নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:৫৯ পিএম, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯
টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামী লীগ দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে। ২০০৮ সালে নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট প্রথমবারের মত সরকার গঠন করে। সেই সরকার এখন পর্যন্ত চলছে। তবে এবার মহাজোট নয়, আওয়ামী লীগ এককভাবেই সরকার গঠন করেছে। জোটকে মন্ত্রিসভা এবং সরকার গঠন থেকে বাইরে রেখেছে। ২০০৮ সালে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মত শপথ নেন, তখন তিনি মন্ত্রিসভায় যেমন চমক দিয়েছিলেন তেমনি তিনি একটি শক্তিশালি উপদেষ্টা মন্ডলী গঠন করেছিলেন। এই উপদেষ্টা মন্ডলী কোন কোন ক্ষেত্রে মন্ত্রিসভার চেয়েও ক্ষমতাবান হয়ে উঠেছিল। এই নিয়ে তখন বিতর্ক ও প্রশ্ন উঠেছিল। সে সময় উপদেষ্টারা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন এবং গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য তাদের ভূমিকাই ছিল শেষ কথা। যদিও উপদেষ্টারা সংবিধান মতে শপথ গ্রহণ করেন না। তারা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত হলেও মন্ত্রীর মর্যাদা পায়।
সেই সময় প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন এইচটি ইমাম। তিনি জনপ্রশাসনসহ সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই নাক গলাতেন এবং মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকতেন। এ সময় অনেকে তাকে দ্বিতীয় প্রধান ব্যক্তি হিসেবেও মনে করতেন। সে সময় অন্যান্য উপদেষ্টারাও যথেষ্ঠ ক্ষমতাবান ছিলেন। সেই সময় প্রশ্ন উঠেছিল উপদেষ্টারা যেহেতু গোপনীয়তার শপথ নেন না, সেহেতু তারা মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থিত থাকতে পারেন কিনা। এই নিয়ে বিতর্ক হওয়ার প্রেক্ষিতে উপদেষ্টাদের মন্ত্রিসভার বৈঠক থেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে দেওয়া হলেও একনেকের বৈঠকে উপদেষ্টারা থাকতেন এবং সরকারের বিভিন্ন মহলের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে তারা উপদেশ, পরামর্শ দিতেন। সে সময় উপদেষ্টারাই মন্ত্রীদের চেয়ে ক্ষমতাবান ছিলেন বলে জানা যায়।
২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ যখন দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য ক্ষমতায় আসে, তখন আওয়ামী লীগের হেভিওয়েটরা সব মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হন। তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, মো. নাসিমের মত হেভিওয়েটরা যখন মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভূক্ত হয়ে পড়েন, তখন উপদেষ্টারা কোনঠাসা হয়। দ্বিতীয় মেয়াদে এই উপদেষ্টারা অনেকটাই কোনঠাসা এবং কর্মহীন হয়ে পড়েন। সে সময় তাদের কর্মকান্ড তেমন চোখে পড়েনি। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হিসেবে বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করার মধ্যেই তাদের কার্যক্রম সীমিত ছিল। এ সময় ২০০৮ সালের সবচেয়ে ক্ষমতাবান উপদেষ্টা এইচটি ইমামকে জনপ্রশাসন থেকে রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাজনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে তার ক্ষমতা অনেকটা লোপ পায়। জনপ্রশাসনে তার হস্তক্ষেপও কমে যায়। কিন্তু ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে এইচটি ইমামের পুনরুত্থান ঘটে। তিনি আবার নির্বাচন পরিচালনার কো চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং টানা তৃতীয় মেয়াদের আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে মন্ত্রিসভায় ব্যাপক পরিবর্তন হলেও উপদেষ্টা মন্ডলীতে তেমন পরিবর্তন হয়নি।
২০১৪ সালে যে উপদেষ্টা পরিষদ ছিল, সেই উপদেষ্টা পরিষদই প্রধানমন্ত্রী বহাল রাখে। উপদেষ্টাদের অধিকাংশই টানা তিন মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছে। এই সরকারের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে মন্ত্রীদের চেয়ে তাদের অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। এবার যেহেতু মন্ত্রিসভার সমস্ত হেভিওয়েটদের আবার বাদ দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রিসভার অনেকেই নতুন এবং আনকোড়া। প্রথমবারের মত মন্ত্রীত্ব পেয়েছেন এর সংখ্যা অনেক বেশি। সেখানে উপদেষ্টারা আবার ক্ষমতাবান হয়ে উঠছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র থেকে প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে। তবে উপদেষ্টারা এখন তাদের ক্ষমতাটা ২০০৮ সালের মত প্রকাশ্যে দেখাচ্ছেন না। তারা গোপনে তাদের ক্ষমতা দেখাচ্ছেন।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে দেখা যায় যে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে উপদেষ্টারা পরামর্শ , নির্দেশ ইত্যাদি দিচ্ছেন। এবং বিভিন্ন কার্যক্রম করার জন্য তাগিদ দিচ্ছেন। এ ব্যাপারে একটা হিসেবে পরিস্কার হয়ে গেছে যে প্রথমত, অধিকাংশ মন্ত্রী উপদেষ্টাদের চেয়ে স্ব স্ব ক্ষেত্রে জুনিয়র এবং কম অভিজ্ঞতা সম্পন্ন। সেজন্য উপদেষ্টাদের এই কথাগুলো শুনছেন । দ্বিতীয়ত, উপদেষ্টারা যেহেতু প্রায় সবাই তিন মেয়াদের উপদেষ্টা, কিন্তু তিন মেয়াদের মন্ত্রী নেই। সেজন্য মনে করা হচ্ছে তারা প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বলেই মন্ত্রী এবং আমলারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের দ্বারস্থ হচ্ছেন। তৃতীয়ত, উপদেষ্টা মন্ডলীর বেশিরভাগই হচ্ছে প্রাক্তন আমলা। এখন যেহেতু সরকারে আমলাদের ক্ষমতা অনেক বেশি হয়ে গেছে। আমলারা তাদের যেকোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে উপদেষ্টাদেরই স্বরণাপন্ন হচ্ছেন। ফলে উপদেষ্টারা মন্ত্রণালয়ের গতিপ্রকৃতি সম্বন্ধে ওয়াকিবহল হচ্ছেন এবং তাদের বিভিন্ন পরামর্শ দিচ্ছেন। ফলে তৃতীয় মেয়াদে এসে আবার উপদেষ্টারাই ক্ষমতাবান হয়ে গেছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলেন, ‘উপদেষ্টারা ক্ষমতাবান হয়েছেন কারণ হলো রাজনীতিবিদদের ক্ষমতা হ্রাস করে আমলাদের ক্ষমতা বেড়েছে, এজন্য উপদেষ্টারা এখন ক্ষমতাবান হচ্ছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
বিএনপি গণ বহিষ্কার উপজেলা নির্বাচন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
আওয়ামী লীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন রাজনীতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে দলের যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আগেই ঘোষণা করেছিল বিএনপি। এবার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, গত জাতীয় নির্বাচনের মতো এবারও উপজেলা নির্বাচনও যে একতরফা নির্বাচন, তা বিশ্ববাসীকে দেখাতে চায় দলটি। এমন ভাবনা থেকে ইতোমধ্যে যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন তাদের প্রত্যাহার করতে হবে বলে দলের তৃণমূলকে বার্তা দিয়েছে বিএনপি। তবে আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে প্রার্থী হয়েছেন তাদেরকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী-এমপিদের আত্মীয়-স্বজনদের আসন্ন উপজেলা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেয়া হলেও সরে দাঁড়াননি অনেকে। এই নির্দেশনা দেয়ার পর প্রতিদিন দলের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুল কাদের বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন। ব্যক্তিগত ভাবেও তিনি একাধিক এমপির সঙ্গে কথা বলেছেন বলে জানা গেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা দলীয় নির্দেশনা অমান্য করেছেন। বিষয় বেশ অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে। গতকাল এ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে কথা বাহাস চলে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের।
দলীয় সিদ্ধান্ত মানেননি তৃণমূল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী। প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কঠোর নির্দেশনার পরও নির্বাচনি মাঠ থেকে সরেননি স্থানীয় এমপি-মন্ত্রীর পরিবারের সদস্য ও স্বজনরা। সোমবার প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিনেও তারা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেননি। উল্টো নানা যুক্তি দেখিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের ভিতরও এক ধরনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বিশেষ করে দলের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্যের ভূমিকা নিয়েও কেন্দ্রের মধ্যে অস্বস্তি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কঠোর নির্দেশ দেয়ার পরও কেন মনোনয়ন প্রত্যাহার করা হলো না এই নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ-আলোচনা।