নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮:০০ পিএম, ১৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
টানা তৃতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছে শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ। নতুন মন্ত্রিসভা থেকে শুরু করে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন। কিন্তু একটা বিষয় লক্ষণীয়, সরকারের কোথাও আওয়ামী লীগের রাজপথের লড়াকু সৈনিকগুলোর দেখা নেই। একটা সময় আওয়ামী লীগ মাঠের কর্মী খুঁজতো। যারা পুলিশের বাধা অতিক্রম করে রাস্তায় নামতে পারে। সংগঠন চাঙ্গা রাখতে পারে। হরতাল ডেকে রাস্তায় থাকতে পারে। তাদেরকে দরকার ছিল আওয়ামী লীগের।
১৯৮১ সালে যখন শেখ হাসিনা দেশে ফিরলেন তখন সারাদেশে ফ্রিডম পার্টি, যুদ্ধাপরাধী, বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সেসময় আওয়ামী লীগের দরকার ছিল রক্ত ঝরানো সেসব কর্মী, যারা নিজেদের জীবন বাজি রেখে রাস্তায় সংগ্রাম করতে পারে। যারা দলের সভাপতিকে বাঁচানোর জন্য রাজপথ পাহারা দিতে পারে। তাদের ত্যাগের উপর আওয়ামী লীগ শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াতে পারে। তাদের আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচার শাসকের পতন ঘটে। তাদের দৃঢ়তায় ২১ বছর পর আবারও ক্ষমতায় আসতে পারে আওয়ামী লীগ। ২০০১-০৬ মেয়াদের বিএনপি জামাত জোট ক্ষমতা কুক্ষীগত করে রাখার জন্য সংবিধানে সংশোধনী এনেছিল, প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে বিচারপতিদের তখন বয়স বাড়ানো হয়েছিল, আবদুল আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বানিয়ে একটা প্রহসনের নির্বাচনের পায়তারা করলো, ছাত্রলীগ-যুবলীগের তরুণরা রাজপথ উত্তপ্ত করে বিএনপির সকল কুপরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়। দীর্ঘ সময় ধরে আওয়ামী লীগের হয়ে যারা রাজপথে আন্দোলন করে গেছেন তারাই আজ আওয়ামী লীগে কোনঠাসা অবস্থায় আছেন। তাদের বেশিরভাগই এখন সরকারের কোন পদে নেই। যে কয়েকজন একাদশ জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ নির্বাচিত তারাও অনেকটা নাজুক অবস্থায় আছেন। এবার চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করা আওয়ামী লীগে কি তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে? আওয়ামী লীগ তাহলে তাদের রাজপথের সেনানীদের ভুলে গেছে? আওয়ামী লীগ হয়তো মনে করছে, তাদের আর রাজপথের কর্মী দরকার নেই। যারা ত্যাগ স্বীকার করে, জেল জরিমানা উপেক্ষা করে দলের অস্তিত্বকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য যে কোন কিছু করতে প্রস্তুত এমন নেতাকর্মীর প্রয়োজন কি ফুরিয়ে গেছে?
যেসব নেতাদের ত্যাগের উপর আওয়ামী লীগ দাঁড়িয়ে আছে, তাদের মধ্যে অন্যতম মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৮৩ সাল পর্যন্ত ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন। এমবিবিএস সম্পন্ন করা এই নেতা চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ নিয়েই বর্তমানে ব্যস্ত থাকেন। বর্তমানে তিনি সংগঠনটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
৭৫ পরবর্তী সময়ে যে ক’জন ছাত্রনেতা জেলে খেটেছিলেন তাদের মধ্যে একজন মুকুল বোস। মুকুল বোসের হাত ধরেই সেসময় সারা দেশে ছাত্রলীগ বিকশিত হয়েছিল। তিনি শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠদের মধ্যে একজন ছিলেন। তিনি দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকও হন। কিন্তু ২০০৬ সালে সংস্কারপন্থী হওয়ার কারণে তিনি পদ হারান। সেসময় আওয়ামী লীগের আরও অনেক সিনিয়র নেতাও সংস্কারপন্থী হয়েছিলেন। তাদের ভাগ্যে খুব বেশি পরিবর্তন না হলেও মুকুল বোস এখন নামমাত্র উপদেষ্টা। দলে তার কোন ভূমিকা নেই।
ছাত্রলীগকে সংগঠন করা নেতাদের মধ্যে অন্যতম জাহাঙ্গীর কবির নানক। এরপর তিনি যুবলীগকেও সংগঠিত করেছিলেন। ২০০১-০৬ আমলে আওয়ামী লীগের হয়ে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেছিলেন নানক। বিশেষ করে ২০০৬ সালের ২৮ নভেম্বর যখন চার দলীয় জোট ক্ষমতা ছেড়ে দেয়, সেদিন অস্তিত্বের পরীক্ষায় পড়া আওয়ামী লীগকে কক্ষপথে রাখতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন নানক। রাজপথ কাঁপানো কর্মী জাহাঙ্গীর কবির নানক ২০০৮ সালে মন্ত্রী হলেও ২০১৪ সালে মন্ত্রিত্ব পাননি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি এমপি থেকেও খারিজ হয়ে যান।
একসময় মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ছাড়া ঢাকায় জনসভা আর ‘পোপ ছাড়া রোম’ সমান কথা ছিল। বিশাল একটি কর্মীবাহিনী নিয়ে ঢাকা শহর নিজের দখলে রাখতেন মায়া। আওয়ামী লীগের যে কোন মিছিল বা সমাবেশে সবার সামনে থাকতেন মায়া। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রতিমন্ত্রী হয়েছিলেন। ২০০৮ সালে এমপি ছিলেন। ২০১৪ মন্ত্রিসভায় মন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু তারপরে নক্ষত্রের পতন। আওয়ামী লীগ এখন রাজপথে নেই। মায়ারও দরকার নেই। মায়া এখন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নামমাত্র সদস্য।
এছাড়াও আওয়ামী লীগের অনেকেই আছেন যারা আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য রাস্তায় পুলিশের বেদম প্রহার খেয়েছেন। নির্যাতন ভোগ করেছেন। তারা এখন দলে অপাংক্তেয়। তাদের মধ্যে রয়েছেন অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। সেসময় আওয়ামী লীগের হরতাল মিছিল মানেই সামনে থেকে সাহারা খাতুনের স্লোগান। তিনি একাধিকবার রাস্তায় পুলিশের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ৭৫ পরবর্তী সময়ে আইনজীবীদের সংগঠিত করার জন্য অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন সাহারা খাতুন। তিনি এমপি হিসেবে থাকলেও তেমন কোন ক্ষমতা তার হাতে নেই। আওয়ামী লীগের আন্দোলনের সময় আরেক অগ্রসেনানী ছিলেন মির্জা আজম। ঢাকা শহরে আন্দোলন মানেই সেখানে মির্জা আজমের উপস্থিতি। সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে এমপি হলেও এখন আর দৃশ্যপটে নেই।
একটা রাজনৈতিক দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন তাদের রাজপথে আন্দোলন করার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু রাজপথের কর্মীদের যদি মূল্যায়ন না করা হয়, তাদের যদি অপাংক্তেয় করে রাখা হয়, তাহলে দলের যদি কোন সময় দুঃসময় আসে তাহলে আন্দোলন করার জন্য, ঘাম ঝরিয়ে মিছিল করার জন্য রাজপথে কি কর্মী পাওয়া যাবে? সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
বিএনপি জনপ্রিয় নেতা কর্নেল অলি আহমদ মেজর অবসরপ্রাপ্ত হাফিজ উদ্দিন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ আগাম কাউন্সিল দলীয় কোন্দল
মন্তব্য করুন
এমভি আবদুল্লাহ কবির গ্রুপ সোমালিয়া উপকূল
মন্তব্য করুন
ভারত বিরোধী বিএনপি রুহুল কবির রিজভী
মন্তব্য করুন
বিএনপি নেতারা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে যেসব কথা বলে তা শুনলে জিয়াউর
রহমানও কবরে শুয়ে লজ্জা পেয়ে যেতেন বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
শুক্রবার (২৯ মার্চ) রাজধানীর প্রেসক্লাবে মন্ত্রী এ মন্তব্য করেন।
এ সময় তিনি বলেন, জিয়াউর রহমান জীবদ্দশায় কখনো শুনেননি তিনি স্বাধীনতার ঘোষক।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, স্কুল ঘণ্টা যেমন দপ্তরি বাজায়, তেমনি জিয়াউর
রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। আজকে বিএনপি নেতা আব্দুল মঈন
খান অনেক কথা বলেন। মঈন খানের বাবা আব্দুল মোমেন খান ৭৪ সালে খাদ্য সচিব ছিলেন। তিনি
ষড়যন্ত্র করে মার্কিন খাদ্যবাহী জাহাজ ফেরত পাঠিয়েছিলেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, জিয়াউর রহমান আব্দুল মোমেন খানকে মন্ত্রী
বানিয়েছিল। মঈন খান নিজেও সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিল, দরকার পড়লে দেশ বিক্রি করে দেব।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান
মাহমুদ বলেন, দেশ সমৃদ্ধির দিকে যখনই এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়।
বিএনপি জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর জন্য যেভাবে দাবি করে জিয়াও সেভাবে
কখনো দাবি করেনি। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের ছত্রছায়া পাকিস্তানিদের পক্ষে কাজ করেছে।
জিয়াউর রহমান আওয়ামী লীগের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতন ভুক্ত কর্মচারী ছিলেন।
তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের কথা হাস্যরসের সৃষ্টি করে। বিএনপির নেতা মঈন খানের বক্তব্যের সমালোচনা করে বলেন, যার বাবার জন্য এদেশে দুর্ভিক্ষ হয়েছে তার মুখে এসব কথা মানায় না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর থেকে ইতিহাস বিকৃতি করে বিএনপি নেতারা বিশদকার বিষোদগার করছে কিন্তু এখন সঠিক ইতিহাস জনগনের সামনে আসার পর তাদের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। বিএনপির ইতিহাস বিকৃতির পাশাপাশি দেশের জনগণকেও বিভ্রান্তি করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
বিএনপি ড. হাছান মাহমুদ আওয়ামী লীগ
মন্তব্য করুন
জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হয়েছে। নতুন মন্ত্রিসভা গঠন হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমেনি। কোন্দল ক্রমশ বেড়েই চলেছে। সামনে উপজেলা নির্বাচন, উপজেলা নির্বাচন নিয়ে সারা দেশে এখন আওয়ামী লীগ নানা ভাগ উপভাগে বিভক্ত। শুধুমাত্র সংঘাত হানাহানির উপলক্ষ খুঁজছে পরস্পরবিরোধী আওয়ামী লীগের শিবিরগুলো। এরকম বাস্তবতার দলের সঙ্কট নিরসনে এবং অভ্যন্তরীণ কোন্দল দূর করার জন্য আওয়ামী লীগ আগাম কাউন্সিল অধিবেশনে যেতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র ইঙ্গিত দিচ্ছে।