নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ২০ জানুয়ারী, ২০১৯
নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর ১৪ দলের মধ্যে টানাপোড়েন চলছে। ১৪ দলে আওয়ামী লীগের শরীকরা রীতিমত হতবাক। তাদের প্রধান মিত্র আওয়ামী লীগ যে তাদের সঙ্গে এরকম আচরণ করবে, এটা ছিল ১৪ দলের অধিকাংশ নেতার কাছেই অবিশ্বাস্য। নির্বাচনের পরও ১৪ দলের অনেক নেতাই কোন মন্ত্রণালয় পাবেন, তা নিয়ে আলাপ আলোচনা করছিলেন। এমনকি ৭ জানুয়ারি মন্ত্রিসভা গঠিত হওয়ার পরও আশা ছাড়েননি ১৪ দলের নেতারা। তারা মনে করেছিলেন, মন্ত্রিসভায় হয়তো পরবর্তীতে তাদের অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে। এখনও আশা ছাড়েননি অনেকে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের আচার আচরণ এবং কথাবার্তায় ‘হতাশ’ ১৪ দলের শরীকরা।
গতকাল শনিবার আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিজয় উৎসবের আয়োজন করা হয়। কিন্তু এই বিজয় উৎসবে ১৪ দলের শরীকদের কোনো ভূমিকা ছিল না। তাদের মঞ্চে তোলা তো দূরের কথা, কোনো বক্তৃতা দেওয়ারও সুযোগ দেওয়া হয়নি। এ নিয়ে ১৪ দলের অনেক নেতাই রীতিমতো ‘বাকরুদ্ধ’। অবশ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘এটা ছিল আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব। এজন্যই ১৪ দলের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণের প্রসঙ্গটি অপ্রাসঙ্গিক।’ কিন্তু ১৪ দলের অন্যতম নেতা রাশেদ খান মেনন বলেছেন, ‘আমরা নির্বাচন করলাম একসঙ্গে, এক প্রতীক নিয়ে আবার এখন কেন শুধু আওয়ামী লীগের বিজয় উৎসব হবে। বিজয় উৎসব ১৪ দল একসঙ্গে করলেই ব্যাপারটা ভালো হতো বলে আমি মনে করি।’
কিন্তু আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রগুলো বলছে, বিগত ৫ বছর এবং নির্বাচনের সময়ে শরীকদের অন্যায় আবদারে আওয়ামী লীগ ‘অসন্তুষ্ট’। এ কারণেই ইচ্ছা করলেই ১৪ দলের শরীকদের এড়িয়ে চলছে আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা বলেছেন, ‘১৪ দলের শরীকরা ভালো সময়ে কেবল ক্ষমতার ভাগ চায়, দুঃসময়ে তাদের পাশে পাওয়া যায় না।’ অন্য একজন নেতা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তার নির্বাচনী ইশতেহার বাস্তবায়ন করবে। অন্য দলকে দিয়ে এই ইশতেহার বাস্তবায়ন কিভাবে সম্ভব?’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী চাইছেন, মন্ত্রিসভার একটা জবাবদিহিতা। কিন্তু নিজের দলের লোকজনকে প্রধানমন্ত্রী যেভাবে ‘শাসনের’ মধ্যে রাখতে পারবেন, শরীকদের যেভাবে রাখা সম্ভব নয়।’ আওয়ামী লীগ এবং ১৪ দলের শরীকদের সঙ্গে কথা বলে দূরত্বের যে কারণগুলো পাওয়া গেছে, সেগুলো হলো:-
১. আসন ভাগাভাগি নিয়ে মতবিরোধ: ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় আসন ভাগাভাগি নিয়ে শরীকরা আওয়ামী লীগের উপর রীতিমতো চাপ সৃষ্টি করে। জোটের সিদ্ধান্ত অমান্য করে একটি দল নিজস্ব প্রতীকে উন্মুক্ত নির্বাচন করে।
২। আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ না করা: ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে অধিকাংশ ১৪ দলের শরীকরা মাঠ পর্যায়ে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেনি। তাঁরা নির্বাচনে নিশ্চুপ ছিল।
৩। আওয়ামী লীগের কৌশলগত অবস্থান: ১৪ দলকে যদি মন্ত্রিসভার অন্তর্ভুক্ত করার চাপ বাড়তো। শেষ পর্যন্ত যদি বিএনপি এবং ঐক্যফ্রন্ট সংসদে না আসে তাহলে সংসদ বিরোধী দল শুন্য হয়ে যায়। এটা হতো আওয়ামী লীগের জন্য আরেক সমস্যা। তাই কৌশলগত কারণে আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টি এবং ১৪ দলকে দূরে রেখেছে। তারা সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলে সংসদ আরও বেশি অর্থবহ ও কার্যকর হবে বলেই আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারকরা মনে করছে।
৪। বিগত মন্ত্রিসভার অভিজ্ঞতা: বিগত ৫ বছরে মন্ত্রিসভায় শরীকদের ভূমিকা সন্তোষজনক নয় বলেই আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় মনে করে। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের দলীয় চিন্তার অনুসরণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় চলেনি। ফলে অনেক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। নতুন সরকার এই সমস্যার মুখে পড়তে চায় না।
৫) হেফাজতের সঙ্গে সম্পর্ক: ১৪ দলের শরিকদের অনেকেই মনে করছেন, এবারের মন্ত্রিসভা গঠনের পেছনে হেফাজতসহ ইসলাম পছন্দ দলগুলোর ভূমিকা রয়েছে। এরা চায়নি বাম ঘরানার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মন্ত্রিসভায় থাকুক। এ কারণেই শুধু ১৪ দল নয় আওয়ামী লীগেও বাম ঘেঁষা হিসেবে পরিচিত বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং নুরুল ইসলাম নাহিদকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
অবশ্য ১৪ দলের শরিকদের সঙ্গে দূরত্বের কথা অস্বীকার করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, `আমরা ঠিকই আছি, কোনো সমস্যা নেই।`
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।