নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০২ পিএম, ০৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে যেন অচেনা মাঠে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। হোম গ্রাউন্ডের অ্যাডভান্টেজ হারাল দশ বছর ক্ষমতায় থাকা দলটি। যাদের দুধে ভাতে পুষেছেন তাঁরাই প্রতিপক্ষ হয়ে উঠল। ১৩২টি আসনে জাতীয় পার্টি আলাদা প্রার্থী দিয়েছে, জাসদ (ইনু) দিয়েছে ৪ টিতে আর ২৭ জন আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। আওয়ামী লীগের নেতারাই স্বীকার করছেন, নির্বাচনে এক কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি তাঁরা। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যেভাবে তাঁরা নির্বাচন চেয়েছিলেন, সেভাবে ঘটনা এগুচ্ছে না। পরিস্থিতি ক্রমেই তাঁদের ‘নাগালের বাইরে’ চলে যাচ্ছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক ঘটনা আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাচ্ছে। যেমন:
১. আওয়ামী লীগ আশা করছিল যে, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হলে শেষ পর্যন্ত ২০ দল থাকবে না। জামাত বিএনপি থেকে আলাদা হয়ে যাবে। কিন্তু জামাত- আর বিএনপি যেন তামাক আর ফিল্টার। তারা শেষ পর্যন্ত অটুট থাকলো।
২. আওয়ামী লীগ চেয়েছিল, বিএনপিতে মনোনয়ন নিয়ে, নির্বাচন করা না করা নিয়ে বিভক্তি ছড়িয়ে পড়বে। আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরিকরা বিভক্ত হয়ে পড়বে। কিন্তু মনোনয়ন নিয়ে বিএনপিতে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু বিভক্তি হয়নি। যেমনটি আওয়ামী লীগ আশা করেছিল।
৩. আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, একই আসনে বিএনপির একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন দেওয়া নিয়ে বিএনপিতে লেজে গোবরে পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে। কিন্তু এটা যে বিএনপির বিদ্রোহ দমনের কৌশল ছিল, তা পরে বুঝতে পারে আওয়ামী লীগ।
৪. মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর আওয়ামী লীগ ধারণা করেছিল বিএনপির অনেক হেভিওয়েট প্রার্থী হয়তো মনোনয়ন বঞ্চিত হবেন। তাদের প্রার্থিতা বাতিল হবে। অনেক আসনে হয়তো বিএনপি প্রার্থীই পাবে না। কিন্তু আপিলে দেখা গেল বিএনপির উল্লাস। বিএনপির কাঙ্ক্ষিতরা ঠিকই আপিলে উতরে গেলো।
৫. আওয়ামী লীগের স্থির বিশ্বাস ছিল, এরশাদ শেষ পর্যন্ত বিশ্বাসঘাতকতা করবেন না। মহাজোট অটুট থাকবে। গত দশ বছরে কী পান নি এরশাদ, জাতীয় পার্টির নেতারা? প্রধানমন্ত্রীর ‘বিশেষ দূত’ হঠাৎ যমদূত হিসেবে আওয়ামী লীগের সামনে উপস্থিত হয়েছেন। এরশাদ আজ রোববার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনে, এত আপ্যায়ন আদর ভুলে ১৩২ আসনে একক ভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিলো। এটা সম্ভবত গত ১০ বছরে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় ধাক্কার একটি।
৬. শুধু এরশাদ নয়, আওয়ামী লীগের চেয়েও বেশি আওয়ামী লীগ হয়ে ওঠা হাসানুল হক ইনুও ৪ আসনে মশাল জ্বালিয়ে দিলেন। কোনো গবেষণা ছাড়াই বলা যায়, জেতার জন্য নয়, আওয়ামী লীগকে চাপে ফেলতেই ইনুর এই পদক্ষেপ। প্রশ্ন উঠেছে আওয়ামী লীগে, তাহলে ইনুও?
এভাবেই চেনা মাঠ, চেনা মানুষ অচেনা হয়ে যাচ্ছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা কেউ কেউ বলছেন, অপেক্ষা করুন, আরও অনেকের রংবদল হয়ে যাবে। রংবদলের এই খেলায় একটু কি বিব্রত আওয়ামী লীগ?
বাংলা ইনসাইডার/জেডএ
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।