নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮
আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে যে দলগুলো সবচেয়ে বেশি আওয়াজ তুলেছিল তার মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্যতম। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, এবার তিনি ৩০০ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, একবার বলেছিলেন মহাজোটের সঙ্গে থাকবেন, এও বলেছিলেন ইসলামী দলগুলো নিয়ে একটি বৃহত্তর ঐক্য গঠন করবেন। এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রথম যে দলগুলো মনোনয়ন নিয়ে কাজ শুরু করেছিল তার মধ্যে জাতীয় পার্টি অন্যতম। সর্বপ্রথম বিভিন্ন আসনে প্রার্থিতা ঘোষণা করেছিল দলটি। কিন্তু নির্বাচনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পরই দেখা যায় নির্বাচনের মাঠে জাতীয় পার্টি এতিম। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে মহাজোট থেকে ২৭ টি আসন ছাড়াও বিভিন্ন আসনে এককভাবে ১৩২ টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে দলটি। কিন্তু নির্বাচনের মাঠে জাতীয় পার্টির কোন উপস্থিতিই চোখে পড়েনি। আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টির মহাজোটের প্রার্থীদের পাশাপাশিও যারা এবার এককভাবে নির্বাচন করছে তারা প্রত্যেকেই লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। নির্বাচনের মাঠে ইতিমধ্যেই নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রচারণা শোনা গেলেও লাঙ্গল প্রতীকের এখনও কোন আওয়াজ নেই। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদ অসুস্থতার অজুহাতে সিঙ্গাপুরে চলে গেছেন। কিন্তু যাওয়ার পূর্বে দলের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে কোন নির্দেশনাই দিয়ে যাননি তিনি। জাতীয় পার্টির সদ্য বিদায়ী মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বর্তমানে কোথায় আছেন তা দলের কোন নেতাই জানেন না। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদ একরকম গৃহবন্দি অবস্থায় আছেন। নির্বাচনী প্রচারণায় তার কোন কার্যক্রম এখনও পর্যন্ত চোখে পড়েনি। দলের আর এক কো-চেয়ারম্যান জি এম কাদেরও নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছেন। এ অবস্থায় জাতীয় পার্টি যেন একটি এতিম সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আসন্ন নির্বাচনে তারা কি করবে তা এখন দেখার বিষয়।
২০০৮ এর নির্বাচনে জাতীয় পার্টি আসন লাভের পাশাপাশি শতকরা ভোটের হার বিবেচনায় তৃতীয় অবস্থানে ছিল। ২০১৪ সালের নির্বাচনে অসম্পূর্ণ নির্বাচনে জাতীয় পার্টি দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আত্নপ্রকাশ করেছিল। এবার অবশ্য দলটি ঘোষণা দিয়েছিল একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে সব আসনে প্রার্থী দিয়ে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্নপ্রকাশের। হয় ক্ষমতার ভাগীদার হবে নতুবা বিএনপির থেকেও বেশি আসন পেয়ে বিরোধী দল হিসেবে আত্নপ্রকাশ করবে তারা। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, ততোই যেন হতাশা ছড়িয়ে যাচ্ছে দলটির নেতা-কর্মীদের মাঝে। কেন তাদের এ অবস্থা তা বিশ্লেষণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যে কারণগুলো খুঁজে পেয়েছেন সেগুলো হচ্ছে:
১. আদর্শিক অস্থিরতা : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে নিয়ে জাতীয় পার্টির মধ্যে একটি আদর্শিক অস্থিরতা ছিল। এদিক-ওদিক কোনদিকে যাবে তা নিয়ে দলের প্রধান নেতা একটি দোদুল্যমান অবস্থায় ছিলেন। কোন আদর্শ থেকে নয় বরং কিসে লাভ-লোকসান হবে এ নিয়ে দ্বিধা-দন্ধে ছিলেন তিনি। যে কারণে শুরু থেকেই জাতীয় পার্টির অবস্থান স্পষ্ট ছিল না। ফলশ্রুতিতে নির্বাচনের মাঠে অসহায় তারা।
২. হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভূমিকা : জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ নিজেই একজন বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। নির্বাচন এলেই তাঁর নানারকম অস্থিরতা চোখে পড়ে। এই অস্থিরতার জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে শুধুমাত্র দেশের জনগণের কাছেই নন, এমনকি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের কাছেও বিতর্কিত হয়েছেন। নির্বাচনের আগ মুহূর্তে দলের চেয়ারম্যানের এমন নিষ্ক্রিয়তা এবং হঠাৎ এভাবে সিঙ্গাপুরে গমনে দলের মনোনীত প্রার্থীরা যারপরনাই হতাশ হয়েছেন।
৩. মনোনয়ন বাণিজ্য: কথিত আছে যে জাতীয় পার্টিতে বিপুল পরিমানে মনোনয়ন বাণিজ্য হয়েছে। শীর্ষ অনেক নেতাই এই মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। যার ফলে যখন তারা আসন ভাগাভাগি করে, তখন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য যাদের আর্থিকভাবে লাভবান করেছেন। তারা এখন শীর্ষ নেতাদের খুঁজছেন ও টাকা ফেরত চাইছেন। যার ফলে শীর্ষ নেতারা মোটামুটি সবাই গা ঢাকা দিয়েছেন। অনেকের কথাই তারা রাখতে পারেননি। ফলশ্রুতিতে ঐ শীর্ষ নেতারা এখন নির্বাচনের বাইরে অবস্থান করছেন।
৪. জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা হ্রাস: গত কয়েকটা স্থানীয় সরকার নির্বোচনে জাতীয় পার্টির জনপ্রিয়তা সাংঘাতিকভাবে নিম্নগামী। বিশেষ করে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দেখা গেছে জাতীয় পার্টি হতাশজনকভাবে ভোট পেয়েছে। এ কারণেই গত পাঁচ বছরে বিরোধী দল হওয়া সত্ত্বেও সরকারের সকল সুযোগ সুবিধা নেওয়াকে জনগন পছন্দ করেনি। যার ফলে জাতীয় পার্টি থেকে জনগণ মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। গৃহপালিত বিরোধী দল হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে।
মনে করা হয়, এ সমস্ত কারণে জাতীয় পার্টিতে যারা প্রার্থী হয়েছেন তারা হতাশ এবং নির্বাচনে হারার ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না তারা। অপেক্ষায় আছেন এবং দেখতে চাচ্ছেন শেষ পর্যন্ত কি হয়।
বাংলা ইনসাইডার/বিকে
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।