নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১১ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
আজকে বিএনপির যে অবস্থা। সেই অবস্থার পূর্ভাবাস দিয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়ার কয়েকজন শুভাকাঙ্খি এবং বিএনপির কয়েকজন প্রাক্তন নেতা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস। ২০০১ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে তারা যে ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, আজকে বিএনপি সে পথেই হাঁটছে। বিএনপি সেই পরিনতিতেই পৌঁছে গেছে। ২০০১ সালে পয়লা অক্টোবরের নির্বাচনে বিপুল বিজয়ের পর বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। দুই তৃতীয়াংশের বেশি আসন পেয়ে বিএনপি ক্ষমতাটা চিরস্থায়ী করার পরিকল্পনা নিয়েছিল। বেগম খালেদা জিয়া ঘোষণা করেছিলেন, আওয়ামী লীগ আর কোনদিনই ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আওয়ামী লীগ আস্তে আস্তে মুসলিম লীগে পরিনত হবে। বিএনপি থেকে সে সময়ে বলা হয়েছিল , আওয়ামী লীগ অস্তিত্ব সংকটে পড়ছে। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে টিকবে কিনা সেটাই দেখার বিষয়। এসময়ে বিএনপি-জামাতের জোট সরকার দুর্নীতি লুটপাটের একটা মহাজজ্ঞ শুরু করে। হাওয়া ভবন কেন্দ্রীক দুর্নীতির ফলে পুরো বাংলাদেশে দুর্নীতি এবং টেন্ডার বাণিজ্য শুরু হয়ে যায়। এই পরিস্থিতিতে বিএনপির উশৃঙ্খল রাজনীতির সীমাহীন লুন্ঠন এবং স্বেচ্ছাচারীতায় উদ্বীগ্ন বিএনপির মধ্যেই কেউ কেউ এর প্রতিবাদ করেছিলেন। তারা বলেছিলেন এভাবে যদি বিএনপি চলে, এভাবেই যদি সরকার পরিচালনা করা হয়, তাহলে জনগন রুখে দাঁড়াবে এবং বিএনপিকে করুণ পরিনতি বরণ করতে হবে।
এদের মধ্যে অন্যতম হলেন বেগম খালেদা জিয়ার সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল সিদ্দীকি। তিনি খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন্। হাওয়া ভবন কেন্দ্রীক যখন দুর্নীতি এবং লুটপাট চরমে, তখন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে তিনি তিনদফা এ বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন বলে ড. কামাল সিদ্দিকী তার বিভিন্ন লেখায় উল্লেখ করেছেন। সেই সময় তিনি খালেদা জিয়াকে ৪ টি ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। এর একটি ছিল , এই অবস্থা থাকলে তারেককে এদেশের মানুষ নেতা হিসেবে প্রত্যাখ্যান করবে। তারেক জিয়াকে করুণ পরিনতি বরণ করতে হবে। দ্বিতীয় ভবিষ্যৎবানী, যেভাবে টেন্ডার এবং সরকারী অনিয়ম হচ্ছে। তাতে ভবিষ্যতে যে কোন সময় খালেদা জিয়াকে মামলার মুখোমুখি হতে পারে। তাকে জেলেও যেতে হতে পারে। তৃতীয় ভবিষ্যৎবানী, এর ফলে বিএনপির সাংগঠনিক সংকটে পরবে এবং দল হিসেবে বিএনপির অস্তীত্ব প্রশ্নের মুখে পরবে। চতুর্থত তিনি বলেছিলেন, এর মাধ্যমে জনগনের মধ্যে যে নেতিবাচক ধারণা তৈরী হবে। সেটার ফলে বিএনপির জনগনের কাছাকাছি যাওয়া কঠিন হয়ে পরবে। ২০০৩ সালে ড. কামাল সিদ্দীকি যে লিখিত নোটের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে সতর্কবার্তা দিয়েছিলেন সেই লিখিত নোটের চারটি ভবিষ্যৎবাণীই হুবহু সত্যে পরিণত হয়েছে। ড. কামাল সিদ্দীকি এখন দেশে নেই। কিন্তু বিএনপির নেতাকর্মীরা হারে হারে এই পরিস্থিতিতে সেই পরিনতি উপলব্ধি করছে।
বিএনপি ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির বিজয়ের ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা রেখেছিলেন অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। ২০০১ সালে নির্বাচনের পর তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি বেশিদিন থাকতে পারেননি। বিএনপির উষ্মার মুখে তিনি রাষ্ট্রপতি পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। পদত্যাগ করে তিনি বেগম খালেদা জিয়াকে একটি ব্যক্তিগত চিঠি লিখেছিলেন। ব্যক্তিগত চিঠিতে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে তিনটি সংকটের কথা ভবিষ্যৎবানী করেছিলেন। এর মধ্যে ১. জামাতকে নিয়ে রাজনীতি করার কারণে বিএনপি জনগনের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পরবে। ২. সীমাহীন লুন্ঠনের কারণে বিএনপিকে চরম মূল্য দিতে হবে। ৩. তারেক জিয়ার নেতৃত্বের ফলে খালেদা জিয়া এবং তাঁর পুত্র তারেক, দুজনেই আইনী জটিলতায় পরতে পারে। ব্যক্তিগত এই চিঠিটি বেগম খালেদা জিয়াকে দেওয়ার পর অধ্যাপক বি চৌধুরী নিজে দল গঠন করেছিলেন এবং তখন ক্ষমতাসীন বিএনপির দ্বাড়া তিনি নিগৃহীত হয়েছেন।
বেগম খালেদা জিয়ার একান্ত সচিব হয়েছিলেন নুরুল ইসলাম। তিনি যখন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। সেই সময়ে তারেক জিয়ার বিরুদ্ধে বিপুল দুর্নীতির অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আসছিল। তিনি এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে খতিয়ে দেখার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ক্ষুব্ধ হয়ে তার সচিবকে প্রথমে চাকরিচ্যুত এবং পরে তাকে নানা রকম হয়রানি করেছেন। এ সময়ে নুরুল ইসলাম একটি ব্যক্তিগত চিঠি দিয়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কয়েকটি বিষয়ে সতর্ক করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এ সমস্ত অনিয়ম যদি এখনি সুরাহা না করা হয়। তাহলে ভবিষ্যতের জন্য বেগম খালেদা জিয়াকে মামলার মুখোমুখি হয়ে জেলে যেতে হতে পারে। এবং তার রাজনৈতিক জীবন সংকটে পরতে পারে। দ্বিতীয়ত তিনি বলেছিলেন, তারেক জিয়ার সীমাহীন দুর্নীতি এবং স্বেচ্ছাচারিতা যদি এখনি বন্ধ না করা যায়। তাহলে তারেক জিয়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে কখনোই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবেন না। তৃতীয়ত, এরকমভাবে যদি বিএনপি দেশ চালাতে থাকে। সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন বিএনপিকে জনগন প্রত্যাখ্যান করবে এবং বিএনপি দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকবে।
এই তিনজনের ভবিষ্যৎবাণী বেগম খালেদা জিয়া সে সময় আমলে নেননি। কিন্তু এই ভবিষ্যৎবাণীর কথা এখন যারা বিএনপিতে শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা জানেন। আজকে যখন বিএনপির এই সংকট তখন তারা সেই সমস্ত ব্যক্তিদের যে সতর্কসংকেত সেটার কথা বারবার স্বরণ করছেন। তারা মনে করেন, এখনো বিএনপি তার অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নেয়নি। যার ফলে বিএনপি ক্রমশ একটি সংকট থেকে নতুন সংকটের দিকে যাত্রা করছে।
বাংলা ইনসাইডার
মন্তব্য করুন
আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপে নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তকে
উপেক্ষা করে প্রার্থী হওয়ায় মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে উপজেলার বিএনপিপন্থি দুই প্রার্থীকে
শোকজ করা হয়েছে।
বিএনপি থেকে শোকজ করা দুই প্রার্থী হলেন, চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী
উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর
রহমান তুষার (কাপ পিরিচ প্রতীক) ও ভাইস চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসা (চশমা প্রতীক)।
গতকাল বুধবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি'র অফিসিয়াল
প্যাডে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত কারণ দর্শানোর
নোটিশ থেকে এ তথ্য জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির
সভায় আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বর্জন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। বিএনপি নেতা হিসেবে
আপনি দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেননি। নির্বাচনে
প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার এহেন মনোবৃত্তি সম্পূর্ণরূপে দলীয় শৃঙ্খলা পরিপন্থি এবং দলের
প্রতি চরম বিশ্বাসঘাতকতা।
দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে জালিয়াতির নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য
আপনার বিরুদ্ধে কেন দলের গঠনতন্ত্র মোতাবেক সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা
হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্যকোনো মাধ্যমে পত্র প্রাপ্তির কিংবা ফোনে অবহিত হওয়ার ৪৮ ঘণ্টার
মধ্যে যথাযথ কারণ দর্শিয়ে একটি লিখিত জবাব দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় বরাবর
নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করা হলো।
কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়ার সত্যতা নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচনে
চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী, উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ও ৬ নং বয়ড়া ইউনিয়নের সাবেক
চেয়ারম্যান মো. জাহিদুর রহমান তুষার বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য দলীয়ভাবে কারণ
দর্শানোর নোটিশ হাতে পেয়েছি। যথাযথ সময়ে আমি নোটিশের জবাবও দেব। তবে ৮ মে উপজেলা পরিষদ
নির্বাচনে আমি জনগণের চাপে পড়ে প্রার্থী হয়েছি। দলীয় সিদ্ধান্ত যাই হোক না কেন, জনগণের
ভালোবাসা, দোয়া ও সমর্থন নিয়ে শেষ পর্যন্ত আমি নির্বাচনী মাঠে থাকব। আমি টানা ১৯ বছর
বয়ড়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে জনগণের সেবা করেছি। যার ফলে পুরো উপজেলায় আমার
একটা অবস্থান রয়েছে। সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসা ও দোয়া
নিয়েই আমি আগামীতে পথ চলতে চাই। আশা করি, এ নির্বাচনে আপামর জনগণ আমার পাশে থাকবে এবং
নির্বাচনে ভালো কিছু হবে, ইনশাআল্লাহ।
তবে বিএনপিপন্থি ভাইস চেয়ারম্যান পদ প্রার্থী উপজেলা বিএনপির সদস্য
ও কাঞ্চনপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মোশারফ হোসেন মুসাকে একাধিকবার মুঠোফোনে
কল দিলেও রিসিভ হয়নি।
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।