নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৫:০০ পিএম, ০৪ মার্চ, ২০১৯
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। আওয়ামী লীগের অনেক বড় বড় বা সিনিয়র নেতাও অসুস্থ। যে কোন সময় তাঁদের অসুস্থতার খবর আসতে পারে। আসলে তাঁদের অনেকেই হয়তো ঠিকমতো শরীরের যত্ন নেননি বা চেকাপ করাননি। এমতাবস্থায় হঠাৎ করেই আমরা খারাপ কোন খবর পেতে পারি। এসব সিনিয়র নেতারা শুধু আওয়ামী লীগেরই নয়, দেশের সম্পদ। কারণ তাঁরা অভিজ্ঞ ও দক্ষ রাজনীতিবিদ। অভিজ্ঞতা তো আর টাকা দিয়ে কেনা যায় না, তা অর্জন করতে হয় দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায়।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক কিছু পদক্ষেপ আমাদের অনেককেই নতুন করে ভাবায়। মনে হয় তিনি তাঁর রাজনৈতিক সহকর্মীদের ভিন্ন চোখে দেখেন, ভিন্নভাবে মূল্যায়ন করেন। মাত্র কয়েকদিন আগেও তিনি ওবায়দুল কাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করার পরামর্শ বা নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেই কথা শুনলে আজকে আমরা জনাব ওবায়দুল কাদেরকে নিয়ে এই দুশ্চিন্তা করতাম না। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরী, আমীর হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মোশারফ হোসেনসহ বহু দক্ষ ও অভিজ্ঞ প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা আছেন যারা যে কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। তাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক কিছুই এখন মনিটর করছেন, অভিজ্ঞতা ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেছেন। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের দলীয় কর্মকাণ্ডও তিনি যে গভীরভাবে মনিটর করছেন তা গত সংসদ নির্বাচন এবং মহিলা সাংসদ ও উপজেলা নির্বাচনের মনোনয়নের তালিকা দেখলে স্পষ্ট বুঝা যায়। মনে হচ্ছে, তিনি পলিটিক্যাল ক্রেডিট সিস্টেম চালু করেছেন।
কী এই পলিটিক্যাল ক্রেডিট সিস্টেম? এটা আসলে চায়নার সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেমের আদলে দলের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের একটা নতুন ধরণের মূল্যায়ন পদ্ধতি। দলের নেতা কর্মীদের প্রতিটি ভালো কাজের জন্য তাঁদের ব্যক্তিগত ফাইলে যোগ হবে পজিটিভ পয়েন্ট আর খারাপ কাজ করলে যোগ হবে নেগেটিভ বা মাইনাস পয়েন্ট। সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ে দলের নেতা কর্মীরা দলের জন্য, সমাজের কল্যাণে, নিজের পরিবারের জন্য, নিজ শরীরের জন্য, ইত্যাদি কী কী কাজ করছেন তাঁর ভালো-মন্দ দিকের হিসাব রাখা হচ্ছে বিভিন্ন কৌশলে, যাকে বলা যায় নতুন পলিটিক্যাল ক্রেডিট সিস্টেম। বিভিন্ন পেশাজীবী যেমন, সাংবাদিক, শিল্পী, ব্যবসায়ী, শ্রমিক, ইত্যাদি সব শ্রেণী আর পেশার মানুষের দালিলিক খোঁজ রাখছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কে কোথায় কত টাকা খেয়ে বা স্বজনপ্রীতি করে দলের বা দলের সহযোগী সংগঠনের উপজেলা, জেলা কমিটি করে দিয়েছেন। কে কে কতো টাকা নিয়ে চাকরী দিয়েছেন, সেই টাকার ভাগ কে কে পেয়েছে, ঠিকাদারী কাজ পেতে কী কী অনৈতিক কাজ করা হয়েছে মোটা দাগে সব জানা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এমপি, উপজেলা, ইউপি নির্বাচনে কে কে বেইমানী করে দলকে হারাতে চাচ্ছে বা হারাচ্ছে তার হিসাব কি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে নেই মনে করেন? সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কে কী করেছেন, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে কে কে বিদ্রোহী প্রার্থী হবে তা খোঁজ রাখা হচ্ছে, যাতে পরবর্তী সময়ে এটা তাঁর পলিটিক্যাল ক্রেডিট সিস্টেমে মাইনাস পয়েন্ট যোগ হয় তাঁর আয়োজন কি করা নেই বলে মনে করেন?
এটা আমাদের অনেকের কাছেই দৃশ্যমান না হলেও সব খবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে যাচ্ছে। উনি সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন, জানার পরেও না জানার ভান করেন, কৌশলগত কারণে। তাই অপকর্ম করে কেউ তাঁর কাছে পার পায়নি, উনি মাঝে মাঝে সময় নেন। এটা উনার স্টাইল। ৬০ কর্মদিবসে খালেদা জিয়ার যে মামলা শেষ হবার কথা তা বিএনপি’র উকিল সাহেবরা টেনে ১০ বছরে নিয়ে গেছেন, কিন্তু শেখ হাসিনা চুপ, কোন কথা বলেননি, কোন হস্তক্ষেপ করেননি। এর মানে এই না যে উনি খালেদা জিয়ার বা তারেক জিয়ার ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলায় তাঁকে হত্যাচেষ্টার কথা ভুলে গেছেন।
একে একে এই পলিটিক্যাল ক্রেডিট সিস্টেমের আদলে সমাজের বা রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে বা স্তরে কি এটা চালু করতে চান আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা? তাই যদি হয় তাহলে সোশ্যাল ক্রেডিট সিস্টেম বা পাবলিক সার্ভিস ক্রেডিট সিস্টেম চালু হলে আইনের ফাঁদে পড়বেন অনেক তথাকথিত ভালো মানুষ, তথাকথিত আমলা, ঠিকাদার, গাড়ি চালক, রাজনীতিকসহ দেশের সব পেশার মুখোশধারী নষ্ট মানুষ। আইটির এই যুগে, সবার এনআইডি নম্বর ব্যবহার করে এটা করা অসম্ভব নয়। এটা চালু হলে কাউয়া রাজনীতিবিদ থেকে আরম্ভ করে অসৎ সরকারী কর্মচারী, পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ তাবৎ পেশার কোটি কোটি মানুষ প্রযুক্তির এই জালে আটকা পড়ে ভালো হতে বাধ্য হবেন, সেই ব্যবস্থা আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করছেন।
বাংলা ইনসাইডার/এমআর
মন্তব্য করুন
ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সভাপতি
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়া শামীম ইস্কান্দার
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
মন্তব্য করুন
বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য নতুন করে তৎপরতা শুরু করেছে তার পরিবারের সদস্যরা। বিশেষ করে বেগম জিয়ার ছোট ভাই শামীম ইস্কান্দার ইতোমধ্যে বেগম খালেদা জিয়াকে বিদেশ নেওয়ার জন্য সরকারের বিভিন্ন মহলের সঙ্গে নতুন করে যোগাযোগ শুরু করেছেন। বেগম জিয়া আর ভবিষ্যতে রাজনীতি করবেন না, রাজনীতি থেকে অবসর নেবেন এ রকম একটি বক্তব্য সামনে নিয়ে আসছেন শামীম ইস্কান্দার।
আওয়ামী লীগের তৃণমূল ক্রমশ ভেঙ্গে পড়ছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের তৃণমূল সংগঠিত করা এবং বিভেদ-বিভক্তির দূর করার জন্য যে ডাক দেওয়া হয়েছিল তারপর একটু পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছিল বলে বটে। কিন্তু এখন আবার উপজেলা নির্বাচনের প্রাক্কালে সারাদেশে তৃণমূল বিভক্ত হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে সামাল দেওয়াই এখন কঠিন হয়ে পড়ছে। একদিকে নির্বাচন কেন্দ্রীক বিরোধ অন্যদিকে দলের চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে যাওয়া আর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের তদারকির অভাবে তৃণমূলের আওয়ামী লীগ এখন সবচেয়ে সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বলেই মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতারাই।