গি নেতা, শুরু করে দেবেন অতীতের সেই তাণ্ডব লীলা।
৫. সাদেক হোসেন খোকা : বিএনপি-জামাত ক্ষমতায় থাকাকালীন তিনি একাধারে ছিলেন ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পাশাপাশি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী। বিগত সময়ে একাধিক মামলায় দণ্ডিত হয়েছেন তিনি। সেইসঙ্গে খোকার বিরুদ্ধে রয়েছে হাজার কোটি টাকা দুর্নীতির অভিযোগ। বর্তমানে পলাতক অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন তিনি। এবার বিএনপি থেকে তার ছেলে ইশরাক হোসেনের মনোনয়ন পেয়েছেন। এই প্ররিপ্রেক্ষিতে বিএনপি-জামাত যদি ক্ষমতায় আসে, তবে সাদেক হোসেন খোকার দেশে ফেরা সময়ের ব্যাপার মাত্র। বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনীতিবিদদের মধ্যে খোকা অন্যতম। এই খোকা দেশে ফিরলে দেশের রাজনীতিতে আবার দুর্নীতির দুষ্টচক্রের প্রবাহ শুরু হবে তা নির্দ্বিধায় বলাই যায়।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।