নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৮
নির্বাচন বিষয়ে সব কিছুই পরিকল্পনা মাফিক এগুচ্ছিল। তারেক জিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০ দল রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করতে পেরেছিল বিএনপি। তারেকের পরিকল্পনা অনুযায়ীই ঐক্যফ্রন্ট থেকে অধ্যাপক বি চৌধুরীকে বাদ দেওয়া হয়। তারেকের পরিকল্পনা ছিল যে, জাতীয় পার্টির সঙ্গে আসন বন্টনের সময় একটা জট তৈরি হবে এবং সেই জটের কারণে জাতীয় পার্টির আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতোই একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি এমন একটা পরিবেশ তৈরি করতে চেয়েছিলেন যে আবারও ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মত একটা পরিবেশ সৃষ্টি হয়। তারেক জিয়া জানতেন যে এবার এমন একটা পরিবেশ সৃষ্টি হলে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না। তারেকের এমন পরকল্পনামাফিক সবকিছুই চলছিল। সেই কারণেই বিএনপি কোনো দাবি দাওয়া অর্জন না হওয়া সত্ত্বেও, নির্বাচনের কোনো রকম প্রস্তুতি ছাড়াই আচমকা নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল। আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে বিএনপি ৬৯৬ প্রার্থী দিয়ে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন। ৩০০ আসনের বিপরীতে ৬৯৬ জন প্রার্থী দিয়ে বিএনপি বুঝিয়ে দিয়েছিল যে, নির্বাচন করা তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। বরং অন্য একটা পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচন বন্ধের পরিবেশ সৃষ্টি করা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারেক রহমান অঢেল টাকাও ঢেলেছিলেন এমন খবরও পাওয়া যায়। ড. কামাল হোসেন বলেছিলেন, তিনি জামাতের সঙ্গে কোনো ঐক্য করবেন না। সেই জামাতকে বিএনপি যখন ২৫ টি আসন বরাদ্দ করেন তখনো মুখে কুলুপ এঁটেছিলেন ড. কামাল হোসেন। এইসব কিছুই হয়েছে আর্থিক লেনদেনের কারণে। কিন্তু তারেক জিয়া একজনকেই ম্যানেজ করতে পারেন নাই, আর তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার কাছে তারেক রহমান আরেকবার পরাস্ত হলেন। তারেক রহমানের পরিকল্পনা জানতো বলেই আওয়ামী লীগ মহাজোটের আসন বণ্টন চূড়ান্ত করেনি। এই কারণেই আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে আলাদাভাবে মনোনয়ন জমা দিতে বলেছে, যুক্তফ্রন্ট ও ইসলামী আন্দোলনকে আলাদাভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিতে বলেছে। যার ফলে এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, বিএনপি, ২০ দল এবং ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নাও করেন, তারপরেও প্রতিটি আসনে গড়ে চারজন করে প্রার্থী থাকবে। সুতরাং একতরফা নির্বাচনের আর কোনো সম্ভাবনা নাই। আন্তর্জাতিক মহলও এটাই বলেছে যে, কারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে, কারা অংশগ্রহণ করছে না, সেটা মুখ্য বিষয় নয়। বরং তারা একটা প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেখতে চায়। যে নির্বাচনে সবাই স্বাধীনভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। যার ফলে বিএনপির পরিকল্পনা এখন হোঁচট খেয়েছে।
বিএনপি দ্বিতীয় পরিকল্পনা ছিল, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ২০১৪ সালে এরশাদ যেমন নানা রকম নাটক করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছিল, জাতীয় পার্টিকে দিয়ে সেই একই রকম নাটক সাজানো। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার সঙ্গে সিঙ্গাপুরে তারেক রহমানের লোকজন একাধিকার বৈঠক করে। এইসব বৈঠকে বিভিন্ন প্রলোভন এবং আর্থিক সুবিধা দিয়ে জাতীয় পার্টিকেও ম্যানেজ করে ফেলেছিলেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের এই পরিকল্পনাও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শিতার কাছে পরাস্ত হয়। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের ভূমিকা নিয়ে যখন প্রশ্ন দেখা যায় এবং জাতীয় পার্টিতে তাঁদের সিদ্ধান্ত বিতর্কিত হয়ে ওঠে, তখন দলের মহাসচিব পদে পরিবর্তন করা হয়। মশিউর রহমান রাঙ্গাকে জাতীয় পার্টির মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কার্যত এরশাদ দলের মধ্যে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়েছেন। বর্তমানে রওশন এরশাদ দল পরিচালনা করছেন। কাজেই জাতীয় পার্টি ২০১৪ সালের মত নির্বাচন থেকে একতরফা ভাবে সরে দাঁড়াতে পারবে না।
তারেক রহমানের তৃতীয় পরিকল্পনা ছিল যে, দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে নির্বাচন বিষয়ে নানা রকম অসত্য, মিথ্যা, মনগড়া প্রতিবেদন প্রকাশ করে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করা। এরই ধারাবাহিকতায় দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি দৈনিকে হাউজ অব কমনসের একটি প্রস্তাব নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। পরবর্তীতে দেখা যায় হাউজ অব কমনস এমন কোনো প্রতিবেদন তৈরি করে নাই। উপরন্তু মার্কিন কংগ্রেসে জামাত এবং ইসলামী দলগুলোর বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে জনগণের ভোটের লড়াইয়ের আগেই, একটা রাজনৈতিক কৌশলের লড়াই হয়েছে। যে কৌশলের লড়াইয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে একটা পক্ষ ছিল, যারা চেয়েছিল দেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হোক। যে নির্বাচনে জনগণের মতামত প্রতিফলিত হবে। আরেকটা পক্ষ ছিল দেশে এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করা, যেই পরিস্থিতি নির্বাচন বানচাল করা যায়। এই পরিকল্পনাকারীদের নেতা ছিলেন তারেক রহমান। তারেক রহমানের সঙ্গে একাত্ম হয়ে ড. কামাল হোসেন, ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, আ স ম আব্দুর রব, মাহমুদুর রহমান মান্না কাজ করছিলেন। কিন্তু এখন পুরো ঘটনাটিই বুমেরাং হয়ে গেছে। এখন বিএনপি, জামাত অথবা ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচন বর্জনও করে, তারপরেও নিবন্ধিত ৩৯ টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে ৩০টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে বলে নিশ্চিত তথ্য পাওয়া গেছে। ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কৌশলের কাছে আরও একবার পরাজিত হলেন তারেক।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।