নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০:০০ পিএম, ২৩ জানুয়ারী, ২০১৯
উপজেলা নির্বাচনে কুরুক্ষেত্রের আশংকা করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। দলের মনোনয়ন না পেলেও বিপুল সংখ্যক স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা স্বতন্ত্রভাবে উপজেলা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। অন্যদিকে বিএনপিও দলের নির্বাচন করতে আগ্রহীদের জানিয়ে দিয়েছেন দলীয়ভাবে নয়, স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা যাবে। তারাও স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করেছেন। ফলে, উপজেলা নির্বাচন হয়ে উঠবে স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতার লড়াই। যে দাপট দেখাতে পারবে, প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করতে পারবে জয় তার।
এবার প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে দলের ত্যাগী পরীক্ষীতদের এবার মনোনয়ন দেওয়া হবে। বারো বছরের কম আওয়ামী লীগ বা তার অঙ্গ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নয়, এমন ব্যাক্তিদের মনোনয়নের জন্য বিবেচনা করা হবে না। এমন নীতিগত সিদ্ধান্ত আওয়ামী লীগের তৃনমূলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতেই নড়েচড়ে বসেছে, দলের সুযোগ সন্ধানীরা। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর যারা দলের নানা সুযোগ সুবিধার আশায় যোগ দিয়েছেন, তারা এখন তাদের অবস্থান স্পষ্ট করছে। বিশেষ করে বিএনপি-জামাত থেকে যারা কিছু পাবার আশায় আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে, তারাই এখন বিভীষণে পরিণত হয়েছেন। আওয়ামী লীগের একজন নেতা বলেছেন, ‘এরা দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ‘স্বতন্ত্র’ভাবে দাড়ানোর প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে।‘ ওই নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগে এসে এরাই ব্যবসা বাগিয়েছে, টেন্ডারবাজি করেছে, নিয়োগ বাণিজ্য করেছে। এরা ফুলে ফেঁপে উঠেছে। আসল আওয়ামী লীগের চেয়ে এরাই এখন বেশি প্রভাবশালী। প্রশাসনের সঙ্গে এদের সখ্যতা বেশি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গেও এদের ওঠাবসা ভালো।‘ ওই নেতা মনে করেন, এবারের নির্বাচন হবে আসল আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাব্রিডদের লড়াই।
আওয়ামী লীগের ভেতরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০০৮ এবং ২০১৪’র নির্বাচনের পর এমপি মন্ত্রিদের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগে হাইব্রিডদের উত্থান ঘটে। পুরনো ত্যাগীদের বাদ দিয়ে এমপি মন্ত্রীরা তাঁদের পছন্দের আওয়ামী লীগ তৈরী করেন। দুঃসময়ের ত্যাগী পরিক্ষীত নেতা-কর্মীরা দলেই কোণঠাসা হয়ে পড়েন। এরকম একজন নেতা বলেন, ‘একমাত্র নেত্রী ছাড়া কারো কাছেই মর্যাদা পাইনি, মূল্যায়ন পাইনি।‘ গত নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি দলের অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন। একাধিক বক্তৃতায় তিনি এদের তালিকা করে দল থেকে বের করে দেয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু হাইব্রিডদের দলে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। মন্ত্রী এমপিদের পৃষ্টপোষকতায় তাই কোথাও এদের বহিষ্কার করার কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি।
এবার নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানের কারণে এরা শুরুতেই বিচলিত। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি জানিয়ে দিয়েছেন যে, দলের দু:সময়ের প্রার্থীদেরই মূল্যায়ন করা হবে। ত্যাগীদের উপজেলা মনোনয়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। এর ফলে বিভিন্ন স্থানে হাইব্রিডরা স্বতন্ত্র নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা মনে করছে টাকা আর ক্ষমতার জোরে ‘নির্বাচিত’ হতে পারলে, আওয়ামী লীগ আবার তাদের বরণ করে নেবে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, এই নির্বাচন তাই হবে আসল আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাইব্রিড আওয়ামী লীগের লড়াই। তাই উপজেলা নির্বাচন তো কুরুক্ষেত্রই হবে।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।