নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ এএম, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮
দেশের উত্তরের দুই জেলা রাজশাহী ও নাটোরে নির্বাচনী আসন রয়েছে ১০টি। রাজশাহী জেলার হালনাগাদ ভোটার সংখ্যা ১৯ লাখ ৪২ হাজার ৩৫০। এদের মধ্যে নারী ৯ লাখ ৭৪ হাজার ৭৫৭ এবং পুরুষ ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৩। অন্যদিকে নাটোরে মোট ভোটার ১৩ লাখ ৩ হাজার ৭৩১। এর মধ্যে নারী ভোটার ৬ লাখ ৫৩ হাজার ৩৪৩। আর পুরুষ ভোটার ৬ লাখ ৫০ হাজার ৩৮৮। এই আসনগুলোর রাজনৈতিক ঘটনাপ্রবাহ এবং অতীত নির্বাচনের ফলাফলসহ বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা করে বাংলা ইনসাইডার প্রেডিক্ট করছে, এখানে নৌকা ৪টি এবং ধানের শীষ ৬টি আসন পাবে।
রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলা)
রাজশাহী-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ওমর ফারুক চৌধুরী। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আমিনুল হক। এই এলাকায় আওয়ামী লীগের মধ্যে অন্তঃকলহ প্রকট। ‘সেভেন স্টার’ নামে পরিচিত গোদাগাড়ী ও তানোরের ৭ আওয়ামী লীগ নেতা মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছিলেন। তারা একযোগে ফারুক চৌধুরীর বিরোধিতাও করেছিলেন। এখন প্রকাশ্যে তারা ফারুকের প্রচারণায় অংশ নিলেও গোপনে তাঁর বিরোধিতা করছেন বলে জানা যায়। অন্যদিকে আমিনুল হক এই এলাকার প্রভাবশালী নেতা। ১৯৯১ থেকে ২০০১ পর্যন্ত টানা তিন মেয়াদে তিনি এখানকার সাংসদ নির্বাচিত হন। গোদাগাড়ী ও তানোর উপজেলায় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। একারণে এই আসনে ধানের শীষ জিতবে বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
রাজশাহী-২ (রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন এলাকা)
এই আসনে বিএনপির মিজানুর রহমান মিনুর বিরুদ্ধে লড়ছেন ওয়ার্কার্স পার্টির ফজলে হাসান বাদশা। ফজলে হাসান বাদশা এই আসনের বর্তমান সাংসদ। ২০০৮ এর নির্বাচনেও তিনি এখান থেকে জয় পেয়েছিলেন। তবে এবার এই আসনে ধানের শীষ জয় পাবে বলে মনে করছে বাংলা ইনসাইডার। কারণ মিনু এই এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। ২০০১ সালে তিনি এই আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। ওয়ান ইলেভেনের মাধ্যমে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর তাকে কারাগারেও যেতে হয়েছে। বিগত ১০ বছরে তিনি নানাভাবে হয়রানির শিকার হয়েছেন। এটা তাঁর প্রতি মানুষের সহানুভূতি এবং সমর্থন আরও বাড়িয়েছে।
রাজশাহী-৩ (পবা ও মোহনপুর উপজেলা)
এখানে আওয়ামী লীগের আয়েন উদ্দিনের মুখোমুখি হয়েছেন বিএনপির শফিকুল হক মিলন। এই এলাকায় বিএনপির সমর্থন বেশি। তাছাড়া এখানে বিএনপির নেতা কর্মীদের নানাভাবে নির্যাতন নিপীড়নের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। এটা ধানের শীষের পক্ষে ভোট টানতে সাহায্য করবে। অন্যদিকে আয়েন উদ্দিন এই আসনের বর্তমান সাংসদ। মাত্র এক মেয়াদ ক্ষমতায় থেকেই তিনি নানা বিতর্কে জড়িয়েছেন। এসব কারণে আমরা মনে করছি এখানে ধানের শীষ জয় পাবে।
রাজশাহী-৪ (বাঘমারা উপজেলা)
এই আসনের মূল দুই প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের এনামুল হক এবং বিএনপির আবু হেনা। সাবেক সচিব আবু হেনা ১৯৯৬ ও ২০০১ পরপর দুই মেয়াদে এই আসনের সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন। অন্যদিকে এনামুল হকও গত দুই মেয়াদ ধরে এই আসনের সাংসদ। এই আসনে আওয়ামী লীগ বিএনপি দুই দলেই বিভক্তি রয়েছে বলে জানা যায়। তবে নির্বাচনকে সামনে জয়ের জন্য বিএনপি অনেকটাই একতাবদ্ধ। তবে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে বিবাদ মিটিয়ে ফেলার কথা বললেও গোপনে নেতারা একে অপরের বিরোধিতা করছেন বলে শোনা যাচ্ছে। এসব কারণে এখানে ধানের শীষ জয় পাবে বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা)
এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনসুর রহমান। অন্যদিকে ধানের শীষ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন নাদিম মোস্তফা। মনসুর রহমান একেবারেই নতুন প্রার্থী। অন্যদিকে নাদিম মোস্তফা ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে পরপর দুই মেয়াদে এলাকার সাংসদ নির্বাচিত হন। এই এলাকায় তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয়। বিএনপিও এখানে শক্তিশালী। একারণে ধানের শীষ এই আসনে জিতবে বলে মনে করছি আমরা।
রাজশাহী-৬ (চারঘাট ও বাঘা উপজেলা)
এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। তিনি এই আসনের গত দুই মেয়াদের সাংসদ। তরুণ এই নেতা নিজ এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং প্রভাবশালী। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন আবু সাইদ চাঁদ। তবে উচ্চ আদালতের আদেশে তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। এখানে জাতীয় পার্টির লাঙল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন ইকবাল হোসেন। জনসমর্থন কিংবা শক্তি সামর্থে তিনি শাহরিয়ার আলমের তুলনায় একেবারেই দুর্বল। এ কারণে এই আসনে নৌকার জয় নিশ্চিত বলেই মনে করছি আমরা।
নাটোর-১ (লালপুর ও বাগাতিপাড়া উপজেলা)
নাটোর-১ আসনে নৌকার শহীদুল ইসলামের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনজুরুল ইসলাম। এই দুজনই নতুন প্রার্থী। তবে প্রচার- প্রচারণা কিংবা সাংগঠনিক শক্তির দিক থেকে এখানে আওয়ামী লীগ এগিয়ে আছে। এ কারণে বাংলা ইনসাইডারের প্রেডিকশন হলো, এই আসনে নৌকা জয় পাবে।
নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা উপজেলা)
এখানে আওয়ামী লীগের শফিকুল ইসলামের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সাবিনা ইয়াসমিন। সাবিনা ইয়াসমিন বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর স্ত্রী। দুলু সাজাপ্রাপ্ত আসামী হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না। তবে এলাকায় তাঁর প্রভাব রয়েছে। স্বামীর বদলে নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় সাবিনা এলাকাবাসীর সহানুভূতি পাচ্ছেন। এটা নিশ্চিতভাবেই তাঁর ভোট বাড়াবে। অন্যদিকে শফিকুল ইসলাম এখানে কিছুটা দুর্বল। এসব কারণে এখানে ধানের শীষের জয় দেখছি আমরা।
নাটোর-৩ (সিংড়া উপজেলা)
এই আসনে আওয়ামী লীগের জুনাইদ আহমেদ পলকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন বিএনপির দাউদার মাহমুদ। তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ এই আসনের বর্তমান সাংসদ। ২০০৮ সালেও তিনি এখান থেকে জয় পেয়েছিলেন। তরুণ এই নেতা এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয়। গত ১০ বছরে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি। এতে তাঁর জনসমর্থন আরও বেড়েছে। বিপরীতে দাউদার মাহমুদ এবারই প্রথম জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। জনসমর্থন এবং প্রচার প্রচারণাতেও তিনি অনেকটাই পিছিয়ে। এ কারণে এই আসনে নৌকার জয় দেখছি আমরা।
নাটোর-৪ (গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা)
নাটোর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের আবদুল কুদ্দুসের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির আবদুল আজিজ। আবদুল কুদ্দুস প্রবীণ নেতা। এলাকায় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। এর আগে পাঁচটি নির্বাচনে অংশ নিয়ে চারটিতেই জয় পেয়েছেন তিনি। অন্যদিকে ধানের শীষের আবদুল আজিজ একেবারেই নতুন প্রার্থী। আবদুল কুদ্দুসকে হারিয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ঠ শক্তিশালী অবস্থানে নেই তিনি। এ কারণে এখানে নৌকা জিতবে বলে প্রেডিক্ট করছে বাংলা ইনসাইডার।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/এমআর
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন ড. আব্দুর রাজ্জাক শাহজাহান খান
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া
হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত
নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান
প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে
আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক
স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতারা জানিয়েছেন,
‘স্বজন’ প্রশ্নে দলের সিদ্ধান্ত না মানলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও দলীয় এমপির বিরুদ্ধে
সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেড়ে নেওয়া হতে পারে তাদের দলীয় পদ-পদবি।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে। সব মিলিয়ে
এ ইস্যুতে দলীয়ভাবে কঠিন সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। উপজেলা নির্বাচনে স্বজনকে
প্রার্থী করা নিয়ে দলের মন্ত্রী ও এমপিদের এরই মধ্যে কড়া ভাষায় সতর্ক করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের প্রধানমন্ত্রীর ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক
অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো নিকটাত্মীয়
অংশ নিতে পারবেন না। এ বিষয়ে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয়
নির্দেশনা দিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে
আনার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকদেরও তাগিদ দেন।
এরপর সংশ্লিষ্ট নেতারা বৈঠক থেকেই নিকটাত্মীয়দের
নির্বাচন থেকে সরিয়ে নিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক ও শাজাহান
খানের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন। ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ টাঙ্গাইলের
ধনবাড়ীতে এবং শাজাহান খান এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলায় প্রার্থী
হয়েছেন।
এ ছাড়া নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলেন কেন্দ্রীয় নেতারা। একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার
ইশরাক সাবাব চৌধুরী সুবর্ণচরে প্রার্থী হয়েছেন।
এ ব্যাপারে নোয়াখালী-৪ আসনের এমপি একরামুল
করিম চৌধুরী বলেন, উপজেলা নির্বাচন থেকে তার ছেলেকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে দলের সাধারণ
সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কথা বলেছেন। তিনি তাকে ঢাকায় ডেকেছেন।
তবে তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে
নৌকা প্রতীক পাওয়ার পরও প্রকাশ্যে তার বিরোধিতা করেছিলেন নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের
সভাপতি অধ্যক্ষ খায়রুল আনম চৌধুরী সেলিম। এ বিষয়টি কেন্দ্রে জানানো হলেও তিনি সুবিচার
পাননি। এ জন্যই তার ছেলে প্রার্থী হয়েছেন।
গতকাল দলের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে চার
বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন এমপি, এস এম কামাল হোসেন এমপি,
মির্জা আজম এমপি, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন এবং দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া
উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে বিভিন্ন উপজেলায় কয়েকজন মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজনকে প্রার্থী
করানোর বিষয় নিয়ে অল্পবিস্তর আলোচনা হয়। সেই সঙ্গে দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে নিকটাত্মীয়দের
প্রার্থী করানোর বিষয় নিয়ে নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন। বিভিন্ন উপজেলায় সাংগঠনিকভাবে
অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি নিয়েও বিরক্তি প্রকাশ করেন নেতারা।
বৈঠকে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে রংপুর,
চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের তৃণমূল নেতাদের বৈঠকে সাংগঠনিক বিরোধ নিষ্পত্তির তাগিদ দেওয়া
হলেও কার্যত তা হয়নি। উল্টো উপজেলা নির্বাচন নিয়ে গৃহদাহ পরিস্থিতি আরও প্রকট হয়েছে।
তৃণমূল নেতাকর্মী দ্বন্দ্ব-বিবাদে জড়িয়ে পড়ছেন। এ জন্য কিছুটা হতাশা ব্যক্ত করেন কেন্দ্রীয়
নেতারা। ওই সময়ে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের
পূর্বনির্ধারিত সাংগঠনিক বৈঠক স্থগিত করার তথ্য জানান। সিলেট ও বরিশাল বিভাগের বৈঠকের
দিনক্ষণ এখনও নির্ধারণ হয়নি।
দলের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব
বড়ুয়া জানিয়েছেন, ৩০ এপ্রিল সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে কেন্দ্রীয়
কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক হওয়ার কথা। এ জন্য ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক
স্থগিত করা হয়েছে। আগামীকাল শনিবার রাজশাহী এবং ২২ এপ্রিল ময়মনসিংহ বিভাগের বৈঠক হওয়ার
কথা ছিল। ঢাকা বিভাগের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল দুই দিনে। প্রথম দিন ২৭ এপ্রিল এবং শেষ দিন
৪ মে।
এদিকে গতকালের অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে অংশ
নেওয়া তিন সাংগঠনিক সম্পাদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা নির্বাচন থেকে
আত্মীয়স্বজনকে সরিয়ে নিতে মন্ত্রী ও দলের এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর
নির্দেশের কথা তাদের জানিয়েছেন দলের সাধারণ সম্পাদক। এর পর থেকে তারা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী
ও এমপির সঙ্গে কথা বলছেন। যেসব উপজেলায় মন্ত্রী ও দলীয় এমপির স্বজন নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন, কয়েক দিনের মধ্যেই তাদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করে দলের সাধারণ সম্পাদকের কাছে
দেওয়া হবে।
আগামী ৮ মে অনুষ্ঠেয় প্রথম পর্বের ১৫০
উপজেলা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মন্ত্রী ও দলীয় এমপির আত্মীয়স্বজন চেয়ারম্যান পদে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে নতুন করে ক্ষোভ ও অসন্তোষ দানা বেঁধেছে।
নাটোরের সিংড়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থী দেলোয়ার হোসেনকে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে
প্রথমে মারধর ও পরে অপহরণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। এ ঘটনায় সন্দেহ করা হচ্ছে ডাক, টেলিযোগাযোগ
ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলকের শ্যালক চেয়ারম্যান প্রার্থী লুৎফুল
হাবীব রুবেলকে।
এদিকে আওয়ামী লীগের কয়েকজন শীর্ষ নেতা
জানিয়েছেন, এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনায় খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া
জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পাশাপাশি প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের
নির্দেশ দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, আগামী ২ মে সংসদের অধিবেশন
শুরু হবে। ওই অধিবেশন চলাকালে আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের বৈঠক থেকে উপজেলা নির্বাচন
নিয়ে এমপিদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নেতারা জানিয়েছেন।
তারা বলেছেন, নির্বাচনী এলাকায় প্রভাব
বাড়াতে কয়েকজন মন্ত্রী ও দলের এমপি নিকটাত্মীয় ছাড়াও নিজস্ব লোক তৈরির জন্য পছন্দের
প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন। তাই শুধু সন্তান, পরিবার কিংবা আত্মীয়স্বজন
নয়; মন্ত্রী এবং দলের এমপিদের প্রকাশ্যে বা গোপনে উপজেলা নির্বাচনে সম্পৃক্ত না হওয়ার
কড়া নির্দেশনা দেওয়া হবে।
তবে দলীয়ভাবে কঠোর নির্দেশনা থাকলেও
মন্ত্রী ও দলীয় এমপির অনেকে তা মানবেন না বলে আভাস মিলেছে। এরই মধ্যে অনেক উপজেলায়
মন্ত্রী ও দলের এমপির নিকটাত্মীয়রা প্রার্থী হয়েছেন।
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে লড়ছেন
মাজহারুল ইসলাম সুজন এমপির দুই চাচা মোহাম্মদ আলী ও সফিকুল ইসলাম
বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা
করছেন সাহাদারা মান্নান এমপির ছেলে শাখাওয়াত হোসেন সজল। একই জেলায় সোনাতলায় এমপির ভাই
মিনহাদুজ্জামান লিটন
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদায় নির্বাচন করছেন
আলী আজগার টগর এমপির ভাই আলী মুনসুর
নরসিংদীর পলাশে লড়ছেন ডা. আনোয়ারুল
আশরাফ খান দিলীপ এমপির শ্যালক শরীফুল হক
মৌলভীবাজারের বড়লেখায় প্রার্থী হয়েছেন
শাহাব উদ্দিন এমপির ভাগনে সোয়েব আহমদ
নোয়াখালীর হাতিয়ায় লড়ছেন মোহাম্মদ আলী
এমপির স্ত্রী ও দুইবারের সাবেক এমপি আয়েশা ফেরদাউস ও ছেলে আশিক আলী।
টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে ড. আব্দুর রাজ্জাক
এমপির খালাতো ভাই হারুনার রশীদ
মাদারীপুর সদর উপজেলায় শাজাহান খান
এমপির ছেলে আসিবুর রহমান খান প্রার্থী হয়েছেন
এ ছাড়া ধাপে ধাপে অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে অনেক মন্ত্রী-এমপির নিকটাত্মীয় প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগের অন্যতম সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ কৃষক
লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামীকাল আজ শুক্রবার।
১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল আজকের এদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কৃষক লীগের ৫২ বছর পূর্তি
উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
প্রতিষ্ঠার পর বঙ্গবন্ধু কৃষক নেতা শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে
কৃষক লীগের কমিটি গঠনের দায়িত্ব দেন। বঙ্গবন্ধুর দিকনির্দেশনায় ব্যারিস্টার বাদল রশিদকে
সভাপতি ও আব্দুর রউফকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি গঠিত হয়।
সর্বশেষ ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কৃষক
লীগের ত্রিবার্ষিক কাউন্সিলে কৃষিবিদ সমীর চন্দকে সভাপতি ও অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম
স্মৃতিকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়।
কৃষক লীগের ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সংগঠনের সভাপতি কৃষিবিদ
সমীর চন্দ দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান।
এসময় তিনি বলেছেন, দেশের কৃষির উন্নয়ন এবং কৃষকের স্বার্থ রক্ষার
জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ কৃষক
লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকাল থেকে কৃষক লীগ কৃষকদের সংগঠিত করা, তাদের দাবি আদায়
এবং দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা পালন করে আসছে।
আজ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৬টায় সংগঠনটির ৫২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউস্থ সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা এবং দলীয়
পতাকা উত্তোলন। এছাড়াও সকাল ৭টায় মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে ধানমন্ডির ৩২ পর্যন্ত শোভাযাত্রা।
সকাল সাড়ে ৭টায় ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। এছাড়াও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ
হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানানোর কর্মসূচি রয়েছে।
এদিন বিকাল ৩টায় কৃষি ইনস্টিটিউট অডিটোরিয়ামে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী
উপলক্ষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী
লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্রের সভাপতিত্বে আলোচনা সভা বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। আলোচনা সভাটি সঞ্চালনা করবেন কৃষক লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বিশ্বনাথ সরকার বিটু।
কৃষক লীগ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
ব্রিটিশ হাইকমিশনার বিএনপি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শামা ওবায়েদ সারাহ কুক
মন্তব্য করুন
দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করে শেষ পর্যন্ত যদি স্বজনদেরকে প্রার্থী করেন তাহলে দলের পদ হারাতে পারেন আওয়ামী লীগের দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য। গতকাল আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে এ রকম বার্তা দেওয়া হয়েছে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সাথে দলে বিশৃঙ্খলা এবং ভাই, ভাতিজা, শ্যালক, মামাদেরকে নির্বাচনে প্রার্থী করার তীব্র সমালোচনা করেন। এ ব্যাপারে তিনি কঠোর মনোভাব ব্যক্ত করেন।
আওয়ামী লীগের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মন্ত্রী ও দলীয় এমপির কোনো স্বজন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার (১৮ এপ্রিল) দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জরুরি ভিত্তিতে দলের সভাপতিমণ্ডলীর দুই প্রভাবশালী সদস্যের সঙ্গে কথা বলে স্বজনদের নির্বাচন থেকে সরিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। এদিকে, উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দলের নির্দেশ কার্যকরে কয়েকজন মন্ত্রী, এমপি ও নেতার অনীহার কারণে আওয়ামী লীগের ঢাকা, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের তৃণমূল নেতাদের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক স্থগিত হয়ে গেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে একটি কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ সভাপতির এই নির্দেশনাটি জারি করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপি পরিবারের সদস্য স্বজনরা প্রার্থী হতে পারবেন না। এটি আওয়ামী লীগ সভাপতির একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। তৃণমূল পর্যন্ত যে পরিবারতন্ত্র ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল এবং বিভিন্ন জায়গায় যে জমিদারি প্রথা তৈরির শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল সেটা প্রতিরোধের জন্য আওয়ামী লীগ সভাপতির এই উদ্যোগ তৃণমূলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে।