নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮
ডিসেম্বর মাস বাঙালির জাতীর আবেগ এবং বিজয়ের মাস। দুইদিন পরেই শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস। বাঙালি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান এইসব শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে জামাতকে অভিযুক্ত করা হয়। সেই ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে জামাত শক্তিশালী দল হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে জামাত দেশের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাত ২২টি আসনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করার ফলে জামাত আরও বাড়তি সুবিধা পাবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
এবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে লাভবান যে দল, তার নাম হচ্ছে জামাতে ইসলাম। দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবে জামাতের অস্তিত্ব সংকটে পরেছে। জামাতের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড পেয়েছে। জামাতের একজন শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধের দায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রাপ্ত হয়ে কারাগারে আছেন। জামাতের আরেকজন শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধের মামলা এড়াতে পালিয়ে লন্ডনে অবস্থান করছেন। জামাতের এই নেতার নাম হচ্ছে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক। শীর্ষ নেতৃত্ববিহীন এমন ক্ষত-বিক্ষত হয়েও জামাত এখন সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে। জামাত নেতারা এখন প্রকাশ্যে বলছেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামাত ন্যুনতম ১৫টি আসনে জয়লাভ করবেন।
নিবন্ধন না থাকায় বিএনপি জামাত ইসলামকে আশ্রয় দিয়েছে। বিএনপি শুধু জামাতকে আশ্রয়ই দেয়নি, ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করতে দিয়েছে ২২টি আসন ছেড়ে দিয়েছে। দেখা যাচ্ছে কোন নির্বাচনেই জামাত এতগুলো আসনে জয়ী হতে পারেনি। কিন্তু তারপরেও জামাতের প্রতি বিএনপির যে বদান্যতা, সে বদ্যানতার কারণে বিএনপি জামাতের সম্পর্ক আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এবারের নির্বাচনে মাধ্যমে। জামাতের একাধিক নেতা বলছে ধানের শীষ প্রতীক নেবার কারণে জামাতের লাভই হয়েছে, কারণ দাঁড়িপাল্লা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করলে জামাতকে অনেকে ভোট দিত না। জামাতের বিষয়ে অনেকের আপত্তি ছিল। কিন্তু ধানের শীষ প্রতীক নেবার কারণে বিএনপির ভোটারদের জামাতকে সহজেই ভোট দিতে হচ্ছে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবারের নির্বাচনে একটা বিস্ময়কর বিষয় দেখা যাছে যে, জামাত নামের যে রাজনৈতিক দলটি নিঃশেষ হয়ে যাবার কথা, সেই রাজনৈতিক দল কিভাবে নির্বাচনে তৃতীয় বা চতুর্থ রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে, সেটাই এখন রাজনীতিতে একটি রহস্যময় প্রশ্ন।
দেখা যাছে এবারের নির্বাচনের মাঠে জামাত অনেক সক্রিয়। নির্বাচনের শুরুর দিক থেকেই জামাতকে তাঁদের নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে। জামাতকে নিয়ে অনেকে আশঙ্কা করেছিল দলটি অচিরেই বিলীন হয়ে যাবে। সেই জামাত যেভাবে শক্তিশালী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে এবারের নির্বাচনে জামাতের তৃতীয় বৃহত্তম রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশেরও একটা সম্ভাবনা রয়েছে। কিভাবে জামাতের এমন উত্থান ঘটলো সে সম্বন্ধে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মহল বেশ কিছু বিষয়ের উল্লেখ করছেন। বিষয়গুলো হল:
১. বিএনপির বদান্যতা: জামাতের উপর দিয়ে যে এত ঝড় গেছে, তাদের শীর্ষ নেতারা যুদ্ধাপরাধের দায়ে দণ্ডিত হয়েছে তারপরও বিএনপি জামাতকে ত্যাগ করেনি। জাতীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে বিএনপি জামাতের সঙ্গে গাঁটছড়া বাধার কারণে সমালোচিত হয়েছে। অনেকেই বিএনপিকে জামাতের সঙ্গ ত্যাগ করার কথা বলেছে। কিন্তু বিএনপি সকল সমালোচনা উপেক্ষা করে জামাতকে আগলে রেখেছে। যার ফলে জামাত আজ নির্বাচন করতে পারছে এবং তাদের পুনরুজ্জীবনের একটা সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
২. সেক্যুলার রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা: দেশের বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো যতটা আওয়ামী লীগের সমালোচনা করেছে, ততটা জামাত এবং যুদ্ধাপরাধীদের সমালোচনা করেনি। জামাতের রাজনীতি নিয়ে তাঁরা কোন সুস্পষ্ট বক্তব্য রাখেনি। বরং তাঁরা সরকারের বিরুদ্ধে গালভরা বক্তব্য দিয়েই রাজনীতির মাঠ উত্তপ্ত করেছে। যার ফলে জামাত আড়ালে থেকে সংগঠন গুছিয়েছে। তাদের যে সমস্ত কর্মীরা বাইরে ছিল তাদের একাট্টা করেছে। নির্বাচনের মাঠে জামাত এখন বামদের চেয়েও যে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে তা আজ স্পষ্ট বোঝা যায়।
৩. জামাতের দৃঢ় সাংগঠনিক ভিত্তি: এটা প্রমাণিত সত্য যে যেকোনো রাজনৈতিক দল যদি জামাতের মত অবস্থায় পড়ত তাহলে সে সংগঠনটির অস্তিত্ব থাকতো কিনা সন্দেহ। জামাতের প্রথম সারির শীর্ষ নেতারা কারাভোগ করছেন অথবা যুদ্ধাপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। তারপরেও সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখাই হলো একটি ক্যাডারভিত্তিক সংগঠনের মূল বৈশিষ্ট্য। তাদের ভুল আদর্শকে লালন করে তাদের ক্যাডাররা সব কিছু উপেক্ষা করে সংগঠনকে টিকিয়ে রেখেছে।
৪. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: জামাত সবসময়ই একটি দক্ষিনপন্থী ইসলামী রাজনৈতিক দল। পাকিস্তান জামাতকে প্রকাশ্যে সমর্থন করে। জামাতের যুদ্ধাপরাধীদের যখন ফাঁসি দেওয়া হয়েছিল, তখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টে এর বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব আনা হয়েছিল। জামাতকে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন এবং পাকিস্তান প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ আর্থিক সাহায্য ছাড়াও অন্যান্য সহায়তা দিয়েছে। একারণে জামাতের অস্তিত্ব টিকে আছে বলে অনেকে মনে করেন।
৫. রাজনৈতিক ব্যর্থতা: জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যখন গঠিত হয় তখন ঐক্যফ্রন্টের সবগুলো দলই বলেছিল যে, জামাতকে আমরা জোটে নেবো না। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভোটের হিসেবে আদর্শ জলাঞ্জলি দেওয়ার যে সংস্কৃতি তাঁর উদাহরণ হলো জামাতকে নিয়ে ড. কামাল, আ স ম আব্দুর রব এবং সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের মত নেতাদের নির্বাচন করা। রাজনীতিতে যেকোনো মূল্যে জয়ী হতে হবে এবং এখানে আদর্শ বা নৈতিকতা যে মূল্যহীন সেটাই এবারের নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এবং বিএনপির ঐক্যের মধ্যদিয়ে প্রমাণিত হয়েছে। যখন রাজনীতি থেকে আদর্শ বিবর্জিত হয় তখন জামাতের মত ধর্মান্ধ, মৌলবাদী এবং সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলোর উত্থান ঘটবে এটাই স্বাভাবিক।
বাংলা ইনসাইডার/আরকে
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক
লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল আজ শুক্রবার।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষক লীগের ৫২ বছর পূর্তি
উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষক নেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে
কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে
সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক
লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম
স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ
সমীর চন্দ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি বলেছেন, দেশের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার
জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক
লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায়
এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং দলীয়
পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির ৩২ পর্যন্ত শোভাযাত্রা।
সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
উপজেলা নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।