নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭:৫৯ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর, ২০১৮
প্রশ্ন হচ্ছে; লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড আসলে কী! উত্তরটা রাজনীতির ভাষায় বললে, রাজনীতিবিদদের কাছে যা নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ। কথা হলো, যারা জনগণের রায় নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন তারা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (খেলার সমতল মাঠ) পেলেও তাকে অসমতল ভূমি বলবেন এটা খুব স্বাভাবিক। যে কারণে, তারা নির্বাচন এলে আগে চায় সরকার পতন। বা সরকারের পদত্যাগ। সাতচল্লিশ বছর বয়সী বাংলাদেশকে এখনও খুঁজতে হয় নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটা নির্দলীয় সরকার! অথচ এই দেশটার জন্মই হয়েছে গণতেন্ত্রর জন্য।
নির্বাচনের গরমে অন্যতম আলোচিত শব্দ ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’। বর্তমানে এই শব্দের সবচেয়ে বেশি চর্চা করছে ঐক্যফ্রন্ট, ইসি ও সিইসি। নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বললেন, ‘আমি মনে করি না নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বলে কিছু আছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড কথাটা এখন অর্থহীন কথায় পর্যবসিত হয়েছে।’ এমন কথা বিএনপিও প্রতিনিয়ত বলে আসছে।
সিইসি নূরুল হুদা জবাব দিলেন, ‘বার বার একটা কথা হয় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। এটার ডেফিনিশন কি? এবারে সাড়ে তিন হাজারের বেশি প্রার্থী আবেদন করেছেন। বিরোধী বা সরকার দলে যারা আছেন, তারা মিছিল-মিটিং করেন, সভা করেন, মাইক ব্যবহার করেন, পোস্টার ছাপান, বিতরণ করেন। কত জায়গায় বাধার খবর এসেছে? তাই যদি না হয়, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই তা বলার অবকাশ নেই। কোথায় কিসের ফিল্ড নেই আমি বুঝি না।’
নুরুল হুদার কথা ফেলে দেয়া যায়না। এবারের নির্বাচনে রেকর্ড সংখ্যক তিন হাজার ৬০০ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আবেদন করেছেন। যাচাই-বাছাইয়ের পর এখন ১ হাজার ৮৪৬ জন প্রার্থী নির্বাচনের মাঠে আছেন। তার মানে প্রতিটি কেন্দ্রে গড়ে ছয়জন করে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মানে কী?
লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের সংজ্ঞা কী? এ কথা বারবার বলা হয় কেন, লেভেল প্লেয়িং ঠিক নেই? কোথায় লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নাই, কিসের ফিল্ড ঠিক নেই? মাহাবুব তালুকদার প্রায় প্রায়ই এমন অভিযোগ করে নির্বাচন কমিশনের বৈঠক বর্জন করেছেন। একজন কমিশনারের সাথে অন্য কমিশনারদের মতপার্থক্য এখন প্রকাশ্যে আসছে। ভোটের আগে এটাই কী চাওয়া ছিল বিএনপির? সেটাই কী হচ্ছে?
নির্বাচনী পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নির্বাচনের অল্প সময় আগে নির্বাচন কমিশনের অভ্যন্তরীণ এ ধরণের পরিস্থিতি তাদের প্রতি আস্থার অভাব আরও বাড়াবে।
বিএনপির সঙ্গে মাহাবুব তালুকদার সুর মিলিয়ে যা করছেন, তাতে ক্রমশই নির্বাচনকে অস্থিতিশীল করে তুলছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নির্বাচন নিয়ে মাহাবুব তালুকদারের অভিযোগের শেষ নেই। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য গত বছর পাঁচ সদস্যের একটি সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। কমিটি গঠনের জন্য তখন নির্বাচন কমিশনার হিসেবে বিবেচনার জন্য প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে নাম চাওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে রাজশাহীর অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানমকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়, জাসদের তালিকা থেকে নিয়োগ দেওয়া হয় নুরুল হুদাকে। নুরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবেও নিযুক্ত করেন রাষ্ট্রপতি। একই প্রক্রিয়ায় বিএনপির তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনোনীত হন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার। কিন্তু যে দলের তালিকা থেকেই নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেওয়া হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনারের একটি বাধ্যতামূলক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে তাঁকে নিরপেক্ষ থাকতে হবে। কিন্তু মাহবুব তালুকদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি বিএনপির পক্ষ হয়ে কাজ করেন।
১১তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে বর্তমানে দেশে এক উৎসবমুখর পরিস্থিতি থাকলেও উৎকন্ঠাও কম নয়। বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থাকবে কিনা তা নিয়েও রয়েছে সংশয়। এমতাবস্থায়, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার স্বয়ং নির্বাচন কমিশন-কেই প্রশ্নবিদ্ধ করে জাতীয় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছেন কিনা জনমনে সংশয় সৃষ্টি করছে বলে অভিমত দেন অনেকই। এ প্রসংগে একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন,‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ প্রশ্নে নির্বাচন কমিশনের বিরোধ বিএনপি’র নির্বাচন বর্জনের ধারণাকে উস্কে দিতে পারে’।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বিএনপি বিদ্রোহ উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
ঢাকার বনানীর বাসায় ফেরার পথে গাড়িচালক
আনসার আলীসহ ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল নিখোঁজ হন বিএনপির তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট
জেলা বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। এক যুগ পার হলেও ইলিয়াস আলী জীবিত না মৃত সে খবর
কেউ দিতে পারেনি দীর্ঘ এই সময়ে।
তবে সিলেটের বিএনপি নেতারা মনে করেন,
ইলিয়াস সরকারের হেফাজতে অক্ষতই আছেন। তাকে ফিরে পেতে কেবল সরকারের সদিচ্ছার প্রয়োজন।
নিখোঁজের ১২ বছর পূর্তিতে তাকে ফিরে পেতে গতকাল নানা কর্মসূচি পালন করেছে সিলেট বিএনপি
ও অঙ্গ সংগঠন। ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’র পর সিলেটে গঠন করা হয় ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম
পরিষদ’। এ বছর ‘ইলিয়াস মুক্তি সংগ্রাম পরিষদ’র কোনো কর্মসূচি না থাকলেও সমাবেশ, স্মারকলিপি
প্রদান এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিল করেছে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠন। এক যুগেও ইলিয়াসের সন্ধান
না মিললেও হাল ছাড়েননি বিএনপি নেতারা।
তাদের ধারণা, ইলিয়াস আলী এখনো জীবিত
আছেন। ইলিয়াসের অবস্থান সম্পর্কে সরকার জ্ঞাত আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে ইলিয়াস
আলীর সন্ধান মিলছে না। ইলিয়াস আলী নিখোঁজের এক যুগপূর্তির দিন গতকাল জেলা প্রশাসকের
মাধ্যমে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে সিলেট বিএনপি। এ ছাড়া বাদ আসর জেলা
বিএনপির উদ্যোগে হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাহ মসজিদে ইলিয়াস আলীর সন্ধান কামনায় দোয়া
ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এ ছাড়া ইলিয়াসকে ফিরে পেতে বাদ জোহর একই মসজিদে দোয়া ও
মিলাদের আয়োজন করে জেলা স্বেচ্ছাসেবক দল। স্মারকলিপি প্রদানের আগে গতকাল দুপুরে জেলা
প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে বিএনপি।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, দীর্ঘ ১২ বছর
ধরে ইলিয়াস আলী ফেরার অপেক্ষায় আছেন সিলেটবাসী। ইলিয়াসের জনপ্রিয়তায় আতঙ্কিত হয়ে সরকার
তাকে গুম করেছে।
ইলিয়াস নিখোঁজ প্রসঙ্গে জেলা বিএনপির
সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন বলেন, ইলিয়াস আলীর সন্ধান পেতে তার সহধর্মিণী
হাই কোর্টে রিট করেছিলেন। কিন্তু সরকারের অদৃশ্য হস্তক্ষেপে এক যুগেও সেই রিটের শুনানি
হয়নি। এতে প্রমাণিত হয় ইলিয়াস নিখোঁজের পেছনে সরকার জড়িত।
মন্তব্য করুন
খন্দকার মোশাররফ হোসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মন্তব্য করুন