নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০১ এএম, ২৪ ডিসেম্বর, ২০১৮
পদ্মাপাড়ের দুই জেলা সিরাজগঞ্জ ও পাবনা। সিরাজগঞ্জ জেলায় নির্বাচনী আসন রয়েছে ৬টি। আর পাবনায় নির্বাচনী আসন ৫টি। সিরাজগঞ্জের ৬ আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ২১ লাখ ৯৬ হাজার ২৬৩। এর মধ্যে নারী ভোটার ১০ লাখ ৮৭ হাজার ৭২৪ এবং পুরুষ ভোটার ১১ লাখ ৮ হাজার ৫৩৯। অন্যদিকে পাবনায় মোট ভোটার ১৮ লাখ ৭৯ হাজার ৩২৭। এর মধ্যে নারী ভোটার ৯ লাখ ৩০ হাজার ৬৫৪ এবং পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৪৮ হাজার ৬৭৩। বাংলা ইনসাইডারের প্রেডিকশন হলো, এই দুই জেলার ১১ আসনের মধ্যে নৌকা ৬টি এবং ধানের শীষ ৫টি আসনে জিতবে।
সিরাজগঞ্জ-১ (কাজীপুর এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার চার ইউনিয়ন)
সিরাজগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হেভিওয়েট নেতা মোহাম্মদ নাসিম। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রুমানা মোর্শেদ কনকচাঁপা। কনকচাঁপা সুগায়িকা হলেও রাজনীতির মাঠে তিনি একেবারেই নবীন। তাছাড়া এই আসনটিতে বিএনপি একেবারেই দুর্বল। অতীতে এই আসন থেকে ধানের শীষের কোনো প্রার্থী জয় পান নি। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ এখানে অত্যন্ত শক্তিশালী। ১৯৯১ সাল থেকে এই আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে। আর মোহাম্মদ নাসিম আওয়ামী লীগের পোড় খাওয়া সৈনিক। এ পর্যন্ত ৭টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ৫টিতেই জয় পেয়েছেন তিনি। সবকিছু মিলিয়ে এই আসনে নৌকার জয় নিশ্চিত বলেই মনে করছি আমরা।
সিরাজগঞ্জ-২ (কামারখন্দ এবং সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছয় ইউনিয়ন)
এই আসনে আওয়ামী লীগের হাবিবে মিল্লাতের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির রোমানা মাহমুদ। তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর স্ত্রী। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও স্বামীর পরিবর্তে রোমানা ভোটযুদ্ধে নেমেছিলেন। ওই নির্বাচনে মাত্র ২ হাজার ১২১ ভোটের ব্যবধানে জয় পেয়েছিলেন তিনি। বিশ্লেষকরা বলছেন, এবারেও এই আসনে তীব্র প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে প্রার্থীদের। তবে ধানের শীষই এখানে শেষ হাসি হাসবে বলে মনে করছি আমরা। কারণ হাবিবে মিল্লাত এই আসনের বর্তমান এমপি হলেও নিজের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি করতে পারেননি তিনি। অন্যদিকে রোমানা মাহমুদ নিশ্চিতভাবেই বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর ভোট পাবেন। পাশাপাশি স্থানীয়দের একটি বড় অংশ সহানুভূতিশীল হয়ে তাকে ভোট দেবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এসব কারণে ধানের শীষই এই আসনটির দখল নিতে যাচ্ছে বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
সিরাজগঞ্জ-৩ (রায়গঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলা)
সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে এবার বিএনপির প্রবীণ নেতা আবদুল মান্নান তালুকদারের বিরুদ্ধে লড়ছেন আওয়ামী লীগের নবীন প্রার্থী আবদুল আজিজ। আবদুল মান্নান এই আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত এমপি। অন্যদিকে আবদুল আজিজ এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক। পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে এলাকায় তার জনপ্রিয়তা আছে। এই এলাকায় আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ২২ জন। মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারাও আজিজের পক্ষে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বিপরীতে বিএনপির নেতা কর্মীরা এখানে অনেকটাই নিষ্প্রভ। একারণে এখানে নৌকার জয় দেখছি আমরা।
সিরাজগঞ্জ-৪ (উল্লাপাড়া উপজেলা)
এই আসনে আওয়ামী লীগের তানভীর ইমামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের রফিকুল ইসলাম। তানভীর ইমাম এই আসনের বর্তমান এমপি। অন্যদিকে রফিকুল ইসলাম এর আগে ২০০৮ সালে এই আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন। তবে ওই নির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন তিনি। তবে এবার এই এলাকায় তিনি জয় পাবেন বলে মনে করছি আমরা। কারণ এলাকার বিএনপির সমর্থন রয়েছে। বিএনপির জামায়াত এখানে একাট্টা হয়ে লড়ছে। এ কারণে এখানে নৌকার ধানের শীষের জয় দেখছি আমরা।
সিরাজগঞ্জ-৫ (বেলকুচি ও চৌহালি উপজেলা)
সিরাজগঞ্জ-৫ এ এবার ভোটেযুদ্ধে মুখোমুখি হয়েছেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দুই নবীন প্রার্থী। নৌকার হয়ে লড়ছেন আবদুল মমিন মণ্ডল। আর বিএনপির কাণ্ডারী আমিরুল ইসলাম খান। ভোটের মাঠে নৌকার আবদুল মমিন মণ্ডলই শক্তিশালী অবস্থানে আছেন। এলাকার বর্তমান সাংসদ তাঁর বাবা আবদুল মজিদ। পারিবারিকভাবেই তারা প্রভাবশালী। অন্যদিকে আমিরুল ইসলাম বিএনপির মনোনয়ন পেলেও এই আসনে জামায়াতের আমিরুল ইসলামও ভোটের মাঠে আছেন। এ কারণে জামায়াত ও বিএনপির ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। এ কারণে আওয়ামী লীগের মতিন মণ্ডলই এখানে জয় পাবেন বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
সিরাজগঞ্জ-৬ (শাহজাদপুর উপজেলা)
সিরাজগঞ্জ-৬ এ আওয়ামী লীগের হাসিবুর রহমানের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এম এ মুহিত। হাসিবুর রহমান এলাকার বর্তমান এমপি। এলাকায় তিনি অত্যন্ত প্রভাবশালী। অন্যদিকে এম এ মুহিত সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী ডা. এম এ মতিনের পুত্র। তিনি এবারই প্রথম নির্বাচনে লড়ছেন। হাসিবুর রহমান এক মেয়াদে সাংসদ হয়ে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। এই আসনে তাঁর শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। প্রচার প্রচারণাতেও তিনি এগিয়ে আছেন। বিপরীতে এম এ মুহিত এখানে অনেকটাই ম্রিয়মাণ। সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে এখানে নৌকার জয় দেখছি আমরা।
পাবনা-১(সাঁথিয়া এবং বেড়া উপজেলার অংশবিশেষ)
পাবনা-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুল হক। তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী গণফোরামের আবু সাইয়ীদ। এই লড়াইকে আওয়ামী লীগ বনাম আওয়ামী লীগের লড়াই হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবু সাইয়ীদ সম্প্রতি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে গনফোরামে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালে তিনি আওয়ামী লীগের সাংসদ নির্বাচিত হন। সেসময় আওয়ামী লীগ সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। ওয়ান-ইলেভেনের সময় তিনি সংস্কারপন্থী হওয়ায় পরবর্তীতে দলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা কমতে শুরু করে। ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করেন। কিন্তু নৌকার প্রার্থী শামসুল হক টুকুর কাছে হেরে যান। আবু সাইয়ীদ পরিচ্ছন্ন ইমেজের নেতা। এলাকায় তাঁর প্রভাব ও জনপ্রিয়তা আছে। তাছাড়া এবার তিনি ধানের শীষের হয়ে নির্বাচন করায় তিনি বিএনপিরও ভোট পাবেন। এসব কারণে এই আসন থেকে ধানের শীষ জিতবে বলে মনে করছি আমরা।
পাবনা-২ (সুজানগর ও আমিনপুর উপজেলা)
এই আসনে আওয়ামী লীগের আহমেদ ফিরোজ কবিরের প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির সেলিম রেজা। আওয়ামী লীগ এবার এই আসনে প্রার্থী বদল করেছে। ফিরোজ কবির এবারই প্রথম নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। অনভিজ্ঞ ফিরোজ কবির এলাকায় আলোড়ন তুলতে পারছেন না। অন্যদিকে সেলিম রেজা এই আসনের সাবেক সাংসদ। এলাকায় তাঁর জনপ্রিয়তা আছে। এ কারণে এখানে ধানের শীষ জিতবে বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
পাবনা-৩ (চাটমোহর, ভাঙ্গুড়া ও ফরিদপুর উপজেলা)
এই আসনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের আনোয়ারুল ইসলাম। এই আসনে নৌকা জয় পেতে ব্যর্থ হবে বলে মনে করছি আমরা। কারণ মকবুল হোসেনকে নিয়ে নিজ দলের মধ্যেই বিভক্তি রয়েছে। আওয়ামী লীগের ১১ জন নেতা একাট্টা হয়ে মকবুল হোসেনকে মনোনয়ন না দিতে আহ্বান জানিয়েছিলেন। অন্যদিকে এই এলাকায় জামায়াত এবং বিএনপির প্রভাব রয়েছে। এ কারণে এই আসনটি ধানের শীষের দখলে যাবে বলে মনে করছি আমরা।
পাবনা-৪ (আটঘরিয়া ও ঈশ্বরদী উপজেলা)
এই আসনটি ১৯৯৬ সালে থেকেই আওয়ামী লীগের দখলে আছে। এবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামসুর রহমান। তিনি এই আসনে অত্যন্ত জনপ্রিয় নেতা। গত তিন মেয়াদে তিনি এই এলাকার সাংসদ। অন্যদিকে বিএনপি এখানে খবই দুর্বল। এই আসনে এবার দলটির মনোনয়ন পেয়েছেন হাবিবুর রহমান। তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় না নামায় ঈশ্বরদী উপজেলা কমিটি বিলুপ্ত এবং পৌর কমিটির কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বিএনপিতে দলীয় কোন্দল থাকায় এই আসনে নৌকার জয় অনেকটাই নিশ্চিত বলে মনে করছি আমরা।
পাবনা-৫ (পাবনা সদর উপজেলা)
পাবনা-৫ আসনে আওয়ামী লীগের গোলাম ফারুকের প্রতিদ্বন্দ্বী জামায়াতের ইকবাল হোসেন। গোলাম ফারুক এই এলাকার বর্তমান সাংসদ। ২০০৮ এর নির্বাচনেও তিনি এই আসন থেকে জয় পেয়েছিলেন। গত ১০ বছরে তিনি এলাকায় ব্যাপক কাজ করেছেন। এলাকায় তাঁর প্রভাব ও জনসমর্থন আছে। অন্যদিকে জামায়াতের ইকবাল হোসেন একেবারেই নতুন প্রার্থী। এলাকায় খুব একটা শক্ত অবস্থানে নেই তিনি। এ কারণে এই আসনে নৌকা জয় পাবে বলে প্রেডিক্ট করছি আমরা।
বাংলা ইনসাইডার/এএইচসি/এমআর
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।