নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৯:০০ পিএম, ১২ মার্চ, ২০১৯
ডাকসু নির্বাচন বানচাল করতে চেয়েছিলেন তারেক? ২৮ বছর পর ডাকসু নির্বাচন নিয়ে উত্তেজনা, নির্বাচন বর্জন নিয়ে ছাত্র সংগঠনগুলোর নানা ঘোষণা এবং শেষ পর্যন্ত নির্বাচন। নাটকীয় ঘটনার মধ্য দিয়ে কেটে গেল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গত ২৪ ঘন্টা। অবশেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতা বিজয়ী ভিপি নুরুল হক নুরুকে জড়িয়ে ধরলেন ছাত্রলীগ নেতা শোভন। এর মধ্য দিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৮ বছর পর নির্বাচন একটা গ্রহণযোগ্যতা পেল। কিন্তু ১১ মার্চ এই নির্বাচনের পরতে পরতে ছিল উত্তেজনা অনিশ্চয়তা এবং নানা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ। এই সমস্ত অনিশ্চয়তা অভিযোগ পাল্টা অভিযোগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি যে নামটা এসেছে তা হলো তারেক জিয়া। লন্ডনে পলাতক বিএনপির এই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ডাকসু নির্বাচন বানচাল করে সেখান থেকে একটা ছাত্র আন্দোলনের নীল নকশা করেছিল বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই নীল নকশার ব্লু প্রিন্ট এখন গোয়েন্দাদের হাতে। গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক কর্মকর্তা বলেছেন, ছাত্রদের দৃঢ়তা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের দায়িত্বশীল আচরণ এবং সবচেয়ে বড় কথা সরকার সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সহনশীলতার কারণে তারেক জিয়ার এমন পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে।
কি পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তারেক জিয়া? একাধিক প্রাপ্ত সূত্রে দেখা গেছে যে, তারেক জিয়া চেয়েছিলেন এই নির্বাচনকে ৩০ ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনের একটি মডেল হিসাবে দেখানো। যেখানে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট বাক্স ভরানো হয়েছে বলে বিএনপির কথিত অভিযোগ রয়েছে। এবারের নির্বাচনেও তারেকের ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ভুয়া ব্যালট পেপার ছেপেছিল বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, কুয়েত মৈত্রী হলে বস্তায় যে সিল মারা ব্যালট পাওয়া গিয়েছিল সেগুলো আসলে ডাকসু নির্বাচনের ব্যালট পেপার ছিল না। কে বা কারা এই ব্যালট পেপার ছাপিয়ে ওখানে রেখেছিল। আর এর উদ্দেশ্য ছিল একটাই, এই অজুহাতে নির্বাচনকে বানচাল করে দেওয়া। নির্বাচনকে পন্ড করে দেওয়া। কিন্তু এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালেয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত, তড়িৎ এবং তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ নিয়েছে যার ফলে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়। পরবর্তীতে এনিয়ে কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমটিগুলো আটক ব্যালট পেপার মিলিয়ে দেখেছেন যা নকল। প্রশ্ন উঠেছে কারা এই ব্যালট পেপার সংগ্রহ করেছিল। গোয়েন্দা সংস্থা বলছে, তারেকের লোকজনই এই নির্বাচন বানচাল ও এমন একটি পরিস্থিতি তৈরী করার জন্য এমন ঘটনা ঘটিয়েছিল। একই রকম রোকেয়া হলেও এরকম একটি পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও ছাত্রলীগের সহনশীল আচরণের জন্য পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়নি। তারেক জিয়া এই ঘটনার ইন্ধনদাতা তার একটি বড় প্রমাণ হলো এই নির্বাচনের ফলাফল। নির্বাচনে দেখা যাচ্ছে যে, ছাত্রদল কোথাও বিজয়ী হয়নি। এমনকি যে নূন্যতম ভোট, তাও পায়নি। ধারণা করা হচ্ছে ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের যে ভোটগুলো ছিল তা তারা কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষের প্রার্থীদের দিয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জামাতের একটা সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে একাধিক সূত্র আগেই নিশ্চিত করেছে। প্রশ্ন উঠেছে যে, ছাত্রদলের ভোটগুলো তাহলে কোথায় গেল? তাহলে কি এই নির্বাচনে ছাত্রদলকে অংশগ্রহণ করানো হয়েছিল নির্বাচন নিয়ে একটা অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরী করানোর জন্যই? নির্বাচন যখন বর্জনের ঘোষণা আসে, তখন প্রথম বর্জনের ঘোষণা আসে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে। এটা একটা পরিকল্পিত নীল নকশা ছিল যে ছাত্রদল একটা পর্যায়ে গিয়ে নির্বাচন বর্জন ঘোষণা দিবে এবং তাদের সঙ্গে অন্যরা যোগ দিবে। আরেকটি যে বিষয় লক্ষণীয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পক্ষের এই সংগঠন কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের জন্য পূর্ণ প্যানেল ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় সংসদে এবং হল সংসদে প্যানেল ঘোষণা করেছিল। প্রশ্ন হলো কোটা সংস্কার আন্দোলন একটি প্ল্যাটফর্ম এবং এটা কোন ছাত্র সংগঠন নয়। এদের কোন আয়ের উৎসও নেই। কাজেই এই সংগঠনের নির্বাচনের ব্যায়ভার কারা বহন করলো? একাধিক সূত্র বলছে এই ব্যায়ভার তারেক জিয়া এবং জামাত শিবির দিয়েছে। তার মানে তারেক জিয়া কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘাড়ে বন্দুক রেখে ক্যাম্পাসে একটি অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরী করতে চেয়েছিল। যে পরিস্থিতিতে নির্বাচন হবে না এমন ক্যাম্পাস থেকে একটা আন্দোলন সংগ্রাম পরিচালনা করা হবে। ডাকসু নির্বাচনে ছাত্রদলের যে ফলাফল সেখান থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, এই নির্বাচনে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন দাবিদার ছাত্রদলের একটা অন্য মোটিভ ছিল।
গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি যে বিষয় দেখা যায়, নির্বাচনে সাদা প্যানেল ভূক্ত শিক্ষকরা এই নির্বাচন ভিত্তিক একটি পর্যবেক্ষক মহল গঠন করেছিল। অথচ ডাকসু নির্বাচন ইতিহাসে এরকমটা নজিরবিহীন। এরকম কোন পদ্ধতি ডাকসুতে নেই। কারণ এখানে শিক্ষকরাই থাকেন এবং তারা সকলের অভিবাবক তুল্য। এরকম একটি পরিস্থিতিতে ডাকসুকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং বিতর্কিত করার জন্যই সাদা প্যানেল ভূক্ত শিক্ষকদের এরকম পর্যবেক্ষক মহলের নামে মাঠে নামানো হয়েছিল বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এবং এর পেছনে তারেকের ইন্ধন ছিল। ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনে পরাজয়ের পর লন্ডনে তারেক জিয়া চাইছে বাংলাদেশে এমন একটি অবস্থা তৈরী করতে, যার ফলে সরকার একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরে। সেজন্য ডাকসু ছিল তারেকের একটি সুবিধাজনক প্ল্যাটফর্ম। পরিকল্পনা ছিল ডাকসু নির্বাচন মাঝপথে থামিয়ে দেওয়া হবে এবং নির্বাচন পন্ড করা হবে। এই নির্বাচন পণ্ডের পর সাধারণ শিক্ষার্থীদের গুজব ও উস্কে দিয়ে রাস্তায় নামিয়ে দেওয়া হবে। সেখান থেকেই একটি সরকার পতনের আন্দোলনের সূত্রপাত করানো হবে। কিন্তু সকলের সময়োচিত প্রাজ্ঞতায় এবং সংযমশীল আচরণের কারণে শেষ পর্যন্ত সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেছে। তারেক জিয়ার আরেকটা ষড়যন্ত্রও এ যাত্রায় ভেস্তে গেল।
বাংলা ইনসাইডার/এমআরএইচ
মন্তব্য করুন
খালেদা জিয়া তারেক জিয়া বিএনপি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল
মন্তব্য করুন
রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা জাহাঙ্গীর কবির নানক
মন্তব্য করুন
তীব্র গরম মির্জা আব্বাস বিএনপি
মন্তব্য করুন
বিএনপি উপজেলা নির্বাচন বহিষ্কার
মন্তব্য করুন
ড. আব্দুর রাজ্জাক আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন শাজাহান খান
মন্তব্য করুন
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দুজনই দণ্ডপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে তাদের নেতৃত্ব থেকে বাদ দেয়ার ব্যাপারে পশ্চিমা দেশের কূটনীতিকরা বিএনপি পরামর্শ দিয়ে আসছেন এমন গুঞ্জন দীর্ঘদিনের। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কখনও মুখ খুলেননি বিএনপির কেউই। তবে এবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। তিনি জানিয়েছেন বিএনপি থেকে বেগম জিয়া এবং তারেক জিয়াকে বাদ দেয়ার বিষয়টি নিয়ে দল ভাবছে। সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশনের টকশোতে দলের এমন ভাবনার কথা জানান বিএনপির এই নেতা।
উপজেলা নির্বাচন থেকে কঠোর অবস্থান থেকে ইউটার্ন নিলো বিএনপি। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বলছে যে, আপাতত যারা উপজেলা নির্বাচন করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। তবে সব কিছু নির্ভর করবে নির্বাচনের ফলাফলের ওপর। যারা পরাজিত হবে তাদের ওপর নেমে আসবে শাস্তির খড়গ। আর যারা বিজয়ী হবেন তাদের বিষয়টি উপেক্ষা করা হবে। বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র বাংলা ইনসাইডারকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
উপজেলা নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাওয়ার কারণে ফেঁসে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান। তবে আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেও নীতিমালার কারণে বেঁচে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক। তবে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং যারা দলীয় সিদ্ধান্ত লঙ্ঘন করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।