নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১২ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
বিএনপিকে বাদ দিয়ে ঐক্যফ্রন্টকে ঢেলে সাজানোর প্রস্তাব দিয়েছে আন্তর্জাতিক মহল। নির্বাচনের আগে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে দাড় করানোর প্রস্তাব দিয়েছে প্রভাবশালী কয়েকটি দেশের দূতাবাস। বিভিন্ন কূটনৈতিকসূত্রের প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র- যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ভারত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে বিকল্প গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক মোর্চা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রস্তাব দিয়েছে এবং দীর্ঘমেয়াদী কর্মসূচীর মাধ্যমে ধাপে ধাপে এটাকে সংঘবদ্ধ করার পরামর্শ দিয়েছে। এর প্রথম কাজ হিসেবে ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে মার্কিন দূতাবাসের উর্ধতন কমিটির বৈঠকে এরকম একটি সুনির্দিষ্ট রুপরেখা দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। পাশাপাশি ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং ভারতের প্রতিনিধিরাও ড. কামাল হোসেনকে একটি অর্থবহ রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছে। এ সমস্ত দেশের পরামর্শে যে মূল বিষয়টি এসেছে, তা হলো জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট থেকে বিএনপিকে বাদ দিতে হবে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে বাম দলগুলোসহ গণতান্ত্রিক এবং প্রগোতিশীল যে রাজনৈতিক দলগুলো আছে, তাদেরকে ঐক্য করতে হবে। এই সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যে ১৪ দলে আছে। সেই ১৪ দলের শরিকদেরকেও এই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসার চেষ্টা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এটার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সেকুলার গণতান্ত্রিক শক্তি আত্মপ্রকাশ করবে বলেও বিদেশি দূতাবাসগুলো মনে করে।
গত ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে নাটকীয়ভাবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়। জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের শেষ প্রক্রিয়ায় অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরীকে বাদ দেওয়া হয়। এই ঐক্যফ্রন্টের প্রধান দল হলো বিএনপি। শুরুতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রধান শর্ত ছিল, জামাতের সঙ্গে তারা সম্পর্ক রাখবে না। কিন্তু বিএনপি জামাতের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে যোগ দেয়। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে ২২ জন জামাতের প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে বিএনপি থেকে নির্বাচন করে। ড. কামাল হোসেনকে তা বিব্রতকর অবস্থার মধ্যে ফেলে। এরপর থেকেই ড. কামাল হোসেন জামাতকে বাদ দেওয়ার পরামর্শ দেয় বিএনপিকে। এবার আন্তর্জাতিক মহল ড. কামাল হোসেনকে বিএনপিকেই বাদ দেওয়ার পরামর্শ দিলো। এরপক্ষে তাদের যুক্তি হলো, বিএনপি যেহেতু সেকুলার রাজনীতি হারিয়েছে। বিএনপি-জামাতের সম্পর্ক যেহেতু অঙ্গঅঙ্গিভাবে জড়িত। কাজেই বিএনপিকে রেখে একটি সেকুলার রাজনীতিক দল হিসেবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিকশিত হতে পারে না। তাছাড়া গত দেড় দশক ধরেই বিদেশি দূতাবাসগুলো একটা নতুন রাজনৈতিক শক্তি উথানের জন্য চেষ্টা করছিল। সেক্ষেত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টই একটি তৃতীয় রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে বলে বিভিন্ন কূটনৈতিক মহল মনে করছে। সে বিবেচনা থেকেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের মধ্যেও টানাপোড়ন চলছে। ১৪ দলের শরিকদেরকে মন্ত্রিসভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। যার ফলে ১৪ দলের মধ্যে যে হতাশা এবং অসন্তোষ, সেই অসন্তোষকে কাজে লাগাতে বলা হয়েছে। ১৪ দলের ওয়ার্কাস পার্টি, জাসদ, সাম্যবাদী দলসহ যে শরিক দলগুলো আছে, তাদেরকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য ড. কামাল হোসেনকে পরামর্শ দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উদার গণতান্ত্রিক প্রগোতিশীল শক্তির আত্মপ্রকাশ ঘটবে বলে তারা মনে করেন।
বিভিন্ন দূতাবাসগুলো ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যে দুইজন নির্বাচিত হয়েছে তাদের সংসদে যাওয়ার পরামর্শ দেন। যেহেতু ১৪ দলের বাইরে আওয়ামী লীগের বেশকিছু আসন আছে। তাদেরকে নিয়ে সংসদের ভিতর এবং বাইরে সুশাসন জবাবদিহীতা দুর্নীতিমুক্ত মানবাধিকার ইত্যাদি ইস্যুতে একটি জন প্লাটফর্ম গঠন করার জন্য ড. কামাল হোসেনকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
তবে ড. কামাল হোসেন এই নিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানা গেছে। এতদিন যেটা মনে করা হত, বিএনপিকে জামাত ছাড়তে হবে। এখন সর্বশেষ ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে কূটনীতিকদের সিরিজ বৈঠকের পর এটা স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়েছে যে, শুধু জামাত নয়, বিএনপিকেও বিদেশী রাষ্ট্রগুলো একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে দেখছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি হিসেবে ওতপ্রোতভাবে বিএনপি জড়িয়ে আছে বলেও বিএনপি মনে করছে। এই প্রেক্ষাপটে এখন রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণের জন্য কূটনীতিক তৎপরতা শুরু হয়েছে। চটজলদি করে সরকারের বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন নয়, বরং আস্তে আস্তে একটি বিকল্প গণতান্ত্রিক মোর্চা হিসেবে ঐক্যফ্রন্টকে গড়ে তোলার জন্য শুধুমাত্র বিদেশি কূটনৈতিক নয়, অনেক সুশীল সমাজও এখন তৎপরতা চালাচ্ছেন। ড. কামাল হোসেন এ ব্যাপারে ইতিবাচক বলে অনেকের ধারণা।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপি ড. মঈন খান
মন্তব্য করুন
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বিএনপি
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।
অবশেষে জিয়া পরিবার মুক্ত হচ্ছে বিএনপি। বিএনপির রাজনীতিতে একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। তবে ঠিক কবে, কখন, কীভাবে এ পরিবর্তন হবে সে সম্পর্কে কেউ কোন সুনির্দিষ্ট ধারণা দিতে পারেনি। তবে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপিতে পরিবর্তনের ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিয়েছেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ২০২৪-২৫ নির্বাচনে বিএনপি প্যানেল থেকে নির্বাচিত হলেও দায়িত্বভার না নিতে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সহ চার আইনজীবীকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। তবে সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন। গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দেন বিএনপিপন্থি এ আইনজীবী নেতা।